বিজয় দিবস নিয়ে অনেক কিছু লেখার ছিল। কিন্তু ঐ পর্যন্তই, কিছুই লিখতে পারলাম না।
মনের মাঝে প্রচন্ড আবেগ (নাকি রাগ বলাই ভালো) সব কিছু এলোমেলো করে দিয়েছে/দিচ্ছে।
আচ্ছা রাগ বাদ দিয়ে শান্তভাবে কটি কথা বলি। গত কালকে বাংলাদেশে বিশ্বজয়ের খেলা চলল। বেশ ভাল। পতাকায় রেকর্ড হবে, জাতীয় সঙ্গিতে রেকর্ড হবে। খুবই ভাল কথা, কিন্তু অনবরত যে মানুষগুলো মারা যাচ্ছে, তাদের লাশগুলো এখনো কবরে পুরোপুরি বিলীন হয়নি। এখনো স্বজন হারা কান্না থামেনি, থামেনি আর্তনাদ। কিন্তু সেই প্রতিক্রিয়া কারও মাঝেই দেখতে পেলাম না। হোক না সে শিবির, বিএনবি কিংবা আওয়ামীলীগ, সবার আগে তারা মানুষতো। এত এত মানুষের মৃত্যুর মাঝে 'বিজয় দিবস' পালন করতে মন চাইছে না কোন মতেই।
গতকাল রাতে বাড়িতে ফেরার পথে একটা কথা মাথায় আসলো। আমরা যখন স্কুলে পড়তাম তখন প্রতিদিন ক্লাস শুরুর আগে বাধ্যতামূলক ৩০ মিনিট এসেম্বলিতে দাড়াতে হতো। সেখানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, জাতীয় সঙ্গিত, কোরআন তেলোয়াত সবই হতো এবং তা নিয়মিত। অন্যদেশে কি হয় আমার জানা নাই। কিন্তু একদিক থেকে এটাও কিন্তু অসাধারণ ব্যাপার ছিল যে, প্রায় একই সময়ে দেশের সকল জেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হাজার হাজার মানুষ পতাকা তুলছে, হাজারো কণ্ঠে জাতীয় সঙ্গিত গাইছে।.....
আমার উপরোক্ত কথা পড়ে যদি কেউ কিছু বলতে চান তাহলে তার আগে নিচের লাইনগুলো দয়া করে পড়ুন:
এদেশে একসময় বিটিভিতে "নতুন কুড়ি" প্রচারিত হতো প্রতিবছর নিয়মিত। বিভিন্ন জেলা থেকে নানা বয়সের প্রতিযোগীরা অংশগ্রহণ করতো। বিচারকদের বিচারে পেত পুরস্কার। এই অনুষ্ঠানে কখনো কোনো স্পন্সর দেখিনি। তাই প্রচারিত অনুষ্ঠানে দেখতাম না কোন বিজ্ঞাপন বিরতী।
এরপর ইন্ডিয়াতে শুরু হলো "ইন্ডিয়ান আইডল"। বৈচিত্রময় অনুষ্ঠানটি বাংলাদেশীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করলো বিদ্যুতগতিতে। শুরু হলো "ইন্ডিয়ান আইডল" অনুকরণে নানা অনুষ্ঠান মালা। তার সর্বশেষ সংযোজন সম্ভবত "বাংলাদেশ আইডল"। এই অনুষ্ঠানগুলোর ক্ষেত্রে স্পন্সরশীপের কোন আকাল নেই। বাজারও বেশ চড়া!
এভাবেই আমরা "হুজুগে বাঙ্গালী" খেতাবধারী জাতী হিসাবে পরিচিতি পাই! নিজ দেশের প্রতিভা মূল্যায়িত করি ভিনদেশী দৃষ্টিভঙ্গিতে।
"বিজয়" পালনের জন্য দেখুন বিভিন্ন কমিটি হয়েছে। তাদের কর্মব্যস্ততাও ব্যাপক। কিন্তু "বাঙ্গালিয়ানা" যে হারিয়ে ফেলছি অতি সন্তর্পনে তার কথা কইবে কে? (গতকালকের সারাদিনের নানা কর্মসূচী দ্রষ্টব্য)
পাশের বাড়ির অনাহারী দিবসে নিজ বাড়ীতে পোলাও-কোর্মা খেতে আমার বড্ড অস্বস্তি হয়। মৃতের আহাজারীর মাঝে বিজয় উৎসব করতে কোনভাবেই সফল হতে পারলাম না।
বিজয় উৎসবের আগে দেশকে স্থীতিশীল করাটা জরুরী ছিল। তাহলে হয়তো ২৭ হাজার নয়, পুরো দেশবাসী নির্দ্বিধায় কণ্ঠ মেলাতো গতকাল ৪.৩১ এ।
(হয়তো অগোছালো কিন্তু খুব কি ভুল বললাম?)
কাজীর হাট.কম এ সর্বপ্রথম প্রকাশিত।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:০৮