somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ক্ষমতায় থাকার ১২ কৌশল - তুহিন মালিক , ব্লগারদের মতামত চাই ?

২৭ শে জুলাই, ২০১৩ রাত ৮:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ওয়ান-ইলেভেনের আগে দেশের যা পরিস্থিতি বিদ্যমান ছিল বর্তমানের অবস্থা তার চেয়ে অনেক বেশি খারাপ। গতবার তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান নিয়ে একগুঁয়েমির কারণে সংঘাত হয়েছিল। অথচ এবার পুরো তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাই বাতিল করা হলো। গতবার নির্বাচনে কারচুপি হবে এমন অভিযোগে আওয়ামী লীগ আন্দোলন করলে দেশে জরুরি অবস্থা চলে আসে। অথচ এবার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের কোনো নিশ্চয়তা না পেলে বিএনপিও আগামী নির্বাচন বয়কট করবে নিঃসন্দেহে। তা ছাড়া দলের শীর্ষ নেতাদের ফাঁসির দণ্ড মাথায় নিয়ে জামায়াত কোনো নির্বাচনে যাবে কিনা তাতে সন্দেহ রয়েছে। ঈদের পর জাতীয় রাজনীতিতে এসব ঘটনায় অচলাবস্থা সৃষ্টিকারী বিক্ষোভ-আন্দোলনের পরিমাণ বাড়বে মাত্রাতিরিক্ত। এই অচলাবস্থা রাজপথের সংঘাতকে বাড়িয়ে দেবে আরও বহুগুণে।

আসলে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতিটি শুধু বাতিলই করা হয়নি বরং দলীয় সরকারের অধীনে দলীয় মন্ত্রী, এমপি, ডিসিদের তত্ত্বাবধানে নির্বাচন করিয়ে নবনির্বাচিতদের বর্তমান সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করার বিধান রাখা হয়েছে।

সংবিধানের ৫৭(৩) অনুচ্ছেদ মতে প্রধানমন্ত্রীর উত্তরাধিকারী কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই বহাল থাকবেন। পঞ্চদশ সংশোধনীর পর বর্তমান সংবিধানের ১২৩ (৩) অনুচ্ছেদ মতে, সংসদ ভেঙে যাওয়ার পূর্ববর্তী নব্বই দিনের মধ্যে সংসদ নির্বাচন হবে এবং বর্তমান সংসদের মেয়াদ শেষ না হওয়া পর্যন্ত নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যরা কার্যভার গ্রহণ করতে পারবেন না। তখন একই সময়ে একই আসনে দুইজন এমপি থাকবেন। সংবিধানের ৫৬(৪) অনুচ্ছেদ মতে সংসদ ভেঙে গেলেও বর্তমান মন্ত্রীরা ক্ষমতায় থাকতে পারবেন। তা ছাড়া অন্য কোনো দল নির্বাচনে জয়ী হলেও প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতা না ছাড়লে করার কিছু থাকবে না, যদি না তিনি স্বেচ্ছায় ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। ডিসিসির মতো একই ফর্মুলায় সীমানা নির্ধারণসহ যে কোনো আইনি জটিলতার অজুহাতে সংসদ নির্বাচনের ওপরও স্থিতাবস্থা আসতে পারে এবং জাতীয় নির্বাচনও বছরের পর বছর ঝুলে থাকতে পারে। গত সোমবার জাতীয় সংসদের একটি আসনের সীমানা পুনঃনির্ধারণ নিয়ে উচ্চ আদালতে একটি রিট মামলায় আদালত থেকে রুল জারি করা হয়েছে। ইতোমধ্যে সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদের বিধানকে সামনে রেখে 'রাষ্ট্রপতি সর্বোচ্চ আদালতের পরামর্শ নিয়ে বর্তমান সংসদকে পুনরুজ্জীবিত' তত্ত্বটি সুরঞ্জিত বাবু জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন। প্রধানমন্ত্রীও বলে রেখেছেন, তত্ত্বাবধায়ক চাইলে নির্বাচনই হবে না।

কী হতে পারে সামনের দিনগুলোতে? সরকারের ক্ষমতায় টিকে থাকার কৌশলগুলোই বা কী হতে পারে? বর্তমান সংশোধিত সংবিধানের সুযোগ নিয়ে মোটা দাগে ১২টি কৌশল সরকার ব্যবহার করতে পারে।

১. সংবিধানের ১২৩(৩) এবং ৫৭(৩) অনুচ্ছেদের সুযোগ নিয়ে পরবর্তী কোনো নির্বাচন না দিয়ে অনির্দিষ্টকাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকা।

২. ডিসিসির নির্বাচনের মতো আদালতের স্থগিতাদেশ নিয়ে কোনো নির্বাচন না দিয়ে সংবিধানের দোহাই দিয়ে ক্ষমতায় থাকা।

৩. সুরঞ্জিত বাবুর 'রাষ্ট্রপতি সর্বোচ্চ আদালতের পরামর্শ নিয়ে বর্তমান সংসদকে পুনরুজ্জীবিত' তত্ত্ব দিয়ে ক্ষমতায় থাকা। যদিও সংবিধানের আওতায় এটা করা প্রায় অসম্ভব।

৪. জাতীয় নির্বাচনের জন্য সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ বিষয়ে আইনি জটিলতা তৈরি করে নির্বাচনী তফসিল স্থগিত করে ক্ষমতায় থাকা (ইতোমধ্যে ৫৩টি আসনে জটিলতা তৈরি হয়েছে এবং উচ্চ আদালতেও রিট করে রুল জারি হয়েছে)।

৫. দেশে সংঘাত সৃষ্টি করে রাষ্ট্রপতির কার্যালয়কে ব্যবহার করে দেশে সংবিধানের ১৪১ক অনুচ্ছেদের ক্ষমতাবলে দেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করিয়ে সংবিধানের মৌলিক অধিকার স্থগিত করে কোনো নির্বাচন না দিয়ে ক্ষমতায় থাকা।

৬. নির্বাচন তফসিল ঘোষণা করে পরিকল্পিতভাবে দেশব্যাপী আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটিয়ে নির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করে কোনো নির্বাচন না দিয়ে সংশোধিত সংবিধানের সুযোগ নিয়ে ক্ষমতায় থাকা।

৭. পরিকল্পিতভাবে দেশব্যাপী আইন-শৃঙ্খলার মারাত্দক অবনতি ঘটিয়ে তৃতীয় কোনো শক্তির কাছে নিরাপদ প্রস্থানের শর্তে ক্ষমতা অর্পণ করে নিজেদের রক্ষা করা।

৮. বাছাই করা কিছু রাজনীতিবিদকে বিরোধী দল হিসেবে শ'খানেক আসন দিয়ে বিএনপিবিহীন নির্বাচন করে ক্ষমতায় থাকা (তবে এটা বর্তমান বাস্তবতায় বেশ দুরূহ কাজ)।

৯. বর্তমান সাংবিধানিক আইনের আওতায় ক্ষমতায় থেকেই বিএনপিকে বাদ দিয়ে একতরফা নির্বাচনের চেষ্টা (সরকারের কাছে এটাই বোধহয় সবচেয়ে লোভনীয় কৌশল)।

১০. বর্তমান সাংবিধানিক আইনের আওতায় ক্ষমতায় থেকে বিএনপিসহ সব দলকে সঙ্গে নিয়েই নির্বাচনের প্রয়াস এবং একটি সাজানো নির্বাচনে ফলাফল ঘোষণায় জয়ী হয়ে ক্ষমতায় বহাল থাকার চেষ্টা।

১১. সরকার ও বিরোধী দল থেকে সমানসংখ্যক প্রতিনিধি নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন একটি সরকার গঠন করে সরকারপ্রধান হিসেবে নিজেদের লোকদের বসিয়ে পছন্দমতো সাজানো নির্বাচন করে ক্ষমতায় ফিরে আসা।

১২. গণআন্দোলনের মুখে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহাল হলেও নিজেদের পছন্দমতো উপদেষ্টাদের দিয়ে নির্বাচন করিয়ে 'পোলিং ক্যু' ঘটিয়ে পুনরায় ক্ষমতায় থাকার চেষ্টা করা (তবে এতে টিকে থাকা কঠিন হবে)।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে জুলাই, ২০১৩ রাত ৮:১৭
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইসলামে পর্দা মানে মার্জিত ও নম্রতা: ভুল বোঝাবুঝি ও বিতর্ক

লিখেছেন মি. বিকেল, ১৯ শে মে, ২০২৪ রাত ১:১৩



বোরকা পরা বা পর্দা প্রথা শুধুমাত্র ইসলামে আছে এবং এদেরকে একঘরে করে দেওয়া উচিত বিবেচনা করা যাবে না। কারণ পর্দা বা হিজাব, নেকাব ও বোরকা পরার প্রথা শুধুমাত্র ইসলাম ধর্মে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×