
বইঃ দ্য সার্জন
লেখকঃ টেস গেরিটসেন
অনুবাদঃ সান্তা রিকি
প্রকাশনীঃ বাতিঘর প্রকাশনী
পৃষ্ঠা: ৩৩৬
মূল্য: মুদ্রিত মূল্য ৩২০ টাকা
বোস্টনে বিকারগ্রস্থ এক খুনি রাতের বেলায় ঘুমন্ত অবস্থায় আক্রমন করছে মেয়েদের। মেডিকেল জ্ঞানের দক্ষতার কারনে সংবাদমাধ্যম এই লোমহর্ষক খুনির নামকরন করে “সার্জন”। বোস্টন হোমিসাইড ইউনিটের ডিটেক্টিভ টমাস মুর এবং তার পার্টনার জেন রিজোলি এমন একটি বিষয় আবিষ্কার করে যা এই কেসটিকে অন্য একটি জটিল রহস্যের দিকে ধাবিত করে। বছর দুয়েক আগে সাভানাতে এক সিরিয়াল কিলার ঠিক একই প্রক্রিয়ায় তার শিকারদের হত্যা করতো। কিন্তু দুর্ধর্ষ সেই খুনি নিজের শেষ শিকারের হাতে খুন হয় বছর দুয়েক আগেই। তার শেষ শিকার একজন ট্রমা সার্জন। খুনগুলোর সাথে কি সম্পর্ক এই সার্জনের? কপিক্যাট কিলার কেন এসব করছে-কি উদ্দেশ্য তার?
টেস গেরিটসনের মাস্টারপিস দ্যা সার্জন-এর প্রত্যেক পৃষ্ঠা রহস্যকে আরো ঘনীভূত করবে আর চরম টুইস্টসম্পন্ন পরিসমাপ্তিতে পৌঁছে দিবে পাঠককে।
টেস গেরিটসনের এই মাস্টারপিসটি বাংলায় অনুবাদ করেছেন আমাদের প্রিয় ব্লগার সান্তা রিকি। বইটি পড়ার ব্যাপারে আমার অনেক আগে থেকেই আগ্রহ ছিল। মেডিকেল থ্রিলার আমার কাছে অনেকটাই নতুন বিষয়। তাই আগ্রহ ছিল কিভাবে মেডিকেল জ্ঞান দিয়ে থ্রিলার লেখা যায় তা জানার। কিছু ব্যাপার আগে থেকেই অনুমান করে নিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম সেইসব অনুমানের বাইরে কি আর হতে পারে? কিন্তু যখন পড়া শুরু করলাম দেখলাম লোমহর্ষক এক উৎকণ্ঠায় আমিও হারিয়ে গেলাম। থ্রিলার পড়ে যদি তার ভিতরের জগতটাতেই হারিয়ে না যাওয়া যায়, তাহলে আর পড়ে মজা কি? আমি পড়া শুরু করতেই সার্জনের ভয়াবহ এবং উত্তেজক আবহের মধ্যে আটকা পড়ে গেলাম। কি হতে পারে তা বোঝার চেষ্টা না করে বরং কি হচ্ছে তা নিয়েই ভাবতে থাকলাম। যখন বইটি পড়া শেষ হলো তখন বুঝলাম আমি আসলেই একটি মাস্টারপিস পড়ে ফেললাম। আমার প্রিয় লেখিকাদের নামের তালিকায় টেস গেরিটসন নামটিও যুক্ত হলো।
এমন একটি চমৎকার বই হয়তো আমার পড়াই হত না। কিন্তু সান্তা রিকি আপু বইটি অনুবাদ করে আমাদেরকে টেসের কাজের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন। অনেকেই হয়তোবা মনে করেন অনুবাদ করা খুব কঠিন কিছু না। শুধু ইংরেজি বুঝলেই বোধহয় সেটা করে ফেলা যায়! ব্যাপারটি মোটেও এত সহজ কিছু নয়। কারন সব ভাষারই একটা নিজস্ব স্বকীয়তা রয়েছে। একজন লেখক যখন নিজের মাতৃভাষায় কিছু একটা লিখেন তখন সেই ভাষাকে অন্য ভাষায় রুপান্তর করা হয়তো খুব কঠিন কিছু নয়। কিন্তু কঠিন হচ্ছে একই আবহটা ধরে রাখা। পাঠক আমেরিকাতে বসে যেমন টেসের লেখার স্বাদটা পাচ্ছে ঠিক একই স্বাদ এ দেশের পাঠকও পাবে এবং সেটা বাংলায় পড়ে, এটাই অনুবাদকের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। অনুবাদক সান্তা রিকি সেই কঠিন কাজটিতে সফল হয়েছেন বলেই মনে করি। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হচ্ছে বইটি পাঠ করার সময় কখনো আমার মনোযোগ সরে যায়নি। আমি টেসের তৈরি করা জগতে হারিয়ে যেতে পেরেছি। এবং সেটা টেসের মাতৃভাষায় নয়, বরং আমার মাতৃভাষাতে পড়েই সেই স্বাদ আমি আরোহণ করতে পেরেছি। এখানেই অনুবাদক সান্তা রিকি সফল। তিনি একজন পাঠকের কাছে মূল আবহটা অনুবাদের মাধ্যমে উপস্থাপন করতে পেরেছেন।
আপনারা যারা থ্রিলার পছন্দ করেন, মিথ পছন্দ করেন, মিথের সাথে মানুষের অবসেশন মিলে কি হয় বা কি হতে পারে তা জানতে চান, মানুষের মনের অলিতে গলিতে কত তীব্র অন্ধকার আছে তা খুঁজে পেতে পছন্দ করেন তারা এই বইটি পড়তে পারেন। সার্জন এমনি এক ভিন্ন স্বাদের থ্রিলার যার স্বাদ শুধু টেসের লেখাতেই পাওয়া যাবে। এবং সান্তা রিকি যাকে যথাযথ ভাবেই উপস্থাপন করতে সফল হয়েছেন।
আমার প্রিয় অনুবাদকের তালিকায় সান্তা রিকি আপুর নামটাও যুক্ত হয়ে গেছে।
রিকি আপুর থেকে প্রাপ্ত মহামূল্যবান অটোগ্রাফ।

প্রিয় অনুবাদক এবং ব্লগার রিকি আপুর সাথে বই মেলায় দেখা হয়নি। কিন্তু তাই বলে তিনি পাঠককে মহামূল্যবান অটোগ্রাফ থেকেও বঞ্চিত করেন নাই। আপুর ডিজিটাল অটোগ্রাফ আমার কাছে পৌঁছে দিয়েছেন।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:১৯

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



