
আজ ক'দিন ধরে বাসায় আমি একা।
সুরভি তার কন্যাকে নিয়ে গেছে তার বাবার বাড়ি। বলে গেছে দশ দিন থাকবে। সারারাত প্রায় জেগেই থাকি। বই পড়ি, মুভি দেখি। ক্ষুধা পেলে খুজেটুজে যা পাই খেয়ে নিই। কিছু না পেলে নুডলস রান্না করে খাই। সেদিন সিনেমা দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে গেছি। মোটামোটি গভীর ঘুম। তখন স্বপ্ন দেখলাম, আমি রাস্তা দিয়ে হেটে যাচ্ছি, অনেক গুলো কুকুর আমাকে সমানে কামড়াচ্ছে। হাতে পায়ে রক্ত। ঘুম ভেঙে গেলো। স্বপ্নটা এতটাই বাস্তব লাগছিলো যে, আমি চিৎকার করে বলছি, আমাকে হাসপাতালে নিয়ে যাও। কিন্তু আশেপাশে কেউ নেই।
এখন ভয় লাগছে না।
কিন্তু যখন স্বপ্নটা দেখি, মারাত্মক ভয় পেয়েছিলাম। ভোরবেলা আমি সুরভিদের বাসায় গিয়ে হাজির হই। সুরভি ঘুমে, কন্যাও গভীর ঘুমে। আমার শ্বশুর দরজা খুললেন। বললেন, তুমি! এত ভোরে! শ্বশুর মশাই মাত্র ফযরের নামাজ শেষ করেছেন। আমি তো শ্বশুর কে বলতে পারি না স্বপ্নে কুকুর দেখে ভয় পেয়েছি। যাইহোক, আস্তে করে কন্যার পাশে শুয়ে পড়লাম। এখন ভালো লাগছে। কন্যা ঘুম থেকে উঠে আমাকে দেখে প্রচন্ড খুশি হবে। যাইহোক, ফালতু কথা বাদ দিয়ে মূল পোষ্টে আসি।
একলোক সবাইকে নামাজের কথা বলেন।
কারো সাথে দেখা হলে কেমন আছেন? বলেন না। বলেন নামাজ পড়েছো? যদি বলা হয়, না নামাজ পড়ি নাই। তাহলে লোকটা ভীষণ রাগ করে। আর যদি বলা হয়, জ্বী নামাজ পড়েছি। তাহলে লোকটা ভীষণ খুশি হয়। লোকটাকে আমি চিনি। ভালো চাকরি করেন। অনেক টাকা সেলারি। নামাজ পড়তে পড়তে কপালে দাগ বসিয়ে ফেলেছেন। থুতনিতে কিছু দাড়ি। লোকটার একটাই দোষ খুব নারীঘেষা।
একদিন লোকটা মসজিদে যাচ্ছে।
মসজিদের সামনে এক ভিক্ষুক তার কাছে ভিক্ষা চাইলো। লোকটা রেগে গেলো। বলল, নামাজ পড়ছো? ভিক্ষুক নামাজ পড়েনি। লোকটা রেগে গিয়ে বলল, হারামজাদা নামাজ পড়ো না, আবার মসজিদের সামনে ভিক্ষা করো! লাথথি দিয়ে তোমার দাত ভেঙে দিবো। ভিক্ষুক বুঝে না, নামাজ পড়লে তার ইহকালে লাভটা কি? পরকাল নিয়ে ভিক্ষুক চিন্তিত নয়। ভিক্ষুক বুঝে না সে উঠবস করলে আল্লাহর কি লাভ? এদিকে তার পেটে ক্ষুধা, সংসারে অভাব। যদি এমন হতো নামাজ পড়লেই, সব সমস্যার সমাধান হয়ে যেত, তাহলে সে ভিক্ষা বাদ দিয়ে সারাদিন নামাজ পড়তো। নামাজ পড়তে পড়তে কপাল ছিলে ফেলতো।
ভিক্ষুক কিছুটা তেজ দেখিয়ে বলল-
সব সময় জিজ্ঞেস করেন, নামাজ পড়েছি কিনা। কিন্তু কখনো জিজ্ঞেস করেন না, খেয়েছি কিনা। পেটে থাকে সারাক্ষণ ক্ষুধা। সব সময় ছেড়া ময়লা জামা পড়ি। আমি অসুস্থ। টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারি না। থাকি ফুটপাতে। সেসবের খোজ নেন না। ছেলেমেয়ে ক্ষুধায় কান্না করে। তাদের কষ্টে আমার বুক ফেটে যায়। আর প্রতিদিন জিজ্ঞেস করেন নামাজ পড়েছি কিনা। আপনারা যারা সুখে আছেন তারা নামাজ পড়েন। আমি নামাজের চিন্তা করি না। আমার একটাই চিন্তা কি করে ছেলে মেয়ে আর বউ নিয়ে খেয়েপড়ে বেচে থাকবো।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


