somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জীবনানন্দ দাশের মায়াবতী' অথবা 'বনলতা সেন'

২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ৮:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাংলা কবিতার সবচেয়ে জনপ্রিয় চরিত্র কোনটি এ নিয়ে যদি ভোটিং করা হয়, বনলতা সেন বোধহয় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হবে। মাঝে মাঝে আমার মনে হয় কবি জীবনানন্দ দাশের চেয়েও বনলতা সেন বেশি জনপ্রিয়। বনলতা সেন আমাদের স্বপ্ন হয়ে আসে, বনলতা সেন আমাদের গান হয়ে আসে, বনলতা সেন নাটকের চরিত্র হয়ে আমাদের কাছে ধরা দেয়। প্রেমিকের কাছে তার প্রেমিকা বনলতা, প্রেমিকার নিজের কাছে সে নিজে বনলতা। বনলতা সেনের কিছু খুঁটিনাটি তথ্য শেয়ার করার জন্য এই ব্লগ।।



আবির্ভাব



বনলতা সেন কবিতাটি প্রথম প্রকাশিত হয় আশ্বিন ১৩৪২/ ডিসেম্বর ১৯৩৫ সালে। কবিতাটি তৎকালীন ‘কবিতা’ পত্রিকায় প্রথম প্রকাশিত হয়, সে সময় কবিতা’র সম্পাদক ছিলেন কবি বুদ্ধদেব বসু। জীবনানন্দ দাশের মৃত্যুর পর পাণ্ডুলিপি ঘেঁটে দেখা যায়, কবিতাটি লেখা হয়েছিলো ১৯৩৪ সনে। সিটি কলেজের সহকারী লেকচারারের চাকরি হারানো সত্ত্বেও কবি তখন কলকাতায় বাস করছেন। জীবনানন্দ রুল করা এক্সারসাইজ খাতায় লিখতেন। কবিতাটি আট নম্বর খাতার (কবি নিজেই সেই খাতাগুলোকে ১,২,৩ করে নম্বর দিয়ে রাখতেন) ২৪ তম পৃষ্ঠায় পাওয়া যায়। কলকাতার ন্যাশনাল লাইব্রেরিতে এর পাণ্ডুলিপি সংরক্ষিত আছে।



-----------------------------------------------



হাজার বছর ধরে আমি পথ হাঁটিতেছি পৃথিবীর পথে,

সিংহল সমুদ্র থেকে নিশীথের অন্ধকারে মালয় সাগরে

অনেক ঘুরেছি আমি ; বিম্বিসার অশোকের ধূসর জগতে

সেখানে ছিলাম আমি ; আরো দূর অন্ধকারে বিদর্ভ নগরে;

আমি ক্লান্ত প্রাণ এক, চারিদিকে জীবনের সমুদ্র সফেন,

আমারে দুদণ্ড শান্তি দিয়েছিলো নাটোরের বনলতা সেন।



চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা,
মুখ তার শ্রাবস্তীর কারুকার্য; অতিদূর সমুদ্রের 'পর

হাল ভেঙে যে নাবিক হারায়েছে দিশা

সবুজ ঘাসের দেশ যখন সে চোখে দেখে দারুচিনি-দ্বীপের ভিতর,

তেমনি দেখেছি তারে অন্ধকারে; বলেছে সে , ' এতোদিন কোথায় ছিলেন?'

পাখির নীড়ের মত চোখ তুলে নাটোরের বনলতা সেন।



সমস্ত দিনের শেষে শিশিরের শব্দের মতন

সন্ধ্যা আসে; ডানার রৌদ্রের গন্ধ মুছে ফেলে চিল;

পৃথিবীর সব রঙ নিভে গেলে পাণ্ডুলিপি করে আয়োজন

তখন গল্পের তরে জোনাকির রঙে ঝিলমিল;

সব পাখি ঘরে আসে--সব নদী--ফুরায় এ-জীবনের সব লেনদেন;

থাকে শুধু অন্ধকার, মুখোমুখি বসিবার বনলতা সেন।

--------------------------------------------------------------



কবিতার মূল ভাবটিকে অনেকে ১৮৩১ সালে লেখা এডগার এলেন পো’র টু হেলেন কবিতার সাথে তুলনা করেন, তার দ্বারা অনুপ্রাণিত বলে ভাবতে ভালবাসেন। যারা পো’র নাম শুনেননি বা ইংরেজি কবিতার প্রতি আগ্রহ কম, তাদের একটি তথ্য জানিয়ে রাখি হলিউডের জনপ্রিয় নায়ক টম হ্যাঙ্কস দি লেডিকিলার মুভিতে এই কবিতাংশ আবৃত্তি করেছিলেন।



কবিতা হিসেবে কেন গুরুত্বপূর্ণ



বনলতা সেন কবিতাটিকে বাংলা কবিতায় একটি নতুন যুগ এনে দেয়া কবিতা বলা হয় কারণ রবীন্দ্রনাথের প্রভাব কাটিয়ে কল্লোলযুগের পাঁচ কবি যে আধুনিকতার সন্ধান করছিলেন তার যোগ্যতম প্রতিনিধি এই কবিতাখানি। অথচ এই কবিতায় কোন বিদ্রোহ নেই, সদম্ভ উচ্চারণ নেই, নিজের অনন্যতা ঘোষনা করবার কোন সূক্ষ্ম প্রচেষ্টাও নেই। কবিতাটির বুনোট অত্যন্ত নিবিড়, রোমান্টিকতার মোড়কে কবি পুরো মানবসভ্যতার পরিভ্রমণ আর গন্তব্য নির্ধারণ করে দিয়েছেন তিনটি স্তবকের আঠারোটি লাইনের মাধ্যমে। কবিতাটি পাঠে মনোরম, শব্দচয়নে ঐতিহ্যনির্ভর, ভাবে মিলনোন্মুখ। হাজার হাজার বছরের অবিরাম সন্ধান শেষে ‘বনলতা সেন’রূপী নারী অথবা প্রকৃতির কাছে মানবসভ্যতার স্বস্তিময় আত্মসমর্পণই কবিতার মূল সুর হিসেবে বেশিরভাগ পাঠকের কাছে বেজে ওঠে।



'বনলতা' কে ছিলেন



বনলতা সেনের চুলকে তুলনা করা হয়েছে বিদিশা নগরীর আঁধারের রহস্যময়তার সাথে, মুখশ্রীকে তুলনা করা হয়েছে শ্রাবস্তী’ র কালজয়ী শিল্প উপাদান হিসেবে। বনলতা’র চোখ পাখির নীড়ের মতো আশ্রয়দাত্রী, ক্লান্তি ভুলিয়ে দেয়া। মধ্যযুগের শিল্প-ঐশ্বর্য্যের ধারক বিদিশা’র অমোঘ আকর্ষণের মতো তার চুলের নেশা, শ্রাবস্তীর হাজারো স্থাপত্য আর লাখো শিল্পীর সযত্ন-মনসিজ মুখচ্ছবির মতো তার রূপ। সারাদিনের ক্লান্তি আর অবসাদ পেছনে ফেলে পাখি যেমন সন্ধ্যায় নীড়ে ফেরে তৃপ্তি পায়, বনলতা’র চোখ তেমনি।



কবি নির্মিত এই অপার্থিব নারীর অবয়ব নির্মাণে মাটির পৃথিবীর কোন নারী রসদ জুগিয়েছে তার রহস্য অনেকেই জানতে চান। সত্যিকারের 'বনলতা কে?' তা নিয়ে নানা ধরণের মতবাদ এসেছে।



১। কেউ কেউ মনে করেন (আমি এই দলের) বনলতা সেন নামটির ভেতর তার পরিচয় লুকিয়ে আছে। নামটির দু’টি অংশ বনলতা আর সেন। বনলতা প্রকৃতি আর সেন নারী। জন্মলগ্ন থেকেই মানবজাতি নারী আর প্রকৃতির কাছেই একমাত্র শান্তি খুঁজে পেয়েছে কবির মূল বক্তব্য এটিই। এই বিষয়টি স্পষ্ট করতেই কবি এই নামটি বেছে নিয়েছেন, সমসাময়িক আধুনিক নারীর নামের সাথে সাদৃশ্য রেখে কবি তার স্বভাবজাত রোমান্টিকতার আড়াল তৈরি করেছেন মাত্র।



২। বিশিষ্ট আমলা আকবর আলী খান তার 'পরার্থপরতার অর্থনীতি' বইয়ে বনলতা সেনের 'সেন' উপাধি আর তার বাসস্থান নাটোর এই দুইয়ের সংযোগে আরেকটি ব্যাখ্যা হাজির করেছেন। ইনার ব্যাখ্যাটিও যথেষ্ট কনভিন্সিং। আকবর আলী খানের মতে 'নাটোর' শব্দটির ব্যবহার শুধু বনলতা সেনের ঠিকানা নির্দিষ্ট করতে নয়, তার পেশা নির্দিষ্ট করতেও। দলিল দস্তাবেজ ঘেঁটে দেখা যায় এ শতাব্দীর প্রথমদিকে নাটোর কাঁচাগোল্লার জন্য নয়, বিখ্যাত ছিলো রূপোপজীবিনীদের ব্যবসার কেন্দ্র হিসেবে। 'সেন' শব্দটি তার বংশের পরিচয় বহন করছে, পেশা গ্রহণ করবার পর 'বনলতা' নামের আড়ালে সে তার নিজের আসল নাম গোপন করেছে। ‘দু’দণ্ড শান্তি’ কথাটির মূল অর্থ আদিম অভিসার, ‘এতদিন কোথায় ছিলেন’ প্রশ্নটি এই হাহাকার প্রকাশ করে যে, কবিতার ‘আমি’ আগে দেখা দিলে, বনলতা রূপাজীবা’র পেশাটি গ্রহণ করতেন না। দুঃসময়ে কেন পাশে ছিলেন না, এই হাহাকার বনলতার বুক জুড়ে। আর এই কবিতায় আরোপিত 'অন্ধকার' বলে দেয়, বনলতা সেন’দের আলোকোজ্জ্বল পৃথিবীতে পাওয়ার সুযোগ নেই। 'অন্ধকারে মুখোমুখি বসবার' স্মৃতিটুকু সাথে নিয়ে পাখির মতোই ঘরে ফিরে যেতে হয়; যেখানে অপেক্ষা করে সাধারণ নারী’।



৩। কিছুদিন আগে জীবনানন্দের ডায়েরির প্রথম অংশ প্রকাশিত হয়েছে কলকাতায়। ভূমেন্দ্র গুহের কাছে জীবনানন্দের ডায়েরি রাখা আছে। সেই ডায়েরিতে লিটারেরি নোটস্‌ হিসেবে Y নামে এক মেয়ের নাম লেখা আছে। জীবনানন্দ তার নিজের হস্তাক্ষরে লিখে রেখেছেন Y=শচী; এই ‘শচী’ জীবনানন্দের গল্প ‘গ্রাম ও শহরের গল্প’র শচী। ডায়েরির অন্যান্য পৃষ্ঠা বিবেচনায় ভূমেন্দ্র গুহ বলেছেন, জীবনানন্দের চাচাতো বোন শোভনার প্রতি কবি দূর্বল ছিলেন। এই শোভনাই হচ্ছেন ওয়াই বা শচী বা বনলতা সেন। কবির প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘ঝরা পালক’ কবি এই শোভনা মজুমদারকে উৎসর্গ করেছেন। কবি হিসেবে উপেক্ষার অনেক কঠিন সময়গুলিতে জীবনানন্দের কবিতার মুগ্ধ পাঠিকা ছিলেন শোভনা, দরজা বন্ধ করে প্রায়ই কবি শোভনাকে কবিতা পাঠ করে শোনাতেন। অর্থাৎ ভূমেন্দ্র গুহের বিবেচনায় বনলতা সেন নিখাদ প্রেমের কবিতা।



৪। বনলতা সেন রচনার পচাত্তর বছর পূর্তিতে কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকায় একটি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে অশোক মিত্র জানাচ্ছেন তিনি নিজে কবি জীবনানন্দ দাশকে জিজ্ঞেস করেছিলেন এই ‘বনলতা সেন’ কে? কবি বনলতা সেন কে এই প্রশ্নের সরাসরি কোন জবাব দেন নি। শুধু বলেছেন, বনলতা সেন নামটি কবি পেয়েছিলেন পত্রিকা থেকে। সে সময় নিবর্তক আইনে বনলতা সেন নামে এক একজন রাজশাহী জেলে বন্দিনী ছিলেন। সেখান থেকেই কবি এই নামটি গ্রহণ করেন। এই বনলতা সেন পরে কলকাতার কলেজে গণিতের শিক্ষকতা করতেন।





ইংরেজি অনুবাদ



বেশিরভাগ সময়ই কবিতার অনুবাদে মূল কবিতার মূলভাব ম্লান হয়ে যায়। তবে যখন কবি নিজে অনুবাদ করেন তখন সে অনুবাদ কবিতাটিকে দু’দিক থেকে দেখবার সুযোগ করে দেয়। সে প্রত্যাশা সার্থক হয় নি বনলতা সেন’র অনুবাদে। ইংরেজি সাহিত্যের অধ্যাপক জীবনানন্দ দাশ তার মুষ্টিমেয় যে কয়টি কবিতার অনুবাদ নিজে করেছেন তার একটি বনলতা সেন। কবিকৃত অনুবাদটি নিচে দেয়া হলো:



---------------------------------

For a thousand years I have been walking upon the bosom of my earth

From Ceylon Ocean to a darkling night falling upon the sea of Malaya

So much I've traveled!
Into the dusky world of Bimbishar Asoka,
I was there!

Farther inside into that very darkness of city Bidarbha

I am a tired soul

everywhere the oceanic foams of life throbbing

for just only a while I was blessed with some peace

At last!
From her! She, Banalata Sen of Natore.



Her hairs like an ancient dark night fallen on Bidisha,

Face truly sculpted in vigor of Srabasti;

Far inside an ocean,

when a ship wrecked sailor had lost his vision

All on a sudden as he discovered a grass green

Inside an island cinnamon

Like that only I have seen her in darkness!

Quipped she, “Where have you been for so long? “

Her eyelids like a bird's nest, had opened
She, Banalata Sen of Natore.



When a day ends in wholeness, evening descends like a dew's whisper;

Falcon wipes out the smell of sunshine from his wings;

When all colors fade away from the face of this earth,

records of life start unfolding;

From inside a fabric of stories to the twinkling of fireflies

all birds return to nests - all rivers - come to an end all trades of life;

Only darkness now prevails and sitting face to face with Banalata Sen.


-----------------------------------------------------



আরো বনলতাঃ



‘বনলতা সেন’ কবিতায় তিনবার উচ্চারণে বনলতা সেনের প্রতি মোহ কবির কাটে নি। কবির আরো কবিতা-গল্পে বনলতা সেন এসেছে নারী চরিত্ররূপে। এমনকি বনলতা সেন কবিতা প্রকাশ হবার আগেই কবি তার একটা গল্পে বনলতার রূপের বর্ণনা দেন, তার মোহগ্রস্ততার প্রকাশ ঘটান, কিন্তু মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তা প্রকাশ করেন নি কারো কাছে।



==========================================

১। (কারুবাসনা, রচনাকাল-১৯৩৩)



দক্ষিণ আকাশের সে-ই যেন দিগবালিকা, পশ্চিম আকাশেও সে-ই বিগত জীবনের কৃষ্ণমণি, পুব আকাশে আকাশ ঘিরে আছে তারই নিটল কাল মুখ। নক্ষত্রমাখা রাত্রির কাল দিঘির জলে চিতল হরিণীর প্রতিবিম্বের মতো রূপ তার-প্রিয় পরিত্যক্ত মৌনমুখী চমরীর মতো অপরূপ রূপ। মিষ্টি ক্লান্ত অশ্র'মাখা চোখ, নগ্ন শীতল নিবারণ দু'খানা হাত, ম্লান ঠোঁট, পৃথিবীর নবীন জীবন ও নবলোকের হাতে প্রেম বিচ্ছেদ ও বেদনার সেই পুরনো পল্লীর দিনগুলো সমর্পণ করে কোনো দূর নিঃস্বাদ নিঃসূর্য অভিমানহীন মৃত্যুর উদ্দেশ্যে তার যাত্রা।



সেই বনলতা-আমাদের পাশের বাড়িতে থাকত। কুড়ি-বাইশ বছর আগের সে এক পৃথিবীতে...আচঁলে ঠোঁট ঢেকে আমার ঘরের দিকেই আসছিল। কিন্তু কি যেন অন্যমনস্ক নত মুখে মাঝপথে গেল থেমে, তারপর খিরকির পুকুরের কিনারা দিয়ে, শামুক-গুগলি পায়ে মাড়িয়ে, বাঁশের জঙ্গলের ছায়ায় ভিতর দিয়ে চলেগেল সুনিবিড় জামরুল গাছটার নিচে একবার দাঁড়াল, তারপর পৌষের অন্ধকারের ভিতর অদৃশ্য হয়ে গেল।



অনেকদিন পরে সে আবার এল; মনপবনের নৌকায় চড়ে, নীলাম্বরী শাড়ি পরে, চিকন চুল ঝাড়তে ঝাড়তে আবার সে এসে দাঁড়িয়েছে; মিষ্টি ঠাণ্ডানির্জন দুখানা হাত, ম্লান ঠোঁট, শাড়ির ম্লানিমা। সময় থেকে সময়ান্তর, নিরবিছিন্ন, হায় প্রকৃতি, অন্ধকারে তার যাত্রা।



২। (একটি পুরনো কবিতা: অগন্থিত)



আমরা মৃত্যু থেকে জেগে উঠে দেখি

চারদিকে ছায়া ভরা ভিড়

কুলোর বাতাসে উড়ে ক্ষুদের মতন

পেয়ে যায়-পেয়ে যায়-অণুপরমাণু শরীর।



একটি কি দুটো মুখ-তাদের ভিতরে

যদিও দেখিনি আমি কোনো দিন-তবুও বাতাসে

প্রথম গার্গীর মতো-জানকীর মতো হয়ে ক্রমে

অবশেষে বনলতা সেন হয়ে আসে।



৩। (বাঙালি পাঞ্জাবি মারাঠি গুজরাটি: অগ্রন্থিত)



বনলতা সেন

তুমি যখন নদীর ঘাটে স্নান করে ফিরে এলে

মাথার উপর জলন্ত সূর্য তোমার,

অসংখ্য চিল, বেগুনের ফুরের মতো রঙিন আকাশের পর আকাশ

তখন থেকেই বুঝেছি আমরা মরি না কোনো দিন

কোনো প্রেম কোনো স্বপ্ন কোনো দিন মৃত হয় না

আমরা পথ থেকে পথ চলি শুধু-ধূসর বছর থেকে ধূসর বছরে-

আমরা পাশাপাশি হাঁটতে থাকি শুধু, মুখোমুখি দাঁড়াই;

তুমি আর আমি।



কখনো বা বেবিলনের সিংহের মূর্তির কাছে

কখনো বা পিড়ামিডের নিস্তব্ধতায়

কাঁখে তোমার মাদকতাময় মিশরীয় কলসি

নীল জলের গহন রহস্যে ভয়াবহ

মাথার উপর সকালের জ্বলন্ত সূর্য তোমার, অসংখ্য চিল,

বেগুনফুলের মতো রঙিন আকাশের পর আকাশ।



৪। (শেষ হল জীবনের সব লেনদেন: অগ্রন্থিত)



শেষ হল জীবনের সব লেনদেন

বনলতা সেন।



কোথায় গিয়েছ তুমি আজ এই বেলা

মাছরাঙা ভোলেনি তো দুপুরের খেলা

শালিখ করে না তার নীড় অবহেলা

উচ্ছ্বাসে নদীর ঢেউ হয়েছে সফেন,

তুমি নাই বনলতা সেন।



তোমার মতন কেউ ছিল না কোথাও?

কেন যে সবের আগে তুমি চলে যাও।

কেন যে সবের আগে তুমি

পৃথিবীকে করে গেলে শূন্য মরুভূমি

(কেন যে সবের আগে তুমি)

ছিঁড়ে গেলে কুহকের ঝিলমিল টানা ও পোড়েন,

কবেকার বনলতা সেন।



কত যে আসবে সন্ধ্যা প্রান্তরে আকাশ,

কত যে ঘুমিয়ে রবো বস্তির পাশে,

কত যে চমকে জেগে উঠব বাতাসে,

হিজল জামের বনে থেমেছে স্টেশনে বুঝি রাত্রির ট্রেন,

নিশুথির (নিশুতির) বনলতা সেন।



৫। (হাজার বছর শুধু খেলা করে: বনলতা সেন)



হাজার বছর শুধু খেলা করে অন্ধকারে জোনাকির মতো:

চারিদিকে চিরদিন রাত্রির নিধান;

বালির উপরে জ্যোৎস্না-দেবদারু ছায়া ইতস্তত

বিচূর্ণ থামের মতো: দ্বারকার;-দাঁড়ায়ে রয়েছে মৃত, ম্লান।

শরীরে ঘুমে ঘ্রাণ আমাদের- ঘুচে গেছে জীবনের সব লেনদেন;

মনে আছে? শুধাল সে-শুধালাম আমি শুধু 'বনলতা সেন?'



===========================================



বর্তমান মিডিয়ায় কোন কিছুর প্রচার-প্রসারে বনলতা সেনের ইমেজকে সুকৌশলে ব্যবহার করা হচ্ছে। বনলতা সেন’ কবিতার উদ্ধৃতিসমেত টি-শার্টের কাটতি অনেক।
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×