somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গনতন্ত্রের নামে চলছে মধ্যযুগীয় চেতনার বিকাশ

০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১০:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গণতন্ত্র বলতে আমরা বুঝি গনমানুষের তন্ত্র।বহুদলের অংশগ্রহনে নির্বাচন হবে এবং জনগন ভোট দিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য সরকার নির্বাচন করবে।মোটা দাগে গনতন্ত্রের বাস্তবিক প্রয়োগ বলতে আমরা এমনটাই বুঝি।বাংলাদেশের জন্ম থেকে এ পর্যন্ত এ দেশে বহুবার রাজনৈতিক পট পরিবর্তন হয়েছে।দুজন প্রেসিডেন্টকে হত্যা করা হয়েছে।স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে লড়াই করে জীবন দিতে হয়েছে এ দেশের অনেক মানুষকে।তারপর গনতন্ত্রের নামে দ্বিদলীয় বৃত্তের শৃঙ্খল এ দেশকে বারবার অধঃপতিত করেছে।এ দেশের কোন শাসকগোষ্ঠীই রাষ্ট্র এবং জনগনের সেবার জন্য রাষ্ট্র পরিচালনা করেনি।ক্ষমতালোভী এসব শাসকগোষ্ঠী মুনাফালোভী সাম্রাজ্যবাদী চক্রের কূটকৌশলে নিজেদের সামিল করে দেশের উন্নয়নের নামে এ দেশের সম্পদ লুট করেছে।বিভ্রান্ত করে তারা বারবার এ দেশের সাধারন মানুষকে প্রতারিত করেছে।ক্ষমতা এবং মুনাফার লোভে আমাদের দেশের প্রধান দুটি দল নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব টিকিয়ে রেখেছে।বুঝতে হবে এটি কোন আদর্শের লড়াই নয়।এ লড়াই হচ্ছে কুৎসিত ভাবে ক্ষমতা দখলের লড়াই।কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে এ দেশের জনগন কেন গনতন্ত্রের নামে দ্বিদলীয় বৃত্তের শৃঙ্খলে আবদ্ধ।

জনগনের কোন প্রত্যাশাই সাশকগোষ্ঠীর কর্মকাণ্ডে প্রতিফলিত হয় না।তারপরও এদেশের মানুষ ভোট হলে উৎসবমুখোর পরিবেশে ভোট দিতে যায়।যাদের দ্বারা বারবার প্রতারিত হয় তাদেরকেই আবার ভোট দিয়ে নির্বাচিত করে।৫ ই জানুয়ারির মত একতরফা নির্বাচন হলে এ দেশের বুদ্ধিজীবীরা গনতন্ত্রের মৃত্যু ঘটল বলে মুখে ফেনা তুলে ফেলে।এসব দেখে মনে হয়,আমাদের দেশের জনগন এবং বুদ্ধিজীবীরা গনতন্ত্র বলতে বুঝে শুধু বহুদলের অংশগ্রহনে নির্বাচন করা। এ দেশের অধিকাংশ মানুষ এখনও মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্ছিত।যে দেশের অধিকাংশ মানুষ এখনও নিয়মিত পেট ভরে ভাত খেতে পারেনা সে দেশে গনতন্ত্র একটি প্রহসন ছাড়া আর কিছু নয়।

ধর্ম হচ্ছে ক্ষমতা দখলের আদিম হাতিয়ার। মানুষ এবং প্রকৃতির দ্বান্দিক প্রতিক্রিয়া থেকে ধর্মীয় মতবাদের আবির্ভাব হয়। অর্থনৈতিক ভিত্তির উপর নির্ভর করে সমাজ কাঠামো গড়ে উঠে।ধর্ম হচ্ছে গড়ে উঠা আর্থ সামাজিক কাঠামোর একটি উপরিকাঠামো।প্রাচীনকালে রাজতন্ত্রের প্রাথমিক পর্যায়ে প্রজাদেরকে বশে রাখার জন্য অলৌকিক দেবতার ধারনা সৃষ্টি করতে হয়েছিল।প্রজাদেরকে বলা হয়েছিল রাজাদের সাথে দেবতার পবিত্র সম্পর্কের কথা।কিন্তু মানুষকে সব সময় অন্ধকারে রাখা যায় না। তাই এক সময় সাধারন মানুষ বিজ্ঞানের অগ্রসরের ফলে এসব ধ্যান ধারনা থেকে বেরিয়ে আসে। সামাজিক বিবর্তনের ফলে রাজতন্ত্রের পতন হয়। শাসকগোষ্ঠী সব সময় তাদের বিধান আমজনতার উপর চাপিয়ে দেওয়ার জন্য এক এক যুগে সে যুগের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ ধর্মীয় মতবাদকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যাবহার করেছে।অপরদিকে অন্ধকারে থাকা মানুষ আধ্যাত্মিক ধ্যান ধারণাকেই খড়কুটোর মত আঁকড়ে ধরেছিল।আমাদের দেশের প্রধান দুটো রাজনৈতিক দল সবসময় জনগনের তথাকথিত ধর্মীয় অনুভূতি নিয়ে নোংরা রাজনৈতিক খেলা খেলে আসছে।মানুষের ধর্মীয় চেতনায় আঘাত করা মানে নির্বাচনে ভোট হারানো।তাই মৌলবাদী গোষ্ঠীর সাথে আপোষ করতে এ দেশের কোন শাসকগোষ্ঠী কখনই পিছপা হয়নি।

সরকার তসলিমা নাসরিনকে নির্বাসিত করতে বাধ্য হয়েছিল কারন তারা জানে এ দেশের মানুষ নিজের অধিকার সম্পর্কে সচেতন না হলেও ধর্ম নামক আফিমের নেশায় মত্ত।এ দেশের অধিকাংশ মানুষ এখনও মনে করে এ দেশে বসবাস করার অধিকার তসলিমা নাসরিনের নেই। যদি ভোটের মাধ্যমে ঠিক করা হত তবে তসলিমাকে হয়তোবা পাথর ছুঁড়েই মারা হত।লতিফ সিদ্দিকি বছরের পর বছর মানুষের সম্পত্তি লুট করে রাজত্ব করে এসেছে।দেশের জনগন তাতে কিছু মনে করেনি বরং বারবার তাকে নির্বাচিত করেছে।কিন্তু যখন ইসলাম নিয়ে কথা বললেন তখন জনগন তার শাস্তি দাবি করল।চোরকে নির্বাচিত করতে কোন সমস্যা নেই কিন্তু ইসলাম নিয়ে কটূক্তিকারীকে নির্বাচিত করা যাবে না।তার মানে চোর যদি ধর্মের কথা বলে চুরি করে তাহলে কোন সমস্যা নেই!

যখন সুন্দরবন বাঁচানোর আন্দোলন হয় তখন গুটিকয়েক মানুষ সে আন্দোলনে সামিল হয়।সরকার সে আন্দোলন নিয়ে বিচলিত ছিলনা।কারন তারা জানত ভোটের রাজনীতিতে এটা কোন প্রভাব ফেলবে না।কিন্তু যখন লতিফ সিদ্দিকির বিচারের দাবিতে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নামল সরকার ভয় পেয়ে গেল।সুন্দরবন ধ্বংস হল কি হল না তা নিয়ে এ দেশের জনগনের কিছু আসে যায় না কিন্তু লতিফ সিদ্দিকি ইসলাম নিয়ে কটূক্তি করলে সমস্থ দেশ তোলপাড় হয়।এ দেশের জনগনের মনস্তাত্ত্বিক প্রতিফলন এমন হলে শাসকগোষ্ঠী কেমন হবে তা সহজেই অনুমান করা যায়।তাই শুধু ক্ষমতালোভী নেতাদের দোষ দিলে হবে না।এ সব কিছুর দায়ভার আমাদের নিজেদের কাঁধে তুলে নিতে হবে।আমরা যারা বুঝিনা এবং বুঝেও অন্যকে বুঝাতে পারিনা তাদেরক প্রথমে গণতন্ত্র এবং গণতন্ত্রের চর্চার নামে মৌলবাদী দর্শনের চর্চার মধ্যে পার্থক্য বুঝতে হবে।তা না হলে গনতন্ত্রের নামে এ দেশে চলতে থাকবে মধ্যযুগীয় চেতনার বিকাশ।


সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৪৮
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×