আজকে স্কুলে যেতে একদম ইচ্ছা করছে না। আমি জানি জন্মদিন বলে স্কুল কামাই করা আম্মু কোনদিন এলাউ করবে না। কিন্তু আমার মত এত সাধারণ একটা মেয়ে, যার ১৫ বছরের জীবনটা এতই মামুলী, যে এতই অপাঙ্গতেয়, তার কাছে তার জন্মদিনটা একটু স্পেশাল হতেই পারে, পারে না? হয়তো আজই কোন যাদুমন্ত্র বলে অনিকের সাথে দেখা হয়ে যাবে আমার। সে এসে আমার চশমাটা খুলে আমার দিকে তাকিয়ে হেসে বলবে, “তুমি এতদিন কোথায় ছিলে? তোমাকে আমি কত খুঁজেছি!”
ধুর, আমি জানি এমন কিছুই ঘটবে না। অনিক তো আমার কল্পনা, ও বাস্তবে আসবে কি করে? আর যে বাস্তবে আছে, অনিক যার ছায়া, সে তো কখনোই আমার নয়। আমার দিকে সে ফিরেও তাকাবে না। শুধু তাকানোর খেলা খেলবে। শুধুই খেলা!
রেডি হয়ে নীচে নামলাম। কোনমতে মাকে লুকিয়ে মেন গেইট দিয়ে বেরুতে পারলে হয়। পা টিপে টিপে যাচ্ছি, সেই সময় আম্মুর ডাক,
“বিভা দুধ খেয়ে যাও। কালও খাওনি।“
উফ, আম্মু কেন যে বুঝে না। দুধ খাবার সময় কেমন জানি বমি বমি লাগে আমার, কেমন জানি গন্ধ। মালটোভা দিয়ে গুলিয়ে কোনমতে ঢকঢক করে গিললাম।
“তোকে দেখলে মনে হয় বিষ খাচ্ছিস। যা এখন স্কুলে যা। সাম্য কখন চলে গেছে।“
“হু। যাই আম্মু।“ মনে মনে বলি তুমি তো জান না তোমার গুনধর ছেলে বই রেখে মাঠে ফুটবল নিয়ে খেলছে। তাই তার এত যাবার তাড়া।
বাসা থেকে হেঁটে যেতে বড়জোড় পাঁচ মিনিট লাগবে। এত আগে গিয়ে কি হবে। মেয়েগুলো তাদের বয়ফ্রেন্ডদের নিয়ে ন্যাকামি করবে। আমি বোকার মত সেসব শুনে কি করব? আর যদি দেখি যে আরিফ ভাই, সুমি আপুর সাথে কথা বলছে, সারাটা দিন খারাপ যাবে। কেন ও সুমি আপুকে এত পছন্দ করে? উনি অনেক সুন্দর বলে? শুধু সুন্দর হওয়াটাই সবকিছু?
ছেলেদের কাছে মনে হয় তাই।
বাসস্ট্যান্ডের কাছাকাছি এসে দেখি আরিফ ভাই আর কবির ভাই বসে আছে। চোখাচোখি হতেই আমার দম বন্ধ হয়ে এল। ওকে দেখলেই আমার বুকের ভিতর এমন গুরগুর করে কেন? স্কুলের এনুয়াল ফাংশনের দিন স্টেজে উঠলে যেমন বুকের ভিতর ঢিপ ঢিপ করে তেমনি। আমার দিকে তাকিয়ে আছ কেন তুমি?
কবির ভাই কি যেন বলল ওকে। ও হাসতে শুরু করে দিল। আমাকে নিয়ে হাসছে? কেন হাস তুমি আমাকে নিয়ে? আমি সুন্দর না বলে? তাহলে রোজ বারান্দা থেকে আমার দিকে তাকিয়ে থাক কেন? কেন মুচকি হাস আসেম্বিতে রোজ? কেন প্রতি পিরিয়ডের শেষে পানি খাবার নামে আমাদের ক্লাসের পাশ দিয়ে হেঁটে যাও? চারকোনা বারান্দা। অন্যদিক দিয়ে গেলে কাছে হয়, তবু কেন এতটা ঘুরে যাও? জানালার ফাঁক গলে কেন তাকাও আমার দিকে? বল সবটাই মিছে? সবটাই আমার কল্পনা! আর তাকাবো না আমি তোমার দিকে। কোনদিন না!
মাথাটা নামিয়ে শক্ত হয়ে হেঁটে চললাম স্কুলের দিকে। ক্লাসে ঢুকে আমার জায়গায় বেঞ্চে ব্যাগ রেখে হাতের উপর মাথা দিয়ে বসে থাকলাম। এখনি যেতে হবে এসেম্বলিতে। একদম ইচ্ছে করছে না। কিন্তু উপায় নেই। না গেলে আর ধরা পড়লে অনেক ঝামেলা। ক্লাস নাইনের মেয়েদের লাইনের শেষ প্রান্তে ব্যান্ড দাঁড়ায়। আরিফ থাকে সামনে কারন ও যে ব্যান্ড লিডার। আমি ক্লাসের মেয়েদের থেকে মাথায় লম্বা বলে দাঁড়াতে হয় শেষে, মানে ওর কাছাকাছি।
আজ আমি পারব না। মনটা এত্ত খারাপ। তুমি দেখতে ভীষন ভাল, তাই এত অহংকার তোমার? আমি এত বেহায়া কেন? কেন দিনরাত ভাবি তোমার কথা?
নাসরিন এসে ধপাস করে আমার পাশে বসল।
“বিভু চল, এসেম্বলি। কি যে গুমোট গরম। আকাশ কালো কিন্তু বৃষ্টির দেখা নেই। এরমধ্যে পিপি তার তিন রচনার লাসসি শোনাবে। অসহ্য!”
আসলেই। পিপি মানে আমাদের প্যানপ্যানানি পিনু। আমি জানি প্রিন্সিপাল স্যারকে পিনু ডাকা ঠিক না। কিন্তু উনার মাথা খারাপ আছে। সময়ানুবর্তিতা, নিয়মানুবর্তিতা, আর সৎচরিত্র এই তিন রচনা উনি কোন এক আমলে মুখস্থ করছিলেন, তার “টক-ঝাল-মিষ্টি” মিক্সার আমাদের শুনতে হবে নিত্যদিন কমপক্ষে পাঁচ মিনিট । তারপর জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া হবে। প্রতিদিন গায়িকাদের সাধাসাধি। পুরা এসেম্বলি ব্যাপারটাই একটা অত্যাচার। শুধু আরিফের সাথে আমার চোখাচোখির পার্টটা ছাড়া। কিন্তু আজকে ওকে আমার দেখতে ইচ্ছে করছে না। অভিমান? ধূর! ওর সাথে তো আমার কিছু নেই। কোন দিন কথাও হয়নি। শুধু অনির্মেষ চেয়ে থাকা থেকে কি প্রেম হতে পারে? পারে না তাই না? তাইলে এইযে নানান অনুভূতি, এর ব্যাখ্যা কি?
“বিভু, কি হয়েছে তোর? চল চল।“
একটা দীর্ঘশ্বাস চেপে উঠে পড়লাম। নাসরিনের গলা জড়িয়ে বললাম।
“চল, দশ মিনিটের যন্ত্রনা ভুগে আসি।“ কেউতো জানে না, আমার যন্ত্রনা দশ মিনিটে শেষ হবে না। আমাকে এই সব ভাবনা আজীবন জ্বালিয়ে মারবে।
আজকে দিনটাই অদ্ভুত। পিপি বক্তৃতা শুরু করতেই হঠাৎ ঝমঝম করে শুরু হল বৃষ্টি। চারশ’ ছাত্রছাত্রী যে দিকে পারল ছুটে বারান্দায় উঠে গেল। সব টিচাররাও। শুধু আমি স্থাণুর মত দাঁড়িয়ে রইলাম, নড়তে পারলাম না। কারন ছুটতে গিয়েই আরিফের চোখে চোখ। ও আর আমি দাঁড়িয়ে থাকলাম, দু-তিন হাত দূরত্বে। চারদিকে হলুস্থুল—হৈ চৈ। ও আগে সম্বিত ফিরে পেয়ে শুধু বলল, “ক্লাসে যাও, বিভু।“ বলে দুই গালে টোল ফেলে তার ভূবনমোহন করা হাসি হাসল।
আমি চলে আসলাম। ততক্ষনে কাকভিজে প্রায়। মনটা যে এমন দ্রবীভূত হয়ে গেল, তার কি হবে? এই মুগ্ধতার কোন শেষ আছে? কি হবে আমার?
বিকালে স্কুল থেকে ফিরে, জামা বদলে ছাদে চলে গেলাম। কেন যেন খুব খালি খালি লাগছে। নীচে দেখি নিপা, রিমিরা রাস্তায় হাঁটছে। একদম যেতে ইচ্ছা করল না। পালিয়ে চলে আসলাম। ওরা দেখলে ডাকবে। আজ আমি বাইরে যাব না। আজ ও আমার নাম ধরে ডেকেছে। আজ আমি ঘুমাবোও না। কিচ্ছু করব না।
নিচে আসতেই আম্মু বললেন, “কিরে আজ হাঁটতে গেলি না যে? স্কুল থেকে ফিরে গম্ভীর হয়ে মন খারাপ করে ঘুরে বেড়াচ্ছিস, কি হয়েছে? ক্লাস পরীক্ষায় নম্বর কম পেয়েছিস?”
মাথা নাড়লাম। “সে সব কিছু না আম্মু। এমনি ভাল লাগছে না।“
আম্মুর সামনে থেকে পালিয়ে নিজের রুমে যাবার সময় আম্মু ডাকলেন পিছন থেকে।
“শোন, কালকে বৃহস্পতিবার। স্কুল হাফ ডে। তোর সব বন্ধুদের দাওয়াত দে। দুপুরে খাবে আমাদের বাসায়। জন্মদিনে, এত মন খারাপ করে থাকে না আম্মু। আজকে কিছু এরেঞ্জ করি নাই, কারন স্কুল ডে। তোমরা বেশী মজা করতে পারবে না। এখন মন ভাল করে ফেল, ঠিক আছে?“
আম্মুটা যে কি? জন্মদিন নিয়ে কে ভাবে! আমি মাথা ঝাকিয়ে চলে এলাম আমার ঘরে। কিছুতেই সকালের দৃশ্যটা মাথা থেকে সরাতে পারছি না। গত বছর স্পোর্টসডেতেও ঠিক এমনি ঘটেছিল। আমি চাকমা মেয়ে সেজেছিলাম যেমন খুশী তেমন সাজতে। আরিফ ভলান্টিয়ার ছিল। আধা ঘন্টা মাঠে ছিলাম, ঐ আধাঘন্টা ও পলক না ফেলে তাকিয়ে ছিল একটানা আমার দিকে। কি ছিল ওর চোখে? তীক্ষ্ণ সেই চাহনি কিছুতেই ভুলতে পারি না আমি। “তোমার চোখে দেখেছিলাম আমার সর্বনাশ?”
তাই-ই তো। আমার সর্বনাশের সেইতো শুরু। কিন্তু এই যে চোখে চোখে চাওয়া, এর কি কোন মানে আছে? ও তো সুমি আপুর বন্ধু। সবাই জানে সেটা। তাহলে কেন এমন করে আমাকে উতলা করে দেয়? একি খেলা ওর?
টেবিলে বসে ডাইরী নিয়ে পাতা ঊল্টে যাচ্ছি। পাতায় পাতায় নিত্যদিন অনিককে লেখা আমার সারাদিনের গল্পগাঁথা। আজকের তারিখ দিলাম শেষের পাতায়। কি লিখব?
তুমি তুমি তুমি--- লিখে আবার কেটে আঁকিবুকি করে নিচ্ছিদ্র কালোয় ঢেকে দিলাম শব্দ গুলোকে।
---------------------
তুমি
তুমি অচেনা কোন দেশে থাক
তোমার সব কিছুতেই রহস্য অপার
তোমার হাসির মুগ্ধতা
তোমার প্রতিটি উচ্চারণ অমৃতের মত
অপার্থিব তুমি চির চেনার কাছাকাছি অথচ
কোন সুদূরে তোমার অবস্থান
তোমাকে যখন দেখি মনে হয় হাত বাড়ালেই পাব
ভয় হয় ছুঁয়ে দিলেই যদি মিলিয়ে যাও
আমার রঙীন পৃথিবী যদি বর্ণহীন হয়ে যায়
শূন্যতাকে বড় ভয় আমার
অবাক বিস্ময়ে বাস্তব আর অলীকের মাঝামাঝি দাঁড়িয়ে থাকি
তাকিয়ে থাকি তোমার দিকে
অসীম বিশ্বাসে মুগ্ধতায় ভালবাসায়
তোমার রহস্য রহস্যই থেকে যায়--
Why do I write these idiotic verses…he would never know….
----------------------
“বিভু, খেতে আয়!”
আম্মুর ডাকে চমকে উঠে ডাইরী ঠাস করে বন্ধ করে লুকিয়ে দৌড়ে খাবার
ঘরে গেলাম।
--------
পরদিন দুপুরে সব্বাই এসে হাজির। আমার তেরটা বন্ধু। আম্মু টেবিল সাজাচ্ছেন। আমার ঘরে বসে আড্ডা দিচ্ছি। দিপা তখন থেকে দুনিয়ার অশ্লীল সব কথা বলে যাচ্ছে। ওর দাদার বিছানার নীচে কি এক বিদেশী ম্যাগাজন পেয়েছে, তাতে নাকি কি কি বাজে বাজে ছবি আছে, তার বিস্তারিত বিবরণ শুনছি হা করে! কি নোংরা সবকথা। ছেলেদের এই সব জিনিষ কেন ভাল লাগে?
দুপুরে ভরপেট খেয়ে আবার লাগাতার আড্ডা। কেকা নুতুন একটা হিন্দি সিনেমা দেখেছে সেখানে নায়ক নায়িকার প্রেম হয় রংনাম্বার থেকে। তারপর থেকে বাসার সব ফোন নাকি ও রিসিভ করছে, কিন্তু কোন রংনাম্বার আসছে না!
দিপা হঠাৎ বলল বিভুর একটা রংনাম্বার প্রেম হলে বেশ হয়! খালি লেখাপড়া ছাড়া ওর লাইফে কিছু নাই। লেটস ফাইন্ড হার এ বয়ফ্রেন্ড! আমি কিছু বলার আগেই রুনি দৌড়ে বাসার ফোনটা আমার ঘরে নিয়ে এসে দরজা লাগিয়ে দিল।
আমার হতবাক অবস্থা না কাটতে কাটতেই দিপা জানি কাকে ফোন করে বসল। আমরা সবাই টেনশনে উত্তেজনায় টান টান হয়ে দিপাকে ঘিরে ধরলাম।
দিপার সাহসে মুগ্ধ হয়ে গেলাম। “হ্যালো, আরিফ বলছেন? কেমন আছেন?” ওর নাম শুনেই আমি জমে গেলাম আতঙ্কে। কি ঘটছে এসব?
অপর প্রান্তে কি বলল জানি না। ততক্ষনে কেমন ঘোরের মধ্যে চলে গেছি।
“আপনি কি সুমি আপুর সাথে এঙ্গেজড? না হলে আপনার জন্য আরেকটা পাত্রী জোগাড় করে দিতে চাই। ইন্টারেস্টেড?”
“আমি কে সেটা দিয়ে আপনি কি করবেন? আপনি খালি না বুকড সেটা বলেন!”
বাকীরা সব হি হি করে হাসছে। তিথির হাসি রোগ আছে, ও হিস্টিরিয়া গ্রস্থের মত খাটে গড়াচ্ছে রীতিমত। আমি কি অজ্ঞান হয়ে যাব? বুকের ভিতর হৃৎপিন্ড যেন উত্তাল হয়ে গেছে, বুক ফেটে বের হয়ে আসতে চাইছে!
দিপা হঠাৎ ঠকাস করে ফোন রেখে দিল। ওর চেহারায় আতঙ্কের ছাপ দেখে বাকীরাও নির্বাক নিশ্চুপ তাকিয়ে থাকল ওর দিকে।
“আরিফ ভাই বুঝে ফেলেছে রে। তোরা সবাই এত হাসলি ক্যান? উনি বলল তোমার আশে পাশে অনেক মেয়ে, বিভার জন্মদিন বলে ওর বাসায় দাওয়াত আছে ক্যাম্পাসের বেশীর ভাগ মেয়ের। তোমরা কি ওর বাসায়? এটা শুনেই আমি রেখে দিয়েছি। এখন কি হবে? উনি যদি প্রিন্সিপালকে নালিশ দেয় কিম্বা আমাদের বাসায় জানায়? কি হবে রে?”
সারা ঘরে পিনপতন নিরবতা। কে বলবে একটু আগে তেরোটি কিশোরীর কলকলে ঘর গমগম করছিল-- গলা ছেড়ে গাইছিল সাবাই, হাসছিল উন্মাদের মত। এখন ভয়ে সবাই জমে গেছে। বিকালের চা না খেয়েই চলে গেল একে একে
আমি আমার অগোছালো ঘরে, খাটের কিনারায় বসে হতবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলাম ফোনটার দিকে। কি হবে? দিপা কেন ওকেই ফোন করল? ইজ ইট দ্যাট অবভিয়াস? ও নিশ্চয়ই হা হা করে হাসছে বন্ধুদের সাথে। পরশু স্কুলে দেখা হলে ও কি ব্যঙ্গ করবে আমাকে? যদি সত্যি প্রিন্সিপালের কাছে নালিশ দেয়? কিম্বা আম্মুকে জানায়? আল্লাহ একি বিপদে পড়লাম!
এবার নিশ্চয়ই ও সহজ়ে ছেড়ে দেবে না। হয়তো ছেলেবেলার ঘটনার প্রতিশোধ নিবে। কিন্তু ও তো জানেই না আমি ওর মায়ের কাছে নালিশ দেই নাই। এই ভুল ওর কোনদিন ভাঙবে না। ঘটনাটা মনে পড়তেই লজ্জায় লাল হয়ে গেলাম। আমি যখন ফোরে পড়ি, আর ও সেভেনে, ও নাকি টিফিন পিরিয়ডে আমার ক্লাসে আমার বেঞ্চে বসে স্ট্যাম্প এক্সচেঞ্জ করছিল ওর কোন বন্ধুর সাথে। আমার ক্লাসের ছেলেরা জিজ্ঞেস করেছিল, আমাদের ক্লাসে কি করেন? ও নাকি বলেছিল, এটা আমার বউয়ের ক্লাস, এটা ওর সিট, আমার রাইট আছে এখানে বসার! আমাকে কি যে ক্ষেপিয়েছিল সবাই মিলে! আমি বোকার আম্মুকে বলেছিলাম কাদঁতে কাঁদতে! আম্মু বোধহয় ক্যাম্পাসের কোন চাচীকে বলেছেন, সেখান থেকে হয়তো ওর মা শুনে থাকবেন! ও আমাকে পরে স্কুলে সরি বলেছিল, বলেছিল ও নাকি এমন কোন কথা বলে নাই!
আমি অনেক ভেবেছি। ঠিকই তো, ও কেন এমন বলতে যাবে? আমাকে তো ও পছন্দ করে না। সুমি আপু থাকতে আমি কোন ছাড়! যুক্তি যাই বলুক, আমার মনকে আমি কিছুতেই মানাতে পারি না। যদি আমাকে ভালই না বাসে তাহলে কেন প্রতিদিন আমাকে দেখে, কি করে জানে আমার জন্মদিন কবে? হায়রে এই হিসাব নিকাশে পাল্লায় আমার মাথাটাই যাবে!
সব ছাপিয়ে কেন যেন আমার মন বলছে, ও জানাবে না কাউকে, নালিশ করবে না। প্রতিশোধ নেয়ার মত হীনমন্নতা নেই ওর, থাকলে আমি প্রেমে পড়তাম না! কিন্তু আমি জানি আমাকে দেখলেই হাসবে মুচকি মুচকি, অন্যদের কিছু বলে ইন্ডিরিক্টলি আমাকে ক্ষ্যাপাবে! তবু বুকের ধুকধুকানি কমছে না! যদি সব এনালিসিস ব্যর্থ করে শোধ নেয় ও?
কি করে যে শুক্রবার দিনটা পার করলাম আমিই জানি। শনিবারে স্কুলে যেতেই ইচ্ছা করছিল না। পথে দেখি ঠিক ও বসে আছে। খুব গম্ভীর মুখ। ওর এই থমথমে রাগী চেহারা আমি কোন দিন দেখি নাই। রাগলে কাউকে এত সুন্দর লাগে! আমাকে দেখেই এগিয়ে এল। আমার তো আত্মারাম খাঁচাছাড়া। ও কি আমার উপর খুব বিরক্ত? অনেক রাগ করেছে? কিন্তু আমার কি দোষ?
“বিভু, এ ধরনের দুষ্টুমি আমার ভাল লাগে না। তোমাকে মানায়ও না। আমি জানি এটা তোমার বুদ্ধি না। তুমি এমন নও। কিন্তু ক্যাম্পাসে বাতাসের আগে গুজব দৌড়ায়, সেটা গজব হয়ে যেতে পারে খুব দ্রুত। তোমার বা আমার নামে কেউ বাজে কিছু বলুক আমি চাই না। আর এ ধরণের কিছুতে জড়াবে না, ঠিক আছে?
আমার দুচোখ ভেঙে আসছিল কান্নায়। মাটির দিকে তাকিয়ে শুধু মাথা নাড়লাম।
“ঠিক আছে, এখন লক্ষী মেয়ের মত স্কুলে যাও।“ আমি মুখ তুলে তাকাতেই আবার সেই ভূবন-ভোলানো হাসি, উদারতার আলোয় মাখা, “আর---শুভ জন্মদিন! মেনি হ্যাপি রিটার্ণস অফ দ্যা ডে! ভাল থেক!”
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০১১ রাত ১২:১১

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




