somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কি করছেন হাসিনা ....?

১৫ ই নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নভেম্বরে রাজনীতি উত্তপ্ত হয়ে উঠবে এটা প্রত্যাশিত ছিল। বিশেষত ২৭ অক্টোবর ২০১৩ থেকে ২৪ জানুয়ারি ২০১৪ মেয়াদের মধ্যেই নির্বাচন বিষয়ে সুরাহা করতে হবে শেখ হাসিনাকে। কেমনতর সে সুরাহা, প্রশ্ন ও উদ্বেগ ছিল সেটাই। গত অর্ধদশকে শেখ হাসিনা যা বলেছেন, তা থেকে এক চুল সরেননি। তার দৃষ্টি, লক্ষ্যভেদী। যে সুনিশ্চিত লক্ষ্য স্থির তিনি করেছেন, সেখান থেকে দেশ বিদেশের কেউ, দলের বা দলের বাইরের কেউ তাকে লক্ষ্যচ্যুত করতে সক্ষম হয়নি। মাঝেমধ্যে দমকা হাওয়া এসেছে, ধূলিঝড়ে সাময়িক চোখান্ধ অস্থিরতা বিভ্রান্ত করেছে, কিন্তু শেখ হাসিনার নেয়া চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের হেরফের হয়নি। এই লক্ষ্য স্থির, অবিচল, গতিময় পথচলায় শাসক হিসেবে, দলনেত্রী হিসেবে তার কথাই চূড়ান্ত ফল হিসেবে দেখা গেছে। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী তার সবচেয়ে বড় উদাহরণ।
দেশের জ্যেষ্ঠ আইনজীবীদের পরামর্শ, সম্পাদকদের সুপারিশ, বরেণ্য নাগরিকদের উপদেশ, আদালতের বিশেষ বিবেচনা, দলীয় এমপিদের সুবচন কিছুই টেকেনি তার নিজস্ব সিদ্ধান্তের কাছে। তিনি যেভাবে চেয়েছেন, সেভাবেই ঘটেছে সব। বিরোধীদলীয় নেত্রীকে বাড়ি থেকে উচ্ছেদ, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এবং বিচারের রায় কার্যকর, বিডিআর বিদ্রোহের বিচার, রেন্টাল-কুইক রেন্টালে চড়া মূল্যের বিদ্যুৎ উৎপাদন, বিদ্যুতের দায়মুক্তির আইন, বিডিআর বাহিনী পাল্টিয়ে বিজিবি বাহিনী গঠন, ড. ইউনূসের গ্রামীণ ব্যাংক বিষয়ক নতুন আইন প্রণয়ন, হেফাজত ঠেকাতে শাপলা চত্বর অভিযানÑ সর্বক্ষেত্রেই শেখ হাসিনা যা চেয়েছেন ঘটেছে তাই।
দমবন্ধ করা শ্বাসরুদ্ধকর উত্তেজনাময় রাজনৈতিক ঘটনার উত্তাপকে পার করে সর্বদলীয় সরকারের অধীনে তার নেতৃত্বেই সকলকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করাতে সবরকম কৌশল চাপিয়ে লক্ষ্যভেদী শেখ হাসিনা এগিয়ে চলেছেন আত্মবিশ্বাসে ভর করে। সর্বদলীয় সরকার হবে, তিনিই তার প্রধান হবেন, সে বাজনা সচল রেখে সরকারি সুবিধাতে নির্বাচনী প্রচারণা অক্ষুণœ রেখে ভবিষ্যতের ক্ষমতা দখল এখন তার সুনিশ্চিত লক্ষ্য। সে কারণেই বিরোধী দলের টানা হরতাল ঠেকাতে আচানক পুলিশি হানা দিয়ে রাজনীতির নতুন মোড়ের উত্তাপ ছড়িয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার পারদ চড়িয়ে এগিয়ে চলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই লক্ষ্যভেদ কতটুকু টেকসই হবে, তা দেখাই এখন বাকি। জনগণ কিভাবে নেবে শেখ হাসিনার লক্ষ্যভেদী রাজনীতির নয়াচাল। সেটা নির্ভর করছে লক্ষ্যভেদী ক্রিয়ার প্রতিক্রিয়া কিভাবে আসে, শেখ হাসিনা সেই প্রতিক্রিয়া কিভাবে মোকাবেলা করেন তার ওপর।

২.
দুই নেত্রীর সমঝোতা হোক এটা যারা চান না তারা আপাতত সাফল্য পেয়েছেন।বেগম জিয়ার আন্দোলন প্রবণতা এবং শেখ হাসিনার পুলিশ নির্ভরতার রাজনীতি জয়ী হয়েছে। সরকার যে কঠোর প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিচ্ছে, তাতে হরতাল কমবে না। সংলাপও হবে না। সহিংসতা নতুন চেহারায় বেড়ে উঠবে। সরকারবিরোধী সকল শক্তি ঐক্যবদ্ধ হওয়ার একটা ন্যূনতম যৌক্তিক ভিত্তি পাবে। অন্যদিকে, বিদেশি যারা বাংলাদেশের রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করতে চায়, তাদের জন্য এরকম সহিংস এবং রাজনৈতিক অচলাবস্থার পরিবেশ খুব জরুরি। এরকম অচলাবস্থা হলেই তাদের কর্মকৌশল কার্যকর সহজ। এখন বিবেচনা করা যাক বাস্তবে কী ঘটতে পারে-
এক. শেখ হাসিনা ধরপাকড়, গ্রেপ্তার অব্যাহত রাখতে পারেন। বিএনপি-জামায়াতকে নির্বাচনের বাইরে রেখে একটি নির্বাচন করে ফেলতে পারেন।
দুই. শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নির্বাচনকালীন এই সরকার নতুন করে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস নিধনে আরও কট্টর হয়ে উঠতে পারে।
তিন. যেসব লক্ষ্য আওয়ামী লীগ ঠিক করেছে, বিশেষত যুদ্ধাপরাধীদের সাজা দেয়া, মাদ্রাসা শিক্ষাকে নিয়ন্ত্রণ করা, রাজনীতিতে প্রতিপক্ষকে শক্তি দিয়ে দুর্বল করাÑ সেসব কাজের সঙ্গে উন্নয়ন কর্মসূচির ধারাবাহিকতা এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা অব্যাহত থাকতে পারে।
চার. তাত্ত্বিকভাবে শেখ হাসিনা জানেন রাজনীতিতে তার মূল প্রতিপক্ষ বিএনপি, বেগম জিয়া এবং তার পরিবার। এই প্রতিপক্ষকে খেলার মাঠে দুর্বল করতে বা বড় ধরনের বিপত্তিতে ফেলতে যে যে কাজ করা দরকার, তা অব্যাহত রাখতে পারেন।

৩.
ভারতপ্রীতি, ভারতনীতি
গত সপ্তাহজুড়ে ভারতীয় কিছু সংবাদমাধ্যমের বরাতে বাংলাদেশের মিডিয়ায় জোরেশোরে প্রচারিত হচ্ছে, ভারতীয় নিরাপত্তার বিবেচনায় ভারত শেখ হাসিনাকেই তাদের গ্রহণযোগ্য মিত্র মনে করে। বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় এলে ভারতের বিরুদ্ধে সংগ্রামরত যে কোনো স্বাধীনতাকামী, বিচ্ছিন্নতাবাদী অথবা মৌলবাদী জঙ্গি তৎপরতা বাংলাদেশের মাটিতে আশ্রয় পায়। শেখ হাসিনা ভারতবিরোধী যে কোনো তৎপরতাকে বাংলাদেশের মাটি থেকে উৎখাতে তৎপর। এজন্য ভারত, খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকেও চাপে রেখেছে শেখ হাসিনা প্রীতির ভারতনীতিতে সমর্থন জোগাতে। বোঝা যায় এই প্রচারণা সরকারকে এবং ভারতবান্ধব বাংলাদেশি মিডিয়াকে শক্তি যুগিয়েছে ও অনুপ্রাণিত করেছে।
কিন্তু এর একটা উল্টো দিকও আছে। বাংলাদেশের জনগণ কাকে ক্ষমতায় আনবে, সেক্ষেত্রে ভারতীয় পছন্দ বা তৎপরতার মূল্য যত বাড়ছে বলে প্রচারণা চলছে, সেটা দেশের মধ্যে ভারতবিরোধী পুরনো মনোভাবকে নতুন মোড়কে চাঙ্গা করতে পারে। আবার, এটি আমেরিকান কূটনীতির নয়াকৌশলও হতে পারে। ভারতের ঘাড়ে বন্দুক রেখে, বাংলাদেশের একটা বড় জনগোষ্ঠীর কাছে ভারতকে আধিপত্যবাদী, আগ্রাসী শক্তি হিসেবে উপস্থাপন করে আমেরিকা এ অঞ্চলে তার আধিপত্যকে জনপ্রিয় করে তুলতে চাইছে। ভারতের কিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠান যারা নানাভাবে সে দেশের প্রতিরক্ষা, নিরাপত্তা, সন্ত্রাসবাদ নিয়ে গবেষণা করেন, তাদের একটা অংশের বিবেচনায় শেখ হাসিনার ভারতপ্রীতি প্রশংসা পেয়েছে। এটাকে তারা উৎসাহিত করতে আগ্রহী। কিন্তু এ কৌশল দীর্ঘমেয়াদে কতটা টেকসই সে বিষয়ে ভারতীয় সরকারি পর্যায়ের কূটনীতি এবং রণনীতি বিশেষজ্ঞ মতামত সুস্পষ্ট নয়।
১৯৭১ সালে প্রবাসে অবস্থানকালীন বাংলাদেশের রাজনৈতিক সরকারকে ভারত আশ্রয় দেয়, সহায়তা দেয়। আবার তারই মধ্যে যুদ্ধকালীন প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের বিরুদ্ধবাদী মুজিববাহিনীকে গড়ে তোলে কাউন্টার ফোর্স হিসেবে। এই মুজিববাহিনীর তুর্কিরাই ১৯৭২ পরবর্তীকালে বঙ্গবন্ধুর সরকারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তোলে। নতুন অর্থে, অস্ত্রে, লোকবলে জাসদ বিকশিত হয়। জাসদের প্রতিক্রিয়াশীল বিপ্লব ঠেকাতে বঙ্গবন্ধু বাকশাল তৈরি করে গণতান্ত্রিক শাসন থেকে একদলীয় শাসনের পথে পা বাড়ান।
১৯৭২-১৯৭৪ সালের বাংলাদেশের রাজনীতির এই বাঁকবদলে ভারতের কংগ্রেস সরকার, ভারতের বেসামরিক আমলাতন্ত্র, ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থাসহ সমরনীতির রণকৌশল যারা লক্ষ্য করেছেন, তারা দেখেছেন ক্রমশ কিভাবে জনপ্রিয় আওয়ামী সরকারকে অজনপ্রিয় করে তোলা হয়েছে। এবং একই সঙ্গে ১৯৭১ সালের বন্ধু ভারত দ্রুতই বাংলাদেশে অজনপ্রিয় হয়ে উঠতে থাকে।
রাজনীতি ও রণনীতির এই রসায়ন মাথায় রেখে বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় নিলে কিছু বিষয় খুব পরিষ্কারÑ
এক. শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশের মানুষের ওপর নির্ভরশীল নেতা হিসেবে দেখানোর চাইতে ভারতের আজ্ঞাবহ, ভারতের স্বার্থ সুরক্ষা করতে তৎপর একজন নেতা হিসেবে চিত্রায়ণের চেষ্টা চলছে।
দুই. মধ্যপন্থি আওয়ামী লীগকে কট্টরপন্থি জাসদের ভাবনা বলয়ের অবয়বে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। আওয়ামী লীগের মুখ দিয়ে জাসদ ঘরানার বক্তব্য দিয়ে একটা চরমপন্থি, প্রতিক্রিয়ামুখীন, অনমনীয়, অনড় আওয়ামী লীগ বানানোর চেষ্টা চলছে।
তিন. ধর্ম ও বাংলাদেশি সমাজ সম্পর্কে আওয়ামী লীগ যে সহনশীলতা এবং আত্তীকরণের মধ্যে বেড়ে উঠেছে, সেই যাত্রাপথকে উল্টোদিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ অর্থনৈতিক বিবেচনায় বুর্জোয়া ডানপন্থি হিসেবে থাকলেও রাজনৈতিক বিবেচনায় চরমপন্থি কট্টর চেহারা নিচ্ছে।
এই তিন প্রবণতাই আওয়ামী রাজনীতির ভবিষ্যৎকে বিপদাপন্ন করছে। শুধু তাই নয়, গণতান্ত্রিক রাজনীতির মধ্যে বেড়ে ওঠা আওয়ামী লীগের ক্রমশ অসহিষ্ণু চেহারা তার প্রতিপক্ষ সকল প্রতিক্রিয়াশীল শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করতে সহায়তা করছে। ফলে, ভোটের মাঠে আওয়ামী লীগ তার নিজস্ব গণ্ডির বাইরে সংখ্যাধিক্যে দুর্বল হয়ে পড়ছে। জনগণের ভোটের ভীতি তাকে আচ্ছন্ন করছে। সব দলের অধীনে, নিরপেক্ষ সরকারের আওতায় নির্বাচন হলে তার ভরাডুবি ঘটবে এই দুর্ভাবনা তাকে কট্টরপন্থার দিকে ঠেলছে। জাসদ এবং ওয়ার্কার্স পার্টির মতো জনসমর্থনহীন কট্টরপন্থি মিত্ররা আওয়ামী লীগকে প্রান্তিক পথে ঠেলে নিজেদের ব্যক্তিগত প্রাধান্য বজায় রাখতে সফল হচ্ছে। দলের মধ্যে আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান ও রাজনীতিবোঝা নেতারা এই বিপদ বুঝলেও শক্তি নিয়ে তা মোকাবেলা করতে অক্ষম হচ্ছেন। ভারত আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় রাখবে, এই প্রচারণা তাই বুমেরাং হয়ে উঠবার সম্ভাবনাই বেশি।

৪.
ইতোমধ্যে বাংলাদেশের অর্থনীতির একটা নয়া চেহারা তৈরি হয়েছে। রাজনীতির বাইরেও একটা ক্ষমতাবান অর্থনৈতিক সমাজ তৈরি হয়েছে। দেশের পুরো অর্থনীতি অভ্যন্তরীণভাবে সরবরাহ ব্যবস্থার ওপর দাঁড়িয়ে আছে। গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলের দোকানি এখন আর তার মালামাল কিনতে শহরে আসে না। প্রান্তিক পর্যায়ে মালামাল পৌঁছে দেয় উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। ঔষধ শিল্প, নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্য শিল্প তার বড় উদাহরণ। আবার, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে আমদানি-রপ্তানিযোগ্য পণ্য সড়কপথেই ঢাকাসহ অন্য সব জেলাতে যাওয়া আসা করে। হরতাল সেই সরবরাহ ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণরূপে ভেঙে দেয়। বর্তমানে চলমান ৮৪ ঘণ্টার হরতাল যদি পরবর্তী সপ্তাহে আবার একই চেহারা পায়, তবে আমাদের অর্থনীতির পক্ষে তা সামলে নেয়া কঠিন। আন্দোলনরত বিরোধী দল সেই সুযোগকেই কাজে লাগাবে। আগামী দুই বা তিন সপ্তাহ দেশ টানা হরতালের মধ্যে থাকলে, অর্থনীতির এই চাপ সামলানো নির্বাচনকালীন সরকারের জন্য অসম্ভব হয়ে উঠতে পারে। জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত এই অচলাবস্থা অব্যাহত থাকলে, অর্থনীতি রাজনীতির ওপর নতুন ধরনের চাপ তৈরি করবে। যেসব প্রতিষ্ঠানের অর্থের ওপর এখানকার রাজনৈতিক অর্থায়ন নির্ভর করে তারাই অচলাবস্থা কাটানোর জন্য মরিয়া হয়ে উঠবে। তখন নিজ নিজ লক্ষ্য অর্জনের জন্য সম্ভাব্য যেসব ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারেÑ
এক. বিরোধী দলের চোরাগোপ্তা হামলা যাতে বাড়ে, দেশের ভেতর পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থা যাতে সম্পূর্ণ অচল হয়ে পড়ে, সে বিষয়ে অর্থায়ন বাড়বে। দেশজুড়ে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ার আর্থিক ও সাংগঠনিক সহায়তা বাড়তে পারে। যাতে করে দ্রুতই সরকার অচল হয়ে পড়ে।
দুই. সরকারকে আরও কট্টর হওয়ার জন্য চাপ আসতে পারে। এই অচলাবস্থা কাটাতে ব্যাপক হত্যা সংঘটিত হতে পারে।
তিন. বিরোধী দলের অস্তিত্বের প্রশ্নে নিজস্ব বিবাদ ভুলে, তারা আরও সহিংসতা ছড়িয়ে দিতে পারে।
চার. জরুরি অবস্থা জারি হতে পারে। সামরিক বাহিনী যাতে দেশকে রক্ষা করতে এগিয়ে আসে সেরকম অভ্যন্তরীণ চাপ দেখা দিতে পারে।
পাঁচ. মার্কিন কূটনীতি জাতিসংঘকে সামনে রেখে এখানে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি জোরদার করতে পারে।

৫.
গণতন্ত্রের ভাষা ও রাজনীতির ইনোভেশন
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অভিযোগ করেছেন, ‘বিএনপি গণতন্ত্রের ভাষা বোঝে না’। যেদিন সিলেটের বড়লেখা জনসভায় তিনি এ কথা বলছেন, সেদিন বিএনপি নেতাদের ধরপাকড়ের জন্য ক্র্যাকডাউন চলছে। শেখ হাসিনার এই নতুন গণতন্ত্রের ভাষা, কতটা লক্ষ্যভেদ করতে পারবে সেটা একটা বড় প্রশ্ন। কেননা, জাসদ বা ওয়ার্কার্স পার্টির চিন্তাপ্রক্রিয়া যদি আওয়ামী লীগ আত্তীকরণ করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চায়, সে ক্ষেত্রে সেই লক্ষ্যভেদী গণতন্ত্র কতটা টেকসই হবে সেটা একটা বড় প্রশ্ন। অতীতে নির্বাচন প্রশ্নে দলীয় সরকার ফেল করেছে বলেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উদ্ভব ঘটেছে। এটাকে এখন গণতন্ত্রবিনাশী বললেও, তখন সেটাই ছিল গণতন্ত্রের জন্য নতুন ইনোভেশন। আজ নির্বাচন নিয়ে যে সঙ্কট দেখা দিচ্ছে, পলিটিক্যাল ইসলাম নিয়ে যে রাজনৈতিক মতপার্থক্য তৈরি হচ্ছে, জঙ্গিবাদ প্রশ্নে বড় রাজনৈতিক দলগুলো যে অবস্থান নিচ্ছে, তা থেকে বেরুতে গেলেও দরকার রাজনীতিতে নতুন ইনোভেশন। এক্ষেত্রে জিয়াউর রহমান কিংবা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ঘরানার পুলিশ-গোয়েন্দা বাহিনীনির্ভর পুরনো রাজনীতির চর্চা খুব সুফল দেবে বলে মনে হয় না। সেটা শেখ হাসিনার লক্ষ্যভেদী রাজনীতির লক্ষ্যকে টেকসই করবে মনে হয় না।
দুনিয়া অনেক এগিয়েছে। তথ্য যোগাযোগ মাধ্যমের যে উন্নতি ঘটেছে, তাতে চাপ দিয়ে, বল প্রয়োগ করে গণতন্ত্র টেকসই হবে না। বরং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের নামে উল্টো ধর্মীয় জঙ্গিবাদের বিস্তার ঘটতে পারে। আফগানিস্তান, পাকিস্তান, সোমালিয়া, মালে তার উদাহরণ। আবার অন্যদিকে প্রতিক্রিয়াশীল সশস্ত্র কর্মপন্থার উদ্ভব সহিংসতার ফাঁক গলে জায়গা নিলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। ভারতে মাওবাদ এবং হিন্দুত্ববাদী ধর্মীয় মৌলবাদের উত্থান তার প্রমাণ।
সে কারণে লক্ষ্যভেদী হাসিনা গণতন্ত্রের, উন্নয়নের যে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে এগুতে চাইছেন, তা জনমানুষকে বুঝাতে হবে। চাপিয়ে দেয়া, মিডিয়ায় প্রচারণানির্ভর উন্নয়ন মানুষকে সন্তুষ্ট করে না। প্রকৃত গণতান্ত্রিক সমাজ বিনির্মাণে শেখ হাসিনা যদি স্বাভাবিক রাজনীতির পথ ছেড়ে বলপ্রয়োগের নীতিতে অটল থাকেন, ভারতের সামরিক-বেসামরিক শক্তিকে জনশক্তি ভাবেন, তাহলে খুব ভুল হবে। তার ফলে কষ্টার্জিত তার অর্জন, সাফল্য বিফলে যাবে। শেখ হাসিনার জন্য চ্যালেঞ্জ সেখানেই। তিনি যত অনড়, অনমনীয়, শক্তির দিকে ঝুঁকবেন বাংলাদেশ তত রক্তাক্ত, সহিংস, জঙ্গিনির্ভর প্রতিক্রিয়ার শিকার হবে। কেননা সহিংসতার রাজনীতি ইতোমধ্যে ব্যাপক হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটিয়েছে। গত পাঁচ বছরে বহু মানুষ মারা গেছে।

রাজনীতিতে গত অর্ধদশক ধরে এ হত্যাকাণ্ডের একটি ধীর অথচ দীর্ঘমেয়াদি সামাজিক প্রতিক্রিয়া আছে। সমাজে রাজনৈতিক সহিংসতায় যখন মানুষ মরতে থাকে নির্বিচারে, প্রতিকারহীনভাবে, তখন সমাজের মধ্যে এক ধরনের হতাশা তৈরি হয়। তা তীব্র বোধশূন্যতা সৃষ্টি করে। এই বোধশূন্যতা সমাজকে দু’ভাবে আক্রান্ত করে। এক. সমাজে মিলিটারাইজেশন বাড়ে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পেছনে খরচ বাড়ে। সমরাস্ত্র কিনতে উৎসাহিত হয় রাষ্ট্র। দুই. রাষ্ট্রিক প্রতিকারহীনতার ভেতরে এক ধরনের নিজস্ব প্রতিরোধ আকাক্সক্ষা তৈরি হয়। অবিচার সমাজের কোনো কোনো অংশকে বিচার নিজের হাতে তুলে নিতে বাধ্য করে। ধর্ম কিংবা চরমপন্থি রাজনীতি এর সুযোগ নেয়। কথিত ধর্মীয় জঙ্গিবাদ কিংবা বামপন্থি সশস্ত্র প্রতিরোধের প্রান্তিক ব্যবস্থা সচল হয়। ভারত, নেপাল, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কার রাজনীতি ও সমাজের দিকে তাকালে এর সত্যতা মেলে।
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইসলামে পর্দা মানে মার্জিত ও নম্রতা: ভুল বোঝাবুঝি ও বিতর্ক

লিখেছেন মি. বিকেল, ১৯ শে মে, ২০২৪ রাত ১:১৩



বোরকা পরা বা পর্দা প্রথা শুধুমাত্র ইসলামে আছে এবং এদেরকে একঘরে করে দেওয়া উচিত বিবেচনা করা যাবে না। কারণ পর্দা বা হিজাব, নেকাব ও বোরকা পরার প্রথা শুধুমাত্র ইসলাম ধর্মে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×