
রবীন্দ্রনাথের পছন্দ ছিলো বর্ষাকাল।
তার অনেক লেখাতে ঘুরেফিরে বর্ষাকাল এসেছে। বর্ষা নিয়ে গান লিখেছেন, কবিতা লিখেছেন। অনেক বিলাসিতা করেছেন। এমনকি রবীন্দ্রনাথ পদ্মা নদীতে বোটে বসে বর্ষাকালটা উপভোগ করতেন। শান্তিনিকেতনে ধুমধাম করে বর্ষাযাপন করেছেন। আমাদের হুমায়ুন আহমেদও বর্ষাকাল খুব পছন্দ করতেন। আমার কাছে বর্ষাকাল মানে সারাদিন থেমে থেমে বৃষ্টি। বিরক্তিকর। গ্রামের মাটির পথ প্যাক কাদায় মাখামাখি। বর্ষাকালে শহরের মানুষদের বেশি কষ্ট। রাস্তায় পানি জমে যায়, লম্বা জ্যাম লেগে যায়। ভয়াবহ অবস্থা। তবে ব্যলকনিতে বসে বৃষ্টি দেখতে ভালো লাগে। বৃষ্টির দিনে মানুষের মন থাকে নরম।
কিন্তু তোমার পছন্দ বসন্ত।
আমার নিজেরও পছন্দ বসন্ত ঋতু। বসন্ত রাজ। বসন্ত কালটা বড় অদ্ভুত। শীতের পর আসে বসন্ত। আমি একসময় পত্রিকা অফিসে কাজ করতাম। আমার অফিসের পাশে ছিলো একটা সরকারি অফিস। সেই সরকারি অফিসে অনেক গুলো বড় বড় গাছ ছিলো। শীতের শুরুতেই সেই গাছ গুলোর পাতা ঝরে ঝরে পড়তো। একসময় গাছের সমস্ত পাতা পড়ে যেত। ঝরে যাওয়া পাতা গুলো রাস্তায় গড়াগড়ি করতো। আর পাতা শুন্য বড় বড় গাছ গুলো অসহায় ভাবে দাড়িয়ে থাকতো। আমি প্রতিদিন আগ্রহ নিয়ে গাছ গুলো দেখতাম। অপেক্ষায় থাকতাম কবে কখন নতুন পাতা আসিবে। বসন্তের সন্ধ্যার আকাশ আমাকে আবেগী করে তোলে। ইচ্ছে করে পুরোনো প্রেমিকার সাথে দেখা করি। তার সাথে হাসি ঠাট্রা করি। দুই একটা আবেগের কথা বলি।
অবাক এবং মজার ব্যাপার হচ্ছে,
শীতের শেষে এবং বসন্তের শুরুতেই ন্যাড়া গাছ গুলোতে নতুন পাতা জন্ম নিতে থাকে। কচি সবুজ পাতা। দেখতে বড় ভালো লাগে। পাতা ঝরে যাওয়া, এবং নতুন পাতা গজানো পুরো বিষয়টি আমার কাছে দারুণ লাগতো। আমি দারুণ উপভোগ করতাম। মূলত বসন্ত ঋতুটা ভালোবাসার ঋতু। রবীন্দ্রনাথের একটা সুন্দর গান আছে, "আজ জোছনা রাতে/সবাই গেছে বনে/বসন্তের এই মাতাল সমীরণে"। রবীন্দ্রনাথ হলেন, ম্যাজিশিয়ান। সবার মনের কথা লিখে গেছেন। বসন্তকালে আবহাওয়া থাকে সবচেয়ে সুন্দর। গরম লাগে না, শীতও লাগে না। অতি মনোরম ওয়েদার। বসন্ত কালে দেশের মানুষের মাথা থাকে ঠান্ডা। তাই ঝগড়া ফ্যাসাদ কম হয়। রাগী পুলিশ অফিসার পর্যন্ত একজন আসামী কে চা অফার করেন। পুলিশ সার্জেন ড্রাইভারের লাইসেন্স না থাকলেও জরিমানা করেন না।
আমার এক বন্ধু আছে। শাহেদ জামাল।
শাহেদ জামালের প্রেমিকার নাম নীলা। ওদের দুজনেরই পছন্দ বসন্ত কাল। প্রায়ই ওদের দেখতাম, রমনা পার্কে। ওরা হাত ধরাধরি করে হাটতো। আমি দূর থেকে মুগ্ধ হয়ে ওদের দেখতাম। বড় ভালো লাগতো। নীলা নীল রঙের শাড়ি পরতো। একদিন আমি ফুলার রোড দিয়ে হেটে হেটে শহীদ মিনারের দিকে যাচ্ছিলাম। কে যেন আমার নাম ধরে ডাকছে। পেছনে তাকিয়ে দেখি শাহেদ আর নীলা। কিছু কিছু মানুষ আছে, দেখলেই আনন্দ লাগে। দু:খের বিষয় নীলার সাথে শাহেদের বিয়ে হয়নি। শাহেদ এখন হিমুর মতো সারাদিন রাস্তায় হাটে। আর নীলা এক রাজপুত্রকে বিয়ে করে আমেরিকাতে সুখে শান্তিতে ঘরসংসার করছে। নীলার কোনো দোষ নেই। নীলা শাহেদকে অনেক সময় দিয়েছে। কিন্তু শাহেদ একটা চাকরি যোগাড় করতে পারেনি। আসলে ক্ষমতাবান মামা চাচা না থাকলে চাকরি পাওয়া প্রায় অসম্ভব। মাঝে মাঝে শাহেদের সাথে আমার রাস্তায় দেখা হয়। বড় মায়া হয় শাহেদের জন্য। ছেলেটা মেধাবী ছিলো।
অবিশ্বাস্য হলেও সত্য বসন্ত কালে মানুষের অসুখ বিসুখ কম হয়।
ডাক্তাররা চেম্বারে বসে থাকেন রোগীর আশায়। ফার্মেসী গুলোতে ওষুধ বিক্রি কম হয়। বসন্তের বিকেলে কোনো কোনো রিকশাচালক এক কাপ চায়ের সাথে একটা বেনসন সিগারেট ধরায়। কবি সাহিত্যিকেরা মুগ্ধ হয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকেন। তাদের মাথায় চলে আসে নতুন নতুন শব্দ। আমি নিজে দেখেছি, এক কবি নদীর পাড়ে বসে আছেন। হঠাৎ তার মধ্যে আবেগ সঞ্চারিত হয়। তখন কবি কাগজ কলম নিয়ে লিখে ফেললেন একটা কবিতা। 'সেই কবিতার প্রথম লাইনটা এরকম: সুন্দর সময় গুলো চিবিয়ে খাচ্ছে ইঁদুরেরা'। বসন্ত এলে শাহেদ আমাকে পাগলের মতো খুজে। আমাকে নিয়ে যায়, রমনা পার্কে, বোটানিক্যাল গার্ডেনে। নীলার আর শাহেদ যেখানে যেখানে সময় কাটাতো। শাহেদ নীলার গল্প বলতো। তখন আমি খেয়াল করে দেখেছি, শাহেদের চোখে মুখে অপার্থিব এক আনন্দ খেলা করতো।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই মার্চ, ২০২৫ সকাল ১০:৩৬

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


