
ইমাম হাসান (রা) কে বিষ খাইয়ে হত্যা করা হয়।
আমাদের নবীজির নাতী ছিলেন ইমাম হাসান। ইমাম হাসানকে নিয়ে অনেক রকম রুপকথার গল্প প্রচলিত আছে। যা বেশির ভাগ বানোয়াট এবং মিথ্যা। কেউ কেউ বলেন, ইমাম হাসানের কপালে অদৃশ্য ভাবে কুল হুয়াল্লাহু আহাদ লেখা আছে। কেউ কেউ বলেন, তিনি স্বপ্ন দেখেন, বিষ ক্রিয়ায় তার মৃত্যু হবে। আবার কেউ বলেন, তার স্ত্রীই তাকে বিষ খাইয়েছেন। সেই সময় আরবে চিকিৎসা বিজ্ঞান উন্নত ছিলো না। ডাক্তার হাসপাতাল কিছুই ছিলো না। অতি সামান্য রোগে মানুষ মরে যেতো। আহারে! আহারে!
ইমাম হাসান বিষ ক্রিয়ায় ছটফট করছেন।
বিন ইসহাক নামে এক ব্যাক্তি ইমাম হাসানকে দেখতে যান। উনি দেখেন ইমাম হাসান একটু পরপর টয়লেটে যাচ্ছেন। ইসহাক বললেন, আল্লাহর কসম আমাকে বিষ খাওয়ানো হয়েছে। মারাত্মক বিষ। আমার কলিজা জ্বলে পুড়ে যাচ্ছে। ইসহাক জিজ্ঞেস করলেন, কে আপনাকে বিষ খাইয়েছেন? কে সেই মূর্খ? কে সেই কালপিট? ইমাম হাসান বললেন, আমি তার নাম বলব না। তাকে শাস্তি দেবেন আল্লাহ। বিষ পেটে নিয়ে ইমাম হাসান তিন দিন বেচে ছিলেন। তার মৃত্যুতে ইরাকের মানুষেরা কপাল চাপড়ে কান্না করেছিলো। তার জানাজায় অনেক লোক হয়েছিলো। তারা সকলে কেদেছিলো।
ইমাম হাসান অসংখ্য বিয়ে করেছেন।
বিয়ের পর যাকে ভালো লাগতো না, তাকে তালাক দিয়ে দিতেন। সেই সময় আরবে বিয়ে তালাক অতি মামুলি বিষয় ছিলো। সেই সময় অনেক মুরুব্বীরা বলেছেন, ইমাম হাসানের কাছে মেয়ে বিয়ে দিও না। সে পান থেকে চুন খসলেই তালাক দিয়ে দেয়। বড় অদ্ভুত ছেলে। এজন্য অনেকে ধারণা করেন, তার কোনো স্ত্রীই তাকে বিষ খাইয়েছেন। মাত্র ৪৭ বছর বয়সে ইমাম হাসান ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুর সময় ইমাম হাসান বলে গিয়েছেন আমার নানার পাশে আমায় কবর দিও ভাই। হাসানের মৃত্যুতে পুরো আরব বিশ্ব হতবাক! আমাদের নবীজির কলিজার টুকরার অকাল মৃত্যু হলো!
ইমাম হাসান বলেছেন, যারা সালাম আদান প্রদান করে না তারা মন্দ লোক।
তাদের সাথে সম্পর্ক রেখো না। কোনো অনুষ্ঠানে তাদের দাওয়াত দিও না। যারা খাদ্যে ভেজাল মেশায় তারা জাহান্নামে যাবে নিশ্চিত। যারা আল্লাহর রাসূলকে ভালোবাসে, আমি তাদের ভালোবাসি। ইমাম হাসান এই নামটি রাখেন আমাদের প্রান প্রিয় নবীজি। যদিও আগে নাম রাখা হয়েছিল হারব। হারব মানে যুদ্ধ। যখন ইমাম হাসানের সাত বছর তখন আমাদের নবীজি ইন্তেকাল করেন। ইমাম হাসানের ইন্তেকালের সময় তার একজন স্ত্রীও পাশে ছিলেন না। অথচ তিনি ৭০ থেকে ৮০ টা বিবাহ করেছিলেন। এইসব স্ত্রী লোক নিশ্চয়ই জাহান্নামি হইবে।
নবীজি আছর নামাজ আদায় করে ইমাম হাসানকে নিয়ে হেটে বেড়াতেন।
নবীজি যখন নামাজে দাড়াতেন, সেজদা দিতেন, তখন ইমাম হাসান নবীজির পিঠে চড়ে বসতেন। নবীজি সব সময় বলতেন হাসান আমার অনেক আদরের। ইমাম হাসান প্রচুর দান করতেন। উনার কাছে কেউ হাত পাতলে, উনি সেই হাত ফিরিয়ে দিতেন না। ইমাম হাসান যতবার হিজরত করতেন, ততবার একটি করে বিয়ে করতেন। সেই সময় অনেক মেয়ে মনে করতো, বাজারে বিক্রি হওয়ার চেয়ে ধনী মানুষকে বিয়ে করে থাকা ভালো। নিসন্দেহে বেশ্যা হওয়ার চেয়ে বিয়ে করা অনেক ভালো। সেই সময় পুরো আরব বিশ্ব গৌতম বুদ্ধ বা এরিস্টটলের নাম পর্যন্ত শুনেনি।
একটা সুন্দর ঘটনা বলে, লেখাটা শেষ করি।
ইমাম হাসান তখন মদীনায় থাকতেন। একদিন এক পাহাড়ের গায়ে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছেন। তখন তিনি দেখতে পান, একলোক শুকনো রুটি খাচ্ছেন। এবং লোকটি তার সাথে থাকা একটা কুকুরকেও রুটি খাওয়াচ্ছে। দৃশ্যটা দেখে ইমাম হাসানের অনেক ভালো লাগলো। দরিদ্র লোকটার কুকুরের জন্য এত মায়া! ইমাম হাসান জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি করো? লোকটা বলল, আমি একজন কৃতদাস। আমার মুনিনের সমস্ত কাজ করে দেই। ইমাম হাসান কৃতদাসের মালিকের সাথে দেখা করলেন। তিন গুন বেশি টাকা দিয়ে কৃতদাস কে কিনে নিয়ে মুক্ত করে দিলো।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে আগস্ট, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:১৫

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



