somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রাজীব নুর
আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

মানুষের কোন কাজগুলো আপনার পছন্দ নয়?

১১ ই নভেম্বর, ২০২৩ রাত ১২:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



তখন আমরা কলেজে পড়ি।
একদিন দুপুর বেলা ধানমন্ডি রাপা প্লাজার সামনে দাড়িয়ে আছি। হঠাৎ দেখি আমার বন্ধু আলামিন সাইকেল চালিয়ে এক সাদা রঙের গাড়িকে ফলো করছে। আমি বন্ধুকে দেখে হাত ইশারা করলাম। বন্ধুও আমাকে দেখে হাত ইশারা করলো। কিন্তু সে সিরিয়াস ব্যস্ত। সাদা প্রাইভেট কারে এক মেয়ে বসা। আলামিন সাইকেলে করে সেই মেয়েকে ধরতে চেস্ট করছে। আমি তার বন্ধু। বহুদিন পর তার সাথে দেখা। তবু আলামিন সাইকেল থামালো না। হাত ইশারা করে চলে গেলো। সে কি সাইকেল দিয়ে প্রাইভেট কারের সাথে পাল্লা দিয়ে পারবে? আলামিনের উপরে বেশ রাগ হলো।

বন্ধু আলামিনের সাথে আমার দেখা হয় বছরে একবার।
প্রতি বছর আলামিন শবে-বরাতের রাতে আমার সাথে দেখা করতে আসে। আর সারা বছর আলামিনের কোনো খোজ খবর নাই। শবে- বরাতের রাত ঠিক একটায় এসে ফোন দিবে। বলবে, দোস্ত আমি তোর বাসার মসজিদের সামনে দাড়িয়ে আছি। কষ্ট করে একটু নিচে নেমে আয়। আমি বলি, বাসায় আয়। চালের আটার রুটি আর হাসের মাংস ভূনা খেয়ে যা। আলামিন রাজী হয় না। আমি নিচে নেমে বন্ধুর সাথে দেখা করি। আলামিন আমাকে জড়িয়ে ধরে। দুই বন্ধু কোনো চায়ের দোকানে বসি। সুখ দুঃখের গল্প কবি। বড় ভালো লাগে। বন্ধুর বাসা ডেমরা। রানীমহল এলাকায়।

তখন করোনা চলছিল। যথারীতি শবে-বরাত এলো।
ঠিক রাত একটায় আলামিন এসে হাজির। বন্ধুর সাথে দেখা হলো। বললাম, আমরা সবাই বিয়ে করেছি। বাচ্চাকাচ্চা হয়ে গেছে। তুই কেন বিয়ে করলি না। আলামিন বলল, তোর মনে আছে- যখন আমরা কলেজে পড়ি। একবার তুই ধানমন্ডি রাপা প্লাজার সামনে দাড়িয়েছিলি। আমি সাইকেল দিয়ে এক প্রাইভেট কারকে ধরার চেষ্টা করছি। গাড়িতে এক মেয়ে বসা। সেই মেয়েটাকে পাইনি বলে আজও আমি বিয়ে করিনি। বন্ধু আলামিন বর্তমানে উকিল পেশায় নিয়োজিত। এই হচ্ছে আলামিনের গল্প। কি অদ্ভুত ও কত রকমের অদ্ভুত মানুষের জীবন। একবার মতিঝিলে আলামিনের সাথে। আমাকে না চেনার ভান করে চলে গেলো।

আমি বাংলাদেশে বাস করি।
বিশ্বের অন্যান্য দেশের মানুষ গুলো কেমন আমি জানি না। তাদের সাথে মেশার সুযোগ হয়নি। জানি না তাদের রীতিনীতি আর মানসিকতা। তবে বিশ্বের সব মানুষের সুখ দু:খ গুলো একই রকম। প্রেম ভালোবাসা একই রকম। আনন্দের প্রকাশ একই রকম। মানুষের ভালো কাজ সবাই পছন্দ করে। মন্দ কাজ গুলো কেউই পছন্দ করে না। বাংলাদেশের মানুষ গুলো মূলত ইতর শ্রেণীর। না সব মানুষ ইতর নয়। তবে বেশির ভাগ মানুষ'ই ইতর শ্রেণীর। ইতর লোকদের হাসির মধ্যেও কুটিলতা প্রকাশ পায়। পুরো বাংলাদেশের দুষ্ট লোকেরা ঢাকায় এসে জড়ো হয়েছে।

মানুষের হাজার রকম কর্মকাণ্ড আছে, যা আমি অপছন্দ করি।
বর্তমান যুগটা হচ্ছে অবিশ্বাসের যুগ। এই যুগে কেউ কাউকে বিশ্বাস করে না। ভাই ভাইকে বিশ্বাস করে না। বোন বোনকে বিশ্বাস করে না। মা বাবা ছেলেমেয়েকে বিশ্বাস করে না। ছেলেমেয়ে মা বাবাকে বিশ্বাস করে না। বন্ধু বন্ধুকে বিশ্বাস করে না। অফিসের বস তার কর্মীকে বিশ্বাস করে না। সৃষ্টির সেরা জীব মানুষের আজ করুন অবস্থা। করুন পরিনতি। করুন অবনতি। এজন্য দায়ী মানুষের কর্মকাণ্ড। প্রতিটি মানুষের জন্য আমার মায়া হয়। মানুষের দু:খ কষ্ট গুলো আমাকে স্পর্শ করে। মানুষকে আড়ালে লুকিয়ে কাঁদতে আমি দেখেছি বহুবার। যাইহোক, মানুষের যে কাজ গুলো আমি পছন্দ করি না তার একটা তালিকাঃ

১। মিথ্যা কথা বলা। মানুষ মিথ্যা বলতে বলতে এখন অপ্রয়োজনেও মিথ্যা বলে। মিথ্যা মানুষের রক্তের সাথে মিশে গেছে। প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে রিকশা চালক পর্যন্ত মিথ্যা বলে। মসজিদের ইমাম, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সকলেই মিথ্যা বলে। পুরো বাংলাদেশ চলছে মিথ্যার উপরে। সবাই সবাইকে ঠকাচ্ছে।

২। নারীদের অসম্মান করা। একেতো ধর্ম নারীদের কোনঠাসা করে রেখেছে। এরউপর কতিপয় পুরুষ নারীদের অপমান অপদস্ত করে। এই আধুনিক যুগে এসেও নারীরা ঘরে বাইরে অবহেলিত। অথচ নারীরা হচ্ছে ধরনী। তাদের মাঝেই আমাদের বসবাস। নারীরা ভালো থাকলে, ভালো থাকলে সারা বিশ্ব।

৩। কাজে ফাকি দেওয়া। প্রতিটা অফিসেই কিছু অযোগ্য অদক্ষ লোক থাকে। এরা চাটুকারিতা ও দালালি করতে ওস্তাদ। বাংলাদেশের সব মানুষ যদি তাদের দায়িত্ব যথাযথ ভালো পালন করতো, তাহলে আমাদের দেশ অনেক দূর এগিয়ে যেতো। আমাদের ঢাকার দুই মেয়র অনেক চ্যাটাং চ্যাটাং কথা বলেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত তাঁরা ঢাকার ফুটপাত দখলমুক্ত করতে পারেননি।

৪। অতি ধার্মিকতা। আমাদের দেশে মসজিদের অভাব নেই। ঠিক সেই সাথে ঠগ, প্রতারকের অভাব নেই। পকেটে ঘুষের টাকা নিয়ে মানুষ নামাজ পড়ে। নামাজ পড়তে পড়তে কপালে স্থায়ী কালো দাগ বসিয়ে ফেলে। তবু ভন্ডামি, বদমাশি ছাড়ে না। তাদের পদবি তারা ধার্মিক। ধর্মের লেবাজ আছে। ধার্মিকেরা সমাজের জন্য ক্ষতিকর।

৫। বিয়েতে যৌতুক নেওয়া। বিয়েতে যৌতুক দেওয়া নেওয়া আজকাল একটা ফ্যাশন হয়ে দাড়িয়েছে। এই আধুনিক যুগে এসেও মানুষ যৌতুক দিচ্ছে, নিচ্ছে। শিক্ষিত অশিক্ষিত সব পরিবার যৌতুকের বিষয়ে একমত এবং তাদের নিরব সমর্থন আছে। যৌতুক না দিলে যেন মেয়ের বাপের সম্মান থাকে না। আবার অনেক যৌতুক না নিলে ছেলের বাপের যেন সম্মান থাকে না।

৬। অল্প বয়সে বিয়ে করা। প্রেম ভালোবাসা করে, লেখাপড়া শেষ করার আগেই এবং কর্মজীবনে প্রবেশ করার আগেই বিয়ে করে ফেলে। শেষ ফলাফল তালাক। তারপর মেয়েটা কাদে। সারা জীবন ধরে কাদে। বিয়ের বয়স হলেই বিয়ে করতে হয় না। আগে প্রতিষ্ঠিত হতে হয়। সফল হতে হয়। নিজের পায়ে দাঁড়াতে হয়। তারপর বিয়ে।

৭। অন্যের ক্ষতি করা। অন্যের ক্ষতি করতে, সর্বনাশ করতে বাংলাদেশের মানুষ ভীষন এক্সপার্ট। পুকুরে বিষ ঢেলে মাছ মেরে ফেলে। জমির ফসল নষ্ট করে দেয়। বিয়ে ভেঙে দেয়। গাড়ি বাসে আগুন দেয়। রাস্তায় ময়লা ফেলে। ফুটপাত দিয়ে বাইক চালিয়ে যায়। শত শত অন্যায় কাজ মানুষ হাসি মুখে করছে। কিছু মানুষ মন্দ কাজ করে তার প্রচুর টাকা নেই বলে আর কিছু মানুষ মন্দ কাজ করায় তার প্রচুর টাকা আছে বলে।

৮। দায়িত্ব পালন না করা। বাংলাদেশের মানুষ তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করে না। হোক কোনো মন্ত্রী, এমপি অথবা কোনো কেরানি। যে মানুষ তার পরিবারেরে প্রতি সঠিক দায়িত্ব পালন করে না। তার কাছ থেকে আর কি আশা করা যায়! ঠিক করে বাইক চালাতে পারে না। রাস্তাঘাট চিনে না। কিন্তু সে পাঠাও চালায়। ঠিক তেমনি কাজকাম কিছুই জানে না কিন্তু মামা চাচার জোরে বড় পদ দখল করে আছে।

৯। দুই বিয়ে করা। পরকীয়া করা। যারা অতি খচ্চর ও অতি বদ তারা প্রথম বউ থাকতে আরেকটা বিয়ে করে। আর যারা বেজন্মা তারা পরকীয়া করে। পরকীয়া আর ধর্ষণের শাস্তি একই হওয়া উচিত। দুঃখের কথা সমাজে মন্দ মানুষের সংখ্যা হু হু করে বাড়ছে। যেন মানুষ মন্দ হওয়ার প্রতিযোগিতা করছে।

১০। মানুষকে কষ্ট দিয়ে কথা বলা। অপমান করা। এক শ্রেণীর ইতর লোক অসহায় ও দরিদ্র মানুষকে কষ্ট দিতে পছন্দ করে। অপমান করতে পছন্দ করে। স্বয়ং আল্লাহপাক গরীবদের বেশি পছন্দ করেন। এই জন্য চারিদিকে এত এত গরীব অসহায় ও দরিদ্র মানুষ। আল্লাহ্‌ চেয়েছেন বলেই কেউ আলিশান বাড়িতে ঘুমায়। কেউ রাস্তায় ঘুমায়।

১১। প্রেম ভালোবাসা নাম দিয়ে নোংরামী করা। প্রেম ভালোবাসা মানেই কি নোংরামি করা? রিকশায়, পার্কে, লেকে, ফাস্ট ফুডের দোকানে। চ্যাটিং এ। এযুগের ছেলেমেয়েরা জানেই না প্রেম কি? ভালোবাসা কি? এযুগের ছেলেমেয়েদে লাজলজ্জা নেই বললেই চলে। এদের বাবা মা এদের জন্ম দ্যে ছেড়ে দেয়। আর এরা নোংরামি করে বেড়ায়।

১২। দূর্নীতি করে দেশের ক্ষতি করা। নব্যধনীরা সব দূর্নীতিবাজ। ছাত্রলীগ, মন্ত্রী, এমপি এবং তাদের ছত্রছায়ায় থাকা লোকজন অল্প সময়ে সীমাহীন টাকার মালিক হয়ে গেছে। এই সমাজে একজন চোর ছিনতাইকারী ধরার চেয়ে একজন দূর্নীতিবাজ ধরা সহজ। শেখ হাসিনা ব্রীজ, মেট্রোরেল, টার্মিনাল, টার্নেল, পদ্মাসেতু, রাস্তাঘাট নিয়ে ব্যস্ত। এদিকে তার দলের লোকজন দূর্নীতিতে ব্যস্ত।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই নভেম্বর, ২০২৩ রাত ১২:৪৫
১১টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাঘ আর কুকুরের গল্প......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৩২

বাঘ আর কুকুর দুটোই হিংস্র এবং সাহসী প্রাণী। বাঘ, কুকুর যতই হিস্র হোক মানুষের কাছে ওরা নেহায়েতই পোষ মেনে যায়। আমাদের সমাজে, রাজনীতিতে অনেক নেতাদের 'বাঘের বাচ্চা' বলে বিরাটত্ব জাহির... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমরা উকিলরা কেউ চিন্ময়ের পক্ষে দাঁড়াবো না , না এবং না

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৪২




সাবাস বাংলাদেশের উকিল । ...বাকিটুকু পড়ুন

আগরতলায় হাইকমিশনে হামলা কাকতালীয় না কি পরিকল্পিত?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৩২

গতকাল (২ ডিসেম্বর) ভোরে আগরতলার হিন্দু সংগ্রাম সমিতির বিক্ষোভকারীদের দ্বারা বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনের প্রাঙ্গণে হিংসাত্মক বিক্ষোভের পর ন্যাক্কারজনকভাবে আক্রমণ করে। বিভিন্ন তথ্যে চূড়ান্তভাবে প্রমাণিত যে বিক্ষোভকারীরা পূর্বপরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের সাথে যুদ্ধ করে ভারত লাভবান হবে বলে মনে করি না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:১০



আমাদের দেশে অনেক মুসলিম থাকে আর ভারতে থাকে অনেক হিন্দু। ভারতীয় উপমহাদেশে হিন্দু-মুসলিম যুদ্ধে মুসলিমদের সাফল্য হতাশা জনক নয়। সেজন্য মুসলিমরা ভারতীয় উপমহাদেশ সাড়ে সাতশত বছর শাসন করেছে।মুসলিমরা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ড. ইউনূস গণহত্যার মাস্টারমাইন্ড - শেখ হাসিনা।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৩৬


৫ই আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে পলায়নের পর বাংলাদেশের ক্ষমতা গ্রহণ করা নতুন সরকার কে বিপদে ফেলতে একের পর এক রেকর্ড ফোন কল ফাঁস করতে থাকেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×