
প্রিয় কন্যা আমার-
তোমাকে নিয়ে আমাদের সুন্দর সময় কেটে যাচ্ছে। এখন তুমি সব কথ বলতে পারো। অনেক রকম রঙ ঢং করতে পারো। আহ্লাদ করতে পারো। গতকাল রাতে হঠাত বিদ্যুৎ চলে গেলো। তোমার পাশে তোমার মা শুয়ে আছে। অথচ তুমি আমাকে ডাকছো- বাবা। ও বাবা। কারেন্ট চলে গেছে। আমার ভয় করছে। তুমি আসো। জলদি আসো। আমি গেলাম তোমার কাছে। তুমি বললে পাখা খুঁজে বের করো। আমাকে বাতাস করো। গরম লাগছে। মাঝে মাঝে তোমার ভাবসাব দেখে মনে হয় তোমার দশ বছর। অথচ তোমার বয়স মাত্র দুই বছর আট মাস। এখন তুমি আমাকে এবং তোমার মাকে ছাড়া আমার ভাই ভাবীর সাথে- বিয়ে, জন্মদিনের অনুষ্ঠানে যাও। গতকাল ওয়ারিশের জন্ম দিনে গেলে। রাত সাড়ে এগারোটায় বাসায় ফিরলে। জন্ম দিনের অনুষ্ঠান থেকে কেক আর বেলুন নিয়ে এলে।
প্রিয় কন্যা ফারাজা তাবাসসুম,
এখন তুমি একাএকা গোছল করতে চাও। এমনকি একাএকা দাঁত ব্রাশ করো। তোমার মা তোমার জন্য আলাদা খাবার রান্না করে। আমাদের খাবার ঝাল। তুমি ঝাল খেতে পারো না। তুমি ভাত খেতে বসলে আগে মাছ বা মাংস খাও। শেষে ভাত খাও। তোমাকে ভাত খাওয়াতে তোমার মায়ের এক ঘণ্টা সময় লাগে। খাওয়ার সময় তুমি অনেক বায়নাক্কা করো। মোবাইলে কার্টুন ছেড়ে দিতে হয়। তুমি মুখে খাবার নিয়ে বসে থাকো। চিবাও না। তোমাকে তাড়া দিতে হয়। খাওয়া নিয়ে তুমি বেশ ঝামেলা করো। তোমার মা তোমার জন্য সব রকম খাবার বাসায় তৈরি করে। মিষ্টি, কেক, পাস্তা। সুরভি তোমাকে বাইরে খাবার খাওয়াতেই চায় না। তোমার সমস্ত খাবার তোমার মা তিন গুণ বেশি দাম দিয়ে কিনে। দুধ, ডিম, ঘি, বিস্কুট, খেজুর, মূরগী ইত্যাদি।
প্রিয় কন্যা ফারাজা,
এখন চারিদিকে ডেঙ্গু। আরিশ ডেঙ্গু হয়ে হাসপাতালে ভরতি। প্লাটিলেট দিন দিন কমছে। আরিশের মায়েরও ডেঙ্গু হয়েছে। আমাদের বাসায় মোট পাঁচটা বাচ্চা। সারাক্ষণ ডেঙ্গু আতঙ্কে আছি। অবশ্য আমি নিয়মিত মশার ওষুধ ঘরে স্প্রে করে দিচ্ছি। মশার কয়েল দিন রাত চব্বিশ ঘন্টাই জ্বালিয়ে রাখছি। তবু দুই একটা মশা দেখা যাচ্ছে। মশা অতি তুচ্ছ, অতি ক্ষুদ্র একটা প্রানী। অথচ দেখো কি ভয়ঙ্কর! মশার কামড়ে মানুষের মৃত্যু হয়ে যাচ্ছে। মৃত্যু যেন কোনো ঘটনা না! আমাদের দেশে ব্যাঙ কমে গেছে। আগে সামান্য বৃষ্টি হলেই ব্যাঙের ডাক শোনা যেত। আমি যে মাঠে ফুটফল খেলতাম, সে মাঠে কত ব্যাঙ লাফাতে দেখেছি। আজকাল গ্রামে গেলেও ব্যাঙ দেখা যায় না। ব্যাঙ থাকলে মশার পরিমান অনেক কমে যেতো। আমি নিজেকে নিয়ে ভাবি না। আমার সব চিন্তা তোমার জন্য।
ফারাজা তাবাসসুম,
তুমি আমার মোবাইল নিয়ে ইউটিউব দেখো। তোমার পছন্দ বাংলা রাইমস, কোকোমেলন কার্টুন আর কয়েকটা গান। টানা এক ঘন্টা তুমি ইউটিউব দেখো। ইহা সঠিক না। ভাত খাওয়ার সময়ও তোমার ইউটিউব দেখতে হয়। নইলে তুমি খেতে চাও না। এটা তো ভালো অভ্যাস নয়। পরীকে বলেছি, প্রতিদিন যেন তোমাকে এক ঘন্টা করে পড়ায়। সে পড়াচ্ছে না। তার নাকি সময় নাই। এই বয়সেই তো বাচ্চারা অ আ, ক খ, এ বি সি, এক দুই তিন ও নানা রকম বংলা ইংরেজি ছড়া কবিতা শিখে। কিন্তু তুমি ইউটিউব নিয়ে ব্যস্ত। মাঝে মাঝে তুমি ইউটিউব থেকে শেখা গান গাও। আমি অবাক হয়ে যাই। বর্তমানে ইউটিউবে গজব অবস্থা। ইঊটিবারদের একটাই টার্গেট। ভিউ বাড়ানো, সাবস্ক্রাইবার বাড়ানো। এতে তাদের লাভ কিন্তু যারা দেখে তাদের মগজ কমতে থাকে।
ফারাজা তাবাসসুম খান (ফাইহা),
সমাজে যারা ভালো কাজ করে, মানুষের উপকারে আসে তাঁরা মহান মানুষ। আমাদের বহু ইউটিবার আছে, এদের লাখ লাখ দর্শক। কিন্তু এরা তো সমাজের কোনো উপকার করছে না। বরং এদের মগজ দুর্বল করে দিচ্ছে। অথচ একদল লোক তাদের ফলো করে যাচ্ছে। যেমন আয়মান সাদিক, রাফসান, সালমান মুক্তাদির। এরা সমাজের উপকার না করেও নিজেরা লাভবান হচ্ছে। ইউটিউ টা এখন হয়ে গেছে নষ্টামির জায়গা। আর এই প্রজন্ম এসব নষ্টামি সমানে গিলছে। সমাজ নির্মানে এইসব ইউটিবারদের কোনো ভূমিকা নেই। ইউটিবার তৌহিদ আফ্রিদিকে দেখি মানুষের বিপদে ঝাঁপিয়ে পড়তে। যাদের বাড়িঘর বন্যায় ডুবে গেছে, তৌহিদ আফ্রিদি তাদের কাছে গিয়ে সাহায্য সহযোগিতা করছে। কিন্তু অন্য কোনো ইউটিবার এগিয়ে আসছে না।

সর্বশেষ এডিট : ২০ শে আগস্ট, ২০২৩ বিকাল ৩:০৭

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



