
উপরের ছবিটা দেখুন। ভালো করে দেখুন।
আমার জীবনে তোলা প্রথম ছবি। ডি এসএলআর ক্যামেরা। ১৮/২০ বছর আগের তোলা ছবি। তখন আজকের মতো হাতে হাতে এসএলআর ক্যামেরা ছিলো না। নতুন ক্যামেরা কিনেছি। কিন্তু ছবি তোলা হয় না। অথচ সারাদিন ছবি তোলার উদ্দেশ্যে ঘুরে বেড়াই এই শহর। টানা সাত দিন ক্যামেরা নিয়ে ঘুরলাম। কিন্তু ছবি তোলার মতো ভালো সাবজেক্ট খুঁজে পাই না। আমি প্রচন্ড হতাশ। রাতে ক্যামেরা হাতে নিয়ে বসে থাকি। ছবি তোলার বিষয় কেন খুঁজে পাচ্ছি না? গাড়ি কেনার আগে গাড়ি চালানো শিখতে হয়। আমিও ক্যামেরা কেনার আগে ফটোগ্রাফি নিয়ে অনেক পড়াশোনা করে নিই।
হঠাত আমার মনে হলো- ছবি তোলার বিষয় খুঁজে পাওয়া যাবে না।
নিশ্চয়ই একটা পাখি এসে আমায় বলবে না- আমি আকাশে উড়ছি, তুমি আমার ছবি তোলো। অথবা একঝাঁক পাখি সন্ধ্যার আকাশে উড়ে যাবার আগে আমার কাছে বলে যাবে না। যে আমি চটপট ছবি তুলে নিবো। অর্থ্যাত ছবি তোলার সাবজেক্ট আমার নিজেকেই তৈরি করে নিতে হবে। পরের দিন হাঁটা শুরুর করলাম মিরপুর রোড দিয়ে। হঠাত দেখি কারেন্টের তারে অনেক গুলো কাক বসে আছে। সাথে সাথে ব্যাগ থেকে ক্যামেরা বের করে ছবিটা তুলে নিলাম। এরপর টানা দশ বছর শুধু ছবিই তুলে গেলাম।
দশ বছরে পাঁচ লাখ ছবি তুলেছি।
অথচ একটাও ভালো ছবি তুলতে পারিনি। বহুবার ক্যামেরা হাতে নিয়ে নেমে গেছি পুকুরে, পদ্ম ফুলের ছবি তুলবো বলে। ঘাসের উপর শুয়ে ছিলাম এক ঘন্টা একটা ফড়িং এর ছবি তুলবো বলে। ভোরের আকাশের ছবি তুলবো বলে সারারাত জেগে বসে ছিলাম মাঠের মধ্যে। রাত দুটায় অনেক গুলো খবরের কাগজ জড়ো করে আগুন ধরিয়ে দেই। তারপর সেই আগুনের ছবি তুললাম। কত পাগলামি না করেছি একসময়। দীর্ঘদিন ওয়েডিং ফটোগ্রাফী করলাম। এই বিয়ের ছবি টবি তুলতে গিয়েই সময়ের অপচয় করে ফেললাম। আমার ফটোগ্রাফির বারোটা বাজলো।
প্রতিদিন ছবি না তুললে আমার পেটের ভাত হজম হতো না।
আর আমি সেই মানুষ গত চার বছর ক্যামেরা হাতে নিইনি। জানি না ক্যামেরা নষ্ট হয়ে গেলো কিনা। একবার রামপুরা আফতাব নগরে আমার এসএলআর ক্যামেরাটা ছিনতাই হয়ে গেলো। এর দুবছর পর আমার বাসা থেকে আমার আরেকটা এসএলআর ক্যামেরা চুরী হয়ে গেলো। এখন তো ক্যামেরার দাম অনেক সস্তা হয়ে গেছে। ৩৫ হাজার টাকা দিয়ে এসএলআর ক্যামেরা পাওয়া যায়। বহু ছেলেপেলে কে ছবি তোলা শিখিয়েছি। কিভাবে সুন্দর করে ছবি তোলা যায়, সে বিষয় নিয়ে আমি একটা বই লেখা শুরু করেছিলাম। অর্ধেক লিখে এরপর আর লিখি নাই। তবে সেই লেখাটা শ্রীঘই শেষ করবো।
যুগান্তর পত্রিকায় কিছু দিন কাজ করলাম।
'ঢাকা আমার ঢাকা' পাতাতে। তখন আমার সাব এডিটর ছিলেন আহমদ উল্লাহ ভাই। উনি কিছুদিন আগে মারা গেছেন। এরপর কাজ করলাম সমকাল পত্রিকায়। আমার সাব এডিটর ছিলেন কাউসার খোকন ভাই। উনি সম্ভবত এখন ইত্তেফাক পত্রিকায় আছেন। এরপর কাজ করলাম ঢাকাটাইমস এ। পত্রিকাতে কাজ করতে গিয়ে আমার নিজের জন্য আর ছবি তোলা হয় নাই। আমি খুব শ্রীঘই ক্যামেরা আবার হাতে তুলে দিবো। এবার আমি আমার ইচ্ছা মতো ছবি তুলবো। কেউ হুকুম দেবার নাই।

সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জুলাই, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:২০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


