somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তরল সার উদ্ভাবন করলেন কৃষিবিদ আরিফ খান : ইউরিয়া সারের ব্যবহার দুই-তৃতীয়াংশ কমানো সম্ভব

০৫ ই জানুয়ারি, ২০১২ সকাল ৯:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
তরল সার উদ্ভাবন করেছেন সিরাজগঞ্জের কৃষিবিদ আরিফ হোসেন খান। এ সার ব্যবহার করে ভালো ফল পাচ্ছেন কৃষকরা। আরিফ খান এই সারের নাম রেখেছেন ‘ম্যাজিক গ্রোথ’। ম্যাজিক গ্রোথ ব্যবহার করলে জমিতে ইউরিয়া সারের ব্যবহার দুই-তৃতীয়াংশ কমানো সম্ভব বলে দাবি করছেন আরিফ খান ।
আরিফ খান বলেন, সাধারণভাবে প্রতি বিঘা জমিতে ধান চাষে ৩০ থেকে ৪০ কেজি বা কোনো কোনো ক্ষেত্রে আরও বেশি ইউরিয়া ব্যবহার করা হয়। তবে তরল সার ম্যাজিক গ্রোথ ব্যবহার করে ধান চাষে মাটিতে ১০ থেকে ১৫ কেজি এবং ম্যাজিক গ্রোথের সঙ্গে পাতায় স্প্রের মাধ্যমে প্রয়োগের জন্য মাত্র এক থেকে দেড় কেজি ইউরিয়া সার ব্যবহার করতে হয়।
বিভিন্ন দেশে ফসল উত্পাদনে মাটির পাশাপাশি পাতার মাধ্যমেও তরল আকারে গাছকে বিভিন্ন ধরনের খাদ্য উপাদান সরবরাহ করা হচ্ছে। ফসল উত্পাদনের এই প্রযুক্তিকে ফোলিয়ার ফিডিং বা ফোলিয়ার ফার্টিলাইজেশন বলা হয়। সমপ্রতি আমাদের দেশেও ফোলিয়ার ফিডিং প্রয়োগ করে ফসল উত্পাদন করা হচ্ছে। তবে তা আমদানি করা হয়। এসব তরল সার ফসলে মূলত পরিপূরক খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এটা ব্যবহার করে চাষীরা সবজি আবাদে ভালো ফল পাচ্ছেন বলে জানা যায়। কিন্তু এর মাধ্যমে দেশের প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হচ্ছে। এখন থেকে হয়তো আর বৈদেশিক মুদ্রা অপচয় করতে হবে না। ফোলিয়ার ফিডিং কৌশলের বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘ গবেষণার মাধ্যমে বাংলাদেশের এক কৃষিবিজ্ঞানী অসাধারণ কার্যকারিতা সম্পন্ন এক লিকুইড ফার্টিলাইজার বা তরল সার উদ্ভাবন করেছেন। তার নাম আরিফ হোসেন খান। সিরাজগঞ্জ পৌর এলাকার ধানবান্ধি মহল্লায় তার বাড়ি। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) পাবনা বীজ বিপণন অঞ্চলের উপপরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন।
এ দেশে সহজে পাওয়া যায় এমন ১৩টি উদ্ভিদের অত্যাবশ্যকীয় খনিজ খাদ্যোপদান যেমন—নাইট্রোজেন, ফসফরাস, পটাশ, সালফার, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, কপার, আয়রন, জিঙ্ক, বোরন, ম্যাঙ্গানিজ, মলিবডেনাম ও ক্লোরিন সমন্বয়ে একটি তরল সার তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন, যাকে তিনি ‘ম্যাজিক গ্রোথ’ নামে অভিহিত করেছেন। এই তরল সারটি পানিতে দ্রবীভূত করে ধানগাছের পাতায় স্প্রে করতে হয়। তিনি জানান, তার উদ্ভাবিত তরল ম্যাজিক গ্রোথ প্রযুক্তি ব্যবহার করে কম ইউরিয়া সার ব্যবহারের মাধ্যমে অধিক ফলন পাওয়া যাচ্ছে। তরল সারটি ধান, গম, ভুট্টা, আলু, শিমসহ বিভিন্ন ধরনের কুমড়াজাতীয়, সবজি, আম, কলা, পেয়ারা, লিচু, পেঁপে, বাদাম, সরিষা, বিভিন্ন ধরনের ডাল, ফসল, শোভাবর্ধনকারী গাছ অর্কিড, ক্যাকটাস প্রভৃতিতে সমানভাবে কার্যকর। বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে পরীক্ষা করে একই রকম ফল পেয়েছেন বলে জানান তিনি। তার উদ্ভাবিত তরল সার ব্যবহার করেছেন এমন কয়েকজন চাষীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের ক্ষেতে সার যেমন কম দিতে হয়েছে, তেমনি ফলনও বেশি হয়েছে।
আরিফ খান নিজ উদ্যোগে রাজশাহী, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, নওগাঁ, রংপুর, গাইবান্ধা, বগুড়া, দিনাজপুর, নীলফামারী, নাটোর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, কুষ্টিয়া, রাজবাড়ী, চুয়াডাঙ্গা, বরিশাল, পিরোজপুর, রাঙামাটি, ঢাকা এবং গাজীপুর জেলার বিভিন্ন উপজেলার ফসলের ওপর চাষীপর্যায়ে ব্যাপকভিত্তিক গবেষণা করে তার ফলাফলের সত্যতা যাচাই করেছেন।
ম্যাজিক গ্রোথ ব্যবহার করে ধানের বীজতলায় চারা সুস্থ-সবলভাবে বেড়ে ওঠে। বোরো মৌসুমে তীব্র ঠাণ্ডা এবং কুয়াশার কারণে চারার কোল্ড ইনজুরিজনিত ক্ষতি কম। চারা মূল জমিতে রোপণ করলে রোপণজনিত আঘাত কম লাগে এবং চারা দ্রুত বৃদ্ধি পায়। গাছ শক্ত থাকে বলে সহজে হেলে পড়ে না। কুশির সংখ্যা দ্রুত বাড়ে। ধানগাছের শীষ বড় হয় এবং শীষে পুষ্ট ধানের সংখ্যা বেশি থাকে। ধানগাছে রোগ ও পোকার আক্রমণ কম হয়।
তার উদ্ভাবিত তরল সার সম্পর্কে সিরাজগঞ্জ জেলা কৃষি সমপ্রসারণ অধিদফতরের সাবেক উপপরিচালক দুলাল চন্দ্র রায় বলেন, দেশে তরল সার প্রথমবারের মতো আরিফ হোসেন খান আবিষ্কার করেছেন এবং সিরাজগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে এর প্রয়োগও করেছেন। আমি সরেজমিনে গিয়ে ওই সব কৃষকের সঙ্গে সঙ্গে কথা বলেছি, তারা সুফল পেয়েছে। কিন্তু দেশের বিভিন্ন স্থানের মাটির পরিপ্রেক্ষিতে এ সার নিয়ে আরও গবেষণা প্রয়োজন। জেলা উদ্ভিদ সংরক্ষণ বিশেষজ্ঞ কৃষিবিদ আরশেদ আলী জানান, দীর্ঘদিন গবেষণার পর এ কৃষিবিদ যে তরল সার আবিষ্কার করেছেন তার সুফল পেতে হলে সরকারিভাবে তাকে সহযোগিতা করা দরকার। এ জন্য তিনি সরকারি-বেসরকারি কৃষিভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে সহায়তার জন্য আহ্বান জানান।

Click This Link
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×