আজ আমাদের বড় কন্যা পরীর জন্মদিন।
আমার দুই মেয়ে। ছোট কন্যার নাম ফারাজা তাবাসসুম। ফারাজা চালাক চতুর। কিন্তু বড় মেয়েটা সহজ সরল। দুটা মেয়েই আমার কলিজার টুকরা। বেশির ভাগ বাবা মা করে কি, নিজের ইচ্ছা- অনিচ্ছা ছেলেমেয়ের উপর চাপিয়ে দেয়। ছেলেমেয়েদের উপর কিছু চাপিয়ে দিতে হয় না। বিশেষ করে ধর্মীয় অনুশাসন। শিশুরা হেসে খেলে বড় হোক না, সমস্যা কি? কেন তাদের ধর্মের ভয় দেখাতে হবে? পরকালের ভয় দেখাতে হবে? কেন জন্মদিন উপলক্ষ্যে একটু আনন্দ করা যাবে? কেন কেক কাটা যাবে না? কোন বদমাইশ এই কথা বলেছে। ধর্মের কারনে আমি আমার মেয়েদের আনন্দ থেকে বঞ্চিত করতে পারি না।
যারাই অন্যের কাছ থেকে শুনে শুনে ধর্ম শিখে, এরা বড় অভাগা ও চরম নির্বোধ।
আপনার ধর্ম আপনি কোলে নিয়ে বসে থাকুন। যারাই ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের ধর্ম দিয়ে বন্ধী করতে চায়, তাদের আমি খুব অপছন্দ করি। আমি আমার সন্তানের জন্য একশ' পাপ করতে রাজী আছি। আমি আমার সন্তানের জন্য দোজকে যেতে রাজী আছি। আজ কন্যার জন্মদিন। আমি কেক কাটবো। তাতে কার কি? ধর্ম যদি বলে, কেক টাকা পাপ। এটা খিস্টানদের নিয়ম। আমি শুনব না। মানব না। আমি কেক কাটবো। আনন্দ করবো। পাপ হলে আমার পাপ হোক। দুনিয়াতে সবার আগে আমার সন্তান। এর চেয়ে বড় কিছু নাই আমার কাছে।
ধর্মের শিখলে আমি আমার কন্যাদের বন্ধী করতে পারবো না।
সাত বছর হয়ে গেলেই আর কোনো ছাড় নেই। হিজাব পরো। নামাজ পড়ো। হাজারো নিয়ম। এইসব নিয়মের আমি ধারধারি না। কন্যারা কন্যাদের মতো বড় হোক। তাদের যদি হিজাব পরতে ভালো লাগে পরবে। নামাজ পড়তে ভালো লাগে পরবে। আমি তাদের উপর জোর করে কিছু চাপিয়ে দিতে পারো না। নো নেভার। আমি কন্যাকে নিয়ে আজ সন্ধ্যায় বাইরে যাবো। দুজনে মিলে ঘুরে বেড়াবো। কন্যা যা যা খেতে চায় খাওয়াবো। যা যা কিনতে চায় কিনে দিবো। কোনো বিধিনিষেধ নেই। ধর্মের বিধি নিষেধ মানা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। আমার কন্যার মুখের হাসির জন্য সমস্ত ধর্ম আমি ধুয়ে ফেলে দিতে পারি।
বড় কন্যার ভালো নাম রোজা।
আমি তাকে আদর করে পরী বলে ডাকি। পরীর জন্ম স্কয়ার হাসপাতালে। তখন রাত দুটা। বাইরে তুমুল বৃষ্টি। নার্স আমাকে কোলে নিতে দিলো না। বলল, এখন না, পরে। কাঁচের ওপাশে নীল রঙ্গের একটা টাওয়াল দিয়ে কন্যাকে প্যাচিয়ে রেখেছে। শুধু মুখটা দেখা যাচ্ছে। একটা কাঁচের ঝারে শুয়ে আছে আমাদের কন্যা। অবাক হয়ে চারপাশ দেখছে কন্যা। আমি কন্যাকে দেখলাম। মুগ্ধ হলাম। খুশিতে আনন্দে আমি বিমোহিত। আমি আমার একটা হাত বাড়িয়ে দিলাম। কন্যা আমার আঙ্গুল শক্ত করে ধরলো। আর কি অদ্ভুত আমার চোখে পানি চলে এলো। আমার চিৎকার করে বলতে ইচ্ছা করলো- এটা আমার মেয়ে। আমার। সবাই দেখুন।
বড় কন্যা লেখাপড়াতে খুবই ভালো।
তাকে কখনও বলতে হয় না, পড়তে বসো। সে নিজের ইচ্ছাতেই সময় মতো পড়তে বসে। আমি ইংরেজিতে কথা বলতে পারি না। আমার কন্যা দারুন ইংরেজিতে কথা বলে। তখন আমার কন্যাকে বিদেশী বলে মনে হয়। অনগর্ল ইংরেজি বলে যায়। আজকাল সে ইংরেজিতে গল্প লিখে। কবিতা লিখে। এমন কি স্কুল থেকে ইংরেজি গল্পের বই নিয়ে সে পড়ে। আমি মেয়েকে বলেছি, বাংলায় লিখো না কেন? মেয়ে বলে বাংলা কঠিন। ইংরেজি সহজ। আমার কন্যা ভালো থাকুক। সুস্থ থাকুক। ভালো ও সুস্থ থাকুক পৃথিবীর সমস্ত কন্যা। ধর্মের অপছায়া যেন কোনো শিশুর উপর না পড়ে।