
আমি ভালো আছি। আসলে আমি ভালো নেই।
শুধু আমি না কেউই ভালো নেই। এই সমাজে কেউ ভালো থাকতে পারে না। আমি দরিদ্র একটা দেশে বাস করি। রাস্তায় বের হলেই ভিক্ষুক আর ভিক্ষুক। রাস্তায় ট্রাফিক সিগনালে গাড়ি থামলেই বাচ্চা মেয়েরা ফুল হাতে নিয়ে আসে বিক্রির জন্য। নানী দাদীর মতো বয়স্ক মহিলার ভিক্ষা চায়। প্রতিটা মোড়ে মোড়ে আছে পকেটমার। চারিদিকে দুষ্টলোকজন ওৎ পেতে আছে। ঘর থেকে বাইরে বের হলে সুস্থভাবে বেচে ফিরতে পারবো তার নিশ্চয়তা নেই। হয় কোপাবে, নয়তো বাস চাপা দিবে। এজন্যই মুরুব্বিরা বলে, যায় দিন ভালো, আসে দিন খারাপ। শেখ হাসিনার আমলের চেয়েও এখন পরিবেশ পরিস্থিতি অনেক খারাপ। তখন এত কোপাকপি হতো না, শহীদ মিনার ভাঙ্গা হতো না। জামাত শিবির এত মাথা চাড়া দিয়ে উঠতো না। সবাই হতভম্ব কি হচ্ছে দেশে!!
আমার মা ভালো নেই। ইদানিং সে কারো নাম মনে রাখতে পারছে না।
গত ত্রিশ বছর ধরে মাকে তিনবেলা ওষুধ খেতে দেখছি। আসলে বয়স হলে অনেক অসুখে ধরে। আমার ধারণা প্রতিটা পরিবারেই বাবা মায়ের বয়সীরা তিনবেলা ওষুধ খাচ্ছেন। মাকে নিয়ে প্রতিমাসে ডাক্তারের কাছে যেতে হচ্ছে, অনেক গুলো টেস্ট করাতে হচ্ছে। মাঝে মাঝে নিজেকে কুলাংগার বলে মনে হয়। কারো প্রতি যথাযথ দায়িত্ব পালন করতে পারিনি। দেশমাতৃকার ঋন শোধ করতে পারলাম না। একটা গাড়ি খুব মনে ধরেছিল। মেরুন রঙের। গাড়িটা কেনা হলো না। আমস্টারডাম শহরটা পায়ে হেটে দেখার বড় শখ ছিলো, হলো না। জীবনটা পার করে দিচ্ছি একবুক হাহাকার নিয়ে। একদিন হুট করে মরে যাবো। এক সমুদ্র আকাঙ্ক্ষা নিয়ে। যেমন হওয়ার কথা ছিলো, ঠিক তেমনটা হলো না। কারাগার থেকে অনেক আসামী পালিয়ে গেছে, এই অন্তবর্তী সরকার অনেক আসামীকে ছেড়ে দিয়েছে, বিদেশে পালিয়ে যাওয়া আসামীরা ফিরে এসেছে- এখন তারাই দেশে অরাজকতা করছে।
২৫ কেজি চাউলের দাম ২২৫০ টাকা।
আড়াই কেজি একটা রুই মাছের দাম ১৬০০ টাকা। তিন কেজি গরুর মাংস ২১০০ টাকা। এক কেজি চিংড়ি মাছ ৯০০ টাকা। চারটা ছোট দেশি মূরগী ২০০০ টাকা। দুই কেজি আপেল ৭০০ টকা। একটা তরমুজ ৫ শ টাকা। গরম মশলার দাম প্রায় ডবল হয়ে গেছে। পাচ লিটার সয়াবিন তেল প্রায় ১ হাজার টাকা। একটা বার্গার ৩/৪ শ টাকা। একটা পিজা ১৪ শ টাকা। যাদের ইনকাম ২০/৩০ হাজার টাকা তারা চলবে কিভাবে? কি খেয়ে বেচে থাকবে? বাংলাদেশের বেশির ভাগ মানুষ গুলো মানবেতর জীবনযাপন করছে। জিনিসপত্রের এত দাম তবুও প্রতিটি রেস্টুরেন্টে প্রচন্ড ভিড়। বসার জন্য চেয়ার পাওয়া যায় না। এর কারা? কোথা থেকে আসে? যারা গরীব তারা ভয়াবহ গরীব। যারা ধনী, তারা অনেক ধনী। ধনী গরীবে মিশ খায় না। অথচ সকলের করব হবে সাড়ে তিন হাত। শেষ ঠিকানা। মৃত্যুর পর কবরের আযাব। মুনকার আর নকির তিনটা প্রশ্ন করবেন। হাশরের ময়দানে বিচারের পর হবে আসল শাস্তি। আসলে মানুষের শান্তি নাই। ইহকালেও শান্তি নাই, পরকালেও শান্তি নাই।
কিশোর বয়সে একটা মেয়েকে আমার ভালো লেগেছিলো।
মেয়েটা সহজ সরল সুন্দর। আমি শুধু দূর থেকে নীলাকে দেখতাম। কাছে যাওয়ার সাহস নেই। আমরা একই ক্লাশে পড়তাম। সেই সময় ফেসবুক, টিকটক, ইউটিউব ছিলো না। আমি ছিলাম ভীষণ লাজুক। লাজুক আমি আজও। সেই নীলাকে একদিন দেখলাম রাপা প্লাজায়। দেখে মনে হলো সে ভালো আছে, সুখে আছে। নীলার স্বামী কি করে জানি না। নীলার দুই ছেলে। এই দুটা ছেলে আমার হতে পারতো। আমার কথা কি নীলার মনে আছে? আমাকে দেখলে সে চিনবে? জীবনে কিছুই পেলাম না। মৃত্যুর পর যদি আমি বেহেশত পেয়ে যাই। তাহলে আমি সবার আগে নীলাকে চাইবো। হুর আমার দরকার নাই। নীলাকে পেলেই আমি খুশি। যারা যৌন কাতর তারা হুরের জন্য পাগল। আমার বন্ধুর একটা ফার্মেসী আছে। সেখানে আমি মাঝে মাঝে বসি। প্রায়ই দেখি হুজুরেরা এসে যৌন শক্তি বাড়ানোর ওষুধ নিয়ে যায়। যারা আল্লাহর ভীরু তারা কেন সেক্স পাগল হবে?
আমি ভালো নেই।
সারাটা জীবন মানুষ আমাকে অপমান অবহেলা করে গেলো। ঠকিয়ে গেলো। আমি বদলা নিতে পারলাম না। হুহু করে সময় চলে গেলো। মাথার চুল সাদা হতে শুরু করেছে। মুনার সাথে একান্তে সময় কাটানো হলো না। আমরা সুখ দুখের গল্প করতে পারলাম না। গল্প না হোক ঝগড়াও করতে পারলাম না। বিশাল আকাশের দিকে তাকিয়ে শুধু দীর্ঘশ্বাস!
একবার সুন্দরবন যাওয়ার পথ। তখন গভীর রাত ছিলো। তীব্র শীতের রাত। আমার এক বন্ধু জোর করে খানিকটা মদ খাইয়ে দিয়েছিল। বলেছিল সমুদ্রের শীত থেকে বাচতে হলে কমপক্ষে দুই পেগ খেতেই হবে। খেয়ে নিলাম। তারপর জাহাজের ছাদে গেলাম। অপূর্ব সুন্দর পরিবেশ। কুয়াশা ভেদ করে চাঁদের আলো এসে পড়েছে সমুদ্রের গায়। সমুদ্র চকমক করছিল। আকাশে কিছু তারা ঝকমক করছিল। অত্যন্ত মনোমুগ্ধকর পরিবেশ। কিন্তু আমি সহ্য করতে পারছিলাম না। আমি ইচ্ছা করছিল মরে যেতে। বেশি কিছু না সুন্দরের গায়ে ঝাপ দিলেই হবে। সেই প্রথম মরে যেতে ইচ্ছা করেছিলো।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ দুপুর ২:২৭

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




