somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রাজনৈতিক সাম্প্রদায়ীকতা: সমাধান

১৪ ই নভেম্বর, ২০১৬ রাত ৩:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজ আমাদের দেশে ভাইরাল ব্যধির মত ছড়িয়ে পরেছে ধর্মীয় সাম্প্রদায়ীকতা। বর্তমান সময়ে এটি ঘৃণ্য বিষয় হিসেবে সবার কাছেই স্বীকৃত । এখন প্রশ্ন হলো, সাম্প্রদায়িকতা বিষয়টি কী শুধু ধর্মীয় হয়? আমাদের সমাজের প্রগতিশীলরা’ সাম্প্রদায়িকতার সংজ্ঞাকে খুব ছোট করে ফেলেছেন। তাদের সংকীর্ণ চিন্তা-ধারার কারণেই সাম্প্রদায়িকতা শুধুমাত্র ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতার মধ্যেআটকা পড়েছে । কিন্তু সাম্প্রদায়িকতা অঞ্চল ভিত্তিক, ভাষা ভিত্তিক, সংখ্যা গরিষ্ঠতা ভিত্তিক, বা অন্যকোন উপাদানের ভিত্তিতে সংগঠিত হতে পারে। যখন একই সম্প্রদায়ের মানুষ নিজেদের লাভ-লোকসান ,ন্যয়-অন্যায়, প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি, শিক্ষা, সংস্কৃতি, আর্থিক-অনার্থিক সুবিধাদি নিজের সম্প্রদায়ের ভিত্তিতে চিন্তা-ভাবনা করে এবং সবসময় অন্য সম্প্রদায় হতে নিজ সম্প্রদায়ের প্রাধান্য নিশ্চিত করতে চায়, তখনই সামপ্রদায়িকতা জন্ম লাভ করে । আর এক্ষেত্রে সম্প্রদায় ধর্মের ভিত্তিতে গঠিত হলে, তাকে ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতা, ভাষার ভিত্তিতে হলে,ভাষাভিত্তিক সাম্প্রদায়িকতা, বর্ণ ভিত্তিক হলে বর্ণভিত্তিক সাম্প্রদায়িকতা, অঞ্চল ভিত্তিক হলে আঞ্চলিক সাম্প্রদায়িকতা জন্ম লাভ করবে ।
বর্তমান সময়ে আমাদের দেশে সংখ্যা গরিষ্ঠতা ভিত্তিক ( হিন্দু-মুসলিম সাপ্রদায়িকতা বা একে বলা হয় সঙ্গখা লঘুদের উপর অত্যাচার ইত্যাদি) বা অঞ্চল ভিত্তিক সাম্প্রদায়িকতা প্রকট রুপ লাভ করেছে। ধর্ম ভিত্তিক সাম্প্রদায়িকতা, বর্ণ বা ভাষা ভিত্তিক সাম্প্রদায়িকতার থেকে বেশি ক্ষতিকার। কারন ধর্ম ভিত্তিক সাম্প্রদায়িকতা বিস্তার লাভ করে প্রথমত একই অঞ্চলে বা দেশে। এক ধর্মের লোক অন্য ধর্মের লোকের উপর আক্রমণ করবে,অন্যায়ভাবে হলেও নিজেদের অধিকার একচেটিয়া ভাবে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করবে । সে রকম আমাদের দেশের মসমানেরা আজ হিন্দুদের ঘরবাড়ি ভাংচুর বা জ্বালাও-পোড়াও করছে , শুধু মাত্র তারা হিন্দু আর আমরা মুসলমান বলে। আমাদের (মুসলমানদের দাবী হিন্দুরা কেন আমাদের দেশে । তারা এ দেশে থকতে পারে না । তারা ভারতীয়, তাদের ভারতে পাঠাতে হবে ইত্যাদি ইত্যাদি।
অঞ্চল বা ভৌগলিক সাম্প্রদায়িকতা এটি আবার কি খটকা লাগল শুনে ?এটি আবার কেমন সাম্প্রদায়িকতা ? অঞ্চল বা ভৌগলিক সাম্প্রদায়িকতা বর্তমানে সময়ে যথেষ্ট শক্তিশালী এবং বিশ্বের নিরীহ মানুষের প্রাণহানি ঘটাচ্ছে । যেমন পশ্চিমারা বিশেষ করে আমেরিকানরা মনে করে, বিশ্বের যে কোর স্থানের সম্পদ কব্জার খাতিরে যেকোন দেশ ধংস করা বা ঐ দেশের নিরীহ লোকের উপর নির্যাতন করা একদমই দোষের নয়। আবার আমাদের প্রিয় মাতৃভূমির সীমান্ত এলাকায় ভারতীয়রা বাংলাদেশীদের বুকে গুলী চালাচ্ছে শুধু মাত্র, অঞ্চল ভেদের কারনে। আমরা বাং;লাদেশী আর ওরা ভারতীয় বলে।
আজ আমাদের দেশ ডিজিটাল বাংলাদেশে পরিনত হয়েছে । আমারা প্রযুক্তির শিখরে উঠতে চাই। আর এই ডিজিটাল যুগে নতুন একপ্রকার সাম্প্রদায়ীকতা সম্মুক্ষীণ হচ্ছি আমরা। এটি হলো রাজনৈতিক সাপ্রদায়িকতা। যা শুধুমাত্র রাজনৈতিক সংগঠনের মাধ্যমে ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া ঘটিত রোগের চাইতেও বেশী ভয়ংকর ভাবে বিস্তার লাভ করে । এক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠন ভিন্নভিন্ন কিছু নীতি,আদর্শ, রাজনৈতিক মতাদর্শন, উন্নয়নের ধারা, রোড ম্যাপ, লক্ষ্যমাত্রা, ইত্যাদি উপস্থাপন করে তাদের নিজ ব্যানারে লোক সমাগম করে । এতে করেই একই জাতীয়তাবাদী মানুষ ভাগ হয়ে যায় কয়েকটি আলাদা আলাদা রাজনৈতিক সম্প্রদায়ে (আমাদের দেশের ক্ষেত্রে আওয়ামীলীগ, বিএনপি, জাতীয়, ইতাদি রাজনৈতিক সম্প্রদায় সমূহ)। প্রতিটি সম্প্রদায়ের কর্মীর ধারনা,তার সমম্প্রদায়ের মুতাদর্শন, রোডম্যাপ, লক্ষ্য, চলার গতিপথ ইত্যাদি অন্য সব সম্প্রদায়ের থেকে উত্তম।আর এতেই বাধে যত বিপত্তি, রাজনৈতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে বাধে সংঘাত, বালির ট্রাক, লুগিবৈঠা, জ্বালাও পোড়াও খেলা। প্রত্যেক সমম্প্রদায় ভুক্ত কর্মী তকন এক মহান দায়িত্বে থাকে ; অপর দলের কর্মীর প্রাণ বধ করা । এই দলীয় সাম্প্রদায়িকতার বৈশিষ্ট বা লক্ষণ আমাদের দেশে খুব পস্ট ভাবে ধরা দেয় । প্রায় প্রতিদিন এ ধরনের সাম্প্রদায়িকতার কারণে লোকদের প্রাণহানি ঘটে । প্রতিদিনি প্রায় পত্রিকার পাতায় চোখবুলালে দেখা যায় , লীগ সমম্প্রদায় দল সমম্প্রদায়, শিবির সমম্প্রদায়ের মধ্যে কুছিত সুন্দর দাঙ্গায় লিপ্ত আছেই। কে কার প্রাণ নিল বা কে কার হাত-পা অথবা কান কেটে নিয়েছে। এভাবে অসংখ্য প্রাণ যায় শুধু মাত্র রাজনৈতিক সাম্প্রদায়িকতার কারণে ।
এছাড়াও আমাদের মধ্যে রাজনৈতিক সমম্প্রদায় গুলোর অদৃশ্য যোদ্ধ তো আছেই। এর কিছু উদাহরন দেওয়া যায় এভাবে; সরকারি চাকুরির (ঝাড়ুদার থেকে শুরু করে সচিব পর্যন্ত) ক্ষেত্রে যখন যে দলের ক্ষমতা থাকে শুধু মাত্র সেই দলের লোককেই রিক্রুট বা নিয়োগ দেয়া হয়। অথবা ক্ষমতাসীন দলের নেতা সুপারিশ ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ দেয়া হয় না , যতই সে ঐ পদের জন্য সে উপযুক্ত হোক। কোন ত্রান বা গরীব-দুস্থদের মাঝে সাহায্য বিতরনের ক্ষেত্রেও একই কাহিনি। সব কাজ সম্পর্ন হয় দলীয় নেতা কর্মীর মাধ্যমে। যতই সেখানে জনগন নির্বাচিত প্রতিনিধি থাক।
এরকম হওয়ার কারন একটাই তা হুলো, এক রাজনৈতিক সমম্প্রদায় ভাবে, তাদের নীতিমালা অন্য সবার থেকে উত্তম। তাদের আদর্শে কোন ভুল বা কমতি নেই ।
যেভাবেই বলি আমাদের ছোট্ট বাংলাদেশকে কি অসাম্প্রদায়ীক গঠন করা সম্ভব? আর পৃথিবী তো অসম্ভব ! এটি সম্ভব তখনই, যখন সব মানুষ একই সম্প্রদায়ভূক্ত হবে। কিন্তু এটি কি সম্ভব হবে ? সেক্ষেত্রে সারা পৃথিবীতে একধর্ম, একবর্ণ, একভাষা, একগ্রাম বা দেশ, এক সংগঠন (রাজনৈতিক দল) গড়ে তুলতে হবে। আর যদি নির্মূল করা না যায়,তবে চিন্তা করতে হবে কিভাবে সাম্প্রদায়িকতার দুষ্ট প্রভাব কমানো যায় ।

সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই নভেম্বর, ২০১৬ রাত ৩:৫৪
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×