somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সব শিক্ষাই সবার জন্য, কোন শিক্ষাই শুধু মেয়ে কিম্বা ছেলের জন্য না।

২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমরা তিন ভাই-বোন। আমি মেঝো, ভাইয়া বড় আর বোন ছোট। আমাদের আম্মু ছিলো আমার দেখা সবচেয়ে ভাল হোম ম্যানেজার। আমাদের পরিবার শুধুই আমাদের পাঁচজনেই সীমাবদ্ধ ছিলো না। চাচা-ফুফু, কাজিন, আত্মীয় মিলিয়ে সবসময় গমগম করতো আমাদের বাসা। কিন্তু আম্মুর মুখে কখনো বিরক্তি দেখিনি, দেখিনি চিন্তা। দুপুর ১২ টায় ছয়জন মেহমান এলেও দেখতাম খাওয়ার সময় সবাই একইসাথে খাচ্ছি। কিভাবে কখন আয়োজন হলো বুঝতেই পারতাম না।

আম্মু চমৎকার রাঁধুনি হওয়া সত্ত্বেও কখনো আমাদের বোনকে রান্না ঘরে যেতে বলেনি কিম্বা কখনো রান্নাও শিখায়নি। আর আমাদের ভাইদেরতো প্রশ্নই আসেনা। আম্মু বোনকে বলতো বিয়ের পরেতো করতেই হবে, আর প্রয়োজন হলে এমনিতেই শিখে যাবে। তবে মজার আর অদ্ভুত বিষয় হচ্ছে এই পাঁকা রাঁধুনি আম্মুও বিয়ের আগে রাঁধতেই জানতো না এমনকি মাছ কুটতেও পারতো না। নিজের চেষ্টায় আর ইচ্ছায় দারুন রাঁধুনি হয়েছে আম্মু।

বিয়েরপর আমাদের বোন যৌথ পরিবারের প্রয়োজনে এবং নিজের ইচ্ছায় এখন বেশ ভাল রাঁধুনি। সংসারও সামলে যাচ্ছে দারুন।

আমার বিয়েরপর অবশ্য অন্যরকম দৃশ্য দেখলাম। আমার শশুর অনেক ভাল রাঁধতে জানেন এমনকি আমার বউ এর বড় দুই ভাইও দারুন রাঁধতে পারেন। ওদের বাসায় কোন প্রোগ্রাম থাকলে বাবাতো নামতেনই সাথে বড় দুই ভাই পাকা দোস্তর বাবুর্চি বনে যেতেন! খুব অবাক হতাম প্রথম প্রথম। এধরনের দৃশ্যের সাথে একেবারেই পরিচিত ছিলাম না।

আমাদের আব্বু তার পেশার কারনেই বাসায় সময় দিতে পারতেন খুব কম। হাসপাতাল, রুগী নিয়েই ব্যস্ত থাকতেন। সংসার সামলাতো আম্মু এক হাতেই। আমার চাচাদেরও দেখিনি রান্না ঘরে যেতে তাই ছেলেরা রান্না ঘরে না যাওয়াটাই মনে হতো স্বাভাবিক।

বিয়ের আগে চুলা ধরিয়েছি বলেও মনে হয়না। বিয়ের পরেই যে খুব একটা পরিবর্তিত হয়ে গেছি তাও কিন্তু না। আমি আমার বউ দুজনেই চাকুরী করি। কিন্তু সংসার সামলায় বউ একাই। আমাদের ছেলেদের জন্মের পর কিছুটা উপলব্ধি করলাম, ওর উপর কতটা দায়িত্ব আর প্রেশার!! সকালে ছেলেদের সব কিছু গুছিয়ে, আমার খাবার রেডি করে, কলেজে পড়ানো, বাসায় এসে আবার ছেলেদের সম্পূর্ণ দেখভাল করা বাসার সব কিছু সামলানো! অনেক ঝামেলা। যদিও হেল্পিং হ্যান্ড ছিলো কিন্তু মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা যে কত কঠিন, যারা করে তারাই জানে।

ছেলেরা একটু একটু বড় হচ্ছে আমাদের মেয়ে নেই, একটা সময় বুঝতে শুরু করলাম, বাসার কাজ শুধুই ছেলেদের মার দায়িত্ব হবে কেন? চেষ্টা শুরু করলাম চুলা জ্বালানো, চা বানানো শিখে। এর মধ্যে এসিস্টেন্ট ঈদে বাড়ী গেলো আবার আসবে বলে কিন্তু আর এলো না। আমরা বিপদে পরলাম আর বুঝলাম হোম ম্যানেজমেন্ট কতটা কঠিন আর জটিল। দিন গুলো মনে হতো বিশাল, এত কাজ করেও কাজ আরে শেষ হয়না। আমি তেমন একটা কাজ পারিওনা যে সাহায্য করবো?

বউ সামলে যাচ্ছে কিন্তু অনেক বেশী প্রেসার নিয়ে। গত কয়েক ঈদে ছুটির সময় কিম্বা অন্য সময় বাসায় আমরা চারজন থাকলে চেষ্টা করি ঘরের কাজে সাহায্য করতে। রাঁধতে পারিনা কিন্তু থালা বাটি ধুতে শিখেছি, ডিম পোঁজ, অমলেট কিম্বা হাল্কা নাশতা বানানো, চা বানানো শিখেছি। ছেলেদের জন্য সকালের নাশতা রেডি করে দেয়া কিম্বা টেবিল পরিষ্কার করে সাঁজিয়ে দিতে শিখেছি। আমরা দেশের বাহিরে গিয়ে বাসন ধোঁয়া থেকে শুরু করে রান্না করা, কাপড় ধোঁয়া সবই করি। আর নিজ দেশে সাহেব সেঁজে বসে থাকি।

ছেলেদের চুলা ধরাতে, নিজের প্লেট না ধুলেও সিংকে রেখে আসতে, টেবিলে প্লেট, বাটি, পানি দিতে শিখানো হচ্ছে। ওরা দুইভাই এখন নিজেরাই ডিম পোজ কিম্বা অমলেট বানাতে সাথে রুটি শেকতে শিখে নিয়েছে মার কাছ থেকে। ঘর গুছাতে শিখছে। সাথে আমিও শিখছি। অনেক সময় অভ্যাস আর অনভ্যস্ততার জন্য কাজ করতে অনীহা লাগলেও যখন চিন্তা করি আমরা অফিস করেই ক্লান্ত বাসায় এসে রেস্ট নিতে চাই তখনো আমাদের স্ত্রীরা অফিস থেকে এসেও ক্লান্তি নিয়েই আবার বাসার কাজে ঝাপিয়ে পরে! এত শক্তি আর ধৈর্য্য আল্লাহ তাদের দিয়েছে বলেই সংসার টিকে আছে নয়তো কবেই আমাদের বাসা ছেড়ে হোটেলে উঠতে হতো!!!

আমরা হয়তো বাসার সব কাজ সমান ভাগে ভাগ করে নেই না কিন্তু যদি সারাদিন কিছু কাজ তাদের পাশে থেকে যদি করে দেই, খুব কি কষ্ট হবে? তবে তা অনেক খানি ভাল লাগা দেবে আমাদের সহধর্মিণীগনকে।

আমাদের সমাজ আর শিক্ষা ব্যবস্থা আমাদের ছেলেদের গৃহস্থালি কাজ থেকে দূরে সরিয়ে রাখে। আমরা ছেলেরা ছোট বেলা থেকেই শিখে আসছি, মেয়েরা করবে ঘরের কাজ, ছেলেরা বাহিরের কাজ। আমরা খেলতাম গাড়ী দিয়ে আর মেয়েরা হাড়ি-পাতিল দিয়ে!!! আমাদের নিয়ে যাওয়া হয় বাজারে আর মেয়েদের রান্না ঘরে! সময়ের প্রয়োজনে, নিজেদের দরকারেই এখন ছেলেদের জানা উচিত, শিখা উচিত হোম ম্যানেজমেন্ট সহ বেসিক কুকিং।

গত কয়েকদিন ধরেই দেখছি হোম ইকোনমিকস কলেজে আন্দোলন চলছে একে কোএডুকেশন করার দাবীতে। আমার মনে হয় এই দাবী মেনে নেয়ার এটাই প্রকৃত সময়। ছেলেরাও জানুক কিভাবে ঘর তৈরী করতে হয় এবং তা সাজিয়ে রাখতে হয়। ছেলেরাও শিখুক খাদ্যের পুষ্টিগুণ এবং শিশুর যত্ন নেয়ার পদ্ধতি, শিশুদের লালনপালন, সম্প্রর্কের প্রতিপালন কিভাবে করতে হয়?

এখন আর কাজের ধরন অনুযায়ী ছেলে করবে না মেয়ে করবে, তা না ভেবে আমরা করবো ভাবতে শিখি।

সব শিক্ষাই সবার জন্য, কোন শিক্ষাই শুধু মেয়ে কিম্বা ছেলের জন্য না।।

https://www.facebook.com/permalink.php?story_fbid=10210930975175165&id=1376736022

সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১:১৭
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

একাত্তরের সংগ্রামী জনতার স্লুইস গেট আক্রমণ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৯ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২১


(ছবির লাল দাগ দেয়া জায়গাটিতে গর্ত করা হয়েছিল)

শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

২৩শে এপ্রিল পাক সেনারা ফুলছড়ি থানা দখল করে। পাক সেনা এলাকায় প্রবেশ করায় মানুষের মধ্যে ভীতিভাব চলে আসে। কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাড়ির কাছে আরশিনগর

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ০৯ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৫০


বাড়ির কাছে আরশিনগর
শিল্পকলা একাডেমির আশেপাশেই হবে চ্যানেলটার অফিস। কিছুক্ষণ খোঁজাখুঁজি করল মৃণাল। কিন্তু খুঁজে পাচ্ছে না সে। এক-দু'জনকে জিগ্যেসও করল বটে, কিন্তু কেউ কিছু বলতে পারছে না।

কিছুদূর এগোনোর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি ভালো আছি

লিখেছেন জানা, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯



প্রিয় ব্লগার,

আপনাদের সবাইকে জানাই অশেষ কৃতঞ্গতা, শুভেচ্ছা এবং আন্তরিক ভালোবাসা। আপনাদের সবার দোয়া, সহমর্মিতা এবং ভালোবাসা সবসময়ই আমাকে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে শক্তি এবং সাহস যুগিয়েছে। আমি সবসময়ই অনুভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতার সুফল কতটুকু পাচ্ছে সাধারণ মানুষ

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:২৮

(১) আমলা /সরকারের কর্মকর্তা, কর্মচারীর সন্তানদের জন্য আলাদা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার প্রস্তাব হতাশাজনক। মুক্তিযুদ্ধের ১৯৭১ সালের রক্ত দেওয়া দেশের এমন কিছু কখনো আশা কি করছে? বঙ্গবন্ধু এমন কিছু কি আশা... ...বাকিটুকু পড়ুন

এলজিবিটি নিয়ে আমার অবস্থান কী!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১০ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:১৫

অনেকেই আমাকে ট্রান্স জেন্ডার ইস্যু নিয়ে কথা বলতে অনুরোধ করেছেন। এ বিষয়ে একজন সাধারণ মানুষের ভূমিকা কী হওয়া উচিত- সে বিষয়ে মতামত চেয়েছেন। কারণ আমি মধ্যপন্থার মতামত দিয়ে থাকি। এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×