বাবা হারা বড় ভাই ও ছোট ভাইয়ের মধ্যমণি মেঝ জোনাকি । আর মা হচ্ছেন সংসারের বটবৃক্ষের ছায়া।
বড় ভাইয়ের একা আয়ের উপর নির্ভরশীল পরিবারের চার সদস্য । অভাব-অনটনের মাঝে জোনাকির
পড়ালেখা স্থগিত । গ্রামের চতুর্পাশে থেকে বিয়ের প্রস্তাব আসতে থাকে জোনাকির জন্য । নবম শ্রেণীতে
পড়ার সময় জোনাকির বিয়ে হয় গৃহস্থ বাড়ির ছেলে রহমতের সাথে । স্বামীর সংসারে স্বচ্ছলতা আনার জন্য
জোনাকি ঘরের কাজের পাশাপাশি হাতের সেলাইয়ের কাজ করতো । রহমত একদিন কাজে গেলে তিন দিন
ঘরে বসে বিশ্রাম করে । জোনাকির মা হবার খবর শুনে সবাই আনন্দিত এবং প্রার্থনারত হয়ে থাকে শাশুড়ি মা
যেনো একটি পুত্র সন্তান হয় । শাশুড়ি মা অনেক কিছু মানত করেছেন পুত্র সন্তান হয়ে যেন বংশ রক্ষা হয় ।
গর্ভাবস্থায় জোনাকির যেমন আদর যত্ন ঠিক উল্টোটা ঘটে গেল মেয়ে সন্তান (জ্যোতি)র জন্ম গ্রহণের ফলে ।
শুরু হয় জোনাকির উপর শাশুড়ি মায়ের মানসিক এবং রহমতের শারীরিক অত্যাচার । একটা পর্যায়ে জোনাকি
অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে মেয়েকে নিয়ে বাবার বাড়ি চলে আসে । গ্রাম প্রতিবেশী চাচি এবং জোনাকির মা
জোনাকিকে বুঝিয়ে শ্বশুরবাড়ি পাঠালেন। চাচিও বুঝালেন একবার মেয়ে হয়েছে তাতে কি আরেকবার ছেলে হবে ।
মা ও ভাইয়ের অর্থের টানাপোড়েনের সংসারের না থেকে শ্বশুরবাড়ী ফিরে যাওয়াই শ্রেয় । কিন্তু ফিরে দেখে রহমতের
অন্য মেয়ের সাথে সম্পর্ক যেটা বিয়ের জন্য এগিয়েছে এবং রহমত পরের দিন নিজ কন্যা জ্যোতি সহ জোনাকি কে
বাড়ি থেকে বের করে দেয় । ভোরের ট্রেন ধরে জোনাকি আবার বাবার বাড়ি ফেরত আসে । মা ও ভাই চাইছিল থানা
পুলিশের সাহায্য নেবে কিন্তু জোনাকি চাইল না আর ঝামেলা হোক ।
হাতের সেলাইয়ের কাজ জানতো জোনাকি আগে থেকেই , তাই শুরু হল মেয়েকে নিয়ে সংগ্রামের এক নতুন অধ্যায় ।
লেখাপড়া কম থাকায় হাতের সেলাই এর কাজ কে পেশা হিসেবে বেছে নিল । এভাবে বছর পাঁচেক যাওয়ার পর
জোনাকির মা মারা গেলেন ভাইদের সংসার বড় হতে লাগলো । হাজারো দুঃখ কষ্টের মাঝে জোনাকির চাচা এবং
চাচি এদের পাশে এসে দাঁড়ালেন । জ্যোতি স্কুলে পড়ালেখা করছে এবং জোনাকি আলাদা ঘর ভাড়া করে নিজেদের
মতো করে চলছে দিনপাত।
হিংসুটে খারাপ এক প্রতিবেশী মহিলা জোনাকিকে খুব হিংসা করতো ।
জোনাকিকে নষ্টা মেয়ছেলে বলে গালিগালাজও করতো । জোনাকির সাথে গাছের পাতা কেন ওই প্রতিবেশীর উঠোনে
গিয়ে পড়ে সেজন্য প্রায়ইতুমুল ঝগড়া লেগে থাকত । হিংসুটে স্বামী-স্ত্রী প্রতিবেশী দম্পতি জোনাকিক একদিন একা পেয়ে
গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। জোনাকি মৃত্যুর সাথে ৭ দিন যুদ্ধ করে অবশেষে মারা যায়।
সবচেয়ে বড় কঠিন সত্যের মুখোমুখি হতে হয় জ্যোতিকে । জ্যোতি জন্মেছে বলে বাবার আদর স্নেহ ভালোবাসা কিছুই
পায়নি এবং অল্প বয়সেই মাকে হারিয়েছে । মামা মামির সংসারে শেষ আশ্রয় হয় জ্যোতির ।
জোনাকি মেয়ে সন্তান জন্ম দিয়েছিল বলে আজ জ্যোতির জীবনটাও কি এমনই হবে ?
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে অক্টোবর, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৩৭