ঘটনা ১ ঃ
১৪ জুলাই ২০১৫, অফিস থেকে ফিরে ইফতারি করে মনে পরল আজ শবে কদরের রাত। বের হলাম মসজিদ এর উদেশ্যে। রাস্তা পার হতে গিয়া দেখি ৩ জন মধ্য বয়স্কো লোক আর এক জন মহিলা দারিয়ে আছে। আমি যখন তাদের অতিক্রম করছিলাম তখন মহিলা টি ওই তিন লোক কে উদেশ্যে করে বলছিল সারা রাত এর জন্য ৮০০ টাকা আর ২ ঘণ্টার জন্য ৫০০ টাকা।
আমি ধরেই নিলাম তারা কোন ভাল ব্যবসা নিয়েই কথা বলছিল। আল্লাহ না করুক, তারা যদি খারাপ কিছু নিয়ে কথা বলে থাকে আর তারা যদি মুসলিম হয়ে থাকে, তাহলে আমাদের কিছু ব্যপার নিয়ে চিন্তা করতে হবে। প্রথমত, আমরা একটা মুসলিম দেশ এর নাগরিক এবং ওই রাত ছিল শবে কদরের রাত।
পরের দিন ১৫ জুলাই ২০১৫, দুপুর বেলা খেলা দেখতে বসলাম বাংলাদেশ বনাম দক্ষিন আফ্রিকা। চোখ পরল হাশিম আমলা আর ইমরান তাহির এর দিকে। ৯ জন খেলোয়াড় থেকে তাদের পার্থক্য দৃশ্যমান, আর সেটি হল সবার jersey তে Castle লিখা শুধু এই দুই জন ব্যাতিক্রম। যে দেশ HIV রোগ এর কারনে মৃত্যু সংখ্যা ১৮.৫% সেই দেশ এ দুই জন ব্যাক্তি মদ (beer) উদপাদন কারি কম্পানি বলে Castle লিখা jersey না পরা আসলই সাহস ও ধর্মের উপর অগাধ বিশ্বাস এর বহিঃপ্রকাশ ।
ঘটনা ১ এর উপসংহারঃ ধর্মে বিশ্বাস আর অবিস্বাস করা পুরো টাই আপেক্ষিক ব্যপার। আমরা একটি কট্টর মুসলিম সমাজেও ব্যভিচার দেখলাম আবার একটা উগ্র ধর্মবিকুখ দেশে ধর্ম চর্চার অপার দৃষ্টান্ত দেখলাম।
ঘটনা ২ঃ
ঈদ শেষে ঢাকা ফিরছি। আমার কানে headphone, গান শুনছি। আমার পাসে বসা এক জন মধ্য বয়স্ক লোক, অনেক ক্ষন ধরেই আমার সাথে কথা বলার চেষ্টা করছেন। কিন্তু কোন বিষয় খুজে পাচ্ছেন না। হঠাত সে বলে বসল ভাই আপনার headphone টা তো সুন্দর। দাম কত? আমিও উত্তর দিলাম। কথা প্রসঙ্গে জানতে পারলাম উনি মির্জাপুর এ একটা উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল এর শিক্ষক। সারা রাস্তা অনেক বিষয় নিয়ে কথা হচ্ছিল। হঠাত সে বলে বসলো ভাই আপনার সালারি কত? আমি একটু ইতস্তত হয়ে আমার সালারির টা বললাম। সে শুনেই আমাকে জিজ্ঞেস করে বসলো, আপনি এত টাকা সালারি দিয়ে কি করেন। আমি বললাম ভাই আমি যা পাই টা দিয়ে পুরো মাস চলে না, মাস শেষে ধার করতে হয়। তখন উনি বলল, আমি আপনার চেয়ে ৪ গুন কম সালারি পাই। তাতেও আমি আমার বউ বাচ্চা নিয়ে শুখে দিন কাটাই। আমার না পাওয়ার কিছু নাই। বাস থেকে নামার সময় আমি চিন্তা করছিলাম। বেটা Bill Gates এর ও ত চাহিদা আছে। তাহলে বাপেরটা কি?
ঘটনা ২ এর উপসংহারঃ চাহিদা আপেক্ষিক ব্যপার। যেমনঃ Bill Gates চিন্তা করে কি করে সে Warren Buffet এর চেয়ে বেশি ধনি হবে, Warren Buffet চিন্তা করে কি করে সে Carlos Sim Helu এর চেয়ে বেশি ধনি হবে। তেমন ভাবে এক জন ফকির ভাবে সে কি করে তার সাথের ফকির থেকে বেশি আয় করবে। এক জন থেকে আর আপক্ষিক। সবাই তার সমসাময়িক পরিবেশ বা মানুষ এর সাথে আপেক্ষিক।
ঘটনা ৩ ঃ
সে দিন অফিস এর গাড়ি তে বসে আছি। হঠাৎ আমার এক শিক্ষক এর কথা মনে হল। তিনি আমাদের electromagnetic বিষয় পরাতেন। বলায় বাহুল্য বংশগত ভাবে তিনি মুসলমান হলেও তিনি একজন নাস্তিক ছিলেন। তিনি আমাদের একদিন বললেন, “তুমি ধর্ম কে বিশ্বাস কর সেটাও Assumption এর উপরে আর আমি ধর্মকে বিশ্বাস করি না সেটাও Assumption এর উপর”।
ঘটনা ৩ এর উপসংহারঃ এই পৃথিবীতে ২০ টার ও বেশি ধর্ম আছে। ৭০০ কোটি মানুষ এর মধ্যে প্রতিটি মানুষ কোন না কোন ধর্ম বিশ্বাস করে। এবং প্রতিটা মানুষ এর কাছে টার স্রষ্টা শ্রেষ্ঠ বলে গণ্য। প্রতিটি মানুষ এর কাছে তার ধর্ম টা আপেক্ষিক।
আপেক্ষিকতাঃ এখন প্রশ্ন হল আমরা আপেক্ষিকতা বলতে কি বুঝি? আপেক্ষিকতা হল এক টি জিনিস/বস্তু/অবস্থা/কাল কে অন্য একটি জিনিস/বস্তু/অবস্থা/কাল এর সাথে তুলনার মাধ্যমে পরিমাপ করা। যেমনঃ ষাট সেকেন্ড এ এক মিনিট, ১০০০ গ্রাম এ এক কিলগ্রাম ইত্যাদি। এখন কথা হল, এই যে এক সেকেন্ড কে যে আমরা একটা standard ধরেছি সেটাও তো কোন এক জন ব্যক্তি কোন এক সময় এ assumption করে নিয়েছইলেন।
এবার আশা যাক আমাদের শিরনাম এর দিকে। আমরা যদি Albert Einstein এর Theory of relativity র দিকে আলোকপাত করি ঃ “the laws of physics are the same for all non-accelerating observers, and that the speed of light in a vacuum was independent of the motion of all observers the laws of physics are the same for all non-accelerating observers, and that the speed of light in a vacuum was independent of the motion of all observers”
এখানে বলা হচ্ছে যে “পদার্থ বিজ্ঞান সব জাইগায় এক, আলোর গতিবেগ সব জাইগায় এক”। এই Theory টি কে আমরা যদি সমীকরণ এর মাধ্যমে প্রকাশ করি তাহলে পাই ঃ E=mc^2 বলা হয়ে থেকে এই সমীকরণ এর উপর পৃথিবী/বিজ্ঞান দাড়িয়ে আছে।
এখানে, E = শক্তি
m = আপেক্ষিক ভর
c = আপেক্ষিক আলোর গতি = 299792458 m/s (এর অর্থ আলো ভ্যাকুয়াম এর মধ্যে দিয়ে ভ্রমন করলে সেকেন্ডে ২৯৯৭৯২৪৫৮মিটার যাবে)
এখন কথা হল, ১৯০৫ সালে Albert Einstein ২৯৯৭৯২৪৫৮মিটার দীর্ঘ ভ্যাকুয়াম টিউব কথাই পেয়েছিল? যা দিয়ে উনি আলোর গতি পরিমাপ করেচিলেন। বস্তুত এত বড় ভ্যাকুয়াম টিউব বানান অসম্ভব। এতে প্রমানিত সে এখানও assumption করে নেয়া হয়েছিল। আবার আপেক্ষিক ভর যে টিকে ধরা হয়েছে সেটিও assumption এর উপর। কারন gravitational force এর কারনে আপেক্ষিক ভর সমুদ্র পৃষ্ঠে এক রকম, পাহারে আবার অন্য রকম, আবার চাদে same বস্তুর আপেক্ষিক ভর পৃথিবী থেকে ৬ গুন কম।
এখন আমরা একটা সমঝোতাই উপনিত হতে পারি যে, যে equation এর উপর বিজ্ঞান তথা বিশ্ব দাড়িয়ে আছে সেই equation ই যদি assumption এর উপর দাড়িয়ে যায় তাহলে বলা যেতে পারে পৃথিবী টাই একটা assumption এর উপর দাড়িয়ে আছে।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জুলাই, ২০১৫ রাত ১:২৯