somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রাজীব নুর
আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

ঢাকায় দেখার মতো কী আছে?

২০ শে জুলাই, ২০২৩ দুপুর ২:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছবিঃ আমার তোলা।

ঢাকা শহরে দেখার জিনিসের অভাব নেই।
এই শহরেই আমার জন্ম। দেখতে দেখতে প্রায় ৩৫ টা বছর এই শহরে পার করে ফেললাম। যখন ঢাকার বাইরে যাই, ঢাকা ফিরে আসার জন্য এক ধরনের অস্থিরবোধ করি। অথচ এই শহর নোংরা একটা শহর। শহরের মানুষ গুলো ভালো না। জটিল এবং কুটিল। কি নেই ঢাকা শহরে? হ্যাঁ সব আছে এই শহরে। মসজিদ আছে, মন্দির আছে, গীর্জা আছে, ব্রোথেল আছে। বড় বড় অসংখ্য শপিংমল আছে। যাদুঘর আছে, চিড়িয়াখানা আছে। আবাসিক হোটেল আছে। শিশু পার্ক আছে, রমনা পার্ক আছে, লেক আছে, ভাঙ্গা ফুটপাত আছে, ফুটপাত দখল করে হকাররা দোকান বসিয়েছে। প্রতিটা এলাকায় ৮/১০ জন লোক ভ্যানগাড়িতে করে সবজি বিক্রি করে। পুলিশ এসে ওদের কাছ থেকে নিয়মিত টাকা নিয়ে যায়। সত্য কথা বলতে এই শহর আমার ভালো লাগে না। আমার দম বন্ধ হয়ে আসে। আমার ইচ্ছা করে আমস্টারডাম চলে যাই।

এই শহরে দেখার জিনিসের অভাব নেই।
দেখার চোখ থাকলে, অতি তুচ্ছ বিষয় মন দিয়ে দেখলে আর বেশি কিছু দেখা যায়। রেললাইনের সামনে দেখবেন কাঠাল বিক্রি হচ্ছে। লোকজন টিপেটুপে কাঠাল কিনছে। তরমুজের সিজনে বিক্রি করে তরমুজ। আমের সিজনে আম। রেললাইনের পাশে সন্ধ্যার পর মাছের বাজার বাসে। সবই চাষের মাছ। কিন্তু অনেক দাম। একটা দুই কেজি ওজনের রুই মাছের দাম নেবে প্রায় ৮শ' টাকা। সেই মাছ কাটতে নেবে ৫০ টাকা। মাছ কাটা দেখাও অনেক আনন্দের ব্যাপার। ইলিশ মাছ অনেক দাম। কিছু লোকে এসে ইলিশ মাছ কিনে নিয়ে যায়। তাঁরা দামও জিজ্ঞেস করে না। বিক্রেতা পাঁচ হালি ইলিশ মাছ দিয়ে দেয়। আবার কেউ কেউ বাজারের ব্যাগ নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। বড় বড় মাছের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে তেলাপিয়া বাঁ পাঙ্গাস নিয়ে যায় পরিবারের জন্য। ঢাকা শহর রাজধানী হলেও, এই শহরে গরীব ও অসহায় লোকের অভাব নেই।

ঢাকা শহরে আজকাল টিনের বাড়িঘর খুব একটা খুঁজে পাবেন না।
সব পাকা দালান হয়ে গেছে। যার এক কাঠা জায়গা আছে সেও ছয় তলা বিল্ডিং বানিয়ে ফেলেছে। রাজউকের নিয়ম আছে আড়াই কাঠার কমে এবং তাদের অনুমতি ছাড়া বাড়ি করা যাবে না। ঢাকা শহরের লোকজন নিজের ইচ্ছা মতো মিস্ত্রি দিয়ে বাড়ি বানিয়ে নিয়েছে। সরকারি কোনো তদারকি নেই। যদি সরকারি লোক এসেই পড়ে তাহলেও সমস্যা নেই। তাদের হাতে কিছু ধরিয়ে দিলেই তাঁরা খুশি। গুলিস্তানে একটা টিসিবির সরকারী বিল্ডিং আছে। পুরো ভবনে বিদ্যুৎ নেই। সেখানে এখন কোনো কাজ হয় না। সেই বিল্ডিং কিছু লোক মিলে ভাড়া দিয়ে দিয়েছে। চোরাই বিদ্যুৎ নিয়েছে। বছরের পর বছর ধরে সেভাবেই চলছে। কেউ দেখার নেই। কেউ বলার নেই। এই শহরে যেসব রাস্তায় ছিনতাই হয়, সেসব রাস্তায় টহল পুলিশ থাকে না। প্রতিদিন অসংখ্য লোকের মোবাইল থাবা দিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। পকেটমার হচ্ছে। চুরী হচ্ছে।

ঢাকা শহরের এমন কোনো এলাকা বাদ নেই যেখানে মাদক পাওয়া যায় না।
ঢাকা শহর মানেই জ্যামের শহর। মধ্যরাতেও এই শহরে জ্যাম থাকে। প্রতিটা এলাকায় আছে কিশোর গ্যাং। এরা ছাত্রলীগের মতোই ভয়ঙ্কর। কিছু দিন পর এরা মারামারি করে কাটাকাট করে নিজের উপস্থিতি জানান দেয়। অল্প বয়সী ছেলেমেয়ে গুলো প্রেম করে। পার্কে, বাসে, ফাস্টফুডের দোকানে। কেউ কেউ রিকশায়। এই শহরের ছেলেমেয়েদের লজ্জা খুবই কম। রিকশায় বসেই চুমু দিচ্ছে, পার্কের বেঞ্চে বসে মেয়েটার জামার ভিতর দিয়েই হাত ঢুকিয়ে দিচ্ছে। বাইকওলারা ফুটপাতে বাইক উঠিয়ে দেয়। ব্যস্ত রাস্তায় গাড়ি পার্কিং করে রাখে। যে যেভাবে পারছে অন্যায় করছে, অপরাধ করছে। রাজনীতিবদরা নব্যধনী সৃষ্টি করছে। দুদক আসল দূর্নীতিবাজকদের ধরছে না। নেতারা চ্যাটাং চ্যাটাং কথা বলছে। প্রধানমন্ত্রী শুধু 'উন্নয়ন' 'উন্নয়ন' জিকির তুলছেন। দেশ উন্নয়নের মহাসড়কে। তাই আজও মানুষ রাস্তায় ঘুমায়, আজও সরকারি হাসপাতালে দালাল, চুরী-ডাকাতি আর ছিনতাই হচ্ছে। এই শহরের গুলোশান এলাকাটা ভালো লাগে। মনে হয় বিদেশ চলে এসেছি।

সন্ধ্যা সাত টার পরে প্রেসক্লাবের সামনে কিছু দরিদ্র ও অসহায় মেয়েরা-
সস্তা মেকাপ মুখে মেখে ফুটপাতে দাঁড়িয়ে থাকে খরিদদার না পাওয়া পর্যন্ত। শুধু কি প্রেসক্লাবের সামনে? কাকরাইল, সংসদ ভবন, মহাখালি, ফার্মগেট, মৎস ভবন, হাইকোর্ট মাজারসহ এ শহরের অনেক এলাকায় এদের দেখা যায়। সন্ধ্যার পর থেকেই এই শহরের বার গুলো লোকজন দিয়ে ভরে যায়। লাখ লাখ টাকার মদ মানুষ খেয়ে ফেলে। মগবাজার, মহাখালি, বনানি আর পুরান ঢাকার আবাসিক হোটেল গুলো জমে উঠে নারী ও মদে। দরিদ্ররা নেশা করে সস্তার গাঁজা দিয়ে। সত্যি কথা বলতে সব কিছু মিলিয়ে এই শহরের অবস্থা ভালো না। একদম গজব অবস্থা। সকালে দুপুরে বা রাতে যখন বাসে উঠবেন বসার জন্য সিট পাবেন না। যারা অফিসে চাকরি করে তারাও ভালো নেই। প্রতিটা অফিসে আছে, অফিস পলিটিক্স। সেই আছে দালালি আর চাটুকারিতা। মসজিদের ইমাম পর্যন্ত দালালি আর চাটুকারিতা করে। এই শহরের ছেলেমেয়রা বুঁদ হয়ে আছে ফেসবুক, টিকটক আর ইউটিউবে। তাদের জ্ঞানের বড় অভাব। পুরো জাতি পিছিয়ে আছে।

এই শহরের কোথাও শান্তি নেই।
ঘর থেকে বাইরে বের হলেই অসংখ্য ভিক্ষুক আপনার সামনে এসে হাত পাতবে। রাস্তায় সিগনালে গাড়ি থামলেই ভিক্ষুক এসে হাজির হয়। বাজারে গেলেও ভিক্ষুক, বাসের ভিতরে একটু পর ভিক্ষুক উঠবে। উঠবে নানান রকম হকার, হিজড়া। এরপর আছে মসজিদের হুজুর, তাঁরা এসে মসজিদ নির্মানের জন্য টাকা চাইবে। ঢাকা শহরে মদজিদের অভাব নেই। প্রতিটা এলাকায় ৫/৬ টা করে মসজিদ। যুগ যুগ ধরে হুজুররা মসজিদ আর এতিমখানার জন্য টাকা নিচ্ছে। যখন আযানের সময় হয়, সব গুলো মসজিদে একসাথে আযান শুরু হয়। একটা মসজিদের আযানও ভালো করে শোনা যায় না। আযানের মধুর ধ্বনি তখন বিকট শব্দে পরিনত হয়। মনে হয় হুজুররা মজা নিচ্ছেন আমাদের সাথে। রাস্তায় সিগনালে গাড়ি থামলে কোনো দুষ্ট ড্রাইভার হর্ন বাজালে তার দেখাদেখি অন্য ড্রাইভাররাও হর্ন বাজায়। বাজাতেই থাকে। ঠিক সেভাবে হজুররাও মজা নেয়। এই শহরের মানুষ অসভ্য ও বর্বর।

ঢাকা শহরে দেখার জিনিসের অভাব নাই।
চিড়িয়াখানা আজ থেকে বিশ বছর আগে যেমন ছিলো আজ আরও খারাপ হয়েছে। চলার রাস্তা গুলো ভাঙ্গা এবং যথেষ্ট নোংরা। প্রতিটা পশু রুগ্ন ও ভয়াবহ অসুস্থ। বাঘ, সিংহ সোজা হয়ে দাঁড়াতে পর্যন্ত পারে না। বোটানিক্যাল গার্ডেন, বদলা গার্ডেন, ধানমন্ডি লেক আরা রমনা পার্ক প্রেমের স্বর্গরাজ্য। কুৎসিত সেইসব প্রেম। লজ্জাহীন। গুলিস্তান, সায়দাবাদ, গাবতলী, কমলাপুর রেলস্টেশন, আর সদরঘাট গজব এলাকা। ভয়ঙ্কর নোংরা আর নানান রকম দুষ্টলোকে ভরা। ঢাকায় দুজন মেয়র আছেন। তাঁরা কি করেন আমি জানি না। তাঁরা যদি শুধু মাত্র ঢাকার ফুটপাত দখলমুক্ত করতে পারতো- তাহলে সমস্ত দেশের মানুষ তাদের স্যলুট দিতো। ঢাকা শহর হলো- মশার শহর। জ্যামের শহর। খারাপ লোকের শহর। নোংরা আবর্জনার শহর। চাটুকারিতা আর দালালির শহর। প্রতারণার শহর। ধান্দাবাজির শহর। পুরো বাংলাদেশ থেকে সমস্ত দুষ্টলোকেরা এ শহরে এসে শহরটাকে দুষিত করে দিয়েছে।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জুলাই, ২০২৩ দুপুর ২:৩৭
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ: রহস্যময় চৌধুরী ভিলা

লিখেছেন গ্রু, ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৩৩



পরদিন সকালে আকাশ পরিষ্কার। গতরাতের বৃষ্টির কোনো চিহ্ন নেই, শুধু রাস্তার ধারের গাছগুলো থেকে টুপটাপ জল পড়ছে। অনিরুদ্ধ তার জীর্ণ নীল রঙের পাঞ্জাবিটা পরে তৈরি হয়ে নিল। সে সাধারণত রিকশায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামপন্থী রাজনীতির বয়ান এবং জামাতের গাজওয়াতুল হিন্দ-এর প্রস্তুতি

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:২০


গোরা উপন্যাসে রবীন্দ্রনাথ নিজে ব্রাহ্ম হয়েও, ব্রাহ্ম সমাজের আদর্শের বিপরীতে "গোরা" নামে একটি চরিত্র তৈরি করেন। গোরা খুব কট্টরপন্থী হিন্দু যুবক। হিন্দু পরিচয়ে বড় হলেও, আসলে সে আইরিশ দম্পতির... ...বাকিটুকু পড়ুন

I have a plan

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:২২

আসেন নেতা পা বাড়ান সামনে এগিয়ে চলেন
প্ল্যান টা কী বলেন।

সামনে আজাদ পেছনে দিল্লি কোন দিকে যাই বলেন
প্ল্যান টা কী বলেন।

যে দিকেই যাই ৩৬ যাবে? সেইটা ক্লিয়ার করেন
প্ল্যান... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫ আগস্টের পর তো কিছুই বদলায়নি

লিখেছেন মুনতাসির, ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৯

অনেকেই বলেন, ৫ আগস্টের পর তো কিছুই বদলায়নি। এই কথাটার সূত্র ধরেই এগোনো যায়। ৫ আগস্টের পর আমাদের কোন কোন পরিবর্তন এসেছে, সেটাই আগে দেখা দরকার। হিসাব করে দেখলাম, বলার... ...বাকিটুকু পড়ুন

আদর্শের রাজনীতি না কোটি টাকার হাতছানি...

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:২৫



১. আমি অনেক আগে ব্লগে লিখেছিলাম, বাংলাদেশে ছোট দলগুলো নিষিদ্ধ করা উচিত। উন্নত দেশের মত ২/৩ টিতে থাকাই উত্তম। কারণ, ছোট দলের নেতাদের টকশো-তে গলাবাজি করা ছাড়া আর কোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×