somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কান মলা খেতে চাই।

১৮ ই মে, ২০১৬ বিকাল ৪:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কান, বরাবরি আমার কাছে একটু সেনসিটিভ ইস্যু। কুমিল্লা জিলা স্কুলে পড়ার সময় এসিস্ট্যান্ট হেড স্যার হাবিবুল্লাহ স্যার যখন অকারনে ( কারন খুজে পেতাম না তখন) কানটা মলে দিতেন কিম্বা কান ধরে টেনে জানতে চাইতেন কিরে কেমন আছিস ডাক্তারের পোলা (আব্বু তখন কুমিল্লার সিভিল সার্জন)? ভিতরে সাংঘাতিক রাগ হলেও ভয়ে কিছুই বলতে পারতাম না। আর যেদিন পড়া পারতাম না, কানের পেছন থেকে উপর আর নীচ একসাথে করে একটা ডলা!! উফ এখনো মনে হয় ব্যাথা আছে! মনে মনে কত যে বকা দিয়েছি তার হিসেব নেই। সেই হাবিবুল্লাহ স্যার স্কুল ছাড়ার বেশ কয়েক বছর পর ফেরীতে (মেঘনা, গোমতী ব্রিজ তখনো হয়নি) হঠাৎ দেখা হতেই পেছন থেকে কানটা মলে যখন জানতে চাইলেন কিরে ডাক্তারের পোলা কেমন আছিস? ব্যাথা পেলেও কেন যেন মনে মনে বকা দিতে পারিনি, আদর আদর অনুভব করেছি। আসলে ব্যাথাও কখনো কখনো আনন্দের হয়! এতদিন পরেও ঠিক আগের মতই নিঃস্বার্থ ভাবে ভাল থাকার খোজ আর কে জানতে চাইতে পারেন আমাদের শিক্ষকগন ছাড়া??
স্যার হয়তো এখনো রাস্তায় এদিক ওদিক ছাত্র খুজে বেড়াচ্ছেন কান মলে জানার জন্য কেমন আছিস? আমরা কিছুই করিনি তাদের জন্য, শুধুই সম্মান করা ছাড়া আর এখন তাদের জন্য দোয়া করা ছাড়া।

স্যার আপনাদের এই কান মলাই আজ আমাদের "অ" বিহীন মানুষ বানিয়েছে। আজ আমরা আপনাদের মনে মনে খুজে ফিরি আরেকবার দেখা পাবার আশায়। কান বাড়িয়ে দেবো, আরেকবার মলে দিন...

আমি জানি আমার মতো আমরা প্রত্যেকেই আমাদের স্যারদের মনে করেই পথ চলছি। হয়তো কখনো বলা হয়নি, স্যার ধন্যবাদ। আপনি আপনারা আমাদের জন্য যা করছেন তার প্রতিদান দুরের কথা স্বীকার করার সু্যোগটাও আমরা বেশীর ভাগ ছাত্রই পাইনি।
আজ আমার মতোই কোন ছাত্র হয়তো তার প্রিয় শিক্ষকের জন্য দুফোটা চোখের পানি ফেলে যাচ্ছে। একজন শ্যামল কান্তি দত্ত স্যার যিনি ২১ বছর ধরে ছাত্রদের কান মলেগেছেন অ বিহীন মানুষ বানাতে, সেই স্যারকেই আজ নিজের কান নিজে মলে প্রমান করতে হলো তিনি মানুষ?? সবার সামনে তাকে কান ধরে উঠ বস করিয়ে, হাত জোড় করে ক্ষমা প্রার্থনা চেয়ে তাকে সম্মান! বাচাতে হলো? একজন মাননীয় এমপি সব তদারকের দায়িত্ব নিলেন? অবশ্য এটা এমন কিছু না, এর আগে অনেক মাননীয় এমপিগনই শিক্ষকদের থাপ্পড় দিয়ে বেত্রাঘাত করে নিজের দায়িত্ব পালন করেছেন!! জনগনের প্রতিনিধি, তারাতো এটুকুন করতেই পারে, তাই না?

আমি কোন ভাবেই সমর্থন করিনা, কোন ধর্ম নিয়ে কুটু কথা বলা বা বাড়াবাড়ি করা। যদি কোন ব্যক্তি তা করে থাকেন তার জন্য স্বয়ং মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর তরফ থেকেই সাবধান বার্তা দেয়া আছে। এরপরেও যদি কেউ তা করে থাকে তার জন্য থানা পুলিশ আদালত আছে। আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে কাউকে শাস্তি দেবার ক্ষমতা কি রাষ্ট্র দিয়েছে?

শ্যামল স্যার দোষ করতেই পারেন, তিনি মানুষ ফেরেস্তা নন। তার যথাযথ তদন্ত করে বিচার করাই কি উচিত ছিলো না?
একজন প্রধান শিক্ষককে এভাবে সবার সামনে কান ধরে উঠবস করিয়ে কাকে সম্মান দেখালাম? ধর্ম কে? ধর্ম কি এতটাই ঠুনকো? একজনের বলা কথাতেই এত সহজেই ভেংগে যাবে? নাকি ক্ষমতার নিদর্শন দেখালাম? যাই দেখাই! একটা সহজ কথা আমার, একজন শিক্ষক কে তার পেশার জন্য হলেও এভাবে অপমান করা বা শাস্তি দেয়া যায় না, উচিত না। সমগ্র শিক্ষকসম্প্রদায়ের মাথানত করিয়ে দিলাম আমরা!
আমরা কখনোই সম্মান দিতে শিখলাম না আর শিখবোও না। শ্যামল স্যার আমাদের ক্ষমা করবেন কিনা জানিনা, একজন ছাত্র হিসেবে নিজেকেই ক্ষমা করতে পারছিনা।

হাবিবুল্লা স্যার, আমার ছেলেদের কান মলার জন্যে এখন আর কোন স্যার নেই। শারীরিক শাস্তি দেয়া নিষেধ তাই। অবশ্য শিক্ষকদের শাস্তি দেবার জন্য মাননীয়রা আছেন!
আমি মাঝে মাঝেই ছেলেদের কান মলে দেই অন্তত আমাদের মতো মানুষ হোক অ ছাড়াই।।

আমি শ্যামল স্যারের ছবি দিচ্ছিনা। আর কত অপমান করবো একজন শিক্ষককে এই ছবি দিয়ে? সবাইকে অনুরোধ করবো, দয়াকরে স্যারের এই ছবিটা দেয়া থেকে বিরত থাকুন। আমার ঘরেও একজন শিক্ষক আছেন তার মনের অবস্থা চিন্তা করে কষ্ট পাচ্ছি। পারলে আপনারা শিক্ষকগন এই অশিক্ষিত জাতির আমাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েন।

সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই মে, ২০১৬ বিকাল ৪:৪৭
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সা.) পক্ষ নিলে আল্লাহ হেদায়াত প্রদান করেন

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:৪২



সূরা: ৩৯ যুমার, ২৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৩। আল্লাহ নাযিল করেছেন উত্তম হাদিস, যা সুসমঞ্জস্য, পুন: পুন: আবৃত। এতে যারা তাদের রবকে ভয় করে তাদের শরির রোমাঞ্চিত হয়।অত:পর তাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগটা তো ছ্যাড়াব্যাড়া হয়ে গেলো :(

লিখেছেন সাখাওয়াত হোসেন বাবন, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৫৭



আমি আমার ব্লগিং শুরু করি প্রথম আলো ব্লগে লেখালেখির মাধ্যমে। ব্লগটির প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। কারণ প্রথম আলো ব্লগ আমায় লেখালেখিতে মনোযোগী হতে শিখিয়েছে । সে এক যুগ আগের কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

লুঙ্গিসুট

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:২৪



ছোটবেলায় হরেক রঙের খেলা খেলেছি। লাটিম,চেঙ্গু পান্টি, ঘুড়ি,মার্বেল,আরো কত কি। আমার মতো আপনারাও খেলেছেন এগুলো।রোদ ঝড় বৃষ্টি কোনো বাধাই মানতাম না। আগে খেলা তারপর সব কিছু।
ছোটবেলায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

লিখেছেন নতুন নকিব, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:২৫

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

ছবি কৃতজ্ঞতা: অন্তর্জাল।

একবার শাইখুল হাদিস মুফতি তাকি উসমানী দামাত বারাকাতুহুম সাহেবকে জিজ্ঞেস করা হল, জীবনের সারকথা কী? উত্তরে তিনি এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা

লিখেছেন করুণাধারা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৯



এই ধাঁধার নাম সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা; নিচের লিংকে এটার ভিডিও আছে।

স্বৈরশাসকের বন্দী

এই ধাঁধাটি আমার ভালো লেগেছিল, তাই অনেক আগে আমার একটা পোস্টে এই ধাঁধাটি দিয়েছিলাম। কিন্তু সেই পোস্টে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×