আজ বুয়া বলে গেলো আগামী চারদিন সে আসবে না।
অথচ কিছুদিন আগে ঈদ গেলে। ঈদ উপলক্ষ্যে সে ছয় দিনের ছুটি নিয়েছিলো। বুয়ার বাড়ি রংপুর। সে গ্রামে যাবে। তাদের জমি নিয়ে কি যেন ঝামেলা চলছিলো, সেটা নিষ্পত্তি করতে যাচ্ছে। বুয়ার স্বামী ড্রাইভার। সে মাসে বিশ হাজার টাকা সেলারি পায়। সে ছুটি পায়নি। তাই বুয়া তার দুই ছেলে মেয়ে নিয়ে যাচ্ছে। বুয়ারর মেয়ের বয়স সাত বছর। সে এ বছরের জানুয়ারীতে মাদ্রাসায় ভরতি হয়েছে। ছেলের বয়স তিন বছর। বুয়া যখন আমাদের বাসায় কাজ করতে আসে, তখন তার ছেলেটাকে সাথে করে নিয়ে আসে। ছেলেটা সারাক্ষণ খাই খাই করে। আমি বলে দিয়েছি, বুয়ার ছেলেকে প্রতিদিন সকালে নাস্তা দিতে। আমি যা নাস্তা খাই বুয়ার ছেলেও সেই নাস্তা খায়। ঈদে বুয়ার ছেলেকে একসেট জামা দিয়েছি।
আমি অন্তমূখী মানুষ নই। আমার হতাশা নেই।
বিষন্ন হই না। নিজের প্রতি নিজে অসন্তুষ্ট হই না। লোভ করি না। হিংসা করি না। অন্তর্মুখী স্বভাবের হওয়া খারাপ না। তবে বেশি আত্মকেন্দ্রিক হওয়া ভালো না। আত্মকেন্দিক টাইপ মানুষরা জীবনে দুঃখ বেশি পায়। বিষন্নতা একটা রোগ। এই বিষন্নতা কম বেশি সবারই আছে। আমারও আছে। রাজ্যের বিষন্নতা এসে আমার উপর ভর করে। আর হতাশা? হতাশা কার নেই বলুন? আমার বন্ধুর গাড়ি আছে। আমার গাড়ি নেই। প্রচন্ড হতাশা কাজ করে আমার মধ্যে। আমার আরেক বন্ধু বউ বাচ্চা নিয়ে অস্ট্রেলিয়া বেড়াতে গেলো। আর আমি সামান্য কক্সবাজার যেতে পারছি না পরিবার নিয়ে। প্রচন্ড হতাশ হয়ে যাই।
সন্তুষ্ট হওয়া সহজ না। অর্থনীতির সুত্র অনুযায়ী মানুষ কখনও সন্তুষ্ট হবে না।
ধরুন, আপনার দুটো জামা আছে। আপনার ইচ্ছা করবে, আমার যদি আরেকটা জামা থাকতো তাহলে ভালো হতো। মোট তিনটা জামা হয়ে যেতো! যেহেতু আপনার দুটা জামা এবং আপনি আশা করছেন আরো একটা জামার। কিন্তু আরেকটা জামা হচ্ছে না। অর্থ্যাত আপনি সন্তুষ্ট হতে পারছেন না। এই দুনিয়াতে যার চাহিদা কম সেই সন্তুষ্ট হতে পারে। চাহিদা মানুষকে সন্তুষ্ট হতে দেয় না। মানুষের চাহিদার শেষ নেই। আমার একাউন্ট সব সময় খালি পড়ে থাকে। মনে মনে ভাবতাম আমার একাউন্টে যদি পাঁচ লাখ টাকা থাকতো তাহলে অনেক ভালো হতো। এরপর আমার একাউন্টে পাঁচ লাখ টাকা হলো। তখন আমি ভাবতে শুরু করলাম পাঁচ লাখ টাকা, কোনো টাকা হলো। দশ লাখ থাকলে ভালো হতো। প্রচুর টাকার চেয়ে অভাবে থাকা ভালো। দিন আনি, দিন খাই টাইপ মানুষেরা সবচেয়ে ভালো আছে। তাদের বিষন্নতা ধরে না। তাদের মধ্যে হতাশা কাজ করে না।
এখন আমি বুঝি- লোভ করা যাবে না।
সহজ সরল জীবনযাপন করতে হবে। লোভ মানুষকে পশুর স্তরে নিয়ে যায়। মন্দ কাজ করিয়ে নেয়। নতুন নতুন চাহিদা তৈরি করা যাবে না। মনকে বুঝাতে হবে। প্রয়োজনে শস্তি দিতে হবে। চাহিদা সীমিতি করতে হবে। মানুষের দুঃখের কারন হচ্ছে অত্যাধিক চাহিদা। মনের ইচ্ছা মতো যারা চলে তাঁরা বোকা। চলতে হবে নিজের ইচ্ছা মতোন। মানুষের মন দু রকমের হয়। চেতন মন এবং অবচেতন মন। কিছুতেই অবচেতন মনের পাল্লায় পরা যাবে না। অবচেতন মনের পাল্লায় পড়লেই চাহিদা বাড়বে, হতাশা বাড়বে, বিষন্নতা বাড়বে। এবং অল্পতে সন্তুষ্ট হওয়া যাবে না। এখন আমি আমার মনকে নিয়ন্ত্রণ করি। মনের কথায় উঠসব করি না। আমার অবচেতন মনকে আমি পরাজিত করতে পেরেছি। আমি জয়ী। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে মনে হয়- লাইফ ইজ বিউটিফুল। সকালে ঘুম থেকে মনে হয়- জীবন আনন্দময়।
আমি প্রচুর মুভি দেখি, প্রচুর বই পড়ি। হতাশ হওয়ার সুযোগ পাই না।
এক সময় আমি আত্মকেন্দিক মানুষ ছিলাম। এখন আমি আড্ডা দেই। অসংখ্য মানুষের সাথে মিশি, কথা বলি। দৈনিক পত্রিকা গুলো মন দিয়ে পড়ি। টিভিতে মন দিয়ে নিউজ দেখি। অনলাইনে ভালো কোনো আর্টিকেল পেলে পড়ে ফেলি। বাচ্চাদের সাথে খেলি। দেশ নিয়ে ভাবি। মানুষ নিয়ে ভাবি। মহাকাশ নিয়ে ভাবি। সারাক্ষণ ব্যস্ত থাকার কারনে আমার মধ্যে হতাশা আসে না। লোভ আসে না। বিষন্ন হই না। নতুন নতুন চাহিদা সৃষ্টি হয় না। অন্তর্মুখী স্বভাবটা আর নেই। চারপাশ দেখে শুনে এখন আমি নিজেকে নিয়ে অসন্তুষ্ট নই। আমি সুস্থ। আমার কোনো পাওয়ানাদার নেই। থাকার জায়গা আছে। খাওয়া পরার নিশ্চয়তা আছে। ভালোবাসার মানুষ আছে। আমার কন্যা আছে। মমতাময়ী স্ত্রী আছে। বাসায় ফিরতে দেরী করলেই সে অস্থির হয়ে ফোন দেয়।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে মে, ২০২৩ রাত ১২:১৭