নোয়খালী সাইন্স অ্যান্ড কমার্স কলেজের অধ্যক্ষ ড. আফতাব উদ্দীনের বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের মার্চ মাসে যৌন হয়রানির কিছু সুনির্দিষ্ট অভিযোগ করা হয়। অভিযোগ করেন উম্মে সালমা। যিনি সামহোয়ারইন ব্লগে এরিস নিকে সুপরিচিত। তিনি অভিযোগ করেন ড. আফতাব উদ্দীনের সাথে চাকুরি বিষয়ে কথা বলতে তিনি তার অফিসে যান। আফতাব উদ্দীন তাকে বেশ কিছুদিন ঘুরিয়ে একদিন মোবাইল ফোনে কল করেন। এবং মোবাইলে কথা বলতে বলতেই সরাসরি কিছু কুপ্রস্তাব করে থাকেন। আফতাব বলেন, চাকুরি পেতে হলে নেগোসিয়েট করতে হবে। অর্থাৎ তিনি একজন চাকরি প্রত্যাশি তরুণীকে সরাসরি চাকরি পাওয়ার জন্য সেক্স ওয়ার্কার হওয়ার প্রস্তাব দিয়ে থাকেন।
পরবর্তীতে উম্মে সালমা নোয়াখালী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এ ড. আফতাব উদ্দীনের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ এনে মামলা করেন। ট্রাইব্যুনালের বিচারক তা নোয়াখালীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে (প্রশাসন) তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য আদেশ দেন। ১০ মার্চ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার দিপক জ্যেতি খিসা বাদিনীর অভিযোগ সত্য বলে ট্রাইব্যুনালে প্রতিবেদন দাখিল করেন। এ প্রতিবেদনের উপর দীর্ঘ শুনানির পর বিচারক ড. আফতাব উদ্দীনের বিপক্ষে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা সুধারাম থানায়ও পাঠানো হয়েছে।
আফতাবের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ আনার পর থেকেই নানা শ্রেণী পেশার মানুষ তার বিচারের দাবীতে মানববন্ধন করেছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকেই আফতাবের অপকর্মের কথা জানিয়েছেন। কলেজের ছাত্রীদের সাথেও নানা রকম হয়রানির অভিযোগ তার বিরুদ্ধে আছে। উম্মে সালমার অভিযোগের ভিত্তিতে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর থেকেও তদন্ত করা হয়। এবং অভিযোগ প্রমানিতও হয়।
কিন্তু ড. আফতাব উদ্দিন এখনো নোয়াখালী সাইন্স অ্যান্ড কমার্স কলেজের অধ্যক্ষ পদে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করার পরও এখন পর্যন্ত তাকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। যৌন হয়রানির অভিযোগ প্রমানিত হওয়ার পরও একজন মানুষ কিভাবে একটা কলেজের অধ্যক্ষ পদে দায়িত্ব পালন করে যেতে পারেন? ছাত্র ছাত্রীদের জন্য তিনি কতটা নিরাপদ?
বাংলাদেশের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে আফতাব উদ্দীনদের মত ক্ষমতাধরদের বিরুদ্ধে লড়ে যাওয়া সহজ ব্যাপার নয়। উম্মে সালমা( ব্লগার এরিস) নানা ঘাত প্রতিঘাতের ভেতর দিয়ে গিয়েও মাথা নত করেননি। নানা রকম ভয় ভীতি থ্রেট উপেক্ষা করে বিচারের দাবীতে তিনি শেষ পর্যন্ত লড়ে গেছেন। এবং আদালতে অভিযোগ প্রমানিতও হয়েছে।
কিন্তু অভিযোগ প্রমানের পরও একজন অপরাধীর বিরুদ্ধে প্রশাসন থেকে যখন কোন ব্যবস্থাই নেওয়া হয়না তখন স্বাভাবিক ভাবেই কিছু প্রশ্ন চলে আসে। তবে কি আফতাব উদ্দিন প্রশাসনের সাথে কোন ভাবে নেগোসিয়েট করে ফেলেছে? তার মত প্রমানিত পারভার্ট কিভাবে এখনো অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে?
উম্মে সালমা(এরিস) এই ব্লগেরই একজন সন্মানিত ব্লগার। এবং তিনি ব্লগের গর্বও। কারন মুখে হাতি ঘোড়া মারা মানুষের অভাব নেই। কিন্তু একজন উম্মে সালমা দেখিয়ে দিয়েছেন কিভাবে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে হয়। প্রতিকূল পরিবেশে মেরুদন্ড সোজা রেখে লড়ে যেতে হয়। তাই একজন আফতাব উদ্দীনের বিচার না হওয়া মানে মানুষ হিসাবে আমাদেরই হেরে যাওয়া। এই ব্লগ থেকে নানা সময়ে নানা ইস্যুতে বিভিন্ন আন্দোলন গড়ে উঠেছে। ব্লগাররা একসাথে ঐক্যবদ্ধ হয়ে অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছেন। আফতাবের বিচারের দাবীতেও আমরা আরেকবার ঐক্যবদ্ধ হতে পারি। অভিযোগ প্রমানিত। সুতরাং আফতাব উদ্দীনকে কেন গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না? কেন তিনি এখনো অধ্যক্ষ পদে বহাল আছেন এসব প্রশ্নের জবাব আমরা প্রশাসনের কাছে চাইতেই পারি।
নোয়াখালী সাইন্স অ্যান্ড কমার্স কলেজের অধ্যক্ষ আফতাব উদ্দীনকে অবিলম্বে গ্রেপ্তার করা হোক। এবং অধ্যক্ষ পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হোক।
এ বিষয়ে কি কি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা বা পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে সে ব্যাপারে ব্লগারদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
আমরা চাই দ্রুত আফতাব উদ্দীনের বিচার কার্যকর করা হোক। এবং অভিযোগকারীকে নানা ভাবে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। তার নিরাপত্তার বিষয়টি প্রশাসন থেকে নিশ্চিত করা হোক।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই আগস্ট, ২০২০ রাত ৮:০১