
শেখ হাসিনা চলে যাবার পর বাজারে জিনিসপত্রের দাম- তিন দফা বেড়েছে।
কাচা বাজার থেকে শুরু করে, কনজ্যুমার আইটেম সব কিছুর দাম বেড়েছে। কেউ কেউ তাদের প্রোডাক্টের দাম ডবল করে দিয়েছে। ওষুধ কোম্পানী গুলো তাদের ওষুধের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। কেউ দেখার নাই। কেউ বলার নাই। কোম্পানী গুলো ভেবেছে, এই তো সুযোগ! শেখ হাসিনা নেই। শেখ হাসিনা থাকতে এক আঁটি লাল শাক ১৫ টাকায় পাওয়া গেছে। এখন এক আঁটি লাল শাক ৩০ টাকা। শেখ হাসিনা চলে যাবার পর দেশের বদমাশ গুলো সব বেড়ে গেছে। তাদের এখন আনন্দের শেষ নেই। কুৎসিত তাদের আনন্দ। এই বদমাশ গুলোকে এতদিন দাবিয়ে রেখেছিলেন আমাদের গ্রেট শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনা আবার ফিরে আসবেন। দেরী হোক যায়নি সময়। শেখ হাসিনা দেশে ফিরলে অনেকের প্যান্ট ভিজে যাবে। খুব মজা হবে। সেদিনের অপেক্ষায় আছি। জয় বাংলা।
আগে যে টাকার বাজার করলে মাস শেষ হয়ে যেতো।
এখন মাস শেষ হয় না। বাজার শেষ হয়ে যায়। টাকা শেষ হয়ে যায়। বড় বেকায়দায় আছি। বেকায়দায় আছে কোটি কোটি জনগন। দেশ যদি আমাকে ভালো না রাখতে পারে তাহলে দেশ ছেড়ে চলে যাবো। এরকম চলে যাচ্ছে বহু মানুষ। অথচ তারা যেতে চায়নি। এদেশেই থাকতে চেয়েছিলো। আওয়ামীলীগ শুধু বলেছে, ১৩' তারিখ। এতেই অনেকের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। উপদেষ্টাদের মাথা নষ্ট। এদিকে অনেক স্কুল অলরেডি ছুটি ঘোষনা করেছে। খুব প্রয়োজনে তারা অনলাইনে ক্লাশ করাবে। রাস্তায় গাড়িঘোড়া কম। জ্যাম নেই। পুলিশ সব এলাকায় টহল দিচ্ছে। কিছু সন্দেহ হলেই চেক করছে। এক কথায় বলা যেতে পারে- ১৩ তারিখের ঘোষনা শুনে অনেকের কলিজা শুকিয়ে গেছে। অনেকে ভয়ে কাঁপছে। আমার কলিজা শুকায়নি। আমি তো আর কোনো অন্যায় করিনি। যারা অন্যায় করে তারাই ভয়ে থাকে। খুব শ্রীঘই যারা এতদিন উজিয়ে ছিলো, তারা এবার ধপাস করে পড়বে।
ইউনুস সাহেব যে এত বড় ধোকাবাজি করবেন-
সেটা দেশের মানুষ বুঝতে পারেনি। উনি যে জামাত শিবির এত পছন্দ করেন, সেটা দেশের মানুষ বুঝে নাই। জাতির খারাপ সন্তান হচ্ছে জামাত শিবির'রা। এরা কোনোদিন ভালো হবে না। এরা কোনো দিন লাইনে আসবে না। যাইহোক, এসব আলাপ আজ নয়। এসব নিয়ে আমি লিখতেও চাই না। এসব লেখা অনেকেই পছন্দ করেন না। জীবনযাপনে ফিরে আসি- এক রেস্টুরেন্টে আমি টানা ১৮ দিন নাস্তা করেছি। সকালের নাস্তা। খাবার আহামরি মজা না। তবু খেয়েছি। কোনোদিন নেহারি, কোনোদিন স্যুপ, কোনোদিন ডালভাজি। হোটেলের নাম দিয়েছে- ফোর স্টার। মানের দিক থেকে টু স্টারও না। সেই হোটেলে নাস্তা খাওয়ার শেষে ওয়েটার ধনিয়া ভাজা এগিয়ে দেয়। ধনিয়ার সাথে কিছু চাল ভাজাও থাকে। আমাই সেটা চিবাই। ভালোই তো লাগে চাবাতে। এভাবে প্রতিদিন নাস্তা শেষে আমি ধনিয়া চিবিয়েছি। এখন ফোর স্টার হোটেলে আর যাওয়া হয় না। ধনিয়া ভাজা চাবানো হয় না। কিন্তু সকালের নাস্তার পরে, ধনিয়া ভাজা খেতে ইচ্ছা করে। অভ্যাস হয়ে গেছে। নেশা হয়ে গেছে।
রাতে সিএনজি করে বাসায় ফিরছি।
মাঝে মাঝে রাতে বাসায় ফিরতে দেরী হয়ে যায়। মোটামোটি অনেক রাত। বারোটা দশ। রাস্তা খালি। তুফানের মতো সিএনজি চলছে। সিএনজি ওলারা আস্তে ধীরে সিএনজি চালাতে পারে না। ফার্মগেট পার হতেই সিএনজি চালক বলল- ভাই কিছু মনে করবেন না। পরিবারের জন্য কারওয়ানবাজার থেকে একটা জিনিস খরিদ করবো। অল্প সময় লাগবে, বেশি সময় লাগবে না। আমি বললাম, ঠিক আছে। সিএনজি চালক হুজুর মানুষ। মাথায় টুপি। মুখ ভরতি দাড়ি। সিএনসজি চালক কারওয়ান বাজার রেললাইনের কাছে সিএনজি থামালো। এক ছেলেকে ইশারা দিলো। সেই ছেলে এসে কি একটা জিনিস সিএনজি চালকের হাতে দিলো। গাঁজা! হুজুর মানুষ গাঁজা খায়। আমি ভীষন অবাক হলাম। সেই সাথে চিন্তিত। এখন যদি পুলিশ আসে, তাহলে আমাকেও ধরবে। সিএনজি চালক বলল, ভয় নেই। জিনিস আমি সিটের নিচে রেখে দিয়েছি। প্রতিদিন খাই। না খেলে ঘুম আসে না। দরিদ্র টাকার অভাবে সস্তার নেশা করে। আমার এক বন্ধু আছে, সে একরাতে এক লাখ টাকার মদ খায় বন্ধুবান্ধব নিয়ে।
সকাল সাতটা পনের মিনিট।
বাসা থেকে বের হয়ে, কিছু দূর যাওয়ার পর- মাছ বিক্রেতাদের দেখা পাওয়া যায়। তিনজন লোক প্রতিদিন সকালে মাছ বিক্রি করে। দুপুর বারোটার মধ্যে মাছ বেচা সব শেষ হতে যায়। মাছ বিক্রেতা আমাকে দেখলেই বলে- মামু মাছ নিয়ে যান। প্রতিদিন একই কথা। মামু মাছ নিয়া যান। আজ বড় চিংড়ি আনছি। একের মাল। আরেকদিন বলে, মামু পাবদা আছে। নদীর পাবদা নিয়ে যান। সেই স্বাদ। তার কথার মধ্যে এক ধরনের তুচ্ছতা দেখতে পাই। অভদ্রতা। যেন আমি মাছ না খেয়েই বড় হয়েছি। মাছ বিক্রেতা প্রতিদিনই এমন করে। যেন তার মাছ অনেক দামী। এত দামী মাছ আমি কিনতে পারবো না। আমার বাসায় মাছ আসে যাত্রাবাড়ি থেকে। মাওয়া থেকে।
সেদিন যাচ্ছি, মাছ বিক্রেতা বলল- মামু মাছ খান না? তার চোখে মুখে তুচ্ছতা। ক্ষুদ্রতা। অভদ্রতা। আমি দেখলাম, আজ মাছ বিক্রেতা তিন রকমের মাছ এনেছে। পাবদা, টেংরা আর চিংড়ি। বললাম, তোমার সব মাছের দাম কত? আমার কথায় মাছ বিক্রেতা বলল- সব মিলিয়ে নয় হাজার টাকা হবে। বললাম, সব মাছ আমার বাসায় দিয়ে আসো। এই নাও তোমাকে দশ হাজার টাকা দিলাম। চারপাশে মোটামোটি একটা ভিড় লেগে গেছে। লোকজনের চোখ মুখ দেখে আমি আনন্দ পেলাম। এই আনন্দের দাম এক লাখেরও বেশি। মাছ বিক্রেতা জানে না, আমার নাম রাজীব। রাজীব নূর খান।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই নভেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৩১

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




