somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জলে ভাসা পদ্ম.........(পঞ্চম অংশ)......(গল্প)

০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৮ রাত ১:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

চতুর্থ অংশ


(৮)

গত কয়েক দিন ধরেই সিলেটে প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে, রাস্তায় রাস্তায় পানি জমে গিয়েছে। কিছু কিছু জায়গায় তো রীতিমতো নৌকাও চলাচল করছে। অবন্তী যে কোয়ার্টারে থাকে তার সামনের রাস্তাটার অবস্থা আরো ভয়াবহ। পানি এমন একটা উচ্চতা নিয়ে এসে এখানে বাসা বেঁধেছে যে-- এই রাস্তায় নৌকা চলাচল করা কোনভাবেই সম্ভব না, অন্যদিকে হেঁটে হেঁটে এই রাস্তার পানি ডিঙানোও পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিনতম কাজগুলার একটা। ফলে অবন্তী পড়েছে বিরাট বিপদে, অফিসে যাওয়ার সময় তাকে বিরাট ফ্যাসাদের মধ্যে পড়তে হয়, অনেক খোঁজাখুঁজি করেও এই রাস্তায় রিকশার দেখা মেলে না, যদি দেখাও মেলে তথাপি রিকশাওয়ালাগুলো তখন জমিদারের বেশে সেখানে হাজির হয়, পাঁচ/ছয় টাকার রিকশাভাড়াকে তারা তখন পনেরো/বিশ টাকা পর্যন্ত নিয়ে দাঁড়া করায়। গত কিছুদিন ধরেই তাই প্রতিদিন সকালবেলায় অফিসে যাওয়ার সময়টা অবন্তীর ব্যাপক অস্থিরতার মধ্যে কাটে। আজ সকালবেলায়ও অনেক চেষ্টা তদবির করে সে যাও একটা রিকশার দেখা পেয়েছিলো কিন্তু রিকশাওয়ালা কোনভাবেই অবন্তীর অফিস পর্যন্ত যেতে রাজি হলো না। শেষমেষ অবন্তী রিকশাওয়ালাটাকে বললো তাকে অন্তত রাস্তাটা পার করে দেয়ার জন্য, অনেক চাপাচাপির পর রিকশাওয়ালা রাজি হলো ঠিকই, কিন্তু রিকশাভাড়া চাইলো বিশ টাকা। অবন্তী দাঁত কটমট করে রিকশাওয়ালাকে বললো, "কোন আক্কেলে বিশ টাকা চাইলা? আমি কি পানিতে পড়ে গেছি?"
রিকশাওয়ালা বত্রিশপাটি দাঁত একসাথে বের করে হেসে উঠে বললো, "তাতো আফা আফনে ফড়ছেনই, আমি এইখান থুন আফনারে থুইয়া গ্যালে গা, সারাবেলা আফনারে এই ফানিতেই ফইড়া থাকা লাগবো"--কথাটা বলেই আবার একটা অট্টহাসি দিলো রিকশাওয়ালাটা। অবন্তীর রাগে গা জ্বলে যাচ্ছিলো, তার ইচ্ছা করছিলো রিকশাওয়ালা ব্যাটার দুই গালে দুইটা চড় দিয়ে তার সামনের পাটিরর দুইটা ফেলে দিতে, ফলে পরের বার ব্যাটা যখন এমন কুৎসিত ভাবে হাসতে যাবে, তখন যাতে সবাই দেখতে পারে যে শালার সামনের পাটির দুইটা দাঁত নাই। কিন্তু ব্যাপারটা যে তখন "নিজের পায়ে নিজেই কুড়াল মারা"র মতো হতো--অবন্তী তা খুব ভালো করেই বুঝতে পেরেছিলো, কারণ আক্ষরিক অর্থেই সে তখন ছিলো নিরুপায় ।শেষে অন্য কোন উপায় না দেখে অগত্যা বিশ টাকা রিকশাভাড়া দিয়েই ঐ রাস্তাটুকু পার হয়ে এসে অন্য আরেকটা রিকশা নিয়ে বেলা দশটার দিকে অফিসে এসে পৌঁছায় অবন্তী।

আজ প্রায় সারাটা দিনই বৃষ্টি হয়েছে, কখনো টিপ টিপ করে, কখনো মুষলধারে। ফলে আজ বেশীরভাগ সময়ই অফিসে বসেই কাটাতে হয়েছে অবন্তীকে। বৃষ্টির কারণে চা বাগানের নিয়মিত কর্মকান্ডগুলোও কম বেশী ব্যাহত হয়েছে যদিও দুপুরের দিকে ঝিরঝির বৃষ্টির মাঝেও অবন্তীকে ২ নম্বর চাবাগানটা ভিজিটে যেতে হয়েছিলো, কারণ সেখানে চা বাগানের দুই কর্মীর মাঝে তুমুল মারামারি বেঁধে গিয়েছিলো, সেই মারামারির ফয়সালা করতে গিয়েই শেষ পর্যন্ত কাক ভেঁজা হয়ে অফিসে ফিরে আসতে হয়েছে অবন্তীকে। এই তুমুল বৃষ্টি বাদলের দিনে কোয়ার্টারে ফিরে গিয়ে দুপুরের খাওয়া খাওয়ার কোন মানেই হয় না, তাই অফিসে বসেই দুপুরের খাওয়াটা সেরে নিয়েছে অবন্তী, সাথে অবশ্য তাশফিনও ছিলো। গল্প করতে করতেই দুপুরের খাওয়াটা একসাথে খেয়েছে দুজন।

এখন বাজে বিকাল সোয়া পাঁচটা। আরেকটা ব্যাপক বৃষ্টির আনাগোনা শুরু হয়ে গিয়েছে পুরো আকাশ জুড়ে। আকাশের প্রায় পুরোটাই ঘন মেঘে ঢাকা। আজকের বিকালটাকে তাই আর বিকালের মতো লাগছে না, পুরো প্রকৃতিটা জুড়ে সন্ধ্যার আগমন ধ্বনিটা যেন আজ তাই একটু আগেই আগেই বেজে গিয়েছে। অফিসের জানালাটা দিয়ে আকাশের দিকে তাকাতেই অস্থির হয়ে উঠলো অবন্তী, তাশফিনের দিকে না তাকিয়েই অবন্তী বললো, "আকাশ যেভাবে কালো হয়ে আসছে, একটু পরেই মনে হচ্ছে মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হবে, কিভাবে যে আজ কোয়ার্টারে পোঁছাবো-- খোদাই জানে।"
তাশফিন একটু ইতস্তত করে বললো, "আপনি কিছু মনে না করলে আমি আপানাকে নামিয়ে দিয়ে আসি? আপনার কোয়ার্টার থেকে আমার বাসাটা খুব একটা দূরে না, একটু ঘুরে যেতে হবে--এই আর কি!"
আকাশের দিকে তাকিয়ে থেকেই অবন্তী বললো, "না না, তার কোন দরকার নেই, আপনি আমার জন্য কেন খামাকা কষ্ট করতে যাবেন?"
কথাটা শুনে নিজের চেয়ারটা ছেড়ে উঠে অবন্তীর মুখ বরাবর এসে দাঁড়ালো তাশফিন, কয়েক সেকেন্ড চুপ করে থেকে গলার স্বরটা কিছুটা গম্ভীর করে সে অবন্তীকে বললো, "আমার গাড়িতে উঠলে আপনার মান সম্মানে কি খুব বেশী বেঁধে যাবে অবন্তী? আর কতটুকু চেনা জানা হলে আপনি নিজেকে আমার কাছ হতে আড়াল করা বন্ধ করবেন?অনেক দিন তো হয়ে গেলো, আপনি কি অস্বীকার করতে পারবেন এই কয়দিনে আমার প্রতি আপনার একটুও ভালো লাগা জন্মেনি, সত্যি করে বলুন তো ?"

কিছুক্ষণ চুপ করে থাকলো অবন্তী, শেষে কিছুটা নরম গলায় সে বললো, "স্যার, আপনাকে যে আমার ভালো লাগে এটা খুব ভালো করেই আপনি জানেন, কিন্তু......."
তাশফিন সাথে সাথেই বললো, "কিন্তু কি অবন্তী? আমাকে আর কত অপেক্ষা করতে হবে?এই যে আমার এখনও দুজন দুজনকে "আপনি" "আপনি" বলছি, আপনি আমাকে এখনো স্যার স্যার করেন--কেন এই আড়াল হয়ে থাকা? কিসের এতো সংকোচ? এতোটাদিন ধরে আমরা দুজন দুজকে জানছি, এরপরও কি আপনি বলতে চান--এখনো আমাদের আরো কাছাকাছি আসার সময় হয়নি? আপনি আমি দুজনই যথেষ্ট পরিণত বয়সের দুজন মানুষ। আমরা যদি এখন সিরিয়াস টাইপ কোন সম্পর্কের কথাও চিন্তা করি--তাতে কি খুব দোষের কিছু হয়ে যাবে?"
একনাগাড়ে কথাগুলো বলে গেলো তাশফিন। অবন্তী আগের মতোই আকাশের দিকে নিষ্পলক চেয়ে থাকলো কিছুক্ষণ। তারপরে তাশফিনের দিকে তাকিয়ে বললো," বিয়ে করতে চান আমাকে?"
তাশফিন বললো, "যদি বলি তাই?"
অবন্তী হেসে উঠে বললো, "স্যার আপনি আমার সম্পর্কে কতটুকুই বা জানেন, আমি কে, কোথা থেকে এসেছি, আমার ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড--কিছুই তো আপনি জানেন না।"
অবন্তীকে থামিয়ে দিয়ে তাশফিন বললো, "জানতে চাইও না, আমি শধু জানি-- আমি আপনাকে ভালোবাসি।"
কথাটা বলেই লজ্জায় লাল হয়ে গেলো তাশফিন। তাশফিনের দিকে কিছুক্ষণ নিষ্পলক চেয়ে থাকলো অবন্তী। দুজনের মাঝে কয়েক মিনেটের জন্য নেমে এলো পিনপতন নীরবতা। শেষে নীরবতাটা ভাঙলো অবন্তীই। তাশফিনের সামনে থেকে সরে গিয়ে নিজের টেবিলের দিকে যেতে যেতে অবন্তী বললো, "চলুন বের হয়ে পড়ি। বৃষ্টি চলে আসবে এখুনি।"
তাশফিন মুখটা ম্লান করে বললো, "কথার তো উত্তর দিলেন না....।"
তাশফিনের দিকে তাকিয়ে অবন্তী বললো, "আমাকে আরেকটু সময় দিন।"
তাশফিন বললো, "আমাকে আর কত জ্বালাবেন? ঠিক আছে যান, সময় নিন। কিন্তু নিজেকে এভাবে আড়াল করা তো বন্ধ করুন, আমাকে আর 'স্যার' 'স্যার' করবেন না, আমিও আর আপনাকে "আপনি" "আপনি" করতে পারবো না, তুমিও এইসব অহেতুক ফরম্যালিটি করা বন্ধ করো।"
অবন্তী হাসি হাসি মুখ নিয়ে তাকালো তাশফিনের দিকে, তারপর ঠোঁটের কোণে একটা লাজুক হাসি ঝুলিয়ে বললো, "যাও, গাড়িটা বের করো, আমি আসছি।"
অবন্তীর মুখ থেকে যেন কথাটাটা শুনতেই কেবল বাকী ছিলো তাশফিনের। কথাটা শোনার সাথে সাথেই "ইয়েস" বলে একটা চিৎকার দিয়ে বাচ্চা ছেলের মতো খুশিতে ফেটে পড়ে এক দৌড়েই অফিস রুম থেকে বের হয়ে গেলো সে। গাড়িতে উঠে তাশফিন যখন অবন্তীকে নিয়ে অবন্তীর কোয়ার্টারের উদ্দেশ্যে রওনা দিলো, সন্ধ্যাটা তখন রাতের মতো করে একরাশ নিস্তব্ধতা নিয়ে এসে সমস্ত প্রকৃতির উপর ভর করতে শুরু করেছে।
.....................................................(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৮ রাত ১:৫৩
২১টি মন্তব্য ২০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×