
পুরো ঢাকা শহরটাই এক অদ্ভুত শহর।
পুরো শহরটাই দেখার মতো। ব্যস্ত রাস্তার ফুটপাতে চায়ের দোকান। লোকজন নোংরা কাপে আগ্রহ নিয়ে চা খাচ্ছে। কেউ রুটি কলা খাচ্ছে। লোকজন রাজনীতি নিয়ে ফালতু আলাপ করে যাচ্ছে। কোনো মেয়ে রাস্তা দিয়ে হেটে গেলে ছেলেবুড়ো সবাই অতি কুৎসিত ভাবে তাকিয়ে থাকে। ব্যস্ত রাস্তায় উলটো দিক থেকে কেউ গাড়ি, বাইক, রিকশা চালাচ্ছে। আবার কেউ চিপা গলিতে গাড়ি পার্কিং করে রেখেছে। ড্রাইভার এসি ছেড়ে গাড়িতে বসে সমানে মোবাইল টিপে যাচ্ছে। এদিকে যে জটিল জ্যাম লেগে গেছে সেদিকে ড্রাইভারের কোনো চিন্তা নেই। কিছু বলতে গেলে ড্রাইভার বলবে- চুপ। একদম চুপ। কার গাড়ি এটা জানেন? প্রতিদিন যেসব এলাকায় ছিনতাই হয় সেসব এলাকায় কোনো টহল পুলিশ দেখা যায় না। টহল পুলিশ গুলো নিরিবিলি জায়গায় গিয়ে মোবাইল টিপাটিপিতে ব্যস্ত।
ঢাকা শহরের মানুষ গুলো রাস্তায় বের হলেই অস্থির হয়ে যায়।
অমানবিক হয়ে যায়। একজন সাংসারিক মানুষ, যার ভালোবাসার ছোট ছেলেমেয়ে আছে, মমতাময়ী স্ত্রী আছে, সেও রাস্তায় বের হলে অমানবিক আচরণ করে। একসময় বাসে বয়স্ক নারী পুরুষ দেখলেই সকলে নিজের সিট ছেড়ে দিয়ে তাদের বসতে দিতো। এখন কেউ নিজের সিট ছেড়ে দেয় না। বরং সিটে বসে মোবাইল টিপে। অথচ মায়ের মতোন বয়সী মহিলা দাড়িয়ে থাকে। রাস্তায় বের হলেই আপনি এরকম দৃশ্য হরহামেশাই দেখতে পাবেন। শাহবাগ যাদুঘরে বা সদরঘাট আহছান মঞ্জিল গিয়ে কি হবে? ঢাকা শহরের মানুষ ময়লার গাড়িতে ময়লা না ফেলে রাস্তায় ময়লা ফেলতে বেশি পছন্দ করে।
ঢাকার সব রাস্তায় আপনি অনেক ভিক্ষুক পাবেন।
ভিক্ষুকেরা তাদের ভিক্ষা চাওয়ার স্টাইল বদলেছে। কেউ কেউ বলবে রুটি কলা কিনে দেন। কেউ বলবে ভাত খাবো। কেউ প্রেসক্রিপশন দেখিয়ে বলবে ওষুধ কিনে দেন। কেউ বলবে চিকিৎসার জন্য টাকা প্রয়োজন। গতকাল সন্ধ্যায় আমি একজন ভিক্ষুক পেয়েছিলাম মিরপুর দশ নম্বরে। সে হুইল চেয়ারে করে ভিক্ষা করে। ভিক্ষুকের বয়স ২৫/৩০ হবে। একটু আগে আমি দেখেছি ভিক্ষুকটি কাবাব আর নান রুটি খাচ্ছে। কেউ হয়তো কিনে দিয়েছে। যাইহোক, আমি রাব্বানী হোটেলের সামনে দাড়িয়ে ছিলাম। ভিক্ষুক বলল আমি ভাত খাবো। আমি বললাম সন্ধ্যায় ভাত খাবে কেন? মানুষ ভাত খায় রাতে। ভিক্ষুক বলল আমি রাতেই খাবো। আমাকে দুই শ টাকা দিয়ে দেন। আমি খেয়াল করে দেখলাম ভিক্ষুকের কোলের উপর এক বান্ডিল টাকা। কমপক্ষে সেখানে ৫ হাজার টাকা হবে। বললাম, তোমার কাছে যে পরিমান টাকা আছে সেই টাকা দিয়ে পনের দিন তিনবেলা খেতে পারবে। ভিক্ষুক বলল, আমার পাচ লাখ টাকা লাগবে। জমি কিনব।
মিরপুর চিড়িয়াখানা আরেক গজব জায়গা।
নোংরা প্রচন্ড। হকার গুলো বিরক্ত করে। চিড়িয়াখানা ঢুকতেই এক হুজুর মাইকে সুর দিয়ে বলতে থাকে মসজিদের জন্য টাকা দেন। ও ভাই গো, ও আম্মাজ্বী গো। এই টাকা হাশরের ময়দানে কাজে দিবে গো। চিড়িয়াখানার পশু গুলো রুগ্ন। বাঘ, সিংহ দেখলে মায়া লাগে। শুকিয়ে গেছে। যেন তাদের উঠে দাড়াবার মতো শক্তি নেই। কাচের ঝারে কিছু সাপ আছে, সেই সাপ দেখাই যায় না। কাচের ঝার গুলো গত বিশ বছরে পরিস্কার করা হয়নি। চিড়িয়াখানার পাশেই বোটানিক্যাল গার্ডেন। সুন্দর প্রাকৃতিক পরিবেশ। অনেক গাছপালা আছে। সমস্যা হলো প্রচুর হকার যথেষ্ট বিরক্ত করে। সেই সাথে আছে প্রেমিক প্রেমিকার অসৎ নোংরা কর্মকাণ্ড। ওরা লজ্জা পায় না। অথচ ওদের কর্মকাণ্ড আপনাকে লজ্জা দিবে। তবে ভোরবেলা যেতে পারেন। গাছপালার মধ্যে দিয়ে হাটতে ভালোই লাগে। অতি মনোরম পরিবেশ।
ঢাকা শহরে শান্তি নাই। প্রতিটা অলিগলিতে বখাটে দিয়ে ভরে গেছে।
কিশোর গ্যাং এর পোলাপান ছাত্রলীগের মতো ভয়ংকর। সেদিন রাত এগারোটায় আমাদের এলাকায় কিশোর গ্যাং একবাড়িতে হামলা করেছে। কারন সেই বাড়িতে এক স্কুল পড়ুয়া মেয়ে আছে। কিশোর গ্যাং এর এক সদস্য সেই মেয়েকে ভালোবাসে। এই শহরে ফুটপাত ও রাস্তা দিয়ে শান্তিতে হাটতে পারবেন না। অসংখ্য হকার তাদের দোকান বসিয়ে রেখেছে। হকাররা বলে ফ্রি ফ্রি বসি নাই রাস্তায়। প্রতিদিন পুলিশকে টাকা দেই, স্থানীয় নেতাকে টাকা দেই। ট্রাফিক পুলিশকে বিশ টাকা দিলেই সিগন্যাল ফেলে দেয়। এই ফাকে বাসের হেল্পপার যাত্রী উঠিয়ে নেয়। পেছনে এম্বুলেন্স প্যাপু বাজাতেই থাকে। রোগী মরলে মরুক তাতে কার কি! রমনা পার্কে যেতে পারেন। সেখানে অসংখ্য টিকটক প্রতিবন্ধীর দেখা পেয়ে যাবেন। ঢাকা শহরে আপনি কোথাও শান্তি পাবেন না। ধরুন আপনি রাস্তা দিয়ে হেটে যাচ্ছেন, হঠাৎ শুরু হবে একসাথে ৪/৫ টা মসজিদে আযান। একটা মসজিদের আযান আপনি স্পষ্ট শুনতে পারবেন না। হুজুরেরা মাইকে বিশ্রী গলায় আযান দেয়। যা শ্রুতিমধুর নয়। আপনার মাথা ধরে যাবে।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই অক্টোবর, ২০২৩ রাত ১২:৫৬

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




