somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি গাজাখুরি গল্প (ফ্যামিলির বড় সন্তান)!

২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অনেকটা বিশন্ন ও বিধ্বস্ত অবস্থায় ভবঘুরের মতন সকাল সাড়ে এগারো টার সময় ছবির হাটে ঢুকলাম। ছবির হাটে ঢুকেই পকেটে থাকা সর্বশেষ সম্বল ২টাকার ৫টা নোটের ৪টা নোট দিয়ে একখানা বেনসন সিগারেট ধরিয়ে শিখা চিরন্তনের দিকে পা বাড়ালাম।
প্রকৃতিতে বসন্ত ছুই ছুই করছে, তাই প্রকৃতি তার অপরূপ পরিবর্তনশীলতা বজায় রেখে বৃক্ষরাজি হতে পাতা ছাড়ানোর খেলায় মত্ত। মাঝে মাঝে মাতাল হাওয়া উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে ঝড়ে পড়া সব পাতা, সঙ্গে রয়েছে ধুলোর মিতালী। সিগারেটে কষে টান দিতে দিতে শিখা চিরন্তনকে সামনে রেখে বসলাম।
সকালে এখানে তেমন লোকজন থাকেনা তাই অনেকটা নিরিবিলি। আমি যেখানে বসা ছিলাম তার একটু বাম পাশেই একজন লোক খুব অদ্ভুতভাবে শুয়ে ছিল। আমার উপস্থিতি টের পেয়ে কিছুটা নরে চরে উঠলো। আমি ভাবলেশহীন ভাবে বসে রইলাম। আশে পাশের প্রকৃতিকে নিবির ভাবে দেখার চেষ্টা করছি, কবি সাহিত্যিকেরা যেভাবে দেখে আরকি!
প্রকৃতি দেখতে দেখতে হঠাৎ দেখি অদ্ভুত ভাবে শুয়ে থাকা সেই লোকটা নেই, বালিশ হিসেবে ব্যাবহৃত তার মাথার নিচের কালো ব্যাগটা ঠিক আগের জায়গাতেই। একটু অবাকই হলাম। এদিক ঐদিক তাকিয়ে খুজলাম কেন খুজলাম জানিনা।
আমি আবার আমার মত করে প্রকৃতি দেখা শুরু করলাম। ২টা চড়ুই পাখি খাবার সংগ্রহ করছে, একটা পাখি উড়ে গিয়ে একটু দূরে খাবার খুজতে লাগলো। পাখির জীবন কি দারুন যখন যেখানে খুসি উড়ে উড়ে চলে যেতে পারে। কোন বাধা নাই কোন পিছুটান নাই। কোন পরাধীনতা নাই।
হঠাৎ অনুভব করলাম পিছন দিক থেকে কেউ একজন আমার দিকে আসছে। তাকিয়ে দেখি যে লোকটা অদ্ভুতভাবে শুয়ে ছিল ঐ লোকটা, কাছে এসেই মলিন একটা হাসি দিয়ে আমাকে জিজ্ঞাসা করে আমি এই এলাকার কিনা? এলাকা বলতে কি বুঝাতে চেয়েছে আমি আদৌ বুঝতে পারিনি। আমি নাহ বলে এক কথায় উত্তরটা শেষ করে দিলাম। খুব বিশন্ন ছিলাম, তেমন কথা বলতে ইচ্ছে ছিল না আবার অনিচ্ছাও হচ্ছিল না। অনিচ্ছা থাকলে হয়তো প্রথম প্রশ্নটাই এড়িয়ে যেতাম। আর কোন কথা না বলে লোকটা আমার পাশে বসল, তেমন ভ্রুক্ষেপ করলাম না।
কিছুক্ষণ চুপচাপ করে আমার মত তিনিও প্রকৃতি দেখা শুরু করে দিলেন। একসময় আবার হঠাৎ করে মলিন হাসি দিয়ে জানতে চাইলেন আমি কোথায় থাকি? কয়েক সেকেণ্ড পর আমি ওনার দিকে তাকিয়ে নিরস একটা হাসি দিয়ে বললাম ফার্মগেট থাকি? পাল্টা প্রশ্ন করলেন - এখনে কি একাই এসেছেন? মানে সিঙ্গেল নাকি?
আমি কিছুটা অবাক ভঙ্গিতে মাথা নেড়ে সায় দিলাম। তারপর আবার দুজনেই চুপচাপ প্রকৃতি দেখছি।
ভদ্রতার খাতিরে তাকে গিজ্ঞাসা করলাম আপনি কি এখানেই থাকেন? কোন উত্তর নাই। একবার সামনে তাকায় একবার আমার দিকে তাকায়। আমি আবার বলি আপনি কি ঢাবির ছাত্র? এইবার তিনি মুখ খুলেন, আবারো সেই মলিন হাসি, বললেন তার বাড়ি ঢাকা বিভাগে, পড়াশোনা করেছেন বাহিরে।
বাহিরে বলতে আমি ভেবেছিলাম দেশের বাহিরে, উনার যা পোশাক পরিচ্ছদ তাতে খুব সহজেই ভাবতে পারি তিনি বিদেশ থেকে পড়া শুনা শেষ করে অনেক দিন হলো দেশে এসেছেন। কিন্তু আমাকে হতাশ করে দিয়ে বললেন ঢাকার বাহিরে একটা জায়গা থেকে অনার্স শেষ করে এখন কাজ খুজছেন। সাথে একটু থাকার জায়গাও তার অনেক দরকার। পরক্ষনেই তার সেই মলিন হাসির বদলে একটু জোরে সোরেই হেসে হেসে বলতে লাগলেন থাকার ব্যাবস্থা হয়ে যাবে। আজ ৩ তারিখ তো এই দুই চার দিনের মধ্যেই একটা ব্যাবস্থা হয়ে যাবে। সহসা উৎসুক হয়ে জানতে চাইলাম কোন আত্মীয় সজন আছে কিনা ঢাকা শহরে? তার জবাব ছিলো- হ্যা প্রায় নিয়মিতই আত্মীয়দের বাসায় যাই।

হাটু পর্যন্ত ভাজ করা জিন্সের পান্টের পকেট হাতরে দশ বারোটা কাঠি সমেত একটা দিয়াশলাই ও একটা মার্বেল বের করে আমার পাশে রেখে আমাকে জিজ্ঞাসা করে ফার্মগেট আমার নিজের বাড়ি কিনা? কেন জানি হাসি ধরে রাখতে পারলাম না, উচ্ছল হাসি হেসে বললাম-ভাই নিজের বাড়ি থাকলে একা একা শিখা চিরন্তনীর সামনে উদাস নয়নে বসে থাকতাম না।
আবারও দুজনেই চুপচাপ। কারো মুখে কোন কথা নাই। মাঝে মাঝে আমার পাশে রাখা মার্বেলের দিকে উৎসুক দৃষ্টিতে তাকাচ্ছি। লোকটা নিরবতা ভেঙ্গে আমাকে বলে আমি গুল নেই কিনা? ভ্রু কুচকে বললাম না ভাই সহ্য করতে পারিনা। আমার উত্তর শুনে লোকটা গুল নেয়া শুরু করলো আমি চুপচাপ বসে দেখতে লাগলাম। বাপের জনমেও গুল নেই নাই, গুলের কৌটা দেখলেই কেমন জানি রাগ হয়। অসম্ভব বিরক্তিকর একটা বস্তু।
ধীরে ধীরে আশে পাশে লোকজন বাড়ছে। আমাদের পাশেই দুজন গাজা বানাচ্ছে। আড় চোখে কয়েকবার তাকালাম, ভাবছি যদি ডেকে বলে ভাই একটা টান দিবেন নাকি তাহলে খারাপ হয়না।

এতক্ষন হয়ে গেল একবারও লোকটার নাম জিজ্ঞাসা করলাম না। যাই হোক ভাই নাম টাম দরকার নাই আমি কোন ঝামেলায় যেতে চাচ্ছি না। নিজের পকেট ফাকা, তারপর আবার নানান রকমের ঝামেলায় আছি তাই বেশি সখ্যতা করতে যাওয়ার কোন দরকার নাই।
আমাদের পাশেই যারা গাজা বানাচ্ছিল তারা এবার গাজায় আগুন দিয়েছে, গাজার ঘ্রানে পরিবেশটাই যেন অন্যরকম লাগছে।
ভাই দুইটা টান দেয়া যাবে? যারা গাজা টানছিল তাদের উদ্দেশ্য করে লোকটা যখন এই কথা বলল তারাও সহসা হাত পরিবর্তন করে লোকটার হাতে গাজা দিয়ে দিলো। দুই তিন টান দেবার পর এবার আমাকে বলে চলে নাকি ভাই? আমি আর না করলাম না। বললাম ভাই এই জিনিসটা খুব ভাল লাগে। এইটা এমন এক জিনিস যা খাবার পর আমার অট্ট হাসি ধরে রাখতে পারিনা। দুম করে কষে ২টা টান দিলাম!B-)B-)B-) এখন আমার ভিতর শুরু হইলো আজব আজব সব প্রশ্ন।
ভাবছি লোকটা এইবার নিশ্চয়ই বিরক্ত হবে। কারন গাজা খাবার পর আমার সাথে যারা থাকে তারা মোটামুটি বিরক্ত হয়,:D:D আজব আজব সব কথা বলি, আজব আজব সব বানী ছাড়ি আর দম ফাটিয়ে হাসা-হাসি করি।
ভাই এই যে প্রজাপতি গুলা উড়া উড়ি করতাছে এদের কি কোন হতাশা আছে? এদের কি কোন অভাব আছে? আমার এই কথা শোনার পর লোকটা ভ্রু কুচকে বলে ভাই আছে, এদের ভিতরও হতাশা আছে, আছে অভাব। আমি বলি হাসতে হাসতে বলি কোথায় এদের হতাশা? কোথায় এদের অভাব? দেখাতে পারবেন? প্রকৃতিই এদের সবকিছুর যোগান দিচ্ছে। পাখি প্রজাপ্রতিরা কখনো চাকরি খোজে না, তাদের থাকার জন্য জায়গার বিনিময়ে টাকা দিতে হয়না, টাকা দিয়ে খাবার কিনতে হয়না, অশুভ রাজনীতি ফেস করতে হয়না। লোকটা একটু অবাক নয়নে আমার দিকে তাকিয়ে বলে ভাই মানুষও প্রকৃতি থেকেই সব কিছু পাচ্ছে। কেউ সহজে পায় কেউ একটু কষ্ট করে পায়। আমি এবার লোকটাকে জিজ্ঞাসা করলাম ভাই আপনি কোথাও এপ্লাই টেপ্লাই করেন নাই? হ্যাঁ করছি। কয়েকটা জায়গায় এপ্লাই করছি। বিশন্ন চেহারায় কথাগুলি বলতে থাকে। আমি আবার তাকে জিজ্ঞাসা করি ভাই কোন রেস্পন্স পান নাই? মোবাইল টা বিক্রি করে দিছি, হাসতে হাসতে এই কথা বলে। আমি অবাক হই। ভাবতে থাকি এবং লোকটার এক্সপ্রেসনে যা বুঝলাম, একটা চাকরি খুব দরকার কিন্তু ম্যানেজ করতে পারছে না। ভাই আপনি কি ফ্যামিলির বড় ছেলে? এই কথা বলার সাথে সাথে লোকটা তার ব্যাগটা হাতে নিয়ে বলে ভাই আমার এখন যেতে হবে, ফ্যামিলির কথা অন্যদিন হবে, এখন আমি উদ্যানের ভিতর একটু বেড়াবো বলেই আমাকে আর কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়ে সে উঠে চলে গেল। অপলক দৃষ্টিতে লোকটার চলে যাওয়া দেখতে লাগলাম।
ধীরে ধীরে উদ্যানের গভীরে চলে গেল যা আমার দৃষ্টির অগচোর হয়ে গেল। জানি না আর কোনদিন এই অদ্ভুত লোকটার সাথে দেখা হবে কিনা? তবে খুব জানতে ইচ্ছে হয় লোকটা কি কোন চাকরি পেয়েছে? থাকার জন্য কি কোন জায়গা পেয়েছে? উনি কি ফ্যামিলির বড় সন্তান ছিলেন? গোল এই পৃথিবীতে ঘুরতে ঘুরতে হয়তো আবার দেখা হয়েও যেতে পারে !!! সেই দিন আবার জিজ্ঞাসা করবো "ভাই আপনি কি ফ্যামিলির বড় সন্তান"?:-*
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৫৫
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেসবুক বিপ্লবে সেভেন সিস্টার্স দখল—গুগল ম্যাপ আপডেট বাকি

লিখেছেন মহিউদ্দিন হায়দার, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৩০




কিছু তথাকথিত “বাংলাদেশি বিপ্লবী” নাকি ঘোষণা দিয়েছে—ভারতের সেভেন সিস্টার্স বিচ্ছিন্ন করে ফেলবে! সহযোগী হিসেবে থাকবে বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী আর পাকিস্তানি স্বপ্ন।শুনে মনে হয়—ট্যাংক আসবে ইনবক্সে। ড্রোন নামবে লাইভ কমেন্টে। আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গু এনালিস্ট কাম ইন্টারন্যাশনাল সাংবাদিক জুলকার নায়েরের মাস্টারক্লাস অবজারবেশন !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২৬

বাংলাদেশের দক্ষিণপন্থীদের দম আছে বলতে হয়! নির্বাচন ঠেকানোর প্রকল্পের গতি কিছুটা পিছিয়ে পড়তেই নতুন টার্গেট শনাক্ত করতে দেরি করেনি তারা। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ ঘিরে নতুন কর্মসূচি সাজাতে শুরু করেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিবাদ: দিল্লির ছায়া থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৫:৫৭

একটা সত্য আজ স্পষ্ট করে বলা দরকার—
শেখ হাসিনার আর কোনো ক্ষমতা নেই।
বাংলাদেশের মাটিতে সে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত।

কিন্তু বিপদ এখানেই শেষ হয়নি।

ক্ষমতা হারিয়ে শেখ হাসিনা এখন ভারতে আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

Grameen Phone স্পষ্ট ভাবেই ভারত প্রেমী হয়ে উঠেছে

লিখেছেন অপলক , ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৯



গত কয়েক মাসে GP বহু বাংলাদেশী অভিজ্ঞ কর্মীদের ছাটায় করেছে। GP র মেইন ব্রাঞ্চে প্রায় ১১৮০জন কর্মচারী আছেন যার ভেতরে ৭১৯ জন ভারতীয়। বলা যায়, GP এখন পুরোদস্তুর ভারতীয়।

কারনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×