somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দেশে কি হচ্ছে ?

১৭ ই নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দেশে কী হচ্ছে, যাচ্ছি কোথায়? এ প্রশ্ন এখন সর্বত্র। পরিচিত কারো সঙ্গে দেখা হলেই জানতে চান ভাই কি হচ্ছে? ঢাকার খবর কি? নির্বাচন কি হবে? গণতন্ত্রের স্বার্থে শেখ হাসিনা কি ৩ মাসের জন্য প্রধানমন্ত্রিত্ব ছাড়বেন? কেউ কাউকে ফোন করলেই কুশল বিনিময়ের আগে বা পরে এসব জানতে চান। কিন্তু উত্তর কেউ দিতে পারেন না। কেউ জানেন না দেশ কোন দিকে যাচ্ছে। উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় থাকা দেশের মানুষই শুধু নয়; বিদেশিরাও বাংলাদেশ নিয়ে উদ্বিগ্ন। প্রায় দেড় লাখ বর্গকিলোমিটার আয়তনের বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব এখন টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া আর রূপসা থেকে পাথুরিয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। প্রভাবশালী দেশ ও উন্নয়ন সহযোগী আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোও উদ্বিগ্ন বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে। আমেরিকান কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের পররাষ্ট্র সম্পর্কিত সাব কমিটিতে বাংলাদেশের চলমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতির ওপর ২০ নভেম্বর শুনানি হবে। দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়াল তিনদিনের সফরে এখন ঢাকায়। তিনি চলমান সংকট সমাধানে দুই শীর্ষ নেত্রীসহ বিভিন্ন ব্যক্তিদের সঙ্গে বৈঠক করবেন (যদিও এ রিপোর্ট লেখার সময় পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী সময় দেননি)। গতকালও ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার পঙ্কজ শরণ জানিয়েছেন দিল্লীতে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে আমেরিকা ও ভারতের মধ্যে আলোচনা অব্যাহত আছে। কদিন আগে আমেরিকার ঢাকায় কর্মরত রাষ্ট্রদূত ডেন ডাব্লিউ মজিনা দিল্লী ছুটে গিয়ে বাংলাদেশে সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন প্রশ্নে ভারতকে নমনীয় করার চেষ্টা করেন। তাহলে কি বাংলাদেশের সংকট সমাধানের চাবি দিল্লীর হাতে?
জনমত উপেক্ষা করে সংবিধানের দোহাই দিয়ে সরকার পাতানো নির্বাচনের পথে হাটতে শুরু করেছে। মেরুদ-হীন নির্বাচন কমিশনাররা যেন ‘নীল নকশার নির্বাচন’ ঘটানোর জন্য তীর্থের কাকের মতো দাঁড়িয়ে রয়েছে। চমর ক্রন্তিকালে দেশ, উৎকণ্ঠিত ১৬ কোটি মানুষ। নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করার জন্য যারা মহাসমারোহে মনোনয়ন ক্রয় করছেন তারাও হতাশ। এককভাবে নির্বাচন হলে ভোট কেন্দ্র দূরের কথা ভোটারদের কাছে যেতে পারবেন কিনা সেটা তারা জানেন না। এ অবস্থায় সাবেক প্রেসিডেন্ট এইচএম এরশাদ বড় ফ্যাক্টর। তাঁর রাজনৈতিক ইমেজ বলি দিয়ে বিরোধী দলের নেতা বানিয়ে নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য করতে চায় আওয়ামী লীগ। ফ্যাক্টর হেফাজত এবং দাতাদেশ ও সংস্থাগুলোও। তাদের ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে। সেনা-নৌ-বিমান বাহিনীর সাবেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা নির্বাচন নিয়ে দুই দলের বিপরীতমুখী অবস্থানে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন নিশ্চিত করতে দুই দলকে আলোচনার মাধ্যমে সংকট সমাধানের আহ্বান জানিয়েছেন। বিদেশিদের বাংলাদেশ নিয়ে উৎসাহেও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। প্রভাবশালী দেশগুলোর কূটনীতিকরা সংকট সমাধানে দৌড়ঝাঁপ করছেন। ঢাকায় কর্মরত রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনাররা নিজেদের মধ্যে এবং আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাদের সঙ্গে সংকট সমাধানের বিষয়াদি নিয়ে কথাবার্তা বলছেন, উপদেশ দিচ্ছেন। সবাই চাচ্ছেন সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন। কিন্তু সরকার কারো কথাই শুনছে না। কূটনীতিকদের দৌড়ঝাঁপ চললেও বাংলাদেশের সঙ্গে বিদেশি দূতাবাসগুলোর যে সম্পর্ক উন্নয়ন এবং অফিসিয়ালী কর্মকা- কার্যত তা প্রায় বন্ধ। বাংলাদেশের রাজনীতির বিষয়াদি নিয়ে চীন, সউদী আরবের প্রকাশ্য তৎপরতা অতীতে দেখা যায়নি। এখন প্রভাবশালী এই দুই দেশের কূটনীতিকরা বাংলাদেশের চরমান সংকট নিয়ে উদ্বিগ্ন। তারা সংবাদ সম্মেলন করে এবং দুই দলের নেতাদের সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ করে সংকট সমাধানের আহ্বান জানাচ্ছেন। আমেরিকা এবং ভারত তাদের নিজেদের স্বার্থে বাংলাদেশ নিয়ে উদ্বিগ্ন। তারা সংকটের সুরাহা চাচ্ছেন। ভারতের মিডিয়া এবং ইসলাম বিদ্বেষী কিছু কট্টর বুদ্ধিজীবী, আমলা ‘যে কোনো প্রকারে আওয়ামী লীগকে আবার ক্ষমতায় বসানোর’ প্রতি জোড় দিয়ে লেখালেখি আর কথাবার্তা বললেও ভিতরের অবস্থা উল্টো। আওয়ামী লীগপন্থী ভারতীয় বুদ্ধিজীবী-সাংবাদিকরা শেখ হাসিনার সুরের সঙ্গে সুর মিলিয়ে সংবিধান অক্ষুণœ রেখে নির্বাচন করার কথা বলছেন। কিন্তু প্রতিবেশী দেশটির নীতি নির্ধারকরা কোনো একক দল নয়, বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক অটুট রাখার পক্ষে। গতকাল বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার পঙ্কজ শরণ বলেছেন, বাংলাদেশ প্রসঙ্গে আমেরিকা ও ভারতের মধ্যে কোন পর্যায়ে আলোচনা হচ্ছে তা বলা যাচ্ছে না। তবে এ বিষয়ে নিয়মিত আলোচনা চলছে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ শান্তি ও স্থিতিশীলতার প্রয়োজনে এ আলোচনা চালানো হচ্ছে। বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন নিয়ে ভারতের পক্ষ থেকে দেয়া বিবৃতির প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ভারতের প্রেসিডেন্টসহ অনেক মন্ত্রী গত কয়েক বছরে বাংলাদেশে এসেছেন। আমরা বাংলাদেশকে যেভাবে দেখতে চাই তা তারা বিভিন্ন সময়ে ব্যক্ত করেছেন। এই বিবৃতি আমাদের ওই প্রত্যাশারই ধারাবাহিকতা। যদিও বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবী, সুশীল সমাজ, বিদ্যাজীবী, পেশাজীবী, সাংবাদিকদের বড় একটা অংশ মনে করেন জনগণের বদলে ভারতকে খুঁটি হিসেবে ব্যবহার করছে আওয়ামী লীগ। দিল্লীর জোরেই তারা এক দলীয় নির্বাচনে পথে হাঁটছেন। আওয়ামী লীগ পরিচালিত হচ্ছে কার্যত দিল্লীর ইশারায়। এ জন্য জনগণকে বোকা ভেবে সংলাপ নিয়ে তারা ছলচাতুরী করছেন। দিল্লীর সাউথ ব্লক ইশারা দিলেই আওয়ামী লীগ সংকট সমাধানে বিরোধী দলের সঙ্গে সংলাপ শুরু করতে পরে বলে মনে করছেন তারা। সংকট সমাধানে সংলাপের চাবি দিল্লীর হাতে বলেও তারা মন্তব্য করছেন।
মন্ত্রিসভার সদস্যদের পদত্যাগের পর ‘পদত্যাগ’ সংবিধান সম্মত হয়েছে কিনা তা নিয়ে বিতর্ক চলছে। প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে মন্ত্রী-এমপি, আওয়ামী লীগ বিএনপির নেতাকর্মী, সুশীল সমাজ, সংবিধান বিশেষজ্ঞ, বিশিষ্টজন সবাই এ নিয়ে বিতর্ক করছেন। কিন্তু সচিবালয়ের আমলা এবং পুলিশ প্রশাসন পড়ে গেছেন বিপাকে। প্রখ্যাত চিন্তাবিদ ফরহাদ মজহার বলেছেন, রাষ্ট্রের শীর্ষ মহলের নির্দেশনায় পুলিশ প্রশাসনের তা-বে নাগরিক জীবন বিপন্ন। সমাজ বিজ্ঞানী ড. পিয়াস করিম বলেছেন, পুলিশ নির্বিচারে যেভাবে মানুষ হত্যা করছে সেটা পুলিশি সন্ত্রাস নয়, উচ্চ পর্যায় থেকে এই সন্ত্রাসী কর্মকা-ের ট্রেনিং দেয়া হচ্ছে। আর সে অনুযায়ী তারা কাজ করছে। এটা রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস। তাদের এ অভিযোগ অসত্য নয়। মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর প্রশাসনকে দলীয়করণ এবং পুলিশ প্রশাসনে ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতাকর্মীদের ফ্রি স্টাইলে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। যারা এ সময়ে নিয়োগ পেয়েছেন এবং দলীয় পরিচয়ে প্রমোশন পেয়েছেন, সুযোগ-সুবিধা নিয়েছেন সেই দলদাস কর্মকর্তারা মারমুখী হয়ে উঠেছেন। পুলিশ আইনের তোয়াক্কা না করে তারা বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ওপর জুলুম নির্যাতন করছেন। কাউকে ডেকে আনতে বললে তারা ধরে আনছেন; আবার ধরে আনতে বললে বেঁধে আনছেন। প্রশাসনে এ ধরনের দলদাস কর্মকর্তা ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীতে এ ধরনের কর্মকর্তার সংখ্যা শতকরা ১০ এর বেশি নয়। আর যে ৯০ জন কর্মকর্তা কর্মচারী দলনিরপেক্ষ ও ভিন্নমতালম্বী রয়েছেন তারা চরম অস্থিরতায় সময় পার করছেন। মন্ত্রিসভার সদস্যদের পদত্যাগ নিয়ে আদালতে রিট হয়েছে একাধিক। প্রধানমন্ত্রীর কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেয়া মন্ত্রীদের অনেকেই নিয়মিত সচিবালয়ে আসছেন। তারা আদেশ নির্দেশ দিচ্ছেন। তাদের আদেশ নির্দেশ পালন করা হলে এবং বিদায়ী মন্ত্রীদের কথায় ফাইলে সই করে বিপদে পড়ার আশঙ্কায় তারা গা বাঁচিয়ে চলার চেষ্টা করছেন। অনেকেই অফিসে এলেও নিয়মিত কাজকর্ম থেকে বিরত থাকছেন। কারণ তাদের ধারণা মহাজোট সরকারের বিদায় এবং নির্বাচনের মাধ্যমে ১৮ দলীয় জোট ক্ষমতায় এলে তাদের পরিণতি কি হতে পারে। অতীতে সরকারের পালাবদলের অভিজ্ঞতা থেকেই তারা কৌশলী হয়ে গেছেন। জেলা উপজেলা পর্যায় তথা মাঠ প্রশাসনেও একই অবস্থা।
সংবিধানের দোহাই দিয়ে বিএনপিকে বাইরে রেখে পাতানো নির্বাচন করে (কার্যত নির্বাচন ঘটিয়ে) ক্ষমতায় আসার ছক অনেক আগেই এঁকেছে আওয়ামী লীগ। আর সেই ছক অনুযায়ী অগ্রসর হচ্ছে কাজী রকিব উদ্দিন আহমনের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন। এ কমিশনকে কার্যত ‘আওয়ামী রোবট’ বানানো হয়েছে। দেশের অবস্থা কি সে দিকে তাদের খেয়াল নেই। নির্বাচন হলে কি অঘটন ঘটতে পারে; কত মায়ের বুক খালি হতে পারে তা নিয়ে ভ্রুক্ষেপ নেই শেখ হাসিনার পুতুল নির্বাচন কমিশনের। যেমন ছিল না সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হকের। ‘তত্ত্বাবধায়ক অবৈধ’ রায়ের মাধ্যমে দেশকে কার্যত গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দিয়ে আইন কমিশনের চেয়ারম্যান পদে রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা নিয়ে বসে আছেন। আওয়ামী লীগ নীল নকশার নির্বাচনের অংশে এরশাদের নাম রাখা হয়েছে। ২১ অক্টোবর শেখ হাসিনা-এরশাদের বৈঠকের পর সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম যে নীল নকশার কথা বলেছিলেন সেই ছকে এরশাদকে নির্বাচনে এনের বিরোধী দলের নেতা বানানোর চেষ্টা চলছে। এ জন্য মামলার ভয়ভীতির পাশাপাশি এরশাদের জাতীয় পার্টিকে ৮০ আসন এবং নির্বাচনী খরচ (জাপা নেতাদের ভাষায় ২শ’ কোটি টাকা) দেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। জাতীয় পার্টির রাজনীতিতে রয়েছেন অথচ আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে বিশ্বাস করেন এমন নেতারা এরশাদকে ম্যানেজ করতে কোমড় বেঁধে মাঠে নেমেছেন। মন্ত্রিত্ব আর অর্থের লোভে একাধিক নেতাও তাদের সঙ্গে সুর মেলাচ্ছেন। কিন্তু এইচএম এরশাদ গতকালও জানিয়ে দিয়েছেন জাতীয় পার্টি মহাজোটে নেই। এরশাদ মহাজোট থেকে বের হয়ে গিয়ে বি চৌধুরী, কাদের সিদ্দিকী, আ স ম আবদুর রব, মাহমুদুর রহমান মান্নাসহ ইসলামী ধারার দলগুলোর সমন্বয়ে জোট গঠনের ঘোষণা দিয়েছেন। এ নিয়ে তাদের মধ্যে বৈঠকও হয়েছে। জাতীয় পার্টির একাধিক নেতা জানান, মহাজোটে নেই এরশাদ বললেও যেকোনো দিন সংবাদ সম্মেলন করে আনুষ্ঠানিকভাবে এ সিদ্ধান্ত দেশবাসীকে জানানো হবে। আবার পদত্যাগ করা কয়েকজন মন্ত্রী বলেছেন, এরশাদ অবশ্যই নির্বাচনে আসবেন। এ অবস্থায় এরশাদের ওপর বিশ্বাস রাখতে পারছেন না বি চৌধুরী, কাদের সিদ্দিকী, আ স ম রব। তারা চাচ্ছেন এরশাদ এ মুহূর্তে মহাজোট ত্যাগের ঘোষণা দিক। বঙ্গবীর আবদুল কাদের সিদ্দিকী টাঙ্গাইলের এক সমাবেশে এরশাদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, বেশি খেলা ভালো না। বেশি খেললে পানিতে ডুবে মরতে হয়। অতি চালাকের গলায় দড়ি মন্তব্য করে তিনি বলেন, শেখ হাসিনা মহাচোর। মহাচোরের জোট ছাড়েন না হলে দেশের মানুষ আপনাকে মূল্যায়ন করবে না। বি চৌধুরীও জোট গঠনের মাধ্যমে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনে নামার কথা বলেছেন। এ অবস্থায় এরশাদ কার্যত অগ্নি পরীক্ষার মুখোমুখি। একদিকে আওয়ামী লীগের চাপ; অন্যদিকে জনদাবি। কোন দিকে যাবে এরশাদ? দেশের মানুষ চাচ্ছে এরশাদ মহাজোট ত্যাগ করে জনগণের কাতারে এসে সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচনের দাবির আন্দোলনে শরীক হোক। এরশাদ নিজেও এই দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ ও আওয়ামী লীগের এজেন্ট জাতীয় পার্টির একাধিক নেতা এরশাদকে মহাজোটে রাখা এবং পাতানো নির্বাচনে অংশ নেয়ার জন্য প্রলোভন দিচ্ছেন; এবং ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন। এ অবস্থায় এরশাদ আওয়ামী লীগের প্রলোভন উপেক্ষা করে মহাজোট ছেড়ে জনগণের কাতারে আসবেন না শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় বসানোর সিঁড়ি হয়ে পাতানো নির্বাচনে যাবেন সে প্রশ্ন এখন সবার মনে। এরশাদের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করবে আগামী দিনের রাজনীতির অনেক কিছু। এরশাদের মতো বাংলাদেশের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে হেফাজত। আল্লামা আহমদ শফীর নেতৃত্বাধীন এই সংগঠনের আবির্ভাব ভোটের শক্তিতে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। মতিঝিলের শাপলা চত্বরে দুটি সমাবেশ করে সংগঠনটি জানিয়ে দিয়েছে তাদের শক্ত অবস্থান। আগামী নির্বাচনের এ সংগঠন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার পাশাপাশি ১৩ দফা দাবি নিয়ে মাঠের রাজনীতিতে যথেষ্ট ভূমিকা রাখবে। হেফাজতের নেতারা জানিয়েছেন সংগঠনের সারাদেশের জেলা সম্মেলন চলছে। ঢাকার আশপাশের জেলা সম্মেলনের পর নভেম্বরের মাঝামাঝি মাঠে নামবে। এদিকে সরকারের এক দলীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি অন্যদিকে নির্বাচন প্রতিহতের ঘোষণায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করতে আগ্রহীরা হতাশ হয়ে পড়েছেন। মনোনয়নপত্র ক্রয় করলেও তারা নির্বাচন হবে কিনা সে নির্বাচন হলে তারা ভোট করতে পারবেন কিনা তা নিয়ে শংকিত। কারণ তারা মাঠ পর্যায়ে যে অবস্থা দেখছেন তাতে নির্বাচনে ভোট গ্রহণ দূরের কথা নির্বাচনী প্রচারণায় চালানোর মতো পরিবেশ নেই বলে মনে করছেন। সারাদেশের মানুষ আওয়ামী লীগের ওপর বিক্ষুব্ধ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগী মন্ত্রী, এমপি ও দলীয় নেতাদের নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় গিয়ে গণসংযোগের নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু শতকরা ১০ ভাগ মন্ত্রী-নেতা-এমপিও নিজ এলাকায় যেতে সাহস পাননি। যারা গেছেন তারাও গণসংযোগ করতে পারেননি গণরোষের ভয়ে। এঅবস্থায় অনিশ্চয়তা মানুষকে গ্রাস করছে। সামনে কি হচ্ছে তা নিয়ে মানুষ উদ্বিগ্ন। সবার প্রশ্ন কি হবে আগামী দিনগুলোতে। নির্বাচন ঘটানো এবং নির্বাচন প্রতিহত করার মাঝখানে অনেক মানুষের প্রাণ যাবে এমন আশঙ্কাও করা হচ্ছে। নির্বাচনের প্রস্তুতির পাশাপাশি আওয়ামী লীগ সরকারের জুলুম-নির্যাতন, বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের গণগ্রেফতার করে ডান্ডাবেড়ি পড়ানো, ছাত্রলীগ, যুবলীগের চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী কর্মকা-, টেন্ডারবাজি, ভয়ঙ্কর তা-ব, অস্ত্রবাজি অব্যাহত রয়েছে। পার্শ্ববর্তী দেশের খুঁটির জোরে আওয়ামী লীগ সংলাপ নিয়ে তালবাহানা করলেও সংকট সমাধানে তৎপর বিদেশিরা। কেউ কেউ বলতে শুরু করেছেন এদেশের রাজনীতিকদের জনগণের উপর আস্থার চেয়ে বিদেশিদের প্রতি আস্থাশীল বেশি। অধিকাংশ প্রভাবশালী দেশ ও সংস্থা সংকট সমাধানে সরকারকে চাপ দিলেও বাংলাদেশের রাজনীতির ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা করছে আমেরিকা আর ভারত। স্বাধীন বাংলাদেশের ভাগ্য নির্ধারণ করবে বিদেশিরা। সামনে কি হয় কেউ জানেনা। দেশের ভবিষ্যৎ, স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব এবং রাজনৈতিক সংকট নিয়ে দেশের সাধারণ মানুষ উদ্বিগ্ন হলেও রাজনীতিকদের মধ্যে সেটা দেখা যাচ্ছে না। দুই পক্ষই সংকট সমাধানের বিদেশিদের দ্বারস্থ হয়েছেন। মোড়ল মানছেন বিদেশিদের। বর্তমান পরিস্থিতিতে ভারতের বিধান সভার একটি বিতর্ক প্রণিধানযোগ্য। সম্প্রতি এক জনসভায় বিজেপির সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রী কসাই নরেন্দ্র মোদীকে নিয়ে সমাজবাদি পার্টির নেতা নরেশ অগ্রবাল মন্তব্য করেছেন, ‘মোদীর মতো একজন চা বিক্রেতা কখনও দেশের প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন না।’ গত শুক্রবার অপর এক জনসভায় এর জবাবে নরেন্দ্র মোদী বলেন, ‘দেশের জনগণই ঠিক করবেন, একজন চা বিক্রেতা প্রধানমন্ত্রী হবেন কি না। ইউপিএ তো গোটা দেশটাকেই বেঁচে দিচ্ছে! দেশকে বেঁচে দেওয়ার চেয়ে বরং চা বিক্রি করা ভাল।’ আমাদের নেতানেত্রী বিশেষ করে বড় দুই দল ক্ষমতায় থাকা এবং ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য কি করছেন সেটাও মানুষকে ভাবনায় ফেলেছে।
সূত্র - ইনকিলাব
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×