somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রাজীব নুর
আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

ফার্মেসীর গল্প

০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



করোনার আগের গল্প।
তখনও চারদিকে ধেয়ে করোনা আসে নাই। আমার বন্ধু সফিকের একটা ফার্মেসী আছে। অনেক বড় ফার্মেসী। মডেল ফার্মেসী। ফার্মেসীর ভেতরে একটা অফিস রুমও আছে। অফিস রুমে এসি আছে। মাঝে মাঝে আমি বন্ধুর ফার্মেসীতে যাই। বন্ধুর সাথে গল্প করি। চা খাই। গল্প করি। বন্ধু আবার সৎ মানুষ। সরকারের সব রকম নিয়ম মেনেই ফার্মেসী দিয়েছে। ড্রাগ লাইসেন্স, ট্রেড লাইসেন্স ইত্যাদি সবই করা হয়েছে। আমি জানি, আমি দেখেছি- বাংলাদেশে এমন কোনো ঘর নাই, যেখানে ওষুধ প্রয়োজন নেই। প্রতিটা ঘরে ঘরে ওষুধ লাগে। এজন্য বাংলাদেশের এমন কোনো জায়গা নেই- যেখানে ফার্মেসী নেই। সন্ধ্যার পর তো ফার্মেসী প্রচন্ড ভিড় হয়। যে ফার্মেসীতেই যাবেন, লোকজন দিয়ে ভরা। মানুষজন পাগলের মতো ওষুধ কিনছে। সামান্য সমস্যা হলেই মানুষ ওষুধ খায়।

সফিক বিয়ে করেছে। তার এক ছেলে, এক মেয়ে।
সফিকের বাবা মা কেউ বেচে নেই। এক বোন আছে। বোনের বিয়ে হয়েছে। বোন থাকে নেত্রকোনা। সফিকের সাথে সফিকের শ্বশুর থাকে। সফিকের শ্বশুর সারাদিন পত্রিকা পড়ে আর টিভিতে সিআইডি নাটক দেখে। সফিকের শ্বাশুড়ি বেচে নেই। সফিকের স্ত্রীর নাম মিতা। মিতা পৃথিবী নামক গ্রহের সবচেয়ে ভালো মেয়ে। বিনা দ্বিধায় বলা যাবে সফিকের পরিবার সুখী পরিবার। সফিক খুবই ভালো একজন মানুষ। দীর্ঘদিন মালোশিয়া ছিলো। মালোশিয়া থেকে দশ বছর পর দেশে ফিরে, বিয়ে করেছে। মালোশিয়া থাকতেই দেশে একটা ফ্লাট কিনেছে। এবং জমানো সব টাকা দিয়ে ফার্মেসী দিয়েছে। ফার্মেসীতে সে চারটা এসি লাগিয়েছে। ফ্রিজ আছে চারটা। ফার্মেসীর ভাড়া ৭৫ হাজার টাকা। মাসে বিদ্যুৎ বিল আসে ৩০ হাজার টাকা। পাচজন কর্মচারী আছে। ফার্মেসী ভালোই চলছে। অন্তত খরচ টা উঠে আসছে। ঠিকঠাক ভাবে করতে পারলে ফার্মেসী ব্যবসা মন্দ নয়।

সফিক কতটা ভালো ছেলে- তার একটা উদাহরণ দেই।
একবার সফিক বাসে উঠেছে। বাস থেকে নামার পর সফিকের মনে পড়লো- বাসের ভাড়া দেওয়া হয় নাই। সফিক সেই বাস খুজতে শুরু করলো। এক ঘন্টা দৌড়ে দৌড়ে সে সত্যিই সে বাস খুজে বের করলো- মহাখালি গিয়ে। ত্রিশ টাকা বাসের ভাড়া পরিশোধ করলো। অনেককে সে টাকা ধার দেয়। সফিক জানে ধারের টাকা ফেরত পাওয়া যাবে না। তবু দেয়। স্কুলের বন্ধু বান্ধব পেলে সফিক বুকে জড়িয়ে ধরে এবং বড় রেস্টুরেন্টে নিয়ে যায়। সফিকের স্ত্রী মিতা কতটা ভালো তার একটা উদাহরণ দেই। মিতা হয়তো রিকশা করে ফিরছে। সে দেখলো রিকশা চালকের শার্ট ছিড়া। মিতা রিকশা চালককে সফিকের দুটা শার্ট দিয়ে দিবে। কোনো ভিক্ষুক তার কাছে হাত পাতলে সে কখন ভিক্ষুককে ফিরিয়ে দেয় না। এমন কি বাসায় কোনো ভিক্ষুক এলে- তাকে জোর করে খাইয়ে দেয়। হাতে টাকা গুজে দেয়। মাঝে মাঝে মিতা রাস্তায় বের হয়। দরিদ্র মানুষদের বাজারে নিয়ে যায়- চাল, তেল, মাছ মাংস ইত্যাদি কিনে দেয়। আমি নিজে মিতা ভাবীর সাথে বাইরে গিয়েছি। নিজের চোখে দেখেছি, মিতা ভাবী পাগলের মতো দরিদ্র মানুষকে চাল, তেল, ডাল, মূরগী ইত্যাদি কিনে দিচ্ছে।

সফিক ওমরা করতে যাবে।
সে তার পুরো পরিবার নিয়ে যাচ্ছে। তাহলে ফার্মেসীতে থাকবে কে? সফিক আমাকে অনুরোধ করলো তার ফার্মেসীতে দশ দিন সময় দিতে। দিতেই হবে। দশ দিন পর সে ফিরে আসবে। তখন আমি বেকার সময় কাটাচ্ছি। সফিকের কথায় রাজী হলাম। ফার্মেসীর কিছুই আমি বুঝি না। জানি না। সফিক অবশ্য বলেছে, কঠিন কিছু না। কর্মচারীরাই চালিয়ে নেবে। আমার কাজ হচ্ছে ক্যাশ সামলানো। আমি সফিকের ফার্মেসীতে বসলাম। সব সাজানো গোছানো। এমনকি ওষুধ বিক্রি করতেও কোনো ঝামেলা নেই। সফটওয়্যার আছে। ওষুধের নাম লিখলেই বিস্তারিত সব চলে আসে। কোন কোম্পানীর ওষুধ। কত পিস আছে। দাম কত ইত্যাদি। ফার্মেসীতে আমি বেশ মজা পাছি। নতুন এক অভিজ্ঞতা। কেউ নগদ টাকা দিয়ে ওষুধ নিচ্ছে, কেউ কার্ড দিয়ে বিল পরিশোধ করছে। কেউ বিকাশে। এর মধ্যে আসছে ওষুধ কোম্পানীর লোকজন। তারা অর্ডার নিয়ে যাচ্ছে। কোম্পানীর লোক এসে নানান রকম ওষুধ দিয়ে যাচ্ছে। সবার সাথে আমার বেশ মিলে গেলো। কেমন একটা সুম্পর্ক তৈরি হয়ে গেলো। অদ্ভুত!

প্রতিদিন কোম্পানীর লোক এসে ওষুধ দিয়ে যায়।
বিল নিয়ে যায়। সব সাজানো গোছানো। সফিক আমার দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা করে দিয়ে গেছে। হোটেল থেকে যথাসময়ে খাবার চলে আসে। কোনোদিন খিচুড়ি, কোনোদিন বিরানী, কোনোদিন সাদা ভাত সাথে রুই মাছ বা অন্য কোনো মাছ। সন্ধ্যায় চলে আসে নাস্তা। একেকদিন একেক রকম নাস্তা। দারুন দারুন। আমি বেশ ভালো আছি। সুন্দর সময় যাচ্ছে। দোকানে ৯টা সিসি টিভি ক্যামেরা। সফিকের সাথে আমার প্রতিদিনই কথা হচ্ছে। এছাড়া সফিক সৌদি থেকেই তার ফার্মেসীর খোজ খবর রাখছে। একদিন সফিক ফোন দিয়ে বললো- তার ফিরতে দশ দিন না, পনের দিন সময় লাগবে। তাদের ওমরা করা শেষ। তারা এখন মক্কা মদীনা ঘুরে বেড়াবে। আর শপিং করবে। যাইহোক, একদিন ফার্মেসীতে চাঁদাবাজ এলো। কথা শুনেই বুঝা গেলো- প্রফেশনাল চাঁদাবাজ। রাজনীতিও করে। সে টাকা চায়। দুইশ' টাকা আমি দিতে চাইলাম। চাদাবাজ দুইশ' নিবে না। কমপক্ষে পাচ হাজার টাকা। ফার্মেসীতে এসে চাঁদাবাজ খুব হামতাম শুরু করেছে। একদম সাউথ ইন্ডিয়ান মুভির মতো। এই যুগে এসেও যে লোকজন চাঁদা নেয় আমি জানতাম না। ফার্মেসী তো আর পরিবহন খাত না।

ফার্মেসীতে যে কত পদের মানুষ আসে প্রতিদিন!
কেউ আসে প্রেসক্রিপশন ছাড়া ঘুমের ওষুধ নিতে। খুব অনুরোধ করে। প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ এসে কনডম নিয়ে যায়। যারা নতুন বিয়ে করেছে তারা সব রকম ফ্লেবারের এক প্যাকেট করে নিয়ে যায়। আমি যেক'দিন ছিলাম একটা সুন্দর মতো মেয়ে এসে কনডম নিয়ে যেতো। মেয়েটা এসে আমার সামনে দাঁড়িয়ে একটা কাগজ দিতো। কাগজে লেখা একটা কনডমের নাম ও ফ্লেবার। প্রতিদিন মেয়েটা কনডম দিয়ে কি করত? অনেক লোক এসে যৌনশক্তির ওষুধ নিয়ে যেতো। হুজুরেরা সেক্সের ওষুধ বেশি নেয়। প্রতিদিন বেশ কয়েকজন ছেলে এসে ফিসফিস করে বলতো, পিল দেন। যেটা ৭২ ঘন্টায় কাজ করে। শুনেছি আইপিল খুব ভালো? নাকি নো-রিক্স নেবো? যাইহোক, লোকজন পাগলের মতো ওষুধ কিনে প্রতিদিন। হাজার হাজার টাকার ওষুধ। কেউ কেউ সারা মাসের ওষুধ একসাথে কিনে নিয়ে যায়। অল্প ক'দিন থেকেই অনেকের সাথে আমার বন্ধুত্ব হয়ে গেছে।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৩০
১৫টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিজয়ের আগে রাজাকারের গুলিতে নিহত আফজাল

লিখেছেন প্রামানিক, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:১৩


ঘটনা স্থল গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানার উড়িয়া ইউনিয়নের গুণভরি ওয়াপদা বাঁধ।

১৯৭১সালের ১৬ই ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগের ঘটনা। আফজাল নামের ভদ্রলোক এসেছিলেন শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে। আমাদের পাশের গ্রামেই তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫৫ বছর আগে কি ঘটেছে, উহা কি ইডিয়টদের মনে থাকে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৮




ব্লগের অনেক প্রশ্নফাঁস ( Gen-F ) ১ দিন আগে পড়া নিউটনের ২য় সুত্রের প্রমাণ মনে করতে পারে না বলেই ফাঁসকরা প্রশ্নপত্র কিনে, বইয়ের পাতা কেটে পরীক্ষার হলে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিজামী, মুজাহিদ, বেগম জিয়াও বিজয় দিবস পালন করেছিলো!!

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:২০



মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বেগম জিয়ার মুরগী মগজে এই যুদ্ধ সম্পর্কে কোন ধারণা ছিলো না; বেগম জিয়া বিশ্বাস করতো না যে, বাংগালীরা পাকীদের মতো শক্তিশালী সেনাবাহিনীকে পরাজিত করতে পারে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার থেকে

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×