somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রাজীব নুর
আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

আমাদের শাহেদ জামাল- (ছাপান্ন)

০৫ ই জুন, ২০২৩ রাত ৯:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



কোনো কোনো মানুষের ভাগ্য কোনোদিন পরিবর্তন হয় না।
আবার অনেকে আছেন, গ্রাম থেকে শহরে আসেন, কয়েক বছরের মধ্যে নিজের ভাগ্য বদলে ফেলেন। শাহেদ জামাল এরকম কয়েকজনকে নিজের চোখেই দেখেছে। সুমন পাটোয়ারী নামে একছেলে ঢাকা এসেছে। ঢাকায় তার খাওয়ার জায়গা নেই, থাকার জায়গা নেই। গ্রাম থেকে নিয়ে আসা ছাতু তিনবেলা খায়। এখন সে ফ্রান্স থাকে। বিরাট অবস্থা। শাহেদ জামালের এক বন্ধু আছে। আবু কালাম নাম। কালাম গ্রাম থেকে এসেছে, একটা মেসে উঠেছে। কিভাবে যেন একটা ফার্নিচার কোম্পানীতে চাকরী জুটিয়ে নেয়। সেই আবু কালাম এখন অনেক ধনী হয়ে গেছে। উত্তরাতে জায়গা কিনেছে। তিনতলা বাড়ি উঠিয়ে ফেলেছে এর মধ্যে। তার গ্রামের বাড়ি একদম অজপাড়া গায়ে। সেখানে সে পাঁচ লাখ টাকার ফার্নিচার দিয়ে ঘর সাজিয়েছে। অবশ্য এসব ফার্নিচার তার টাকা দিয়ে কিনতে হয়নি। সিস্টেমে ফার্নিচার গুলো নিজের করে ফেলেছে।

শাহেদ জামালের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হলো না।
সকালবেলা সে তার মেস থেকে বের হয়েছে শূন্য পকেটে। মিরপুর কাজীপাড়া ব্রীজের নিচে দাঁড়িয়ে আছে শাহেদ। সময় মাত্র ১১ টা। শাহেদ জানে না সে এখন কোথায় যাবে? কার কাছে যাবে? সকালের নাস্তা করা হয়নি। মেসে তার মিল বন্ধ করে দিয়েছেন মেস ম্যানেজার মকবুল। সাত মাসের বকেয়া জমে আছে শাহেদের। মেসের মিল বন্ধ হওয়াতে শাহেদ খুশি। কারন মেসের খাবার একদম অখাদ্য। একদম স্বাদহীন খাবার। শাহেদ দরিদ্র হতে পারে কিন্তু পছন্দ না হলে সেই খাবার শাহেদ ছুঁয়েও দেখে না। চারিদিকে মানুষের ব্যস্ততা। কিন্তু শাহেদ জামালের কোনো ব্যস্ততা নেই। সে রোদের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে। আজকের তাপমাত্রা ৩৮ ডিগ্রী। কিন্তু ফিল হচ্ছে ৪৪ ডিগ্রী। নীলার বিয়ে না হয়ে গেলে আজ সে নীলার কাছে যেতো। একমাত্র নীলার কাছে গেলেই শান্তি পাওয়া যেতো। মেয়েটা তাকে সত্যিই ভালোবাসতো। সময় এত খারাপ যে কেউ এখন শাহেদের ফোন পর্যন্ত ধরে না। কারো অফিসে গেলে দেখা করে না। বাস্তব সত্য কথা হলো- পতিত মানুষদের কেউ ভালোবাসে না।

চলছে বৃক্ষমেলা।
গাছপালা শাহেদের ভালো লাগে। শাহেদ হাঁটতে হাঁটতে চীন মৈত্রীর সামনে চলে এলো। বৃক্ষ মেলায়া যাবে কিনা ভাবছে। এই বৃক্ষমেলাতে শাহেদ কখনও একা আসেনি। প্রতিবার সাথে ছিলো নীলা। ক্ষুধার্থ পেটে প্রেমিকার কথা ভাবতেও ভালো লাগে না। শাহেদ জামাল প্রচন্ড ক্ষুধার্থ। এই মুহুর্তে সে তিন গামলা ভাত খেয়ে ফেলতে পারবে। ক্ষুধা এবং প্রচন্ড রোদ দুটাই খুব কষ্ট দিচ্ছে। শাহেদ জানে আল্লাহপাক কাউকে তিনবেলা না খাইয়ে রাখেন না। সকালে আল্লাহপাক খাবারের ব্যবস্থা করেন নাই। দুপুরেও কি করবেন না? রিজিক তো আল্লাহপাকের হাতে। শাহেদ জামাল মন খারাপ করে এলোমেলো হাঁটতে থাকলো। মনে মনে ভাবছে কে আছে এমন, যার কাছে গেলে এখন- তাকে পেট ভরে ভাত খাওয়াবে? কারো নাম মনে পড়ছে না। শাহেদের সারা শরীর ঘামে ভেজা। এই রোদ আর সহ্য হচ্ছে না। শাহেদ জামাল একে মসজিদে ঢুকে গেলো। এসি মসজিদ। মুহুর্তে শরীরটা ঠান্ডা হয়ে গেলো। এই মসজিদের এসিটা ভালো। এই কড়া বাইরে না ঘুরে মসজিদে বসে থাকা অনেক ভালো।

বাইরে কড়া রোদ। অথচ মসজিদের ভেতরে চমৎকার ঠান্ডা।
আরামে শাহেদ জামালের ঘুম এসে যাচ্ছে। শাহেদ মসজিদে যাওয়াতে আল্লাহপাক খুশি হয়েছেন। তার রিজিক আছে আজ এই মসজিদে। মসজিদে মিলাদ হচ্ছে। শাহেদ জামাল মিলাদে অংশ গ্রহন করছে। মিলাদ শেষে তবারক হিসেবে কি দেয় শাহেদ সেটাই ভাবছে। শাহেদ মনে মনে তেহারী আশা করছে। হুজুর লম্বা মিলাদ শুরু করেছেন। মিলাদ শেষ করার নাম নিচ্ছেন না। শাহেদ জামাল হুজুরের উপর যথেষ্ঠ বিরক্ত হচ্ছে। দোয়ায় এসে হুজুর আরো বেশি ফাজলামো শুরুর করে দিলো। হুজুরের দোয়া আর শেষ হয় না। শাহেদের ইচ্ছা করছে হুজুরকে একটা ধাক্কা দিতে। শালার ব্যাটা ক্ষুধায় জান যায় যায়, আর তুই কাহিনী শুরু করেছিস! যাইহোক, সব কিছুরই শেষ আছে। একসময় মিলাদ শেষ হলো। শাহেদ জামাল দেখলো মসজিদের গেটে একলোক প্যাকেট নিয়ে অপেক্ষা করছে। শাহেদ সবার আগে দৌড়ে গেলো। তার হাতে একটা প্যাকেট দিলো। সাথে একটা পানির বোতল। শাহেদ প্যাকেট খুলে মুগ্ধ। তেহারী! মাংসের পরিমান ভালো। আনন্দে শাহেদের চোখে পানি চলে এলো।

বিকাল পাঁচটা। শাহেদ ধানমন্ডি সাতমসজিদের সামনের ফুটপাতে বসে আছে।
আছরের নামাজ শেষ হলে সে মসজিদের ভেতর যাবে। যদি কোনো মিলাদ টিলাদ হয়। দুপুরের খাবারটা ভালো ছিলো। খেয়ে সে তৃপ্তি পেয়েছে। এখন কিছু পাওয়া গেলে তার আজ রাতের জন্য আর কোনো চিন্তা নাই। আল্লাহপাক নিশ্চয়ই ব্যবস্থা করে দিবেন। আল্লাহপাক তো চায়না তার বান্দা না খেয়ে থাকুক। আল্লাহ তার বান্দাদের ভালোবাসেন। এই তো হুজুর আছরের আযান দিচ্ছেন। ঠিক এমন সময় সুন্দর মতো একটা মেয়ে এসে বলল- এই তোমার নাম শাহেদ না? শাহেদ বলল, জ্বী আমার নাম শাহেদ। শাহেদ জামাল। মেয়েটা হেসে বলল, আমাকে চিনতে পারোনি? শাহেদ বলল, না আমি আপনাকে চিনতে পারছি না। মেয়েটা বলল, আমরা একই ইউনিভার্সিটি থেকে অনার্স করেছি। অবশ্য আমি অনার্স ফাইনাল পরীক্ষা দেইনি। হঠাত আমার বিয়ে হয়ে গেলো। তুমি তো মেধাবী ছাত্র ছিলে। শাহেদ মুগ্ধ হয়ে মেয়েটাকে দেখছে। মেয়েটাকে নীলার চেয়েও সুন্দর লাগছে।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জুন, ২০২৩ রাত ৯:০৮
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×