
কলকাতার লেখক বিমল কর।
ইঁদুর গল্পটা আমার কাছে অনেক ভালো লেগেছে। গল্পটির প্রধান চরিত্র যতীন। অথবা তার স্ত্রী মলিনা। আপনি চাইলে প্রধান চরিত্র ইঁদুর মারার কলটাকে মনে করতে পারেন। মূলত একটা ইঁদুরকে কেন্দ্র করে গল্প এগোয়। ইঁদুর গল্পের সাথে ''বরফ সাহেবের মেয়ে' গল্পটার যোগসুত্র আছে। যাইহোক, ইঁদুর গল্পটা অনেক বড়। কিন্তু পড়তে বিরক্ত লাগবে না। বরং আপনার মধ্যে এক ধরনের অস্থিরতা কাজ করবে। দ্বিধাদ্বন্দে পড়ে যাবেন, এটা কি শেষমেশ পরকীয়ার গল্প হয়ে যাবে?
যাইহোক, গল্পের শুরুটা এরকম:
যতীন খাটের নিচে হাত দেয়। তখন ইঁদুর মারার কল তার হাতে প্রায় লেগে যাচ্ছিল। যতীন যথাসময়ে হাতটা সরিয়ে নিতে সক্ষম হয়। নইলে তার হাতের আঙুল টুকরো হয়ে যেতো। ইঁদুর মারার কলটি খাটের নিচে রেখেছে, যতীনের স্ত্রী মনিলা। যতীন স্ত্রীর উপর প্রচন্ড বিরক্ত হয়। ঘরে তো ইঁদুর নেই, তাহলে ইঁদুর মারার কল কেন? স্ত্রীলোকের বুদ্ধিশুদ্ধি আসলেই কম। যতীন চিৎকার করে তার স্ত্রীকে ডাকে। মনিলা শুনতে পায় না। কারণ সে সকালের নাস্তা তৈরি করছে।
ইঁদুর কল নিয়ে মলিনার সাথে তর্কাতর্কি হয়ে যায়।
রাগ দেখিয়ে যতীন বাইরে চলে যায়। দরিদ্র তারা। মনিলা ইদুর ভয় পায় এবং ঘৃনা করে। এর আগেও ইদুর হয়েছিলো ঘরে। অনেক কিছু করে ইঁদুর গুলো তাড়ানো হয়েছিল। অথচ আবার এলো ইঁদুর। মলিনা গোপনে টাকা জমায়। সে টাকা জমিয়ে গহনা বানাবে। স্ত্রী জাতি মনে করে গহনা তার সম্পদ। অথচ স্ত্রী জাতির আসল সম্পদ তার স্বামী। স্ত্রীরা অযথাই স্বামীর সাথে ক্যাট ক্যাট করে। দরিদ্র স্বামীদের ঘর করে স্ত্রীরা আসলে শান্তি পায় না। এজন্য স্ত্রীরা ভিতরে ভিতরে ফোস ফোস করে।
ইঁদুর যন্ত্রণা থেকে পরিত্রাণ না পেতেই বাসুদেব এসে হাজির। বাসুদেব একজন সাধু। পাহাড়ে জঙ্গলে ঘুরে বেড়ায়। বাসুদেব যতীনের খুব ভালো বন্ধু। স্কুল জীবনের বন্ধু। দুপুরে খেতে এসে বন্ধু বাসুদেবকে দেখে যতীন ভীষণ খুশি। বাসুদেব তার সন্ন্যাসীর জীবনের গল্প বলে। যতীন আর মলিনা মুগ্ধ হয়ে শুনে। যতীন মনে মনে ভাবে বাসুদেব কত না শান্তিতে আছে! কোনো দায়দায়িত্ব নাই। শালা বিয়ে করেই আমি গ্যাড়াকলে আটকে গেলুম। বিয়ের মায়রে বাপ। দরিদ্র পুরুষের বিয়ে করাই উচিৎ না। যে প্রেমিকা বিয়ের আগে বলে আমি তোমার সাথে গাছ তলায় থাকতে রাজি। সেই প্রেমিকা বঊ হয়ে বদলে যায়।
দুই বন্ধু একসাথে খাওয়া দাওয়া করে।
মলিনা হাতপাখা দিয়ে বাতাস করে। বাতাস করার পরও যতীন ঘামতে থাকে। এভাবে ইঁদুর গল্পের ঘটনা এগোতে থাকে। অফিসের কাজে যতীনকে কলকাতা যেতে হবে। সে চলে যায়। এদিকে একা ঘরের মধ্যে মলিনা এলোমেলো অনেক কিছু ভাবে। সে ইদুরের কলটা দরজার কাছে পেতে রাখে। হঠাৎ যদি বাসুদেব আসে, তাহলে তার পা কেটে যাবে। ভয়াবহ এক রাত পার করে মলিনা। তার ভয় একটাই হঠাৎ যদি ঘরে বাসুদেব ঘরে প্রবেশ করে? নাকি মলিনা অবচেতন মনে চাচ্ছে বাসুদেব ঘরে আসুক। তাকে দুমড়ে মুচড়ে শেষ করে দিক। নারী যে কি চায়, সেটা সে আসলে নিজেই জানে না।
মূলত ইঁদুর গল্পে লেখক পাঠকদের সাথে মজা করেছেন, মজা নিয়েছেন।
এমনকি লেখক তার গল্পের চরিত্র গুলোর সাথে মজা করেছেন। গল্পে মাত্র তিনটা চরিত্র আর একটা ইঁদুর মারার কল। মনস্তাত্ত্বিক গল্প। পাওয়া না পাওয়ার গল্প। আশা আর হতাশার গল্প। অবচেতন মনের গোপন গল্প। মলিনা পরকীয়ার দিকে প্রায় চলে গিয়েছিল। অথচ সন্ন্যাসী বাসুদেব নিরীহ সহজ সরল মানুষ। ইঁদুর গল্পটা লেখক অনেক দিকে নিয়ে গেছেন। তারপর গল্পের ঘটনা প্রবাহ থেমে যায়। গল্পের চরিত্র গুলো বেলাইনে যায় না। কিন্তু গল্পে মলিনা প্রায় বেলাইনে চলে গিয়েছিল। লেখক তাকে ভুল পথ থেকে টেনে সঠিক পথে রেখে দেন।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৫২

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



