somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইয়োগা: সুদেহী মনের খোঁজে |১২| আসন: পশ্চিমোত্থানাসন।

৩০ শে জুন, ২০০৯ রাত ৮:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

# পশ্চিমোত্থানাসন (Paschimottanasana):

এই আসনে শরীরের পেছনদিকে বেশি ব্যায়াম হয় বলে আসনটির নাম পশ্চিমোত্থানাসন (Paschimottanasana)| আর তা ভিন্ন ভিন্ন ভঙ্গিতে অনুশীলনেরও একাধিক পদ্ধতি রয়েছে।

# পশ্চিমোত্থানাসন (ক)

পদ্ধতি:
সামনে পা ছড়িয়ে সোজা হয়ে বসুন। এবার কোমর থেকে শরীরের উপরাংশ নিচু করে ডান হাত দিয়ে ডান পায়ের এবং বাঁ হাত দিয়ে বাঁ পায়ের বুড়ো আঙুল ধরুন। এখন আরো নিচু হয়ে পেট উরুর সঙ্গে ও কপাল হাঁটুর সঙ্গে লাগান। দু’ কনুই পায়ের দু’পাশে মেঝেতে রাখুন এবং ঐ অবস্থায় ২০ সেঃ থেকে ৩০ সেঃ থাকুন। শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক থাকবে। এরপর হাত আলগা করে আস্তে আস্তে সোজা হয়ে বসুন। এভাবে আসনটি ৩/৪ বার করুন। প্রয়োজনমতো শবাসনে বিশ্রাম নিন।


সতর্কতা:
প্রথম দু’একদিন হয়তো কপাল, পেট, কনুই ঠিক জায়গায় যাবে না। যতটুকু সহজভাবে হয় ততটুকুই করবেন। জোর করে বা ঝাঁকুনি দিয়ে ঠিক জায়গায় নেয়ার চেষ্টা করা উচিৎ নয়। মেরুদণ্ডে বা কোমরে চোট লেগে যেতে পারে। দু’চারদিন অভ্যাসের পর এমনিতেই সহজ হয়ে যাবে। তবে হাঁটুর ভাঁজ যেন ভেঙে না যায়। পা দু’টো মেঝের সঙ্গে লেগে থাকবে। কিছুদিন অভ্যাসের পর প্রতিবার অভ্যাসের সময়সীমা একটু একটু করে বাড়ানো যেতে পারে, তবে এক মিনিটের বেশি যেন না হয়। আসনটি অভ্যাসের পর শবাসনে বিশ্রাম নিয়ে এরপর এমন একটি আসন করা উচিৎ যাতে মেরুদণ্ড পেছন দিকে বাঁকানো যায়।
উল্লেখ্য, যোগশাস্ত্রের নিয়ম অনুযায়ী মেরুদণ্ড বাঁকিয়ে চাপ প্রয়োগ করা সংশ্লিষ্ট কোন আসন চর্চা করতে হলে এমন দু’টো আসন পর পর করতে হবে যেন মেরুদণ্ড সামনে পেছনে উভয় দিকেই বাঁকানো যায়।

উপকারিতা:
আসনটি মেরুদণ্ড ও পেটের জন্য বিশেষ উপকারী। আসনটি অভ্যাস রাখলে মেরুদণ্ডের হাড়ের সংযোগস্থল নমনীয় থাকে এবং মেরুদণ্ডসংলগ্ন স্নায়ুমণ্ডলী ও দু’পাশের পেশী সবল ও সক্রিয় থাকে। মেরুদণ্ড সুস্থ ও নমনীয় থাকলে গ্রন্থি ও স্নায়ুতন্ত্রের কাজ স্বাভাবিক থাকে। বিশেষ করে অগ্ন্যাশয়, মুত্রাশয়, প্রজনন প্রভৃতি গ্রন্থিগুলো সতেজ ও কর্মক্ষম থাকে। ডায়াবেটিস বা বহুমূত্র রোগীর জন্য আসনটি করা অবশ্য দরকার। আসনটি হাত, পা, পেট ও বস্তিপ্রদেশের পেশী ও স্নায়ুজাল সতেজ ও সক্রিয় রাখে, জঠরাগ্নি বৃদ্ধি করে, অজীর্ণ, কোষ্ঠবদ্ধতা, বহুমূত্র, স্বপ্নদোষ, অর্শ প্রভৃতি রোগ কোনদিন হতে দেয় না। পেট ও কোমরের অপ্রয়োজনীয় মেদ কমিয়ে দেহের গড়ন সুন্দর করে। কিশোর-কিশোরীদের লম্বা হতে সাহায্য করে। তাছাড়া আসনটি অভ্যাস রাখলে কোনদিন কোন বাত বা সায়টিকা হয় না, আর থাকলেও অল্পদিনে ভালো হয়ে যায়।

নিষেধ:
যাদের হার্নিয়া বা এ্যাপেণ্ডিসাইটিস রোগ আছে, রোগ নিরাময় না হওয়া পর্যন্ত তাদের আসনটি করা উচিৎ নয়। আর যাদের প্লীহা, যকৃৎ রুগ্ন বা অত্যধিক বড়, তাদের অতি সতর্কতার সঙ্গে এ আসন করা উচিৎ। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ না নিয়ে ঝুঁকি নেয় বাঞ্ছনীয় নয়।


# পশ্চিমোত্থানাসন (খ)

পদ্ধতি:
পশ্চিমোত্থানাসন (ক) এর অনুরূপ সামনে পা ছড়িয়ে সোজা হয়ে বসুন। ব্যতিক্রম শুধু, কোমর থেকে দেহের উপরাংশ নিচু করে শরীরটাকে মোচর দিয়ে মাথার নিচের দিকটা যেদিকে মোচড় দেবে সেই হাঁটুর উপর রাখুন। এখন সেই হাত দিয়ে দু’পায়ের গোড়ালি ধরতে হবে এবং অপর হাত দিয়ে দু’পায়ের বুড়ো আঙুল ধরুন। হাঁটুর ভাঁজ যাতে না ভাঙে, পা দু’টো মেঝের সঙ্গে লেগে থাকবে এবং শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক থাকবে। ঐ অবস্থায় ২০ সেঃ থেকে ৩০ সেঃ থাকুন। তারপরে হাত আলগা করে আস্তে আস্তে সোজা হয়ে বসুন। এভাবে ডানে-বাঁয়ে শরীর মোচড় দিয়ে আসনটি ৪ থেকে ৬ বার করুন।


উপকারিতা:
পশ্চিমোত্থানাসন (ক)-এর অনুরূপ। এছাড়াও দেহের উপরাংশে মোচড় পড়ে বলে ঘাড়, গলা, কাঁধ, বুক, কোমর, পিঠ, মেরুদণ্ড ও মেরুদণ্ডের দু’পাশের পেশী ও স্নায়ুজালের খুব ভাল ব্যায়াম হয়।

নিষেধ ও সতর্কতা:
পশ্চিমোত্থানাসন (ক)-এর অনুরূপ।


# বিভক্ত-পশ্চিমোত্থানাসন (Bibhakta-Paschimottanasana)

পদ্ধতি:
সোজা হয়ে দাঁড়ান। হাত দুটো কোমরে রাখুন। এবার পায়ের পাতা ঘষতে ঘষতে দুদিকে ছড়িয়ে দিন। এখন সামনের দিকে ঝুঁকে দু’হাত দিয়ে দু’পায়ের বুড়ো আঙুল ধরুন এবং চিবুক মেঝেতে রেখে সামনের দিকে তাকান। শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক থাকবে। ২০ সেঃ থেকে ৩০ সেঃ ঐ অবস্থায় থাকুন। তারপর হাত-পা আলগা করে সোজা হয়ে দাঁড়ান। আসনটি ৩/৪ বার অভ্যাস করুন এবং প্রয়োজনমতো শবাসনে বিশ্রাম নিন।


উপকারিতা:
আসনটিতে দেহের সব অংশে কমবেশি উপকার হয়। বিশেষ করে উরুর সন্ধিস্থলের স্থিতিস্থাপকতা বৃদ্ধি পায়।

এগুলো ছাড়াও আরো কিছু ভিন্ন ভঙ্গিমার পশ্চিমোত্থানাসন রয়েছে। যেমন:

# উর্ধ্ব-মুখ পশ্চিমোত্থানাসন (Urdhva Mukha Paschimottanasana)


# বদ্ধ-পদ্ম পশ্চিমোত্থানাসন (Baddha-Padma Paschimottanasana)


# বিভক্তপদ পশ্চিমোত্থানাসন (Bibhaktapada Paschimottanasana)


# গো-মুখ পশ্চিমোত্থানাসন (Gumukha Paschimottanasana)


ইত্যাদি।
[Images: from internet]

(চলবে...)

পর্ব: [১১] [**][১৩]
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জুলাই, ২০০৯ রাত ১১:৪৫
৪টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×