এই সমাজে হুজুরেরা ভালো আছে।
হুজুরেরা কোরআন জানে, হাদীস জানে। ব্যস, আর কিছুর প্রয়োজন নাই। কোরআন হাদীস দিয়ে বড় বড় চাকরী পাওয়া যাবে না সত্য। কিন্তু বাড়ি বাড়ি গিয়ে ছোট ছোট বাচ্চাদের কোরআন হাদীস শিক্ষা দিয়ে বেশ ভালো ইনকাম করা যায়। আমাদের বাসায় একটা হুজুর আসেন। সে আমাদের বাসার সমস্ত বাচ্চাদের কায়দা, আমপাড়া আর কোরআন পড়ায়। সপ্তাহে তিন দিন চল্লিশ মিনিট পড়ায়। একজনের কাছ থেকে মাসে সেলারি পায় চার হাজার টাকা করে। অর্থ্যাত চারজনের কাছ থেকে মাসে পাচ্ছেন ১৬ হাজার টাকা। সারাদিনে অনেক বাসায় হুজুরেরা যায়, বাচ্চাদের কোরআন হাদীস পড়িয়ে লাখ টাকার উপরে উপার্জন করছেন। হুজুরদের ছাড়া এই সমাজ প্রায় অচল হয়ে যাবে। হ্যা কিছু হুজুর মানবেতর জীবনযাপন করছে, সে কথা সত্য।
আমাদের বাসায় যে হুজুর আসেন- তার নাম জহির হুজুর।
জহির হুজুর আসে মাগরিবের নামাজের পর। তার চোখে থাকে ঘুম। বাচ্চাদের আরবী পড়ানোর সময় জহির হুজুর ঝিমায়। আমি জানি জহির হুজুর সারাদিন অনেক বাচ্চাদের আরবী পড়ায়। সে ক্লান্ত থাকে। তাই সন্ধ্যায় আমাদের বাসায় এসে ঝিমায়। আমি হুজুরকে নিজের হাতে কড়া করে চা বানিয়ে দেই। সাথে বিস্কুট দেই। হুজুর আগ্রহ নিয়ে খায়। হুজুরকে যা দেই সে হাসি মুখে খায়। হুজুরের সাথে আমার সম্পর্ক হয়ে গেছে বন্ধুর মতো। জহির হুজুরের গলা সুন্দর। আরবী উচ্চারণ সুন্দর হয়। হুজুর প্রতিদিন আরবী পড়া শেষ করে, যাওয়ার আগে বাচ্চাদের একটা করে হাদীসের গল্প বলেন। গল্প গুলো আমি মন দিয়ে শুনি। যদিও গল্পে লজিক নেই। এই জহির হুজুর আবার একটা মসজিদের মোয়াজ্জিন। নামাজের সময় হলেই মসজিদে গিয়ে আযান দেন।
সমাজে হুজুর সম্প্রদায় না থাকলে সমাজ অচল হয়ে যাবে।
একটা শিশু জন্মের পর হুজুর লাগে। শিশুর জন্মের পর হুজুর আযান দেয়। কারো মৃত্যু হলেও হুজুর প্রয়জন। জানাজা পড়ায় হুজুর। কোনো কিছু উদ্ববোধন করতে হলে হুজুর লাগে। মিলাদ পড়াতে হুজুর লাগে। কেউ মারা যাবার আগে তওবা পড়াতে হুজুর লাগে। সমাজে হুজুর শ্রেনীর চাহিদা অনেক। দেশে মসজিদের অভাব নেই। একটা মসজিদে ইমাম লাগে, মোয়াজ্জিন লাগে, খাদেম লাগে। ঢাকার মসজিদ গুলোর ইমাম, খাদেম ও মোয়াজ্জেমের সেলারি অনেক। তাদের বাড়তি ইনকামও আছে। টাকা ইনকাম করতে তাদের অনার্স মাস্টার্স পাশ করতে হয়নি। এমবিএ করতে হয়নি। বরং এমবিএ করা ছাত্রদের চেয়ে হুজুরদের ইনকাম অনেক বেশি। হুজুরেরা আল্লাহর পথে আছেন বলেই তারা ভালো আছেন। খেয়ে পরে বেচে আছেন।
এই সমাজে বেকারের অভাব নাই।
কিন্তু হুজুরদের বেকার থাকতে হয় না। অন্তত কোরআন হাদীস জানলে দুটো ডাল ভাতের ব্যবস্থা হয়েই যায়। লাখ লাখ হুজুর কোরআন হাদীস শিক্ষা দিয়ে সুন্দর ভাবে খেয়েপড়ে বেচে আছেন। লাখ লাখ হুজুর শুধু মাত্র মসজিদে আযান দিয়ে সুন্দর ভাবে বেচে আছেন। লাখ লাখ হুজুর মিলাদ পড়িয়ে, মৃত ব্যাক্তির জন্য কোরআন খতম দিয়ে, দোয়া দূরুদ পড়ে, আরবী শিক্ষা দিয়ে, ধর্মীয় বয়ান দিয়ে, ওয়াজ মাহফিল করে, শো রুম উদ্ববোধন করে, মাদ্রাসায় বাচ্চাদের আরবী পড়িয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন। তাহলে আমরা বলতে পারি, যাহারা আল্লাহর কোরআন জানে এবং জানে নবীজির হাদীস তাদের কখনও বেকার থাকতে হয় না। এই জন্যই কোরআন হাদীস শিক্ষার দরকার আছে। স্কুল কলেজের শিক্ষা ইহকালের জন্য, কোরআনের শিক্ষা ইহকাল পরকাল দুই জাহানের জন্য।
আমাদের এলাকায় একটা হাসপাতাল আছে।
খিদমা হাসপাতাল। এই হাসপাতাল পুরোটা পরিচালনা করেন হুজুরেরা। হাসপাতালের সবাই হুজুর। ওয়ার্ডবয় থেকে শুরু করে ডাক্তার, সবাই হুজুর। ইসলামী হাসপাতালের সবাই হুজুর শ্রেনীর। এমনকি ইসলামী ব্যাংকের সকলেই হুজুর। আমাদের এলাকায় এক ধনী ব্যাক্তি আছেন, উনি আগে শার্ট প্যান্ট পরতেন। প্রচুর বই পড়তেন। একদিন দেখি উনি হুজুর হয়ে গেছেন। নামাজ পড়েন, চিল্লায় যান। তার পাচ তলা দুটা বাড়ি আছে। একটা ফ্লাটে তিনি অনেক হুজুর নিয়ে ধর্মীয় আলাপ আলোচনা করেন। এরপর বিরাট খানাদানার আয়োজন করা হয়। কোনো হুজুর যদি আর্থিক সমস্যায় পড়েন সাথে সাথে উনি হুজুরকে টাকা দিয়ে দেন। হুজুরেরা পথে নামলে পুরো ঢাকা অচল হয়ে যায় বিভিন্ন সময়ে আমরা সেটা দেখেছি। আওয়ামীলীগ বা বিএনপির মিটিং মিছিলেও এত লোক হয় না।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৩৭