১
ভাইসাব কি মেডিটেশন করতাছেন?
চমকে উঠলাম। চোখ মেলে দেখলাম আশেপাশে কেউ নেই। থাকার কথাও না। বাসায় একা থাকি। কিছুক্ষন আগে পদ্মাসনে বসেছিলাম মেডিটেশন করব বলে।
ভাইসাব, আপনি আমাকে দেখবেন না। আপনি মনে মনেই কথা বলুন আমার সাথে। আপনার মনের কথা আমি বুঝতে পারি।
কে কথা বলেন? কে আপনি?
আমি কভিড-১৯। আপনার থেকে তিনফুট দূরে মুখোমুখি বসে আছি।
আপনি কেউনা। আমার অডিট্যরি হেলুসিনেশন হচ্ছে। দীর্ঘদিন একা থাকায় এবং আতংকময় পরিবেশ আমার মনের উপর চাপ ফেলছে হয়তো।
আমারে বিশ্বাস করেন ভাইসাব। আমি আপনার মুখোমুখিই বসে আছি। এইটা আপনার হ্যালুসিনেশন না।
দেখুন মশায়, ভাইরাস কারো সাথে কথা বলতে পারেনা। পুরো ব্যাপারটিই ঘটছে আমার মনের ভেতর।
ভাইসাব, আমি আপনার আরো কাছে চলে এসেছি। মাত্র একফুট দূরুত্বে। আমাকে অডিট্যরি হেলুসিনেশন বলায় মাইন্ড খাইছি কিছুটা। তাছাড়া হোস্ট হিসাবে আপনাকে আমার পছন্দ হয়ে গেছে।
মনের কলকব্জা নড়ে গেছে। কলকব্জা ঠিক করতে আবার চোখ বুঝলাম। মেডিটেশন করব। মনকে শান্ত রাখতে হবে।
ভাইসাব। বলেন দেখি আমি এখন কোথায়?
কোথায়?
আপনার ভেতরে। আপনি এখন হোস্ট। আমি গেস্ট। আপনি আরামসে মেডিটেশন করেন। আমি পপকর্ন নিয়া বসলাম। সময় হইলেই টের পাবেন।
চোখ মেললাম। একটা সিগারেট ধরালাম। দুটান দেওয়ার পরই মনে হচ্ছে শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। শরীরটাও একটু গরম গরম লাগছে।
ভাইসাব কি কিছু টের পাইতেছেন?
সিগারেট ফেলে দিয়ে উঠলাম। গরম পানি পান করতে হবে।
ভাইসাব মনে হয় এখন একটু একটু আমাকে বিশ্বাস করা শুরু করছেন। বিষয়টা ভালো লাগতাছে!
গল্প~অডিট্যরি হেলুসিনেশন
২
ঘুম থেকে উঠৈ ভাবতেছিলাম কি রান্না করা যায়। হঠাৎ মনে হলো রুমে আমি একা না। কেউ একজন আছে।
আপনি ঠিকই ভাবতেছেন। আপনি একা না। আপনার সাথে আমিও আছি। তবে আপনি আমাকে দেখবেন না। আমি মানুষ না। জ্বীন। কিছু জ্বীনের পাখা আছে এবং কিছু জ্বীন সাপ এবং মাকড়শার মত। তবে আমি তেমন জ্বীন না। আমি স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করা টাইপ জ্বীন। বিপদে পইড়া আপনার রুমে আশ্রয় নিছি।
কি বিপদ?
আমাকে খাওয়ার জন্য কিছু বাঘ এবং নেকড়ে তাড়া করতেছে। আমরা একটা অল্টারনেটিভ জগতে বাস করি। জগতটা আপনাদের মানুষদের কল্পনা থেকে সৃষ্টি। আপনারা যেভাবে আমাদের নিয়ে ভাববেন ঠিক তাই ঘটতে থাকবে আমাদের জগতে।
আমি যদি ভাবি আপনারা ভাইরাস খান তবে আপনারা ভাইরাস খাবেন?
খাব। তবে সেক্ষেত্রে যত বেশী মানুষ আপনার গল্পে বিশ্বাস করবে তত বেশী তা আমাদের উপর কাজ করবে। অনেক মানুষ মিলে যা বিশ্বাস করে সেটাই আমাদের রিয়্যালিটি। তবে সমস্যা হইতেছে আপনি নিজেই জ্বীন বিশ্বাস করেন না। আমি আপনার গল্পের একটা চরিত্রমাত্র। সুতরাং আপনি যেভাবে গল্পটা বানাবেন সেটাই এখন আমার রিয়্যালিটি হবে। এইজন্যই আপনার কাছে আসছি। আপাতত আমাকে বাঘ আর নেকড়ের হাত থেকে বাঁচান।
কিভাবে বাঁচাবো?
আপনি এখন ঘুমের ভেতর স্বপ্ন দেখতাছেন। স্বপ্নে বাঘ নেকড়ে এসে আমারে খাওয়ার আগেই আপনাকে ঘুম থেকে উঠে যেতে হবে। আপনার স্বপ্নের জগতে আমি বন্দী হয়ে যাব। এটাই আমার সারভাইভ করার একমাত্র উপায় এখন।
হঠাৎ করে ঘুম ভেঙ্গে গেল। দুপুর হয়ে গেছে। বেশ ক্ষুধাও লেগেছে। কিছু একটা রান্না করতে হবে দ্রুত!
গল্পঃ জ্বীন
উৎসর্গঃ মুফতি কাজী ইব্রাহীম।
৩
দু’দিনে দুটো সাদা বিড়ালকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। আজ তৃতীয় দিন। কালো বিড়ালটাকেও আজ ঠিক একই ভাবে হত্যা করা হবে। লোকটার এমনই পরিকল্পনা। সাত তলার বিল্ডিংয়ে ৭৩ জন মানুষ এবং তিনটা বিড়ালের বসবাস। তিনটার মধ্যে দুটো ক্ষতম। একটা এখনো আছে। বিড়ালগুলো প্রায়ই ইঁদুর মেরে ফেলে রাখত। একদিন মৃত ইঁদুরের দিকে তাকিয়ে খুব মায়া হয় লোকটার। ।তার মনে হয় খেলার জন্য বিড়াল ইঁদুর মারবে প্রকৃতির এই নিয়ম ঠিকনা। সে ইঁদুর গুলোর পক্ষ হয়ে প্রতিশোধ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। প্রতিশোধটা বিড়ালের বিপক্ষে নয়। প্রকৃতির বিপক্ষে।
ঘুম থেকে উঠে লোকটার প্রথমেই মনে হয় আজ কালো বিড়ালটাকে হত্যা করার দিন। সে নিজের ভেতর বেশ উত্তেজনা অনুভব করে। কিন্তু হঠাৎ করে সে বুঝতে পারে কোথাও একটা সমস্যা হয়েছে। দ্রুতই সে নিজেকে একটা অন্ধকার রুমে আবিষ্কার করে। এবং বুঝতে পারে সে একটা ইঁদুরে পরিনত হয়েছে। ইঁদুরে পরিনত হওয়া লোকটা ক্রমসই অনুভব করতে থাকে একটা কালো বিড়াল তার খুব কাছাকাছি চলে এসেছে।
সাত তলা থেকে লোকটার ক্ষত বিক্ষত লাশ উদ্ধার করা হয়। মরে যাওয়ার পর একদল ক্ষুধার্ত ইঁদুর তার লাশের উপর হামলে পরেছিল!
গল্পঃ ইঁদুর বিড়াল মানুষ।
৪
আপনি অবসর সময়ে কি করেন?
মানুষের পায়ের কাছে কুকুর হয়ে বসে থাকি।
সুনীলের কবিতার মত?
হ্যা। মানুষের ভেতরের কুকুর দেখার জন্যই এই আয়োজন।
মানুষের ভেতরের কুকুর দেখে ফেলার পর কি করেন?
তখন একধরনের সীদ্ধান্তহীনতায় ভুগি। কুকুর দেখে ফেলার পর কামড় দিতে ইচ্ছা করে। কামড় দেব কি দেবনা এই নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতা।
কামড় দেন?
কখনো দেই। কখনো দেইনা।
সাধারনত কখন দেন?
আমার ভেতরের কুকুরকে কেউ চ্যালেন্জ করলেই কামড় দেই। দূর্বল কুকুরদের সাধারনত আমি ছেড়ে দেই।
ছেড়ে দেন কেন? দয়া?
ঠিক তা না। পেশাগত কারনে।
আপনার পেশা?
জ্বী, পেশায় আমি একজন মানবতাবাদী।
গল্পঃ ইন্টারভিয়্যু।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জুন, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৫৯