মাঝে মাঝে মনটা যখন বিভিন্ন চিন্তার ভারে বেসামাল হয়ে পড়ে আমি তখন হাঁটি। অফিস শেষে লম্বা একটা হাঁটা আমার মনটাকে তার আপন কক্ষপথে ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে।
হাটার জন্য রাস্তায় নামলেই আমার মনটা ভাল হয়ে যায়। পথের একধার ঘেষে আমি যখন হাটতে থাকি চেনা-অচেনা মানুষগুলো আমার পাশ দিয়ে ছুটে যেতে থাকে। আমি একমনে তাদের দিকে তাকিয়ে থাকি আর হাঁটি। তাকিয়ে তাকিয়ে মানুষগুলোকে দেখি। আমার নিজেকে তখন অন্য জগতের মানুষ বলে মনে হয়। আমি কল্পনা করি আমার সামনে পৃথিবীর গোপনতম একটি দরজা খুলে গেছে। আমি সবাইকে দেখতে পাচ্ছি, কিন্তু কেউ আমায় দেখছে না, যেন আমি অদৃশ্য। হাঁটতে হাঁটতে আমার পাশ দিয়ে বয়ে চলা মানুষগুলোর মনের ভাব অনুমান করতে খুব ভাল লাগে।
আজকেও আমি তাই করছিলাম। হাঁটার মাঝে মানুষগুলির মুখের দিকে তাকিয়ে তাদের মনের ভাব অনুমান করার চেষ্টা করছিলাম। বয়স্ক একজন মানুষকে দেখে মনে হল কোনো কিছু নিয়ে তার ভিতরে খুব যন্ত্রনা- বোধহয় চাচি কায়দামত ছ্যাচা দিছে। হাস্যোজ্জল এক তরুণীকে দেখে মনে হল হয়তো তার ভালবাসার মানুষটি আজকে তাকে ভালবাসা নিবেদন করেছে। কমবয়সী এক ছেলেকে অস্থিরভাবে এদিক ওদিক তাকাতে দেখে মনে হল নেশায় আসক্ত- নতুন কোন নেশার সন্ধান পেয়েছে। ধীরপায়ে হেঁটে আসা এক মধ্যবয়স্ক লোককে দেখে মনে হল তার ভিতরে এক ধরনের শান্ত সমাহিত ভাব চলে এসেছে- পৃথিবীর তুচ্ছ কোনো ব্যাপারে তার আর কোনো আকর্ষণ নেই। তার নির্লিপ্ত চেহারার মাঝে এক ধরণের ঐশ্বরিক পবিত্রতার ছাপ। মানুষটির ঠিক কাছেই বয়স্কা এক রমণী, তার পোশাক-আশাক অশালীণ, আর চেহারা দেখে মনে হল কোন কুটিল চিন্তায় মগ্ন।
এরকম আরো হাজারো পদের মানুষ আমার চারপাশে ছুটাছুটি করতে থাকে আর তার ভিতর দিয়ে আমি আমার পথ করে নেই। এ যেন আমার- "লোকারণ্যে নির্জনতা"