হাত নেই। পা নেই। কথা বলবার ক্ষমতা নেই। শুধু মুখ দিয়ে বিচিত্র একটা শব্দ সে করতে পারে। আরেকটা ক্ষমতা তার আছে। সে ফুটপাতে খানিকটা গড়াগড়ি দিতে পারে। তার পাশ দিয়ে কেউ হেটে গেলেই সে শব্দ করতে থাকে। অনেকটা পশুর মত। তবে সে শব্দের ভাষা তার পাশ দিয়ে হেটে যাওয়া মানুষ সহজেই বুঝে ফেলতে পারে। সে আসলে বুঝাতে চায় আমি অসহায়। আমার কিছু করবার মত কোন ক্ষমতা নেই। আমার টাকা নেই। আপনারা দয়া এবং করুনা করে আমায় কিছু টাকা দিন।
আলিম ফুটপাতের পাশে এক টং দোকানে দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছে। সময়টা মধ্য দুপুর। কড়া রোদ ঘাম ঝরাচ্ছে। গরম চা আর সিগারেট আলিমকে ঠিক আরাম দিচ্ছেনা। আলিম খুব মনোযোগ দিয়ে ফুটপাতে হাত পা বিহীন গড়াগড়ি খাওয়া ছেলেটাকে দেখছে। ছেলেটা তার নতুন শিকার। অথবা বলা যেতে পারে তার নতুন ইনভেস্টমেন্ট। এমন অনেক ভিক্ষুককে সে ঢাকা শহরের ফুটপাতে ফুটপাতে ছেড়ে দিয়েছে। আলিম ভিক্ষুকের ব্যবসা করে। এবং তার ব্যবসাটা বেশ জমেও উঠেছে। মাঝেমাঝে সে ভিক্ষুকদের দেখতে ফুটপাতে আসে। আলিমকে মোটামুটি একজন সুখী মানুষ বলা যেতে পারে। সে তার স্ত্রী এবং একমাত্র ছেলেকে খুব ভালোবাসে। তার প্রতি তাদের ভালোবাসারও কোন কমতি নেই। বউ, বাচ্চা, গাড়ি, বাড়ি, ব্যাংক ব্যালান্স নিয়ে আলিম একজন সফল মানুষ। আর তার এই সফলতার কারন ছিন্নমূল মানুষ এবং পথশিশুদের সে ঠান্ডা মাথায় গিনিপিগের মত ব্যবহার করতে পারে। শিশুদের হাত পা কেটে তাদের বোবা বানিয়ে সে রাস্তায় ছেড়ে দেয় ভিক্ষার জন্য। এ নিয়ে তার ভেতর কোন অপরাধবোধও নেই। তাছাড়া আলিমের টাকায় ঢাকা শহরে তিনটি মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে। দুটি স্কুলও আছে তার। মাঝেমাঝেই তাকে সমাজ সেবক হিসেবে সম্বর্ধনাও দেওয়া হয়।
চা এবং সিগারেটের বিল দিয়ে আলিম তার ড্রাইভারকে কল দেয়। গাড়ি নিয়ে আসতে বলে ফুটপাতের সামনে। ফোনটা পকেটে ঢুকানোর আগেই রিংটোন বেজে উঠে। রূবা কল করেছে। রূবা তার স্ত্রী। আলিম কলটা রিসিভ করে। তারপর একসময় কলটা কেটে দেয়। তার একমাত্র সন্তান নিহানকে স্কুল থেকে ফেরার সময় কারা যেন তুলে নিয়ে গেছে। অর্থাৎ অপহরন। আলিম ঠান্ডা মাথায় ভাবতে চেষ্টা করছে। কিন্তু তার ভাবনা চিন্তা সব এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। আলিমের কান্না পাচ্ছে ভীষন। সে আবার ফুটপাতে গড়াগড়ি খাওয়া ছেলেটার দিকে তাকায়। ছেলেটা পশুর মত আওয়াজ করেই যাচ্ছে। এই প্রথম বারের মত নিজের শিকারকে দেখে ভয়ে শিউরে উঠে আলিম।
নিহান... নিহানকে... ওরা কেন অপহরন করল? নিহানকে নিয়ে ওরা কি করবে?
ফুটপাতে বসে পড়ে আলিম। সে হাউমাউ করে কাঁদছে। তাকে ঘিরে মানুষের ভীড়টাও বাড়তে থাকে।
ছবি ইন্টারনেট থেকে নেওয়া।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা জুলাই, ২০২০ রাত ২:২৯