
বর্তমানে বাংলাদেশে কোনো ভালো লেখক নেই।
আর যারা লেখালেখা করছেন, তাঁরা কি লিখছেন তাঁরা নিজেরাই জানেন না। বর্তমানের লেখকদের লেখায় জীবনের গল্প থাকে না। সমাজ থাকে না। সংস্কৃতি থাকে না। বর্তমান লেখকেরা নিজের লেখার গুণগান নিজেই করেন। এরা ফেসবুকে এসে নিজের লেখার সুনাম নিজেই করেন নির্লজ্জের মতোণ। একজন এসে বলবে, ''আমার অমুক বই সপ্তম মুদ্রন শেষ। পাঠকদের জানাতে চাচ্ছি, খুব শ্রীঘই অষ্টম মুদ্রন বাজারে আসবে''। আরেকজন লেখক বলবে, আমার অমুক বই কলকাতাতে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। কলকাতার সাহিত্যমহলে ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছে। কলকাতার অমুক প্রকাশনী আমার কাছে পাণ্ডুলিপি চেয়েছেন। বর্তমান লেখকেররা ফেসবুক নির্ভর হয়ে গেছেন। কিন্তু আমাদের হুমায়ূন আহমেদের ফেসবুক লাগেনি।
মূলত বর্তমান সময়ের লেখকরা ফেসবুক নির্ভর।
এদের লেখায় গভীরতা নেই। মানুষের জীবনের গল্প নেই। সময় নেই। ইতিহাস নেই। সততা নেই। আমাদের দেশের কোনো লেখক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের 'পার্থিব' মতো একটা বই লিখতে পারবে না। অথবা সুনীলের 'পূর্ব পশ্চিম' এর মতো একতা বই লিখতে পারবে না। আমাদের দেশের লেখকদের মেধা নেই। স্বচ্ছতা নেই। বর্তমান সময়ের লেখকরা দালাল এবং চাটুকার। এরা সত্য লিখতে পারেন না। এরা সবচেয়ে ভালো পারেন দালালি করতে আর চাটুকারিতা করতে। তারা শেখ হাসিনাকে নিয়ে বই লিখবেন, শেখ মুজিবকে নিয়ে লিখবেন, শেখ মুজিবের ছেলেকে নিয়ে লিখবেন। বাংলা একাডেমি থেকে কোনো ভালো বই বের হচ্ছে না। বর্তমানে যারা বাংলা একাডেমিতে কাজ করছেন এরা মগজহীন। এরা কি করে বাংলা একাডেমিতে চাকরি পেলো ভেবে পাই না। বিএনপি ক্ষমতায় এলে এরা মেজর জিয়া, খালেদা জিয়া আর তারেক নিয়ে লিখবে। বর্তমান সময়ের লেখকদের মধ্যে ব্যাক্তিত্ব নেই।
প্রতি বছর আমাদের দেশে বইমেলাতে ৩/৪ হাজার নতুন বই প্রকাশ পায়।
সব গুলো বই গার্বেজ। এইসব গার্বেজ লিখেই কেউ কেউ দালালি করে পুরস্কারও পেয়ে যাচ্ছেন। বাংলাদেশ হচ্ছে সব সম্ভবের দেশ। আমাদের দেশে সব সম্ভব। এই সমাজের খারাপ লোক গুলো আজকাল সাহিত্যে নিজের নাম লেখাতে চায়। সাহিত্যিক সেজে নিজের অন্যায় গুলো লুকাতে চায়। এজন্য তারা হাবিজাবি লিখছে, অথবা অন্য কাউকে টাকা দিয়ে লিখিয়ে নিচ্ছে। অনেকে নিজেই টাকা দিয়ে সেই বই ছাপাচ্ছে। এরপর নিজেই কুরিয়ার করে দেশের গন্যমান্যদের পাঠাচ্ছেন। আরেকটা বিষয় আমাদের দেশে লোকজন বই খুব কম পড়ে। পড়লেও কলকাতার লেখকদের বই পড়ে। আমাদের দেশে প্রকাশনী গুলোর করুণ অবস্থা। অনেক প্রকাশনী বন্ধ হয়ে গেছে। অনেক বইয়ের দোকান কাপড়ের দোকান হয়ে গেছে। খাবারের দোকান হয়ে গেছে। এই প্রজন্ম ব্যস্ত টিকটক, ফেসবুক আর ইউটিউব নিয়ে। লেখালেখি করতে যে জ্ঞান দরকার সততা দরকার তা আমাদের দেশের লেখকদের নেই।
আমাদের দেশে একজন লেখক ছিলেন- তার নাম হুমায়ূন আহমেদ।
তিনি লেখালেখি করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন। তার আত্মবিশ্বাস প্রবল ছিলো। তিনি জানতেন শুধু মাত্র লেখালেখি করে টিকে থাকা সম্ভব। তিনি লিখেছেন এবং লেখালেখি করেই উন্নত জীবনযাপন করেছেন। তার বই আজও মানুষ মুগ্ধ হয়ে পড়ে। এরকম লেখক বাংলাদেশে আর একজনও নেই। তাঁরা চাকরি করছেন। চাকরি না করলে তাদের না খেয়ে মরতে হবে। কারন তাঁরা হুমায়ূন আহমেদ নয়। তাদের নিজের লেখার প্রতি আত্মবিশ্বাস নেই। একজন সরকারি চাকরিজীবি ৫২ টা বই লিখেছেন। তিনি একটু পর পর ফেসবুকে এসে নিজের বইয়ের গুণগান করেন। বলেন, অফিসে কাজে ফাঁকে ফাঁকে আমি ৫২ টা বই লিখে ফেলেছি। সুবাহানল্লাহ। চিন্তা করে দেখুন, সরকারি করেন, অফিসে কাজ না করে সে বসে বসে সাহিত্য রচনা করছেন। একজন নীতিহীন মানুষ কি করে সাহিত্যিক হবেন? অফিস তো কাজের জায়গা, লেখালেখি করার জায়গা না। বাংলাদেশের এইসব লেখকেরা কলকাতার লেখকদের সাথে ছবি তুলে ফেসবুকে দেন। কিন্তু কলকাতার লেখকেরা বাংলাদেশের লেখকদের সাথে ছবি তুলে গর্ববোধ করেন না।
সহজ সরল সত্য কথা হলো- বর্তমানে বাংলাদেশে কোনো ভালো লেখক নেই।
যারা লেখালেখি করছেন তাঁরা দালাল এবং চাটুকার। সত্য লেখার মতো সৎ সাহস তাদের নেই। দেশের সমস্যা নিয়ে তাঁরা লিখেন না। দূর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে লিখেন না। অসৎ পুলিশ অফিসার, অসৎ সররকারী চাকরীজীবিদের বিরুদ্ধে লিখেন না। তাঁরা লিখেন শেখ রাসেলকে নিয়ে, শেখ মুজিবকে নিয়ে। সেইসব লেখাতে থাকে শুধু তেল আর তেল। বাংলা একাডেমি মানহীন হয়ে গেছে। লেখকেরা অযোগ্য ও অদক্ষ। আমাদের দেশের লেখকেরা অর্থনীতি, বিজ্ঞান, টেকনোলোজি এবং অংক বুঝেন না। তাদের লেখাপড়া কম। সুনীল একটা বই লেখার জন্য দেড়শ' বই আগে পড়ে নেন। আমাদের লেখকেরা গুগল করে বই লিখেনে। আমাদের দেশের লেখকেরা লোভী। ধান্দাবাজ। ভন্ড। লেখালেখি ভালো মানুষদের কাজ। দুষ্টলোকদের কাজ না।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই আগস্ট, ২০২৩ দুপুর ২:১৬

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



