এবং নিয়ে যত কথা...
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
এবং নষ্ট হয়ে গেছি আমি
তোমাদের ভালোবাসার গণ্ডি ছেড়ে কোন এক
অস্থির সীমানায়...
প্রতিজ্ঞা করিনি কোন দিন,
আজো করবো না তাই
তবুও বলছি আমি সত্যিই নষ্ট হয়ে গেছি।
চৈতের কাঠফাটা দুপুরে কোন মায়ের ভেজা গণ্ডে
যে হাতের পরশ জাগিয়ে তুলতো
শরতের নির্মেঘ আকাশ
চোখে শুভ্র কপোত
সে-হাতের স্পর্শে এখন নীরবে ঝরে যায়
যে কোন সুহাসিকা ফুল।
এই সে ক্লান্ত দৃষ্টি জানি না কেমন আমার
অথচ অনায়াসে থেমে যায়
আনমনা যে কোন পাখির গান
শিশুর হাসি... হয়তো কান্নাও;
তবুও হেঁটে যাই দিব্যি আমি
সবার চোখের ওপর দিয়ে
এক কালে যেখানে বেড়াতাম এমনি।
যখন কোন নারী
আমার দিকে চোখ ফিরিয়ে নেয়
অবাক হই না মোটেও
শুধু বুকের ভেতর জমে ওঠে একটা অচিন বালুরচর-
অসংখ্য তৃষ্ণার্ত পাখিরা খুঁড়ে খুঁড়ে
চুষে নেয়
আশার উন্মাদ স্রোত
এবং কেউ আমার দিকে তাকালে-
অবাক হয়ে তাকালে
নিঃশ্বাসে নিমেষে জন্ম নেয় প্রচণ্ড কালবৈশাখ;
ইচ্ছে হয় চিৎকার করে বলি- দু’হাতে বুক চিরে বলি
এই দেখো এই দেখো নষ্ট আমি
কেমোন নষ্ট হয়ে গেছি!
অথচ নিশ্চল সমাধিস্থ সাধকের মতো
হয়তো তখন নিরেট স্বগতোক্তিই বেরিয়ে আসে-
আমি নষ্ট হয়ে গেছি
শুধু তোমরা ভালো থাকবে বলেই... #
(নষ্ট কাব্য/ অদৃশ্য বাতিঘর/ রণদীপম বসু )
আমার এখনকার বিষয় কিন্তু কবিতা নয়। কবিতাটা অনুষঙ্গ। বিষয় এবং। এই এবং শব্দটি নিয়ে আজ যে বিতর্কটি আকস্মিকভাবেই জেগে ওঠলো তার প্রেক্ষিতেই এই কথকথা।
বাক্যের শুরুতে এবং বসানো কতোটা যুক্তিযুক্ত ? আমার শ্রদ্ধেয় বস হঠাৎ করেই আমাকে ধরে বসলেন। যদিও আজকের সংঘটিত ঘটনায় উদ্দিষ্ট পাত্র আমি নই, আমার এক সিনিয়র কলিগ, তবু আমাকেই ধরে বসার প্রধান কারণ একটাই। মাঝে মাঝে আমি যে রাইট-আপগুলো তৈরি করি, তাতে বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে একটা বাক্য শেষ করে পূর্ণযতি দাড়ি ব্যবহারের পর ফের আরেকটা বাক্য কখনো কখনো এবং দিয়ে শুরু করি। এবং তিনি আবার ওই দাড়িগুলো কেটে বাক্যের ব্যাকরণগত শুদ্ধতা পুনরুদ্ধার করে করে যখন আমার হাতে তা ফিরিয়ে দেন, আমার আর না মেনে উপায় থাকে না। কেননা ওগুলোর স্বাক্ষরকারী তো মূলত তিনিই হবেন। তাছাড়া বাংলার ছাত্র হিসেবে তিনি ভাষার উপর এরকম ধারাবাহিক অত্যাচার সহ্য করবেনই বা কী করে !
কিন্তু আজকে যখন আমার এক সিনিয়র কলিগও এবং ব্যবহারে একই কাজ করলেন, সম্ভবত রোগ সংক্রমণের সচলতা টের পেয়ে অফিসের শেষ মুহূর্তে একেবারে বেরিয়ে যাবার প্রাক্কালে বস সোজা চলে এলেন আমার ডেস্কের সামনে। সাথে ওই কলিগও আছেন। আমি চেয়ার ছেড়ে দাঁড়িয়ে গেলাম। রসপ্রিয় রসিক বসের সরাসরি প্রশ্ন, আপনি কি তাকেও শিষ্য বানিয়েছেন নাকি ?
কিছু বুঝে ওঠতে না পেরে প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম তাঁর দিকে। পেছনে কলিগটি মুচকি মুচকি হাসছে। বুঝলাম বিষয়টা সিরিয়াস হলেও নেতিবাচক কিছু নয়, ইতিবাচকই হবে। ভেতরে ভেতরে আশ্বস্তও হলাম।
এই অফিসে একমাত্র আপনিই বাক্যের শুরুতে এবং ব্যবহার করেন। কেন করেন ?
ইতোমধ্যেই আমি ভেতরে ভেতরে সাহস সঞ্চয় করে নিয়েছি। বললাম, স্যার, বাক্যে ব্যঞ্জনা সৃষ্টির জন্যে।
এবং কখন ব্যবহার করতে হয় জানেন ?
জী জানি। বাংলা ব্যাকরণের নিয়ম অনুযায়ী দুটো শব্দ বা বাক্যকে সংযুক্ত করতে অন্যতম অব্যয় হিসেবে এবং ব্যবহার করা হয়।
তাহলে যতি চিহ্ণের পরে এবং ব্যবহার কি শুদ্ধ ? বসের পাল্টা প্রশ্ন।
আমি সবিনয়ে বললাম, স্যার, যতিচিহ্ণের পরে নতুন বাক্যের শুরুতে এবংটাকে তো অব্যয় হিসেবে ব্যবহার করছি না। ওটা তখন অন্যরকম একটা শব্দ। প্রতীকী অর্থ ধারণ করে।
যেমন ?
হতে পারে শেষপর্যন্ত, বস্তুত,তবু এরকম !
পাশ থেকে আরেকজন কলিগ ফোঁড়ন কাটলেন, বাক্যের প্রথমে এবং কবিতায় ব্যবহার হতে পারে, গদ্যে নয়।
বসও সম্মতিসূচক মাথা নাড়লেন, হা কবিতায়।
আমার তখন আত্মপক্ষ সমর্থনে শেষ চেষ্টা। স্যার, শব্দ ব্যবহারে এতোটা রক্ষণশীল না হয়ে ভিন্নমাত্রিক ব্যবহারে যদি বৈচিত্র্য ও ব্যঞ্জনা এনে ভাষাকে আরো অর্থপূর্ণ ও শ্রুতিমধুর করে তোলা যায়, তাহলে শুধু কবিতায় কেন, গদ্যেও এই ব্যবহার করা যায়। ইদানিং এরকম ব্যবহার তো পত্র পত্রিকায় সাহিত্যে হরদম চলছে !
তিনি সকৌতুকে না কি প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে আমার দিকে চেয়ে আছেন বুঝতে পারছি না। হয়তো কোন নমূনা উদাহরণ শুনতে চাচ্ছেন ভেবে আমি উপরোক্ত কবিতাটির প্রথম কয়েক চরণ আবৃত্তি করে শুনিয়ে দিলাম। তাঁর মুখে হাসি সম্প্রসারিত হচ্ছে। কিন্তু গদ্যসাহিত্যের তেমন কোন উদাহরণ সে মুহূর্তে মাথায় এলো না।
তার আর প্রয়োজনও হলো না। এর আগেই শ্রদ্ধেয় বস হা হা করে হেসে ওঠলেন। সেই কলিগকে ইশারায় দেখিয়ে বললেন, এই জন্যেই তো এবার অনুমোদন দিয়ে দিলাম। হা হা হা !
এবং গট গট করে বেরিয়ে গেলেন তিনি।
(১১/০৮/২০০৮)
৫টি মন্তব্য ১টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
আগুন যখন প্রশ্নকে পোড়াতে আসে
আগুন যখন প্রশ্নকে পোড়াতে আসে[
স্বাধীন সাংবাদিকতার কণ্ঠরোধে রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতা, মব-রাজনীতি ও এক ভয়ংকর নীরবতার ইতিহাস
চরম স্বৈরশাসন বা ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রেও সাধারণত সংবাদমাধ্যমের কার্যালয়ে আগুন দেওয়ার সাহস কেউ করে না। কারণ ক্ষমতা... ...বাকিটুকু পড়ুন
=হিংসা যে পুষো মনে=

হাদী হাদী করে সবাই- ভালোবাসে হাদীরে,
হিংসায় পুড়ো - কোন গাধা গাধিরে,
জ্বলে পুড়ে ছাই হও, বল হাদী কেডা রে,
হাদী ছিল যোদ্ধা, সাহসী বেডা রে।
কত কও বদনাম, হাদী নাকি জঙ্গি,
ভেংচিয়ে রাগ মুখে,... ...বাকিটুকু পড়ুন
গণমাধ্যম আক্রমণ: হাটে হাঁড়ি ভেঙে দিলেন নূরুল কবীর ও নাহিদ ইসলাম !

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের রক্তস্নাত পথ পেরিয়ে আমরা যে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলাম, সাম্প্রতিক মব ভায়োলেন্স এবং গণমাধ্যমের ওপর আক্রমণ সেই স্বপ্নকে এক গভীর সংকটের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। নিউ এজ... ...বাকিটুকু পড়ুন
বিএনপিকেই নির্ধারণ করতে হবে তারা কোন পথে হাটবে?

অতি সাম্প্রতিক সময়ে তারেক রহমানের বক্তব্য ও বিএনপির অন্যান্য নেতাদের বক্তব্যের মধ্যে ইদানীং আওয়ামীসুরের অনুরণন পরিলক্ষিত হচ্ছে। বিএনপি এখন জামাতের মধ্যে ৭১ এর অপকর্ম খুঁজে পাচ্ছে! বিএনপি যখন জোট... ...বাকিটুকু পড়ুন
ভারতীয় আগ্রাসনবিরোধী বিপ্লবীর মৃত্যু নেই

শরিফ ওসমান হাদি। তার হাদির অবশ্য মৃত্যুভয় ছিল না। তিনি বিভিন্ন সভা-সমাবেশ, আলোচনা ও সাক্ষাৎকারে বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি অনেকবার তার অস্বাভাবিক মৃত্যুর কথা বলেছেন। আওয়ামী ফ্যাসিবাদ ও ভারতবিরোধী... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।