সময় তখন ১৯৪৭ সাল।
ডিসেম্বর মাসের প্রচন্ড শীতে এক বালক রাস্তা দিয়ে একাএকা হাঁটছে। বালক জানে না তার বাবা কে, মা কে ? দুনিয়াতে তার কেউ নেই। ক্ষুধা পেলে একটা খাবার দোকানের সামনে গিয়ে দাঁড়ালে কেউ কেউ তাকে- ফেলে দেওয়া খাবার খেতে দেয়। বালকটি মানুষের নষ্ট করা খাবার এক আকাশ আনন্দ নিয়ে রাস্তার পাশে বসে খায়। খাওয়ার সময় বালকটিকে অনেক আনন্দিত দেখা যায়। বালকটির কোনো নাম নেই। যে বালকের বাপ মায়ের ঠিক নাই- ঘটা করে কে আবার সেই বালকের নাম রাখবে? তাই আমি লেখার খাতিরে বালকটিকে একটি নাম দিলাম, টারজান।
টারজান নাম দেওয়ার পেছনে কারন হলো-
সে খুব সহজেই যে কোনো গাছে লাফ দিয়ে উঠতে পারে। এক গাছ থেকে আরেক গাছে যেতে পারে। এই কাজটি করতে তার কোনো ভয় হয় না। ছেলেটির আরেকটি ভালো গুন হলো- সে দারুন সাঁতার পারে। দেশ ভাগ হয়ে গেল, ইংরেজরা বিদায় নিলো- টারজান তার কিছুই জানল না, বুঝল না। টারজান এর সব চিন্তা শুধু তিনবেলা খাবার সংগ্রহে। জন্মের পর থেকে অন্তত কিশোর কাল পর্যন্ত বাবা মা না থাকলে সেই শিশুর বেচে থাকা অনেক কষ্টের। টারজান টিকে আছে, বেচে আছে তার বুদ্ধির জোরে।
ইদানিং টারজানের সাথে একটা কালো রঙের কুকুর যুক্ত হয়েছে।
ছোট বাচ্চা একটা কুকুর। টারজান বাচ্চা কুকুরটার নাম রেখেছে কাল্লু। কুকুরটা দেখতে কুচকুচে কালো রঙের, তাই নাম রাখা হয়েছে কাল্লু। কাল্লু সারাদিন টারজানের পায়ের কাছে ঘুর ঘুর করে। কাল্লুর উপর মায়া পড়ে গেছে টারজানের। টারজান সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে- কাল্লুকে সে পালবে। সব সময় নিজের কাছে রাখবে। অনেক বড় করবে। এই কাল্লু একটু বড় হওয়ার পর- সহজ সরল মানুষ 'ওমর আলী' নামে একজনকে কামড় দেয়।
টারজান মহান বিজ্ঞানি আইনস্টাইনকে চিনে না।
অথচ আইনস্টানের সাথে টারজানের মিল আছে। আইনস্টাইন নিজের সম্পর্কে নিজেই বলেছেন- 'আমি খুব সুখী। কারণ, কারও কাছে আমার কিছু চাওয়ার নেই। আমার টাকার প্রয়োজন নেই। পদক, খেতাব, উপাধি- আমার কাছে এসবের কোনো মানেই নেই। আমি প্রশংসার জন্যও লালায়িত নই। আমার নিজের কাজ ছাড়া একটি মাত্র বিষয় আমাকে আনন্দ দেয়, তা হচ্ছে আমার বেহালা'। টারজানেরও কারো কাছে কিছু চাওয়া পাওয়ার নেই।
কিছুদিন ধরে টারজান বালুচর বাজারে আশ্রয় নিয়েছে।
মাঝে মাঝে সে ইছাপূর বাজারেও যায়। মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে খাবার ভিক্ষা করা টারজানের একেবারেই পছন্দ নয়। বাজারে খাবার হোটেলের থালা বাটি ধুয়ে দিলে তারা খেতে দেয়। সিরাজদিখান উপজেলায় বালুচর আর ইছাপুর বাজারে বাজার করেন ওমর আলী। এইসব বাজারে পদ্মানদীর মাছ পাওয়া যায় বারো মাস। ইছাপুর বাজারে টারজানের সাথে দেখা হয় ওমর আলীর। ওমর আলী আমার নানা। একজন সহজ সরল মানুষ। তার পছন্দের কাজ দুটা। এক, পত্রিকা পড়া। দুই, রেডিও শোনা।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৪