somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রাজীব নুর
আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

আমাদের শাহেদ জামাল- ৯০

১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



শাহেদ এখন মিরপুরে টোলার বাগের কাছে এক মেসে থাকে।
ছয় তলা বিল্ডিং। শাহেদরা থাকে পাঁচ তলায়। মেস মেম্বার মোট ছয়জন। মেস মেম্বারদের মধ্যে চাকরীজীবি আছে, ছাত্র আছে এবং আছে বেকার। বেকার হচ্ছে আমাদের শাহেদ। শাহেদ জামাল। শাহেদ জামাল এই মেসে নতুন এসেছে। কথিত আছে, এই বাড়িতে জ্বিন আছে। অতি দুষ্ট জ্বিন। প্রতিদিন রাতে জ্বিন ছাদে নাচে অথবা লাফায়। তখন বাড়ির সবাই ভয়ে থাকে। রাত দুটার পর ধূপধাপ শব্দ। বাড়ির সবাই এই শব্দ শুনেছে। শাহেদ জামাল জ্বিনটিন বিশ্বাস করে না। পবিত্র কোরআনে যে জ্বিনদের কথা বলা হয়েছে এবং তাদের মেসের ছাদে যে জ্বিন লাফায় সেই জ্বিন আলাদা। কোরআন শরীফের কোথাও লেখা আছে(?) জ্বিন মধ্যে রাতে এসে বাড়ির ছাদে লাফাবে। ছাদে লাফিয়ে জ্বিন কি বলতে চায়? জ্বিন এসে শুধু শুধু কেন ছাদে নাচানাচি করবে? শাহেদ জামালের ধারনা জ্বীন জাতি মানব সম্প্রদায়ের কোনো কাজে লাগলো না। জ্বীন জাতিকে কাজে লাগানো গেলে বিশ্ব অনেক দূর এগিয়ে যেতো।

একদিন আমি রমনা পার্কে যাই শাহেদ জামালের কাছে।
শাহেদ রমনা পার্কের সবচেয়ে বড় পাকুর গাছের নিচে বেঞ্চে শুয়ে থাকে। দুই বন্ধুর অনেকদিন পর দেখা হলো। শাহেদ বলল, পাকুর গাছের বৈজ্ঞানিক নাম জানিস? আমি বললাম, না জানি না। শাহেদ বললো- Ficus rumphii। আমি পাকুর গাছের দিকে তাকিয়ে বললাম, পাকুর গাছ দেখতে বটগাছের মতোন। জানিস, পাকুর গাছে জ্বীন থাকে? শাহেদ বলল, রমনা পার্কের এই পাকুর গাছের কাছে লোকজন কম আসে, এজন্য আমি এই পাকুর গাছটা বেছে নিয়েছি। কেউ ডিস্টার্ব করে না। স্কুল কলেজের ছেলেমেয়েরা সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রমনা পার্কে আসে প্রেম করতে। এই প্রজন্মের প্রেম ভালোবাসায় নোংরামী দিয়ে ভরা। অথচ প্রেম ভালোবাসা কি সুন্দর একটা ব্যাপার। প্রেম তো আমি রমিজ উদ্দিনের ছেলে শাহেদ জামালও করেছি। আমার কাছ থেকে ওদের প্রেম ভালোবাসা শেখা উচিৎ। কোনোদিন হাত ধরতে চাইনি। চুমু তো দূরের কথা। এযুগের ছেলেরা বন্ধুর ফ্লাটে, নইলে বরিশালের লঞ্চে। এ যুগের প্রেম ভালোবাসা মানেই জিং জং।

আমি বললাম, বন্ধু- পাকুর গাছের নিচে শুয়ে না থেকে, তোর মেসে ঘুমাস না ক্যান?
শাহেদ বলল, আমার মেসে জ্বিন আছে। অতি দুষ্ট জ্বিন। আমি বললাম, তুই জ্বিন বিশ্বাস করিস? শাহেদ বলল, জ্বিন বিশ্বাস না করলে উপায় আছে? কোরআন শরীফে যা লেখা আছে তার সব বিনা দ্বিধায় বিশ্বাস করতে হবে। যে বিশ্বাস করবে না, সে নাস্তিক। এই সমাজ নাস্তিকদের ভালোবাসে না। ঘৃণা করে। আমি ভাই নাস্তিকের তকমা গায়ে লাগাতে পারিব না। এটা মুসলিম দেশ। আমি বললাম, সব শালা মুসলিম। অথচ শালারা তো ভালো মানুষ না। মুসলিম হয়ে শালারা চুরী করে, মিথ্যা বলে, খুন করে, ধর্ষন করে, দূর্নীতি করে, ঘুষ খায়, মানুষ কুপিয়ে মারে। পুলিশ হত্যা করে। আগুন দেয়। দেশের সম্পদ নষ্ট করে। আসলে শালারা নামে মুসলিম। কাজেকর্মে ভন্ড, বদমাশ। ফিলিস্তীনিদের আছে হামাস, আমাদের আছে ধার্মিক মুসলিম জামাত শিবির। এরা ধর্মটাকে নিজের মনের মতো বানিয়ে নিয়েছে। একের অধিক বিয়ে করবে। রক্ষিতা রাখিবে। নামাজ পড়তে পড়তে কপালে স্থায়ী কালো দাগ বসিয়ে ফেলিবে কিন্তু ভন্ডামি ছাড়বে না। আসলে শালারা মুখোশ পড়ে আছে।

আমি বললাম, এসব কথা বাদ দে দোস্ত।
তোর মেসের জ্বিনের কাহিনী বল। শাহেদ বলল, গতকাল রাত দুটা বাজে। পুরো বাড়ির সবাই রেগে গেছে। আমি বললাম, কার উপর রেগেছে? শাহেদ বলল, জ্বীন। আমি বললাম, ঘটনা খুলে বল। ইন্টারেস্টিং মনে হচ্ছে! শাহেদ বলল, বাড়ির সবাই লাঠি হাতে ছাদে গেছে। কারো হাতে লাঠি, কারো হাতে ক্রিকেট খেলার ব্যাট। তারা আজ জ্বীনকে পিটিয়ে মারবে। ছাদের দরজা খোলা হলো। একজন মোবাইল রেডি করে রেখেছে পুরো দৃশ্য ক্যামেরায় ধারন করবে। তার ইউটিউব চ্যানেল আছে। মোবাইলের লাইট জ্বেলে পুরো ছাদ তন্নতন্ন করে জ্বীন খোজা হলো কিন্তু জ্বীন পাওয়া গেলো না। জ্বীন পালিয়ে গেছে। শাহেদ বলল, চিন্তা করে দ্যাখ লাঠি হাতে ছাদে গিয়েছে জ্বীনকে মারতে। আরেক শালা জ্বিন ভিডিও করতে গেছে। জ্বিনের কি খেয়ে দেয়ে কাজ নেই, মধ্যরাতে এসে ছাদে নাচ গান করবে? বাড়িওলা সকল ভাড়াটিয়াকে বলেছে, আয়াতু কুরসি পড়তে। এমনকি সে প্রতিটা ফ্লাটের দরজায় 'আয়াতুল কুরসি' বাংলা অর্থসহ কম্পিউটার কম্পোজ করে আঠা দিয়ে লাগিয়ে দিয়েছে। পুরো বাড়িতে সোনা রুপার পানি ছিটিয়ে দিয়েছে। একজন হুজুর দিয়ে দোয়া দরুদ পাঠ করিয়েছেন। এরপরও যদিও জ্বীন আসে তাহলে উনি কি করবেন?

আমি বাসায় এসে টিভি ছাড়িলাম। টকশো হচ্ছে।
একজন মাওলানা আর একজন আধুনিক, মুক্তমনা মানুষ। তারা দুজন তুমুল তর্ক করছেন। একজন বললেন, বিজ্ঞানে জ্বীনের অস্তিত্বের প্রমাণ নেই। আরেক জন বললেন, জ্বীনের অস্তিত্ব 'কুরআন' দ্বারা প্রমাণিত। এরিস্টটল, গৌতম বুদ্ধ থেকে শুরু করে আইনস্টাইন, রবীন্দ্রনাথ কেউ জ্বিনের ধার-ধারেননি। তাতে তাদের কি ক্ষতিটা হয়েছে? মাওলানা রেগে গেছেন। বললেন, কোরআনে বলা হয়েছে, জ্বীনরা মানুষদেরকে দেখতে পায়। আমার আল্লাহ নবীজিকে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন- মানুষ এবং জ্বিনদের নবী হিসেবে। জ্বীন দেখতে মানুষদের মতোন। তবে তাদের মাথা বড়। চোখও মানুষদের চোখের চেয়ে বড়, এবং তাদের চোখ লাল থাকে। নবীজি বলেছেন, আয়াতুল কুরসী পড়লে ঘরে জ্বীন প্রবেশ করবে না। জ্বীন মানুষদের বাথরুমে থাকতে পছন্দ করে। একবার এক জ্বীন নবীজির কাছে এসে জিজ্ঞেস করে, হুজুর আমাদের খাদ্য কি? নবীজি বলেছেন, আল্লাহর নামে জবাই করার পশুর হাড় এবং গোবর। একবার মক্কাতে এক ছেলের উপর জ্বিন আসর করে। তখন নবীজি বলেন, ওহে দুষ্ট জ্বিন তুমি বের হয়ে আসো। এই বালকের শরীর থেকে তুমি বের হয়ে আসো। তারপর ছেলেটি সুস্থ হয়ে যায়। আধুনিক লোকটা বলল, জ্বীনটিন হচ্ছে রুপকথা।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৫০
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামাত কি দেশটাকে আবার পূর্ব পাকিস্তান বানাতে চায়? পারবে?

লিখেছেন ঋণাত্মক শূণ্য, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:২৮

অন্য যে কোন সময়ে জামাতকে নিয়ে মানুষ যতটা চিন্তিত ছিলো, বর্তমানে তার থেকে অনেক বেশী চিন্তিত বলেই মনে করি।



১৯৭১ এ জামাতের যে অবস্থান, তা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের অস্তিত্বের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

=যাচ্ছি হেঁটে, সঙ্গে যাবি?=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৬


যাচ্ছি হেঁটে দূরের বনে
তুই কি আমার সঙ্গি হবি?
পাশাপাশি হেঁটে কি তুই
দুঃখ সুখের কথা ক'বি?

যাচ্ছি একা অন্য কোথাও,
যেখানটাতে সবুজ আলো
এই শহরে পেরেশানি
আর লাগে না আমার ভালো!

যাবি কি তুই সঙ্গে আমার
যেথায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×