somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মাইক্রো ফিকশনঃ সে

৩০ শে জুন, ২০২০ বিকাল ৪:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



হাত নেই। পা নেই। কথা বলবার ক্ষমতা নেই। শুধু মুখ দিয়ে বিচিত্র একটা শব্দ সে করতে পারে। আরেকটা ক্ষমতা তার আছে। সে ফুটপাতে খানিকটা গড়াগড়ি দিতে পারে। তার পাশ দিয়ে কেউ হেটে গেলেই সে শব্দ করতে থাকে। অনেকটা পশুর মত। তবে সে শব্দের ভাষা তার পাশ দিয়ে হেটে যাওয়া মানুষ সহজেই বুঝে ফেলতে পারে। সে আসলে বুঝাতে চায় আমি অসহায়। আমার কিছু করবার মত কোন ক্ষমতা নেই। আমার টাকা নেই। আপনারা দয়া এবং করুনা করে আমায় কিছু টাকা দিন।

আলিম ফুটপাতের পাশে এক টং দোকানে দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছে। সময়টা মধ্য দুপুর। কড়া রোদ ঘাম ঝরাচ্ছে। গরম চা আর সিগারেট আলিমকে ঠিক আরাম দিচ্ছেনা। আলিম খুব মনোযোগ দিয়ে ফুটপাতে হাত পা বিহীন গড়াগড়ি খাওয়া ছেলেটাকে দেখছে। ছেলেটা তার নতুন শিকার। অথবা বলা যেতে পারে তার নতুন ইনভেস্টমেন্ট। এমন অনেক ভিক্ষুককে সে ঢাকা শহরের ফুটপাতে ফুটপাতে ছেড়ে দিয়েছে। আলিম ভিক্ষুকের ব্যবসা করে। এবং তার ব্যবসাটা বেশ জমেও উঠেছে। মাঝেমাঝে সে ভিক্ষুকদের দেখতে ফুটপাতে আসে। আলিমকে মোটামুটি একজন সুখী মানুষ বলা যেতে পারে। সে তার স্ত্রী এবং একমাত্র ছেলেকে খুব ভালোবাসে। তার প্রতি তাদের ভালোবাসারও কোন কমতি নেই। বউ, বাচ্চা, গাড়ি, বাড়ি, ব্যাংক ব্যালান্স নিয়ে আলিম একজন সফল মানুষ। আর তার এই সফলতার কারন ছিন্নমূল মানুষ এবং পথশিশুদের সে ঠান্ডা মাথায় গিনিপিগের মত ব্যবহার করতে পারে। শিশুদের হাত পা কেটে তাদের বোবা বানিয়ে সে রাস্তায় ছেড়ে দেয় ভিক্ষার জন্য। এ নিয়ে তার ভেতর কোন অপরাধবোধও নেই। তাছাড়া আলিমের টাকায় ঢাকা শহরে তিনটি মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে। দুটি স্কুলও আছে তার। মাঝেমাঝেই তাকে সমাজ সেবক হিসেবে সম্বর্ধনাও দেওয়া হয়।

চা এবং সিগারেটের বিল দিয়ে আলিম তার ড্রাইভারকে কল দেয়। গাড়ি নিয়ে আসতে বলে ফুটপাতের সামনে। ফোনটা পকেটে ঢুকানোর আগেই রিংটোন বেজে উঠে। রূবা কল করেছে। রূবা তার স্ত্রী। আলিম কলটা রিসিভ করে। তারপর একসময় কলটা কেটে দেয়। তার একমাত্র সন্তান নিহানকে স্কুল থেকে ফেরার সময় কারা যেন তুলে নিয়ে গেছে। অর্থাৎ অপহরন। আলিম ঠান্ডা মাথায় ভাবতে চেষ্টা করছে। কিন্তু তার ভাবনা চিন্তা সব এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। আলিমের কান্না পাচ্ছে ভীষন। সে আবার ফুটপাতে গড়াগড়ি খাওয়া ছেলেটার দিকে তাকায়। ছেলেটা পশুর মত আওয়াজ করেই যাচ্ছে। এই প্রথম বারের মত নিজের শিকারকে দেখে ভয়ে শিউরে উঠে আলিম।
নিহান... নিহানকে... ওরা কেন অপহরন করল? নিহানকে নিয়ে ওরা কি করবে?

ফুটপাতে বসে পড়ে আলিম। সে হাউমাউ করে কাঁদছে। তাকে ঘিরে মানুষের ভীড়টাও বাড়তে থাকে।

ছবি ইন্টারনেট থেকে নেওয়া।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা জুলাই, ২০২০ রাত ২:২৯
৩২টি মন্তব্য ৩১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×