
আজকের দিনটা হু হু করে চলে গেলো।
আজ একটা বিশেষ দিন ছিলো। কত প্লান ছিলো। ছোট কন্যা ফারাজাকে নিয়ে বেড়াতে বের হবো। আমি বাংলাদেশের পতাকাওলা গেঞ্জি পড়বো অথবা সবুজ লাল পাঞ্জাবী পড়বো। ফারাজাকে সবুজ লাল জামা পড়িয়ে বাপ বেটি ঢাকার পথে পথে ঘুরে বেড়াবো। ছবি তুলবো, ভিডিও করবো। রাস্তায় দাঁড়িয়ে আইসক্রীম খাবো। ফারাজা নৌকায় উঠতে চেয়েছে। তাকে নৌকায় উঠাবো। সকাল থেকেই আজ আমি ব্যস্ত ছিলাম। তবু কন্যাকে নিয়ে সন্ধ্যার একটু আগে বের হলাম। কন্যা রাস্তায় বের হয়েই আমার কোলে ঘুমিয়ে পড়লো। শেষে কন্যাকে নিয়ে বাসায় ফিরলাম। বাসায় যেতেই কন্যার ঘুম ভেঙ্গে গেলো।
কিছুদিন আগে আমাদের পরিবারে এক নতুন সদস্যের আগমন হয়েছে।
তার নাম রাখা হয়ছে কিয়ান। মানুষ মনে করে কিয়ান নামটা কোরিয়ান। আসলে নামটা আরবী নাম। নামটার অর্থ মাথার মুকুট। যাইহোক, কিয়ানের বয়স আজ ৪১ দিন হয়েছে। সে উপলক্ষ্যে কিয়ানের বাবা মা একটা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। ছোট একটা কমিউনিটি সেন্টার ভাড়া করা হয়েছে। সব কাছের আত্মীয়স্বজন দাওয়াত করা হয়েছে। পারিবারিক মিলনমেলা বলা যেতে পারে। আইটেম ছিলো কাচ্চি। সাথে জালি কাবাব আর বোরহানী। রান্না ভালো হয়েছে। তবে আমি দেরীতে যাওয়াতে ঠান্ডা খাবার খেতে হয়েছে। যদিও ওভেনে গরম করে দিয়েছে। ওভেনের গরম তো আর আসল গরম নয়। নকল গরম।
কিয়ানের অনুষ্ঠানে আমি গিয়ে পৌছাই বিকেল পাচ টায়।
তখন অনুষ্ঠান শেষ। চেয়ার টেবিল উঠিয়ে ফেলা হয়েছে। রাস্তায় আজ ভয়াবহ জ্যাম। বিশেষ দিন মানেই ঢাকায় গজব অবস্থা। জ্যাম থাকলে আজকের দিনটা আনন্দময় ছিলো। মেয়েরা সুন্দর লাল সবুজ শাড়ি পড়েছে। সুন্দর করে সেজেছে। কেউ কেউ মাথায় নানান রকম ফুল জড়িয়েছে। ছেলেরা লাল সবুজ পাঞ্জাবী পড়েছে। সবার মুখে হাসি হাসি। এমনকি রিকশা চালকরা আজ হাসি খুশি। কারন তারা প্রচুর ক্ষেপ পাচ্ছে। রেস্টুরেন্ট গুলোতে ভয়াবহ ভিড়। বসার জায়গা নেই। আমি সুরভিকে বলে দিয়েছি, বিশেষ দিন গুলোতে আমরা বাইরে যাবো না। জ্যামে বসে থাকার কোনো মানে হয় না।
বিয়ের আগে আমি ১৬ই ডিসেম্বরে দিনে ক্যামেরা কাধে নিয়ে ঘুরে বেড়াতাম।
অনেক ছবি তুলতাম। বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতাম। বিয়ের পর সুরভিকে নিয়ে বের হই। ঢাকা শহরের অনেক এলাকা ঘুরে বেড়াই। সরকারী বিল্ডিং গুলো সুন্দর লাইটিং করে। দেখতে ভালো লাগে। শীত এসে গেছে। ঠান্ডা বাতাস। রেস্টূরেন্টে খাওয়া। এখন কন্যা আছে। কন্যাকে নিয়ে যেতে হয়। আমি যখন কিশোর। তখন সারারাত জেগে থাকতাম। রাস্তার দেওয়ালে পতাকা লাগাতাম। মহল্লার সব ছেলেরা মিলে খিচুড়ি রান্না করতাম। আনন্দের দিন। আনন্দ করেই কাটিয়ে দিতাম। বয়স বাড়ছে, আনন্দের পরিমান কমছে। মাথায় সাদা চুলের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। ডাক্তার চশমাও দিয়েছেন।
বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে আজ বাসায় দারুন সব খাবার রান্না হয়েছে।
দুপুরে খিচুরী আর গরুর মাংস রান্না হয়েছে। গরুর মাংসটা দারুন হয়েছে। ১০০ তে আমি ১১০ দিবো। সুরভির রান্নার হাত ভালো। ছোটবেলা থেকেই আমার ইচ্ছা ছিলো, যে মেয়েকে বিয়ে করবো তার হাতের রান্না যেন দারুন হয়। আমি দুই হাত ভরতি করে বাজার করবো, সে রান্না করবে। আমি মজা করে খাবো। আমার এই ইচ্ছাটা পূরন হয়েছে। গত তিন দিন আগে আমার বাবার তৃতীয় মৃত্যু বার্ষিকী গেলো। এই তো সেদিন আব্বা করোনায় মারা গেলো। দেখতে দেখতে তিন বছর হয়ে গেলো! গ্রামের বাড়ীতে মিলাদ মাহফিল হয়েছে, মাদ্রাসার ছেলেরা কোরআন খতম দিয়েছে। গরীব দুঃখীকে খাওয়ানো হয়েছে। আমি গ্রামে যাইনি। আমার অন্য ভাইরা গেছে।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ রাত ৯:৫৭

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



