
হুমায়ুন আহমেদের মিসির আলী।
মিসির আলীর তুলনা হয় না। চমৎকার একটা চরিত্র। বয়স তার ৫০ থেকে ৬০ এর মধ্যে। বিয়ে করেননি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্ট টাইম শিক্ষক। ঢাকার ঝিগাতলায় একটা ছোট বাসা ভাড়া নিয়ে একা থাকেন। মনস্তাত্ত্বিক বিষয়ে তার অনেক জ্ঞান। মিসির আলি সৎ মানুষ। সহজ সরল জীবনযাপন তার। জটিলতা কুটিলতা মুক্ত একজন মানুষ। মানবিক এবং হৃদয়বান মানুষ মিসির আলি। চোখে তার কালো মোটা ফ্রেমের চশমা। মাথা ভরতি চুল। তার চোখের সমস্যা দিন দিন বাড়ছে। মিসির আলি মনে মনে ভাবেন, কত ভালো ভালো বই আছে। সেগুলো না পড়েই একদিন মরে যেতে হবে। আফসোস। মিসির আলির খারাপ একটা অভ্যাস হলো- তিনি প্রচুর সিগারেট খান।
বাংলা সাহিত্যে অনেক গোয়েন্দা চরিত্র আছে।
ফেলুদা থেকে শুরু করে বোমকেশ। কিন্তু বাংলাদেশের লেখক হুমায়ুন আহমেদ দারুণ এক চরিত্র সৃষ্টি করেছেন। অনেক জ্ঞানীগুনী মানুষরা বলেছেন, হুমায়ুন আহমেদের সব লেখা ভেসে গেলেও মিসির আলি আজীবন টিকে থাকবে। মিসির আলীকে নিয়ে লেখা হুমায়ুন আহমেদের অনেক গুলো বই আছে। প্রথম বইটার নাম- 'দেবী'। দ্বিতীয় বইটার নাম- 'নিশীথিনী'। 'নিশীথিনী' বইটা অসাধারণ একটা বই। এই বইটা আমি প্রতি বছর একবার করে পড়ি। নিশীথিনী উপন্যাসটা নিয়ে সিনেমা তৈরি করা হয়েছে। সিনেমার মেকিং সুন্দর হয় নাই। 'বাঘবন্দি' মিসির আলি নামে চমৎকার একটা বই আছে। আসলে মিসির আলিকে নিয়ে লেখা প্রতিটা বইই অসাধারন।
বাংলাদেশের অন্য কোনো লেখক মিসির আলীর মতো একটা চরিত্র তৈরি করতে পারেনি।
বাংলাদেশ এবং কলকাতাতে মিসির আলি দারুণ জনপ্রিয়। 'বৃহন্নলা' নামে একটা বই আছে। দারুন এক বই। রহস্য উন্মোচন করেন মিসির আলি। মিসির আলিকে নিয়ে শেষ বইটা হচ্ছে- 'যখন নামিবে আধার'। মিসির আলি প্রচুর পড়াশোনা করেন। লোড শেডিং হলে মোমবাতি জ্বালিয়ে পড়েন। এমনকি তিনি রান্না করার সময়ও বই পড়েন। অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভরতি হলেও বই পড়েন। মিসির আলির বাসায় কেউ ঘরের কাজ করতে এলে, মিসির আলি তাকে লেখাপড়া শেখান। কিন্তু কাজের ছেলেটা ঘরের জিনিস নিয়ে পালিয়ে যায়। মিসির আলিকে নিয়ে লেখা আরেকটা বইয়ের নাম বলতে চাই- 'তন্দ্রা বিলাস' দারুণ এক বই।
মিসির আলি মানুষের সমস্যার সমাধান করেন।
তার জন্য তিনি কোনো টাকা নেন না। মিসির আলি বড় অদ্ভুত এক চরিত্র। তার পিস্তল নেই। অন্য গোয়েন্দাদের মতো মাথায় ওয়েস্টার্ন হেট পরেন না। মিসির আলির আছে শুধু বুদ্ধি। স্বচ্ছ তীক্ষ্ণ বুদ্ধি। মিসির আলি অতি তুচ্ছ জিনিসও মন দিয়ে দেখেন। তার দেখার ক্ষমতা অসাধারণ। আমরা চোখ খুলে যা দেখি না, মিসির আলি চোখ বন্ধ করে তার চেয়ে অনেক বেশি দেখেন। উনার মতো এরকম মানবিক, ধারালো বুদ্ধির মানুষ সচারাচর দেখা যায় না। লোভহীণ একজন মানুষ। শিক্ষক হিসেবে মিসির আলি অনেক জনপ্রিয়তা। মিসির আলি ছোট ছোট ছেলেমেয়ে দেখলে ভাবেন- বিয়ে করলে তারও ছেলেমেয়ে থাকতো।
একবার আমেরিকা থেকে এক দাওয়াত আসে।
দাওয়াতের সাথে তারা প্লেনের টিকিট পর্যন্ত পাঠিয়ে দেয়। কিন্তু মিসির আলি আমেরিকায় সেই দাওয়াতে যাননি। কারণ তার কাজের মেয়েটা অসুস্থ। এদিকে আমেরিকার সেই অনুষ্ঠানে যাওয়ার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকেরা তোড়জোড় শুরু করেছেন। মাঝে মাঝে মিসির আলি রহস্যের সমাধানের জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চিঠি লিখে পাঠান। যাদের কাছে চিঠি লিখেন, তাদের সাথে মিসির আলি পিএইচডি করেছেন। আমাদের হুমায়ুন আহমেদ বেচে নেই। বেচে থাকলে প্রতি বছর মিসির আলিকে নিয়ে লেখা একটা করে বই পেতাম। মিসির আলিকে নিয়ে লেখা গুলো বাংলা সাহিত্যের সম্পদ হয়ে থাকবে।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই অক্টোবর, ২০২৩ রাত ১২:৪৯

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




