কিছু দিন আগে আমি মতিঝিল থেকে বাসা পরিবর্তন করে শাহজাহানপুর চলে যাই। তাই যথারীতি অন্যান্য রাতের মত বাসায় ফিরছিলাম। রাস্তায় একজন লোক আমার দৃষ্টি আকর্ষন করে। সে নিজেকে ঢাকায় নতুন বলে অভিনয় করে। আমি ঠিক ভেবে তার সাথে কথা বলতে রাজি হই। সে আমার পরিচয় নেয় এবং এক পর্যায়ে আমরা দুজনে হাঁটতে হাঁটতে কিছুদুর সামনে চলে যাই। আমি আমার বাসার পথেই আসছিলাম।
মোটামোটি একটা নির্জন জায়গা অতিক্রম করার সময় চলে যাবে এমন ভাবে করমর্দন করার মত হাত প্রসারিত করে দেয়। আমিও হাত এগিয়ে দেই। সে আমার হাত খুব জোড়ে চেপে ধরে। ইতোমধ্যে আরও তিনজন লোক দু'দিক থেকে এগিয়ে আসে। হাত চেপে ধরা লোকটি আমাকে বলে "আমরা কমপক্ষে ৫০ জন আছি, ঝামেলা না করে যা আছে বের করেন"। ঘটনার আকস্মিকতায় আমি অবাক হয়ে যাই। আমার অবাক হওয়াটা তাদের বুঝে ওঠার আগেই খুব জোড়ে হাত ঝাকুনি দিয়ে আমার হাত লোকটির হাত থেকে মুক্ত করে ফেলি। সাথে সাথে তাদের মাঝ থেকে খুব জোড়ে ছুটে ফুটপাত থেকে রাস্তায় নেমে আসি।
ওরা আমাকে ধরার জন্য চেষ্টা করেছে কিনা সেটা লক্ষ্য না করে জোড়ে ছুটতে থাকি। শীঘ্রই রাস্তার লোক সমাগম জায়গায় চলে আসি। পরে মনে হল ওরা সশস্ত্র ছিল। আমিও হয়ত অন্যান্য দিনের মত পত্রিকার খবর হতাম "অজ্ঞাত নামা সন্ত্রাসীর হাতে যুবক ছুরিকাহত অথবা নিহত"। পত্রিকায় এরকম ঘটনা প্রায়ই হচ্ছে বলে পড়ি। বাস্তবতা বুঝতে পারি আজকে। আল্লাহর ইচ্ছায় এ যাত্রায় ছিনতাই কারীর হাত থেকে বেঁচে যাই।
বিপদ কখনো একা আসে না। কথাটা আর একবার আমার ক্ষেত্রে প্রমাণ হয়ে গেলো। বাসায় গিয়ে দেখি আমার টেবিলের ড্রয়ার থেকে বিভিন্ন দামী ও দুর্লভ অনেক কাগজ-পত্র চুরি হয়ে গেছে। বাসায় কিছু সংস্কারমূলক কাজ চলছিল। আমার টেবিলটা কাজের সুবিধার্থে বাইরে রাখা হয়েছিল। আমিও এ ব্যাপারে তেমন গুরুত্ব দেই নি কারণ এদিকে আমার দ্বিতীয় সেমিষ্টার পরিক্ষা চলছিল। আমি পরীক্ষা নিয়েই বেশি ব্যস্ত ছিলাম। রাত দুইটা পর্যন্ত পড়ার পর আর কোন এনার্জি থাকে না। না কাজের এনার্জি না পড়ার এনার্জি না চিন্তা-ভাবনা করার এনার্জি।
টেবিল থেকে হারানো কাগজ-পত্রের মধ্যে আমার সমস্ত শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদপত্রের ফটোকপি, একটা মূল সনদপত্র, দুইটি ছাত্র-জীবনের প্রাপ্ত প্রতিযোগিতার সনদপত্র, একটা পুর্ণ আমার লেখা উপন্যাস, একটা কবিতার ডায়রি যেখানে কমপক্ষে ১৩০ টি কবিতা ও ছড়া ছিল, আমার ডিজাইন করা সমস্ত লিফলেট-লোগো-ব্যানার-পোষ্টার-কার্ড ইত্যাদির নমূনা কপি, আমার কিছু ছোট বেলার ছবি, বিশ্ববিদ্যালয়ের বেতনের রশিদ, দুইটি ছবির কালেকশন, আমার পত্রিকায় প্রকাশিত কিছু কবিতার পেপার কাটিং, নাগরিকতা সনদপত্র, চারিত্রিক সনদপত্র, পুরষ্কার পাওয়া কিছু বই, কমপক্ষে ৩২ কপি কারেন্ট আফেয়ার্স-কারেন্ট নিউজ-ওয়ার্ল্ড আফেয়ার্স, ৫ টি প্রাকটিক্যাল নোট বই, রবিন্দ্রনাথ ঠাকুরের উপন্যাস সমগ্র, রাসেলের কিছু খাতা, আরো কিছু কাগজ-পত্র যেসবের নাম এই মুহুর্তে মনে পরছে না।
মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল। রাতে ঘুম আসছিল না। সামান্য কারনে মুরাদের উপর রেগে গিয়েছিলাম। স্টুপিটটা অনর্থক মেজাজ বিগড়িয়ে দিয়েছিল। অফিসে এসেও কাজে মন বসছে না তাই বিষয়টা গুগল ডকুমেন্টে লিখে রাখলাম।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




