ছবিঃ অনলাইন নিউজ পোর্টাল।
এখন মানুষ মন ভরে আলোচনা সমালোচনা করতে পারে।
ফেসবুক আছে, ব্লগ আছে। এজন্য যার সমালোচনা করার যোগ্যতা নেই, সে-ও সমালোচনা করতে পারে। আমাদের ছোট দেশ। মানুষ বেশি। একেক জন একেক রকম মতামত দেয়। এখন দেখতে হবে, কোন ব্যাক্তি সঠিক সমালোচনা করেছে। গ্রাম বাংলার গান গুলো আসলেই সুন্দর। মানুষকে শক্তি দেয়, প্রেরনা দেয়। আনন্দ দেয়। এই প্রজন্ম এই গানের সৌন্দর্য বুঝবে না। এরা হলো প্রশ্নপত্র ফাঁস জেনারেশন। এরা জাতির জন্য বোঝা। পালা গান, সারি গান, জাগ গান ইত্যাদি গানের মর্ম এই প্রজন্ম বুঝবে না। সেই মেধা তাদের নেই। এই প্রজন্ম ব্যস্ত প্রেম ভালোবাসা, টিকটক আর ফেসবুক নিয়ে।
এখন যদি হিরো আলম বলেন, রবীন্দ্রনাথ ভালো লিখতে জানেন না।
তাহলে হবে? লোকজন হিরো আলমের মুখে থু থু দেবে। একটা সহজ উদাহরন দেই। ধরুন, একটা লাইব্রেরী ভেঙ্গে ফেলা হলো অথবা আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হলো। অথচ অনেক লোক লাইব্রেরীতে বসে পড়তো। জ্ঞান অর্জন করতো। লাইব্রেরী পুড়িয়ে ফেলা বা ভেঙ্গে ফেলা অন্যায় কাজ। কিন্তু দেখবেন এখানে লোকজন দুই ভাগে ভাগ হয়ে যাবে। একদল বলবে লাইব্রেরী পুড়িয়ে ভালো কাজ করা হয়েছে। আরেকদল বলবে, লাইব্রেরী পুড়িয়ে অন্যায় করা হয়েছে। অর্থ্যাত যে কোনো ঘটনাতে লোকজন দুই ভাগে ভাগ হয়ে যাবে। এবং চ্যাচাতে থাকবে।
'হাতে লাগে ব্যথা রে, হাত ছাইড়া দাও সোনার দেওরা রে'…।
কোক স্টুডিও’র 'দেওরা' শিরোনামের এই গানটি এখন সবার মুখে মুখে। দশ দিনে গানটি আড়াই কোটি মানুষ দেখে ফেলেছেন। গানটি আমি শুনেছি। আমার কাছে ভালো লেগেছে। গানের মূল স্রষ্টা ফজলুল হক, তিনি পেশায় একজন কৃষক ও মাঝি। ফজলু মাঝি হিসেবেই সবার কাছে পরিচিত তিনি। এটাই তো নিয়ম একজন গান লিখবেন, আরেকজন সুর করবেন। গায়ক গাইবেন। কোক স্টুডিওতে অনেক গুলো শিল্পী মিলে গানটা গেয়ে, নেচে সুন্দর করে উপস্থাপন করেছেন। মানুষ গানটা উপভোগ করছে। এতে অনেক লোকের পরিশ্রম আছে। অথচ আমরা সমালোচনা করতে গিয়ে- অতি কটু কথা বলে ফেলি। তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করি। ইহা সঠিক কাজ নহে।
ফজলু মাঝি ও প্রীতমের যৌথভাবে লেখা গান ‘দেওরা’।
গ্রাম বাংলায় এরকম বহু গান আছে। যা মানুষের হৃদয় ছুঁয়ে গেছে। আধুনিক শিল্পীরা এখন গ্রাম বাংলার গান গেয়ে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। এই গানের শিল্পী ইসলাম উদ্দিন বলেছেন, আমাদের নতুন প্রজন্ম পালাগান দেখে-শুনে খুব পছন্দ করবে। তারা দেশের ঐতিহ্যকে জানবে। ভালোবাসবে।’ এই সব গ্রাম বাংলার গান কোনোদিন পুরনো হবে না। অনেক গান আসে সেই গান শুনে মানুষ হই চই করে। তারপর ভুলে যায়। কিন্তু আমাদের গ্রাম বাংলার বাউল গান, সারি গান, পালা গান- কখনও হারিয়ে যাবে না। লালন সেই কবে মরে ভূত হয়ে গেছে, অথচ আজও লালনের গান মানুষের মুখে মুখে। অন্তরে অন্তরে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন রিলস, টিকটকে এই গানের সঙ্গে ঠোঁট মেলাচ্ছেন তরুণ-তরুণীরা।
আমি এই গানের সাথে যারা জড়িত তাদের সকলকে ধন্যবাদ জানাই। আমি চাই তাঁরা আমাদের হারিয়ে যাওয়া গ্রাম বাংলার গান গুলো সংগ্রহ করে- নতুন করে নেচে গেয়ে আমাদের উপহার দিক। উদ্ধার হোক বাংলার হারানো ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি। এতে আমরা সমৃদ্ধ হবো। আমাদের সমৃদ্ধির পথে যে বাঁধা দিবে সেই বাঁধাকে অতিক্রম করে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। যে ধর্ম আমাদের বাঁধা দিবে প্রয়োজনে সেই ধর্মকে ছুড়ে ফেলতে হবে।
স্বয়ং ঈশ্বর বলেছেন, আমাকে খুজো সুর ও সংগীতে।
পৃথিবী সৃষ্টি হয়েছে সঙ্গীতের মাধ্যমে। পৃথিবী ধ্বংসও হবেও সঙ্গীতের মাধ্যমে। বিশ্ব শুরু থেকেই সঙ্গীত আছে। থাকবে। সুরের মাঝে ঈশ্বর লুকিয়ে আছেন। আদিম সঙ্গীত আর আজকের আধুনিক সঙ্গীত আসলে একই। একজন শিল্পী সুর ও সঙ্গীতে প্রভুকে খুঁজে পান। সুর ও সঙ্গীত প্রসঙ্গে একটা হাদীস বলা যেতে পারে। একদন বিকেলে নবীজি এক সাহাবীর বাড়ি থেকে দাওয়াত খেয়ে, তার স্ত্রীকে নিয়ে বেদুইনদের এলাকা দিয়ে হেটে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে নবীজি ও তার স্ত্রী দেখলেন বেদুইনরা নাচ-গান করছে। নবীজি ও তার স্ত্রী বেদুইনদের নাচ-গান উপভোগ করলেন। নবীজি বেদুইনদের নাচ গান দেখে খুশি হয়ে তাদের কিছু টাকা দেন।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে মে, ২০২৩ রাত ২:০২