somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এক থা টাইগার

০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ৮:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শিরোনাম পড়েই হয়ত অনেকে আমার সাম্প্রতিক সময়ের রুচি বোধ নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারেন। যে ব্যক্তি একদা রবীন্দ্রসাহিত্যের সমালোচনা করতো, ডা ভিঞ্চির মোনালিসা যার হাত থেকে রক্ষা পায়নি (আপনারা আবার অন্য কিছু মনে কইরেন না), মোজার্টের সুরের মূর্ছনায় মূর্ছিত হত যে, পাবলো নেরুদাকে যে পকেটে রেখে ঘুরে বেড়াতো তার আজ এ কি হালত! হে বিদগ্ধ পাঠক, আমার এই বদলে যাওয়ার জন্য দায়ী প্রথম আলো। দুই বেলা প্রথম আলোর বিনোদন পাতায় সানি লিওনের দিগম্বরী অবয়ব দেখে অভ্যস্ত লোচন এখন আর বোরকাবৃত মোনালিসার হাসি হেরিয়া হয়রান হয় না।

সে যাই হোক কাজের কথায় আসি। আপনারা অস্বীকার করলেও আমি জানি আপনাদের মধ্যে শতকরা আশি ভাগ আলোচ্য সিনেমাটি অবলোকন করেছেন। সুতরাং আপনাদের নিশ্চয় জানা আছে কাহিনীর শুরু হয় ইরাকে। র’ এর তুখোড় এজেন্ট, যার দাপটে এসপিওনাজ জগতের বাঘ আর ছাগল এক ঘাটে পানি খায়, যাকে লক্ষ্য করে লক্ষটা গুলি ছুঁড়লেও ফসকে যায় সবকটা সেই দামাল, কামাল, আবাল সন্তান সালমান খান ইরাকের ছাদে ছাদে লাফিয়ে বেড়াচ্ছিল। লাফাতে লাফাতে সে টপাটপ কয়েক জন টপ এজেন্ট কে টপে মানে উপরে অর্থাৎ পরোপারে পাঠিয়ে দিল। দুই পক্ষ কম করে হলেও শ;দুয়েক গুলি ছুঁড়ল পরস্পরকে লক্ষ্য করে। স্কোর, সালমান খান দশ পিএসআই শূন্য। তুমুল গুলাগুলি দেখে ভয় হচ্ছিল দুই একটা গুলি হয়ত টিভির স্ক্রিন ভেদ করে আমার গায়েও লেগে যেতে পারে। কিন্তুক দেখা গেল সালমানের হাতের টিপ যেমন ভালো, ভিলেন ছাড়া কারু গায়ে লাগে না। তেমনি ভিলেনদের হাতের টিপ নিদারুণ বাজে, কারো গায়েই লাগে না। বাগদাদের বাজারের হাজারটা লোক, অথচ এত ডামাডোলের মাঝেও এক জনের গায়েও একটা গুলি লাগলো না!

যায় হোক গুলাগুলি শেষে ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে আসলো। মহল্লার বিবাহিত মহিলাদের মাঝে বয়ে গেল খুশির জোয়ার। তারা কেন এত খুশি সেইটা অবশ্য বুঝা গেল না। কারণ তার আগেই সালমানের বেরিয়ে পড়তে হল দ্বিতীয় আর এক মিশনে। স্কটল্যান্ড না কোথায় যেন ভারতীয় এক প্রফেসর আছেন যিনি এক এ্যান্টি মিসাইল ডিভাইস ডেভেলপ করছেন এবং সেইটা হাতানোর জন্য পিএসআই ঘুরঘুর করছে। সালমানের মিশন তাদে ঘুরাঘুরি থামানো। তো সেইখানে দেখা মিলল লাস্যময়ী ক্যাটরিনার। পঞ্চাশ বছরের সালমান আর পঁচিশ বছরের ক্যাটরিনা জুটি দেখে মনে আবার বল ভরসা ফিরে পেলাম। যাক আমার আশা এখনো শেষ হয় নাই। মনের ব্যাকগ্রাউন্ডে বেজে উঠলো “এ্যাই তুমি কচি মেয়ে” গানটি। তো ক্যাটরিনার প্রেমে সালমান হাবুডুবু, মূল মিশন ছেড়ে খালি ক্যাটরিনার পিছনে লাইন মারতে যায়। তা সালমানেরও দোষ দেওয়া যায় না। একদা আমিও প্রেমে পড়েছিলাম। প্রেমে পড়লে পেট খালি খালি লাগে, বুক ভার ভার লাগে, গলার ভিতর সারাক্ষণ পোটলার মতো কি জানি আটকে থাকে। সে বিস্তর ঝামেলার জিনিস। আর এই অবস্থার মধ্যে যদি জানা যায় প্রেমিকাটি ছলনাময়ী নারী, শত্রু দুর্গের চর তাইলে কারই বা মাথা ঠাণ্ডা থাকে। সুতরাং সালমান দিল গুলি করে। সিনেমার ইন্টারভেল। আমিও ছুটলাম আমার নিজস্ব মিনি মিশনে।

গুলি করলে দিলেও আমি জানতাম সে গুলি ক্যাটরিনার গায়ে লাগে নাই। লাগলে সিনেমা শেষ। আমি জানি আমার মতন আপনারাও সেটা জানতেন। এইসব জানার জন্য সবজান্তা হতে হয় না। যে কোন জন্তুও জানবে হিন্দি সিনেমার আগাপাছতলা। সুতরাং সালমান ক্যাটরিনার গন্ধ শুকে শুকে গেল ইস্তাম্বুল। ইস্তাম্বুলে তারা দুইটাতে মেলা কান্নাকাটি করল। তারপর সিদ্ধান্ত নিলো দুইজনে বাসা ছেড়ে পালাবে। এবং তারা পলাল। র’ আর আইএসআই হ্যারিকেন জ্বালিয়ে খোঁজা আরম্ভ করল তাদের। এই জায়গাতে আমার মনে হল পালাবিই যদি বাপ তাইলে আর একটু প্ল্যান ট্যান করে পালালেই তো পারতিস। দুইটা ডেড-বডিতে সালমানের মানিব্যাগ আর ক্যাটরিনার গলার লকেট ঝুলিয় গাড়িতে আগুন ধরিয়ে পাহাড় থেকে ফেলে-টেলে দিলেই ল্যাঠা চুকে যেত। কিন্তু না, তারা আমার কথা রাখলেন না, তারা রাখলেন ভুট্টো সাহেবের কথা। সুতরাং যা হবার তাই হল।

তো তারা পালিয়ে গেল কিউবাতে। সেইখানে নাচ গান শেষে রাতে বাড়ি ফেরার কালে কতিপয় দুষ্কৃতিকারীদের হাতে আক্রান্ত হলে তারা হেভি ফাইট দেয়। সেই ফাইট আবার সিসিটিভিতে ধরা পড়ে। সেই সিসিটিভি ফুটেজ দেখে আবার হাজির হয় আইএসআই আর র’ এর এজেন্টকুল প্রেমিকপ্রমিকা যুগলকে ঠাণ্ডা করতে। কিউবার পথে প্রান্তরে বাসার ছাদে ছাদে সালমান ক্যাটরিনা আবার দৌড়াদৌড়ি শুরু করে।

ধ্যাত্তেরি! এই লেবা’র সিনেমা শেষ হয় না ক্যান! আমার আর ধৈর্য নাই। বাকিটা আপনারা লিখেন।

টাইগারের ট্রেলার আর চিরকুমার সালমানের ব্যক্তি জীবনের সম্মিলিত প্রয়াসে একখানা মিমি তৈরি করলাম। কেমন হইছে?
১৮টি মন্তব্য ১৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদী নামের এই ছেলেটিকে কি আমরা সহযোগীতা করতে পারি?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১০:০৪


আজ সন্ধ্যায় ইফতার শেষ করে অফিসের কাজ নিয়ে বসেছি। হঠাৎ করেই গিন্নি আমার রুমে এসে একটি ভিডিও দেখালো। খুলনার একটি পরিবার, ভ্যান চালক বাবা তার সন্তানের চিকিৎসা করাতে গিয়ে হিমশিম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভালোবাসা নয় খাবার চাই ------

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:০৬


ভালোবাসা নয় স্নেহ নয় আদর নয় একটু খাবার চাই । এত ক্ষুধা পেটে যে কাঁদতেও কষ্ট হচ্ছে , ইফতারিতে যে খাবার ফেলে দেবে তাই ই দাও , ওতেই হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতীয় ইউনিভার্সিটি শেষ করার পর, ৮০ ভাগই চাকুরী পায় না।

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৭



জাতীয় ইউনিভার্সিটি থেকে পড়ালেখা শেষ করে, ২/৩ বছর গড়াগড়ি দিয়ে শতকরা ২০/৩০ ভাগ চাকুরী পেয়ে থাকেন; এরা পরিচিত লোকদের মাধ্যমে কিংবা ঘুষ দিয়ে চাকুরী পেয়ে থাকেন। এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×