
আমাদের মহল্লায় এক বড় ভাই ছিলেন।
তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তেন। আমরা তাকে খুব সমীহ করতাম। তার নাম সুমন। লেখাপড়ায় অনেক ভালো। সহজ সরল ভালো মানুষ সুমন ভাই। আমরা যখন গলির মধ্যে ক্রিকেট খেলতাম তখন সুমন ভাই বলতেন- দে তো এক ওভার খেলি। এক ওভার খেলেই তিনি চলে যেতেন, বলতেন সামনে পরীক্ষা। পড়তে হবে। যাই রে। সুমন ভাই অনার্স শেষ করে মাস্টার্সে ভরতি হলেন। তখন এক মেয়ের সাথে তার প্রেম হয়ে গেলো। প্রায়ই সুমন ভাইকে দেখতাম- মিতু আপার সাথে। তাঁরা রেললাইন দিয়ে প্রতিদিন বিকেলে হাটতেন। তাদের দেখে আমার ভালো লাগতো। মাঝে মাঝে মিতু আপা ফুচকা খেতেন। পাশে দাঁড়িয়ে থাকতেন সুমন ভাই। আমি মনে মনে ভাবতাম- একদিন বড় হয়ে আমিও প্রেম করবো।
সুমন ভাই বেশ একটা চাকরি পেয়ে গেলেন।
আমাদের সবাইকে ভরপেট মিষ্টি খাওয়ালেন। আমাদের নতুন ক্রিকেট ব্যাট-বল কিনে দিলেন। তারপর মিতুকে বিয়ে করে ফেললেন। সেই বিয়েতে আমি উপস্থিত ছিলাম। মিতু ভাবীর মা রাজনীতি করেন। তখন বিএনপি ক্ষমতায়। মিতু ভাবীর মা আওয়ামীলীগের রাজনীতি করতেন। কঠিন রাজনীতি করতেন। রাজপথের সাহসী নেত্রী ছিলেন মিতু ভাবীর মা। আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় এলো। সবাই ধরেই নিলো- এবার তিনি বড় একটা পদ পাবেন। কারন উনি বহুবার জেলে গেছেন। পুলিশের মার খেয়েছেন। অনেক অত্যাচার সহ্য করেছেন। কিন্তু আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় এসে মিতু ভাবীর মাকে দল থেকে বের করে দিলো। মিতু ভাবীর বাবা রাজনীতি করেন না। কিন্তু তিনি তাঁরা স্ত্রীকে সব রকম বুদ্ধি পরামর্শ দিতেন। মিতু ভাবীর বাবা জমি আর ফ্লাট কেনা বেচার কাজ করেন। কেনাবেচার এই পেশাকে দালালি বলা যেতে পারে। ইনকাম মন্দ নয়।
সুমন ভাই চাকরিতে ভালো করতে থাকলেন।
কারন, সুমন ভাইয়া সৎ, বুদ্ধিমান ও পরিশ্রমী মানুষ। প্রতি বছর একটা করে প্রমোশন পেতে থাকলেন। তিনি গাড়ি করলেন। জমি কিনলেন। ফ্লাট কিনলেন। ছোট ভাইকে লেখাপড়া করতে বিদেশ পাঠালেন। সুমন ভাই প্রতি বছর পরিবার নিয়ে ইউরোপ ভ্রমনে যান। মিতু ভাবী গরীব ঘরের মেয়ে ছিলেন। তার বাবা মা তার কোনো শখ আহ্লাদ পূরন করতে পারেন নি। এখন মিতু ভাবী স্বামীর কল্যানে প্রচুর বিলাসীতা করেন। রাস্তায় দরিদ্র মানুষ দেখলেই গাড়ি থামিয়ে তাকে নগদ অর্থ দিয়ে সাহায্য করেন। মহল্লার কেউ টাকার সমস্যায় পড়লে মিতু ভাবীর কাছে আসে। মিতু ভাবী রান্না করে প্রতিবেশীদের খাওয়ান। মিতু ভাবী প্রতি সপ্তাহে শপিং করেন। দুই হাতে পাগলের মতো টাকা খরচ করেন। নিজের সমস্ত শখ আহ্লাদ মিটিয়ে নিচ্ছেন। মিতু ভাবীর বাবা মা তাদের কন্যার শখ আহ্লাদ কিছুই পূরন করেত পারেন নাই। মিতু ভাবীর ভাগ্য ভালো, তার স্বামী পয়সাওলা লোক।
মিতু ভাবীর বাবা মা এখন বয়স হয়েছে।
তাদের আয় ইনকাম নেই। মিতু ভাবী তার বাবা মাকে নিজের কাছে এনে রেখেছে। মিতু ভাবীর এক ভাই আছে। সেই ভাই তার বাবা মাকে ঘরে জায়গা দেয় নাই। ভাই বলেছে, 'আব্বু আম্মুকে আমার বউ পছন্দ করে না। তাদের থাকলে দিলে আমার ঘরে অশান্তি হবে'। যাইহোক, মিতু ভাবীর বাবা মা এখন মেয়ের সাথে মেয়ের শ্বশুর বাড়িতে থাকেন। তাঁরা এখন গাড়িতে চলাচল করেন। এসি ঘরে থাকেন। মেয়ের সাথে সাথে তারাও কিছুটা বিলাসিতা করছেন। এদিকে সুমন ভাইয়ের মা অসুস্থ। মিতু ভাবী তার দিকে ফিরেও তাকায় না। নিজের বাবা মা আর শপিং এবং আড্ডা নিয়ে ব্যস্ত। একদিন রাগ করে মিতু ভাবী তার স্বাশুড়িকে ঝাড়ু দেখিয়েছেন। বলেছেন, এটা দিয়ে তোর কপালে মারবো। স্বাশুড়িরর অপরাধ- তিনি বলেছেন, টাকা পয়সা এত ফালতু কাজে অপচয় করো না বউমা। আর সারাদিন বাইরে বাইরে থেকো না। তুমি যাদের সাথে চলাফেরা করছো তাঁরা ভালো মানুষ না। এছাড়া সুমন ভাইয়ের মা বলেছেন, তোমার বাবা মা কত দিন থাকবে এই বাসায়? ৬/৭ মাস তো হয়ে গেলো।
মিতু ভাবী বদলে গেছেন। তার শখ বর্তমানে একটাই- বেহেশতে যাওয়া।
বাসায় পার্টি করেন। দুই হাতে অপ্রয়োজনে টাকা খরচ করেন। প্রচুর দান খয়রাত করেন। তার একটা সাত বছরের মেয়ে আছে, মেয়ের দিকেও মনযোগ দেয় না। মিতু ভাবীকে এক হুজুর বলেছেন, আপনি বেহেশতে যেতে চাইলে বাবা মায়ের সেবা করেন। বাবা মায়ের সেবা করলেই বেহেশতে যেতে পারবেন। মিতু ভাবী বেহেশতে যাবার লোভে বাবা মায়ের মুখে তুলে খাইয়ে দেন। বাবা মাকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যান। সব রকম সেবা যত্ন করছে। এদিকে ঘরে তার অসুস্থ স্বাশুড়ি তার কোনো খোজ খবর নেয় না। সুমন ভাই ব্যস্ত মানুষ। সকালে বের হোন রাতে বাসায় ফিরেন। আমার ধারনা, সুমন ভাই জানেন না, তার বউ যে উড়নচন্ডী স্বভাবের। এদিকে সুমন ভাইয়ের মা সারাদিন বাসায় একা বসে কান্না করেন। আল্লাহকে ডাকেন। আর নিজের রান্না নিজেই করে খান অসুস্থ শরীর নিয়ে। তাঁরা চোখের সামনে তার ছেলের বউ যা খুশি তাই করছে। এদিকে তার ছেলে টাকা রোজগারে ব্যস্ত। সেই টাকা উড়াচ্ছে মিতু। মিতুর বাবা মা।
কিছুদিন আগের কথা বলি-
অবিশ্বাস্য এক ঘটনা ঘটেছে। সুমন ভাই মিতু ভাবীকে ডির্ভোস দিয়েছেন। এখন মিতু ভাবীর থাকার জায়গা নেই। খাওয়ার ব্যবস্থা নেই। মিতু ভাবী বাবা মায়ের অবস্থাও করুণ। তাঁরা এখন পথের ফকির। মিতু ভাবী বিলাসিতা করতে পারছেন না। পাটি করতেন পারছেন না। তার বাবা মাকে মুখে তুলে খাইয়ে দিতে পারছেন না। মিতু ভাবী গাড়ি ছাড়া চলতেই পারতেন না। এখন মিতু ভাবী রাস্তায় হাঁটেন। তার বাবা মা বস্তিতে ঘর ভাড়া নিয়েছেন। সুমন ভাই তার বউয়ের পক্ষ হয়ে মায়ের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন। বলেছেন, মা আমি জানতাম না তোমার এই অবস্থা। আমি অনেক রাতে বাসায় এসে মিতুকে জিজ্ঞেস করতাম তোমার কথা। মিতু বলতো তুমি ভাল আছো। খেয়ে ঘুমিয়ে গেছো। তোমার শরীর ভালো। আমাকে ক্ষমা করো মা। আমি তোমার কুলাঙ্গার ছেলে। যাইহোক, মিতু ভাবীর জন্য আমার খুব মায়া লাগছে। এখন বেচারির কি হবে? সুমন ভাইয়ের উচিৎ হয়নি মিতু ভাবীকে তালাক দিয়ে দেয়া।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে আগস্ট, ২০২৩ বিকাল ৫:৫৭

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



