
সময় বিকেল সাড়ে চারটা।
আমি দাড়িয়েছিলাম তাজমহল রোডের রাস্তার পাশে একটা চায়ের দোকানে। একজন আসবে অপেক্ষা করছিলাম। সুন্দর বিকেল। অতি মনোরম! আমার সামনে এক মহিলা দাঁড়িয়ে আছেন। মহিলার পাশে একটা ৮/৯ বছরের ছেলে। মহিলা ছেলেকে বললেন, আব্দুল্লাহ তুমি এখানে দাঁড়াও। আমি দশ মিনিট পর আসছি। মহিলা চলে গেলেন। ছেলেটা আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। ছেলেটাকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে মাদ্রাসায় পড়ে। মাদ্রাসার উইনিফর্ম পরা। মাথায় টুপি। আমার মাথায় প্রশ্ন জাগলো- ছেলেটা কেন স্কুলে না পড়ে মাদ্রাসায় ভরতি হলো? কৌতূহল চেপে রাখতে পারলাম না। ছেলেটাকে প্রশ্ন করলাম- তুমি কোথায় পড়ো, কিসে পড়ো?
ছেলেটা বলল, আমি জামিয়া ইসলামিয়া মাদ্রাসাতে পড়ি।
'হিফজ' পড়ছি। ছেলেটার কথা বলার মধ্যে কোনো জড়তা নেই। মিষ্টি চেহারার একটা ছেলে! স্কুলে ভরতি না হয়ে মাদ্রাসায় গেলো! আমি বললাম, আর কিছুদিন পর তুমি নিশ্চয়ই কোরানে হাফেজ হবে? ছেলেটা বলল, আল্লাহ যদি চায়। বললাম, তুমি মাদ্রাসা বাদ দিয়ে স্কুলে ভরতি হও। স্কুল শেষ করে কলেজে তারপর ইউনিভার্সিটি। লেখাপড়া শেষ করার পর ভালো চাকরি পাবে। অনেক টাকা ইনকাম করবে। সেই টাকা দিয়ে তুমি সুন্দর জীবনযাপন করতে পারবে। মানবেতর জীবনযাপন করতে হবে না। এমনকি তখন তুমি চাইলে তোমার মা বাবাকে হজ্ব করিয়ে আনতে পারো। কত না আনন্দের ব্যাপার! ছেলেটা আমার কথা মোটেও পছন্দ করছে না।
ছেলেটাকে বললাম, মাদ্রাসা পড়ে কি পাইলট, ইঞ্জিনিয়ার, ডাক্তার হওয়া যাবে?
ছেলেটা বলল, না। বললাম, মাদ্রাসায় লেখাপড়া করলে তোমাকে মানবেতর জীবন যাপন করতে হবে। ভালো চাকরি পাবে না। বাড়ি বাড়ি গিয়ে কোরআন পড়াতে হবে, নইলে মসজিদের ইমাম অথবা মাদ্রাসার শিক্ষক। অথবা মসজিদের খাদেম। এসব কাজ করলে তুমি অল্প টাকা সেলারি পাবে। সেটা দিয়ে তোমার জীবন কাটবে অভাবে অভাবে বারো মাস। সেটা কি ভালো হবে? আমি এসব বিষয় ভাবি না। বললাম, তাহলে তুমি কি ভাবো? ছেলেটা গর্ব করে বলল- 'আখিরাত'! চিন্তা করে দেখেন অবস্থা বাচ্চা একটা ছেলে- তার মাথায় ঘুরছে আখিরাত! বাস্তব দুনিয়া নিয়ে তার চিন্তা নেই। সে পড়ে আছে আখিরাত নিয়ে!
আমার ইচ্ছা করছে ছেলেটার মাকে বিষয়টা বুঝিয়ে বলি।
স্কুলে পড়লে কি কি সুবিধা। মাদ্রাসা কেন বাদ দিতে হবে। মাদ্রাসায় যে বলাৎকার হয় সেটাও বুঝিয়ে বলি। কিন্তু আমি ছেলেটার মাকে শেষমেষ কিছুই বলতে পারলাম না। কারন এরকম আগে হয়েছে- ছেলে মাদ্রাসায় পড়ে, বাবা-মাকে বুঝাতে গিয়েছি তাদের সন্তানকে যেন স্কুলে ভরতি করিয়ে দেওয়া হয়। তাহলে ছেলের জন্য ভালো হবে। আমার পুরো কথা না শুনেই মা-বাবা'রা রেগে যায়। এতটাই রেগে যায় যে, যেন এখনই আমাকে মারবে। না মারলে তাদের কলিজা জুড়াবে না। আমি নাকি ইসলামের দুশমন। আমি নাকি তাদের ভুল পরামর্শ দিচ্ছি। আমি নাকি জাহান্নামের পথ দেখাচ্ছি। এরপর থেকে আমি কাউকে বুঝাতে যাই না। শুধু মনে মনে আফসোস করি।
আমি ইসলামের দুশমন নই।
আমি নিজে মুসলিম। আমি প্রতিনিয়ত প্রভুকে স্মরন করি। আমি মাদ্রাসার বাচ্চা ছেলেদের বুঝাতে চাই- অল্প বয়সে আখিরাতের চিন্তা করার কোনো দরকার নাই। এখন মন দিয়ে শুধু লেখাপড়া করে যাও। এমন না যে স্কুলে পড়লে আরবী পড়া যাবে না। কোরআন হাদিস পড়া যাবে না। মানব জীবন একটাই। পরকালের চিন্তায় বর্তমান নষ্ট করার কোনো মানে হয় না। বর্তমান গুরুত্বপূর্ন বলেই তো প্রভু আমাদের দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন। আমরা বর্তমান ভুলে গেলে, ঈশ্বর নিজেই রাগ করবেন। বলবেন, গাধা গুলো করে কি! কত সুন্দর রুপ, রস, গন্ধ ভরা সুন্দর পৃথিবী তৈরি করে দিলাম, গাধা গুলো সেসব উপভোগ না করে আখিরাত নিয়ে ব্যস্ত!
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে নভেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৫

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


