somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শেষ বিকেলে (টুকরো গল্প)

০৩ রা এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১১:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আকাশে আধো আধো মেঘ জমেছে। বৃষ্টি হতে পারে আজ। অনেকদিন বৃষ্টিতে ভেজা হয়না। ছোট বেলার অভ্যাস গুলো হঠাৎ করে কেমন যেনো উধাও হয়ে গেলো। বর্ষা এলে ভিজতে যাওয়া আর ফুটবল নিয়ে মাঠে ঝাপিয়ে পড়া! সব কিছুই হারিয়ে গেলো। একে একে সবই হারিয়ে যাচ্ছে। আমি নিজেকেও হারিয়ে ফেলছি। সাজানো গোছানো জীবনটা একেবারে এলোমেলো, ছন্নছাড়া হয়ে গেলো। আমি কখনোই চাইনি জীবনের এই পরিবর্তন কে! আগেই তো ভালো ছিলাম। খুবই স্বাভাবিক ছিলাম। শান্ত ছিলাম। এরকম অশান্ত মন তো আমার কখনোই ছিলো না! জীবনের এই স্মৃতি বয়ে বেড়াতে যে আমি আর পারছিনা। আমাকে মুক্তি দাও রিয়া! তোমার ভাবনা থেকে মুক্তি দাও! শৈশবের ভাবনা থেকে মুক্তি দাও! আপাতত তোমার ভাবনা থেকে মুক্তি দিলেই চলবে। আমার ভাবনার অর্ধেকের বেশীর অংশ জুড়ে আছো তুমি। আর বাকী চিন্তা গুলো কিঞ্চিৎ পরিমানের। ওগুলো থাকলেও কি আর না থাকলেও কি? আমি কি পাগল হতে যাচ্ছি? এরকম একটা জায়গায় বসে মনে মনে কি সব বকবক করছি? পার্কে লোকজনের সমাগম বাড়ছে। দক্ষিন দিকের কোনার বেঞ্চটাতে প্রায় ২ ঘণ্টা ধরে একেবারে নিশ্চুপ মনে ঝিমটি মেরে পড়ে আছি। একাকি মনে আবোল তাবোল বকে যাচ্ছি। আমার ঠিক ডান দিকে সাম্নের বেঞ্চটাতে একজন মোটা মত লোক তাঁর সুন্দর স্ত্রীকে নিয়ে বসে আছে। সামনে তাদের ছোট্ট ছোট্ট কিউট দুটি মেয়ে লাফালাফি করছে। একটু পর পর মেয়ে দুইটির মা ওদেরকে বকাঝকা করছে। “এতো দুষ্টুমি করোনা! এই নিশাত? নিশির ঘাড় থেকে নামো! ওতো পড়ে যাবে!! মহিলার কথা শুনে বুঝা গেলো মেয়ে দুইটির নাম, নিশাত আর নিশি। খুবই সুন্দর নাম রেখেছে। ওরকম ছোট্ট ছোট্ট অ্যাঞ্জেল রিয়ার খুব পছন্দ ছিলো। স্বপ্ন ছিলো কিউট কিউট দুইটা মেয়ে হবে ওর। মানে আমাদের। কিন্ত আমার স্বপ্ন ছিলো ছেলে হবে। এসব নিয়ে প্রায়ই তর্কে জড়িয়ে যেতাম দুজন। রিয়া রেগে গেলে আমি হার মেনে নিয়ে জানাতাম, আচ্ছা বাবা! তোমার কথায় থাকলো। মেয়েই হবে আমাদের। এবার ঠিক আছে? এ কথা শোনার পর রিয়া এক মুখ হাঁসি নিয়ে জবাব দিতো, হ্যাঁ এবার ঠিক আছে। এখন মানলাম। মুহূর্তের মধ্যে ওর চেহারার আর্ট চেঞ্জ হয়ে যেতো। রাগ হলে চেহারাটা আমাবর্ষার রাতের কালো অন্ধকারের ন্যায় কালো হয়ে যেতো। আবার আমার হার মানার পর মুখটা চাঁদের আলোর মতো ধবধবে পরিস্কার হয়ে যেতো। ওর রাগ হওয়া মুখটা আর হাঁসি মুখটা এই দুটোই দেখতে আমার কাছে খুব ভালো লাগতো। তাই মাঝে মাঝে এটা সেটা বলে রাগিয়ে দিতাম ওকে। আবার মনগড়া কিছু বলে মুখের চাঞ্চলতা, প্রান জুড়ানো হাঁসিটা আবার ফিরিয়ে নিয়ে আসতাম। এসব এখন আর ভেবেই বা লাভ কি? মাথার মধ্যে অনেক টেনশন। বাসা থেকে মেয়ে দেখছে বিয়ের জন্য। এই মুহূর্তে বিয়ে করা সম্ভব না! রিয়াকে এখনো মন থেকে মুছে ফেলতে পারিনি। আর কখনো পারবো বলেও মনে হচ্ছেনা। আচ্ছা আজকে কি বার? রবিবার টা রিয়ার খুব পছন্দের দিন ছিলো। জানিনা কেন? আজকে কি রবিবার? আমার এখনো মনে আছে সেদিন রবিবার ছিলো, লাল রঙের একটা টি শার্ট পরে বের হয়েছিলাম দেখে সেকি আপত্তি ছিলো রিয়ার! সারা রাস্তা শুধু বলছিল নীল রঙের ড্রেস কেন পরে আসোনি? কেন, কেন? তুমি জানোনা নীল রঙ আমার সব থেকে বেশী ফেবারিট! ওইদিন কতবার যে সরি বলেছিলাম ঠিক মনে পড়ছেনা। আজকে আমি নীল কালারের ড্রেস পরে বেরিয়েছি। রিয়া দেখলে খুব পছন্দ করতো। আনন্দে না হলেও চার/পাঁচটা কিস দিতো! কথা ছিলো পড়াশুনা শেষ করে রিয়াকে বিয়ে করবো। দুই ফ্যামেলির সম্মতিতে বিয়ে করতে চেয়েছিলাম। এটাও অবশ্য রিয়ার বুদ্ধি ছিলো। আমি বুদ্ধি খাটিয়ে তেমন কিছু করতে পারিনা! ওর আবার আনন্দ উৎসব বেশী প্রিয় ছিলো। এজন্যই অ্যারেঞ্জ ম্যারেজের বুদ্ধি বের করেছিলো। বিয়ে বাড়িতে হইহুল্লোড় হবে, উৎসব হবে। গান-বাজনা হবে। কত মজা হবে। এসব আর ওর কপালে জুটলো কোই? গত ছয় মাস আগে মরন ব্যাধি ক্যান্সার রিয়াকে কেড়ে নিলো আমার কাছ থেকে! চিরদিনের জন্য কেড়ে নিলো। মৃত্যুর আগে রিয়া আমার হাত ধরে বলেছিলো, আমার জন্য তোমার জীবনটা থেমে থাকতে পারেনা আকাশ! তুমি আমার কথা রাখবে বলো? তুমি বিয়ে করবে তো?
আমি বলেছিলাম, না রিয়া তোমাকে ছাড়া আমার বিয়া করা সম্ভব না! তুমি সুস্থ হও তারপর আমাদের বিয়ে হবে। তুমি তো খুব দ্রুত ঠিক হয়ে যাবে!
রিয়াঃ আমি আর কোনদিন ঠিক হবোনা আকাশ! মিছে আশা দিয়ে আর লাভ নেই। আমি সবকিছুই জানি। আমার চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরছিলো আর রিয়া মুছে দিচ্ছিলো। মেয়েটা কতটা শক্ত ছিলো, হাসপাতালের বেডে শুয়েও হাঁসে!
হাঁসতে হাঁসতে বলছিল, কিন্ত শর্ত আছে একটা? যে মেয়েকে বিয়ে করবে তাঁর নাম কিন্ত অবশ্যই রিয়া হতে হবে!
আমি ওর হাত দুটো ধরে অঝরে চোখের পানি ঝরাচ্ছিলাম। আর ও হাসছিলো। ওর হাঁসিটা যে কতটা বেদনাদায়ক ছিলো, সেটা আমি ঠিকই অনুভব করেছিলাম। পায়ের কাছে একটা টেনিস বল টাইপের একটা বল গড়িয়ে এলো। আমি হাত দিয়ে ওঠাতে ওঠাতে মেয়ে দুটি দৌড়িয়ে এলো।
আঙ্কেল! বল টা দিন! ওটা আমাদের বল।
হ্যাঁ, তমাদেরই বল। নাও।
বলটা পেয়ে নিশাত আর নিশি পুতুলের মত নাচতে নাচতে চলে গেলো।

ভাইয়া একটা ফুল নেন না! মাত্র পাঁচ টেহা!

একটা বাচ্চা মেয়ে ফুল নিয়ে এসেছে। কতটুকু বাচ্চা! এই বয়সে অর্থ উপার্জনের জন্য রাস্তায় নেমে গেছে! ওহ গড! কেন এতো অভাব দিলে এদের??

আমি ফুল নেবোনা। তুমি এই বয়সে ফুল বিক্রি করছো কেন? স্কুলে যাওনা?

স্কুলে যায়না! বাজানের অসুদ কেনন লাগে। হেই জন্য আমি আর ভাইয়ে মিলে ফুল বিক্রি করি।

তাঁর কি হয়েছে? তোমার মা কোথায়?

সে দুই বছর ধইরা ঘরে পড়া, এর লাগাই তার অসুদ কেনন লাগে। মা ভিক্ষা করে!

তোমার নাম কি?

আমার নাম রিয়া! বাফ মায়ে নাম দিছিলো “সাবিনা আক্তার রিয়া”

পকেট থেকে পাঁচশো টাকার একটা নোট বেরিয়ে মেয়েটার দিকে বাড়িয়ে দিলাম। এই নাও এটা রাখো। ফুল নিবোনা। ওগুলো নিয়ে যাও।

এই পাঁচশো টেহা আমার!
হ্যাঁ, তোমার।
আপ্নে খুব ভালা ভাইয়া। “আল্লায়” আপনার ভালো করুক।

আমি মনে মনে দোয়া দিলাম “আল্লাহ” তোমাদের যেনো সব সময় ভালো রাখে। গরীবদের অভাব যেনো দূর করে দেন। “রিয়ার” বাবাকে যেনো তিনি সুস্থ করে দেন!

মেয়েটার নাম শুনে আবারো রিয়ার কথা মনে পড়ে গেলো…
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্রেকিং: তেহরানের আকাশ এখন ইসরাইলের নিয়ন্ত্রণে

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৬ ই জুন, ২০২৫ রাত ৮:২৫



মধ্যপ্রচ্যের সিংহ বলে খ্যাত ইরান এর তেহরানের আকাশ এখন ইসরায়েলের হতে, চালছে আক্রমণ আর পাল্টা আক্রমণ, শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ইরানের ছোড়া মিসাইলে এখন পর্যন্ত ইসারায়েলে সর্বমোট ২৪... ...বাকিটুকু পড়ুন

Statement by Humayun Kabir, Secretary General of United for Victims of Enforced Disappearances (UVED), at the Meeting with the Human Rights Working Group on Enforced or Involuntary Disappearances, Office of the High Commissioner of the United Nations,

লিখেছেন জুল ভার্ন, ১৬ ই জুন, ২০২৫ রাত ১০:১৬

Statement by Humayun Kabir, Secretary General of United for Victims of Enforced Disappearances (UVED), at the Meeting with the Human Rights Working Group on Enforced or Involuntary Disappearances,
Office of the... ...বাকিটুকু পড়ুন

নেতানিয়াহু কেন ইরানে হামলার সিদ্ধান্ত নিলেন?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৬ ই জুন, ২০২৫ রাত ১১:০৯


যখন এই লেখা পাবলিসড হবে সে সময় ইরানের তেহরানে মারাত্মক হামলা শুরু করেছে ইসরায়েল। অবস্থাদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে ইসরায়েল অল-আউট এটাকে নেমেছে ইরান কে শেষ করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হযরত আলীকে (রা.) মাওলা বলতে বন্ধু বুঝানো হয়েছে, শিয়া ইরানী বা অন্য শিয়াদের দাবী অনুযায়ী তাঁকে নেতা বা খলিফা বুঝানো হয়নি

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৭ ই জুন, ২০২৫ সকাল ৭:০৯




সূরাঃ ২ বাকারা, ১২৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
১২৪। আর যখন তোমার প্রতিপালক ইব্রাহীমকে কয়েকটি বাক্য (কালিমাত) দ্বারা পরীক্ষা করেছিলেন, পরে সে তা পূর্ণ করেছিল; তিনি বললেন নিশ্চয়ই আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

somewherein blog টিম এর দৃষ্টি আকর্ষন করছি।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই জুন, ২০২৫ দুপুর ২:৫৪


ব্লগ ব্যবহারের শর্তাবলী ২খ. যেকোন ধরণের মন্তব্য, যার মর্মার্থ আমাদের কাছে গঠনমূলক না হয়ে সংঘাতপ্রয়াসী / উস্কানীমূলক অথবা সমালোচনামূলক না হয়ে ব্যক্তিগত আক্রমণ মনে হলে তা নীতিমালা অনুযায়ী সরিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×