somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মৃত্যুর পর কুলখানি

০৪ ঠা এপ্রিল, ২০২০ সকাল ৮:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কারো মৃত্যুর তিন দিনের মধ্যে কুলখানি খাওয়ানোর একটা বর্বর রেওয়াজ এই উপমহাদেশের মুসলিমদের মধ্যে প্রচলিত আছে। এর পেছনে হাদিস-কোরানসিদ্ধ কোনো ভিত্তি আছে বলে খোঁজ পাইনি।

একজন ব্যক্তির মৃত্যু তার স্বজনদের জন্য অপূরণীয় এক ক্ষতি। পিতৃবিয়োগ বা মাতৃবিয়োগ-পরবর্তী অব্যবহিত কয়েকটি দিন সন্তানের কেমন কাটে, কষ্টের কারবালা কীভাবে আপাদমস্তক রক্তাক্ত করে, এ কেবল তারাই জানেন, যাদের বাবা অথবা মা মারা গিয়েছেন।

এমন ট্রাজেডির পর সন্তানের ফোলা চোখ স্বাভাবিক হতেই যেখানে দেড়-দুই সপ্তাহ কেটে যায়, ক্ষুধামন্দা সারতেই যেখানে অন্তত একমাস লেগে যায়, অনির্দিষ্ট কালজুড়ে যেখানে চোখজুড়ে সেঁটে থাকে কাঁচা কবরের ছবি; সেখানে মৃত্যুর বাহাত্তর ঘণ্টার মধ্যেই হাজার-হাজার লোক ডেকে খাওয়ানো, খাওয়ানোর যাবতীয় বন্দোবস্ত করা— এ যেন মৃতের সন্তানদের ওপর সামাজিক নির্যাতনের অসামাজিক স্টিম রোলার। সদ্য পিতা হারানো একজন পুত্রকে পিতৃবিয়োগের পরদিনই হাটে পাঠিয়ে গরু-ছাগল, চাল-ডাল-মাল কিনতে পাঠানোর মতো নির্মমতা প্রদর্শন বোধহয় কেবল এই উপমহাদেশের মুসলিমদের পক্ষেই সম্ভব।

কুলখানিতে কাকে কাকে নিমন্ত্রণ করা হবে, কী কী খাওয়ানো হবে, ডালে লবণ কতটা দেওয়া হবে, কাকে কই বসানো হবে, সদ্য-পিতৃহারা সন্তানটিকে ইত্যাকার সবকিছু সামলেও শেষতক শুনতে হয় সেই চিরাচরিত বাক্য— গোশতের টুকরোগুলো একটু ছোট হয়েছে, ডালটাও আরেকটু ঘন হলে খেতে ভালো লাগত, ফিরনিতে চিনি বেশি হয়ে গেছে। গ্রাম-গঞ্জের বিবেকবর্জিত লোকজনের একাংশ এভাবেই কুলখানির খাবারেও ত্রুটি খুঁজে বের করবেই।

প্রয়াত ব্যক্তিটি অসুস্থ থাকাকালে কারো দেখা পাওয়া না গেলেও, চিকিৎসায় কারো সহযোগিতা না পাওয়া গেলেও কুলখানিতে নিমন্ত্রণ না পেলে ‘অতি দূর গোত্রের স্বজনরা গোস্বা করে থাকেন এবং এই গোস্বাতাণ্ডবের যাবতীয় চাপ এসে পিষে দিয়ে যায় সদ্য এতিম হওয়া সন্তানদেরকে। এমন না যে, কেউ ভাতের অভাবে কুলখানি খেতে আসেন; কিন্তু কুলখানিতে নিমন্ত্রণ পাওয়া না-পাওয়া নিয়ে সৃষ্ট বিবাদের রেষ বয়ে বেড়াতে হয় বছরের পর বছর।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০২০ সকাল ৮:১৭
৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×